Recent Tube

'ইসলাম' বনাম 'এবি' পার্টি: সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনাঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।



'ইসলাম' বনাম 'এবি' পার্টি: সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনাঃ
-----------------------------------
   বর্তমান বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী থেকে সদ্য বহিষ্কৃত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জু এবিপি নামে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ করেছেন যার পূর্ণ নাম আমার বাংলাদেশ পার্টি। সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচারের অঙ্গীকারের স্লোগান নিয়ে পার্টিটির  মূল উদ্দেশ্য একটা কল্যাণ রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। বাহ্যিক দৃষ্টিতে অত্যান্ত চমৎকার উদ্দেশ্য মনে হলেও ইসলামি দৃষ্টিতে এটা কতটা কল্যাণকর?  সেই বিষয়ে আপনাদের একটু দৃষ্টি  আকর্ষণ করছি।  প্রথম কথা হলো একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে কোনটা মানুষের জন্য কল্যাণকর, কোনটা অকল্যাণকর? সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলামিন পরিষ্কার করে দিয়েছেন।  সুতরাং মানুষ কে ডাকতে হবে আল্লাহর নির্দেশ আর রাসূলের দেখানো পথ অনুযায়ী। তা ব্যতিরেক আর যা কিছু তে আহবান করা হোক না কেন তা হবে কুফরি মতবাদ। এখন  প্রশ্ন হলো জনাব মঞ্জু সাহেব কোন দিকে মানুষকে  আহবান করছেন?  তিনি যে কল্যাণ রাস্ট্রের কথা বলছেন, মতবাদের কথা বলছেন তা কি ইসলামী মতবাদ নাকি তার নিজের গড়া একটা আধুনিক চিন্তা ধারা মতবাদ?  
আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ.
"যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন মতাদর্শ তালাশ করে, তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।" (সূরা ইমরান ৩/৮৫)
.
   'এবি' পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অন্যতম প্রতিপাদ্য ছিলো, “ধর্ম ও মতবাদ যার যার, রাষ্ট্র আমাদের সবার।” অর্থাৎ রাষ্ট্রের মধ্যে (ইসলাম) ধর্মের প্রবেশ নিষেধ। (সূত্রঃ জন আকাঙ্ক্ষার ফেসবুকে পেজ, জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ)। 'এবি' পার্টি (জন আকাঙ্ক্ষা) এর লক্ষ্য- উদ্দেশ্য ও ইশতেহার থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার, তারা কল্যাণরাষ্ট্রের মডেল হিসাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মদীনার শাসনকে গ্রহণ করছেন না এবং বর্তমান সময়ে আল্লাহর বিধান অনুসরণীয় বলে মনে করছেন না। তাই তারা পুরো জামায়াতকে ইসলামী রাজনীতি বর্জন করে তাদের ভ্রান্ত মতাদর্শ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে ছিল। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, 
أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ.
"তারা কি তবে জাহেলিয়্যাতের বিধান চায়? আর প্রকৃত মু'মিন জাতির জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম?" (সূরা মায়িদা ০৫/৫০)
.
    সুতরাং সকল জাহেলী বিধান ও মতাদর্শ বর্জন করে আল্লাহর বিধান স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে গ্রহণ না করে পর্যন্ত কেউ মু'মিন হতে পারবে না। আবূ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ্ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم "لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يَكُونَ هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ". حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ، رَوَيْنَاهُ فِي كِتَابِ "الْحُجَّةِ" بِإِسْنَادٍ صَحِيحٍ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে কেউই ততক্ষণ পর্যন্ত মু'মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার মনের প্রবৃদ্ধি আমার আনিত (ইসলামী) বিধানের অধীন না হবে।"  (কিতাবুস সুন্নাহ হাঃ ১৫, মিশকাত হাঃ ১৬৭, আরবাঈন হাঃ ৪১; ইমাম নববী তাঁর আরবাঈন গ্রন্থে বলেন, এটি সহীহ হাদীস। আমি কিতাবুল হুজ্জাতে এ হাদীসটি সহীহ সনদসহ বর্ণনা করেছি। গৃহীত: নির্বাচিত হাদীস, পৃঃ ৩৯)
.
    এবার বলুন উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসের আলোকে জনাব মঞ্জু সাহেবের বিধান কি ইসলামীক বিধান নাকি জাহেলিয়্যাতের বিধান? আর এভাবে ইসলামী বিধান তথা আল্লাহর বিধান বর্জন করে জাহেলী বিধান বা মতাদর্শের দিকে আহ্বান করা ও তা মেনে নেওয়া হারাম আর এর পরিণতি জাহান্নাম। হারিস আল-আশয়ারী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللَّهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ بِالْجَمَاعَةِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَالْهِجْرَةِ وَالْجِهَادِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَإِنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنْ الْجَمَاعَةِ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهِ إِلَّا أَنْ يَرْجِعَ وَمَنْ دَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ فَهُوَ مِنْ جُثَاءِ جَهَنَّمَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ صَامَ وَإِنْ صَلَّى قَالَ وَإِنْ صَامَ وَإِنْ صَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمٌ. 
     রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "আমি তোমাদের পাঁচটি কাজের নির্দেশ দিচ্ছি, যে নির্দেশ আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। তা হচ্ছে- (আমিরের নেতৃত্বে) জামায়াত বদ্ধ হবে (২) নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে (৩) তার আদেশ মেনে চলবে (৪) আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন (হিজরত) করবে (৫) (আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। যারা ইসলামী জামায়াত ছেড়ে এত বিঘাত পরিমাণও দূরে সরে গেল, তারা যেন ইসলামের রজ্জু খুলে ফেলে দিল। অবশ্যই যদি ফিরে আসে তাহলে ভিন্ন কথা। আর যারা (মানবরচিত) জাহেলী বিধানের দিকে মানুষকে আহ্বান জানাবে (আর যারা তা মেনে চলবে) তারা জাহান্নামী হবে। বলা হলো- হে আল্লাহর রাসূল! তারা যদি রোজা রাখে এবং নামাজ আদায় করে? তিনি বললেন, তারা যদি রোজা রাখে, নামাজ আদায় করে এবং নিেজের মুসলিম বলে ঘোষণা করে তবুও।" (মুসনাদে আহমদ হাঃ ১৬৭১৮, ১৭৩৪৪, জামে তিরমিযী হাঃ ২৮৬৩, সহীহ ইবনে হিব্বান হাঃ ৬২৩৩, সহীহ ইবনে খুযাইমা হাঃ ১৮৯৫, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাঃ ৫১৪১, জামিউল আহাদীস হাঃ ৪৪, মিশকাত হাঃ ৩৬৯৪, সহীহুল জামে হাঃ ১৭২৮; হাদীসটি সহীহ। গৃহীত: নির্বাচিত হাদীস, পৃঃ২৪ ও ৩৯-৪০)
.
   'এবি' পার্টির নেতারা যেহেতু ইসলামী জামায়াত ত্যাগ করে জাহেলী সংগঠন কায়েম করেছে এবং আল্লাহর বিধান বর্জন করে জাহেলী বিধানের দিকে মানুষকে আহ্বান করছে, সেহেতু 'এবি' পার্টির ডাকে সাড়া দেওয়া ও তাদের যেকোনো ধরণের সাহায্য সহযোগীতা করা সকল মুসলিমদের জন্য হারাম ও আল্লাহর নিকট শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا... وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ.
  "হে মুমিনগণ, তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়া ভিত্তিক কাজে পরস্পরের সহযোগীতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগীতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।" (সূরা মায়িদা ৫/০২)
---------------------------------------------
 লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।          

Post a Comment

0 Comments