Recent Tube

কর্পোরেট ষড়যন্ত্রের শিকার একসময়ের বহুলব্যবহৃত সরিষা তেলের উপকারিতা।


  • ডা: মুহাম্মদ ফারুক। 
----------------------------------------------

বহু আগে থেকেই ভোজ্য তেল হিসাবে সরিষার তেল ব্যবহার হয়ে আসছে। কেবল স্বাদের জন্যই নয়, বহুকাল ধরেই এই তেল ব্যবহারের পেছনে আরো অনেক কারণ রয়েছে। অতঃপর কর্পোরেট ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে খাদ্যে সরিষার তেলের ব্যবহার প্রায় উঠেই গেছে প্রায়। অথচ সরিষার তেলের মধ্যে রয়েছে মানুষের জন্য বিবিধ রকমের  উপকারীতা।

     ১) সরিষার তেল ত্বকের তামাটে ভাব ও কালো দাগ দূর করে ত্বককে প্রাকৃতিক ভাবে উজ্জ্বল করে।

     ২) যেহেতু সরিষার তেল খুব ঘন হয় এবং এতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন-ই থাকে সেহেতু এই তেল ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ থেকে ত্বককে সুরক্ষা দিতে পারে। তাই ইহা স্কিন ক্যান্সারও প্রতিরোধ করতে পারে। ভিটামিন ই বার্ধ্যক্যের বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর করে থাকে।

    ৩) খসখসে শুষ্ক ঠোঁট পুরো চেহারা সুরতের ওপরই ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। অথচ মাত্র কয়েক ফোঁটা সরিষার তেল প্রয়োগে ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করা সম্ভব। যা মোড়কজাত ঠোঁটের বামের চেয়েও বেশি নিরাপদ।

     ৪) সরিষার তেল চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, অকালে চুল সাদা হওয়া রোধ করে ও চুল পড়া কমায়। সরিষার তেল ভিটামিন ও খনিজে পরিপূর্ণ থাকে। বিশেষ করে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন থাকে। বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়ে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফ্যাটি এসিড ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রতিরাতে চুলে সরিষার তেল মালিশ করলে চুল কালো হয়।
      মাথার ত্বকে নিয়মিতভাবে সরিষার তেল ব্যবহার করলে খুশকি, খোস-পাঁচড়া এবং চুলপড়ার মতো শীতকালীন সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এই তেলে আছে দুটো গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি এসিড। যথা- ওয়েলিক এসিড এবং লিনোলিক এসিড। এগুলো চুলের জন্য দারুণ টনিকের মত কাজ করে।

     ৫) ক্ষুধার উপর সুস্বাস্থ্য বহুলাংশে নির্ভর করে। পাকস্থলীর পাচক রস উদ্দীপিত করার মাধ্যমে ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে সরিষার তেল।

     ৬) পরিপাক, রক্ত সংবহন ও রেচন তন্ত্রের শক্তিশালী উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে সরিষার তেল। খাওয়ার পাশাপাশি বাহ্যিকভাবে শরীরে ম্যাসাজ করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। মালিশের পর ঘর্মগ্রন্থিগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে বেশি ঘাম বেরিয়ে শরীরের টক্সিন দূর হয়।

    ৭) সরিষার তেল মনোস্যাচুরেটেড ও পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাটে সমৃদ্ধ বলে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। এর ফলে কার্ডিওভাস্কুলার রোগের (হৃদ রোগ) ঝুঁকি কমে। সরিষার তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (এম ইউ এফ এ) যা শরীরের দরকার। এই এমইউএফএ হার্ট ভাল রাখে।
     সরিষার তেলে থাকা এম ইউ এফ এ রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ভালো কোলেষ্টেরেলের পরিমান বাড়ায়। এতে রক্তে ফ্যাটের মাত্রা কমে চলাচলের গতি বাড়ে। সরিষার তেলের আলফুলিনোলেনিক অ্যাসিড ইসকেমিক হার্টের সমস্যা কমায়। সরিষার তেলে রান্না খাবার খেলে কার্ডিওভাসকুলার  সমস্যা বা হৃদ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমে যায়।

     ৮) সরিষার তেলে গ্লুকোসিনোলেট নামক উপাদান থাকে যা অ্যান্টিকারসিনোজেনিক উপাদান হিসেবে পরিচিত। তাই ক্যান্সারজনিত টিউমারের গঠন প্রতিরোধে সাহায্য করে সরিষার তেল। এর ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট কোলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।

