কোরানে কারিম ও হাদীসে
মুসলিম উম্মাহর পারস্পরিক ঐক্য ধরে
রাখার জন্য জোর তাগিদ দেয়া
হয়েছেঃ
.
ইরশাদ হয়েছে: ﻭَﺍﻋْﺘَﺼِﻤُﻮﺍ ﺑِﺤَﺒْﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻔَﺮَّﻗُﻮﺍ
‘তোমরা
আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর
এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’
(সূরা
আলে ইমরান : ১০২)।
আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত
রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেন,
‘এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য
দেয়ালস্বরূপ, যার একাংশ অপর
অংশকে শক্তিশালী করে। অতঃপর
তিনি তার হাতের আঙুলগুলো
প্রবিষ্ট করে দেখালেন’। (সহিহ
বুখারি)।
হাদিসে উল্লেখ রয়েছে ‘এক
মুসলমান অন্য মুসলমানের জন্য এক শরীরসদৃশ।
যদি এর একটি অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়
তবে এর প্রভাবে সারাশরীর ব্যথিত ও
আঘাতপ্রাপ্ত হয়’। অদৃশ্য এ শক্তিই
মুসলমানদের অবিস্মরণীয় বিজয়ের
গোপন রহস্য।
সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী (রহ.)
বায়তুল মুকাদ্দাস পুনরুদ্ধারের জন্য ওই সময়
চূড়ান্ত বিজয়ের প্রস্তুতি নেন, যখন
মুসলমানদের পারস্পরিক বন্ধন সুদৃঢ় হয় এবং
শামের নেতৃস্থানীয়রা একই
প্লাটফর্মে জড়ো হন।
ইতিহাসের
ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে এ কথা স্পষ্ট
হয়ে ওঠে যে, মুসলমান কোনো একটি
যুদ্ধেও সফলকাম হতে পারেনি; যতক্ষণ
না তাদের ঐক্য ও সংহতির সুদৃঢ় বন্ধন
স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু যখন প্রত্যেক
ব্যক্তি নিজস্ব মত-পথ ও চিন্তাধারায়
খেয়ালি বিচরণে গা ভাসিয়ে
নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট মতপার্থক্য শত্র“তার
রূপ নেবে; তখন সফলতার আর কোনো
প্রচেষ্টাই কাজে আসবে না। বর্তমান
মুসলিম উম্মাহ অনৈক্য ও অসংহতির
মারাÍক ব্যাধিতে আক্রান্ত।
দুনিয়াতে আজ মুসলমানদের রয়েছে বৃহৎ
একটি জনগোষ্ঠী। পৃথিবীর এক-
চতুর্থাংশ তাদের দখলে। তারপরও
দুনিয়ার শক্তির কাছে তারা নত।
তাদের দেখে বিদ্রƒপের হাসি
হাসছে বাতিল শক্তি। কিন্তু
মুসলমানদের এ অবস্থা হল কেন? এর
একমাত্র কারণ মুসলিম উম্মাহর ভেতরে
ঢুকে পড়েছে অনৈক্যের বীজ। তাদের
খণ্ড খণ্ড শক্তি নির্জীব হয়ে আছে।
প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব মতের পূজায়
লিপ্ত। নিজের গোত্র বা দলনেতার
কথাই তিল তাবিজ করে গলায় ধারণ
করে আছে। ফলে তারা দিন কাটাচ্ছে
মুমূর্ষু অবস্থায়। শুধু তাই নয় সব সফলতা
পর্যবসিত হচ্ছে ব্যর্থতায়। পারস্পরিক
অনৈক্য ও সংঘাত কোনো দিনও
ইসলামী সমাজ বিপ্লবের জন্য সহায়ক
হতে পারে না।
বর্তমান মুসলমানদের
জন্য দুর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে তারা আজ
বিচ্ছিন্ন, গঠনমূলক কাজের পরিবর্তে
ধ্বংসাÍক কাজে লিপ্ত। গড়ার চেয়ে
ভাঙার ক্ষেত্রে বেশি উদ্যোগী।
আফসোস ও আশ্চর্যের বিষয় আমরা ভাঙা
ও নষ্টের দিকে এগোচ্ছি; অথচ স্থাপন ও
গড়ার অলীক স্বপ্ন দেখছি।
যখন শত্র“রা
সবাই ঐক্যবদ্ধ : চালাচ্ছে ইসলাম
নির্মূলের সম্মিলিত প্রয়াস; বাতিলচক্র
নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে এগোচ্ছে
দৃঢ়গতিতে, তখন মুসলমান আÍকলহে লিপ্ত।
হালকা এবং সাধারণ জিনিসকে
কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে
নেমে আÍপ্রতিষ্ঠার জন্য সবাই মরিয়া।
শুধু মুসলিম চরিত্রেই নয় মুসলিম
রাষ্ট্রগুলোতে চলছে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের
খেলা। খুব বড় বিষয় নিয়ে নয়, মামুলি
বিষয় নিয়ে। আল্লাহ মাফ করুন।
বর্তমানে রাজনৈতিক নেতাদের
মাঝেও এত মতবিরোধ নেই, যতটা আছে
ওলামায়ে কেরামের মাঝে।
প্রত্যেকেই নিজস্ব পরিমণ্ডলে মসজিদ
বানিয়ে বসে আছে। আর নিজের কাজই
তার কাছে কাজ বলে মনে হচ্ছে। এ
ধরনের আমিত্বভাব ঐক্যের জন্য বাধা
হয়ে আছে। প্রিয় দেশবাসী, ধর্মপ্রাণ যুব
সমাজের বন্ধুরা। বানের পানি দরজায়
এসে চৌকাঠ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এ
সময়ও যদি আমরা নিজস্ব লেবাস পরে
চলি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজš§ আমাদের
ক্ষমা করবে না। ‘আল উলামাউ
ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া’Ñ এ বাণীর
মাঝে কিছু দায়িত্ব রয়েছে।
হজরত রাসূলে কারিম (সা.) ওলামায়ে
কেরামকে আম্বিয়ায়ে কেরামের
ওয়ারিশ সাব্যস্ত করেছেন। কোনো
নবী যখন দাওয়াতের কাজ নিয়ে
দাঁড়িয়েছেন তো একাই এগিয়েছেন
অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেছেন। অতঃপর
প্রত্যেককে কষ্ট দেয়া হয়েছে। এসব
পরীক্ষা তো আসবেই। দেশ ও জাতির
এমন এক চরম ক্লান্তিলগ্নে কোনো
ঈমানদার দেশপ্রেমিক কখনও নীরব
দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না।
তাই নিছক দ্বীন ও মিল্লাতের
হেফাজতের তাগিদে
সম্মিলিতভাবে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ
হওয়া জরুরি।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ, গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।
0 Comments