     ৯) এজমা এট্যাক হলে সরিষার তেল বুকে মালিশ করে অথবা এক টেবিল চামচ সরিষার তেল, এক চা চামচ কর্পুরের সাথে মিশিয়ে বুকে মালিশ করলে নিরাময় লাভ হয়।

     ১০) ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে এই সরিষার তেল। এতে অ্যালাইল আইসোথায়োসায়ানেট নামক অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান থাকে বলে ছত্রাকের ইনফেকশন নিরাময়ে কাজ করে।
    সাম্প্রতিক এক গবেষনায় জানা যায় সরিষার তেল ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। সরিষার তেলের গ্লুকোসিনোলেট উপস্তিত থাকায় ব্যাকটেরিয়ার এবং বিভিন্ন জীবানুর বৃদ্ধি ঘটতে দেয়না।

     ১১) সরিষার তেলের তীব্র সুবাস পোকামাকড় তাড়ায় বলে ম্যালেরিয়া ও পোকাকামড় জনিত রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে সরিষার তেল। ভারতে এডিস মশার বিরুদ্ধে সরিষার তেল কার্য্যকরী হিসেবে প্রমানিত হয়েছে।

     ১২) সরিষার তেল শিশুর হাত-পায়ের দৈর্ঘ্য ও ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

     ১৩) সরিষার তেলে সেলেনিয়াম উপস্থিত থাকায় এন্টি-ইনফ্লামেটরি হিসেবে কাজ করে ফলে জয়েন্টের ব্যাথা এবং ফোলা কমায়। সরিষার তেলের এন্টি-প্রদাহজনক বৈশিষ্ট্য থাকায় ডাইক্লোফেনাক নামক এন্টি-প্রদাহী ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও কোমর ব্যাথা, মাংসপেশির ব্যাথাতেও কাজ করে সরিষার তেল।

     ১৪) শত শত বছর ধরে মানুষেরা গোসলের আগে দেহে সরিষার তেল ব্যবহার করে ম্যাসেজ করতেন। যাতে ত্বকের সৌন্দর্য্য বজায় থাকে।

   ১৫) সরিষার তেলের সঙ্গে সামান্য মোম মিশিয়ে গরম করে পায়ের ফাটা অংশে লাগান। সমস্যা নিমেষে উধাও। নখে লাগালেও উপকার পাবেন।

     ১৬) সরিষার তেলের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে দাঁত মাঁজতে বলেন অনেক বিশেষজ্ঞ। আঁধা চা চামচ সরিষার তেলের সাথে, ১ চা চামচ হলুদ, আঁধা চামচ লবন মিশিয়ে দিনে ২ বার দাঁতে ব্যবহার করলে দাঁত সুস্থ্য থাকে এবং দাঁতের রোগ জিনজিভাইটিস এবং পেরিওডোনডাইটিস থেকে সুরক্ষা দেয়।

    ১৭) অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান থাকার কারণে সরিষার তেল আচার তৈরিতে অনন্য।

     ১৮) সরিষার বীজ এ ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে মাইগ্রেন সমস্যা হ্রাস করে।

     ১৯) সাইনুসাইটিসের প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে সরিষার তেল অত্যন্ত কার্যকরী, ঠান্ডা-কাশি নিরাময়েও চমৎকার কাজ করে সরিষার তেল। এই তেল ফুসফুসের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। বন্ধ নাকে সরিষার তেল দিলে আরাম পাওয়া যায়। ঘুম ভালো হয়।

     ২০) সরিষায় কপার, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম উপস্থিত থাকার কারনে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।

     ২১) সরিষা ক্যারোটিন এবং লুটেইন এর উত্তম উৎস। এছাড়াও ভিটামিন এ, সি, ও কে থাকার কারনে চমৎকার এন্টি অক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে। যা বার্ধ্যক্যকে প্রলম্বিত করে।

     ২২) ব্রেনের কার্য্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। উচ্চ পরিমানে ফ্যাটি এসিড থাকার কারনে সরিষার তেল মস্তিষ্কের কার্য্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং মানষিক অবসাদগ্রস্থতা দূর করে। এছাড়াও স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানের ক্ষমতা বাড়ায়। যার কারনে পরীক্ষাকালীন সরিষার তেল খুবই কার্য্যকরি ভুমিকা রাখে।




Post a Comment

0 Comments