Recent Tube

দ্যা চয়েস ইজ ইউরস ১৭ ; জিয়াউল হক।

      
                 দ্যা  চয়েস ইজ ইউরস
            পর্ব-১৭,
                                            
  প্রিয় পুত্রের ইন্তেকালের এক মাস না যেতেই ফেব্রুয়ারির শুরুতে আব্দুল মুত্তালিব নতুন এক বিপদের কথা শুনতে পেলেন।  ইয়েমেন থেকে আবরাহা এক বিরাট সৈন্যবাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছে মক্কা পানে। এই অসময়ে মক্কা পানে! এটা ভালো লক্ষণ নয়। শুনেছেন দক্ষিণে কাহতানিরা আবরাহাকে মক্কায় আসার পথে বাধার সৃষ্টি করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।
 
   বিগত কয়েক বছর সময়কাল ধরে  আবরাহার মতি গতি ভালো ঠেকছিল না।  বিগত কয়েক বছর ধরে সে কোন ইয়েমেনিকে হজ্জ ও ওকাজ মেলায় আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সানায় তার নবনির্মিত কানিসায় (গির্জায়) উপাসনার জন্য ডেকেছে। 

  কুরআনের সুরা বুরুজে একটা দু:খজনক ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। একটা জনপদে (ইয়েমেন) একদল মুসলমানকে কেবলমাত্র এক আল্লাহর উপরে ঈমান পোষণ করার অপরাধে (?) আগুনে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়! সে হত্যাকান্ডটি অন্যান্য মুসলমানদের উপস্থিত থেকে দেখতে বাধ্য করা হয়।  ঐসব নির্যাতিত মানুষগুলো ছিলেন ধর্মবিশ্বাসে মুসলমান, হযরত ইসা আ: এর অনুসারী। কেউ কেউতাদের পারস্য সম্রাট
নেবুশাদনেজারের হাতে নির্যাতিত ইহুদি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।  তারা নি:সন্দেহে মুসলমান ছিলেন। (সুরা বুরুজ-৭)

   হিমায়ের সাম্রাজ্য অত্যন্ত প্রভাবশালী শাসন ছিল। খৃষ্টপূর্ব ১১০ থেকে ৫২০ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয়শত বছর এ সাম্রাজ্য টিকে ছিল। তারা ছিল গ্রিক প্রভাবাধিন। ফলে এতদ্বাঞ্চলের জনমানস আরব হলেও সেখানে গ্রিক রাজনীতি, সংষ্কৃতি ও চিন্তাধারার একটা শক্তিশালী উপস্থিতি বিদ্যমান ছিল।

    খৃষ্টপূর্ব প্রায় আটশত সালের দিকে হযরত সোলাইমান আ: ও রাণী বিলকিসের উত্তরসূরী দাবিদার হাবাশা গোত্রের মাধ্যমে আবিসিনিয়ার খৃষ্টরাজ্য আকসুম (আধুনিক ইথিওপিয়া ইরিত্রিয়া)  রাজত্বের সুত্রপাত ঘটে। এখানে হেলেনিক গ্রিক সংষ্কৃতির বিকাশ ঘটে দ্রুত।আর্থসামাজিক ও ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় তারা সাবা, হেমায়ের ও মূল আরব ভূখন্ডের সাথেও ঘনিষ্ঠ । সময়ে সময়ে খৃষ্টান, ইহুদি এবং উভয় সম্প্রদায়ের সাথে পারসকিদেরও শত্রুতা বা মিত্রতা গড়ে উঠে। এ ধারা শতাব্দির পর শতাব্দি চলে এসেছে।

    আবিসিনিয়রা (আকসুম রাজ্য) ৩৪৫ খৃষ্টাব্দের দিকে হিমায়ের দখল করে নিলেওতারা বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। ইহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত মালিক ক্বারিব ৩৭৫ খৃষ্টাব্দে স্থানীয়দের সংগঠিত করে তাদের বিতাড়িত করেন অর্থাৎ খৃষ্টরাজ্য হিমায়ের রাজ্যের নতুন রাষ্ট্রপ্রধান ইহুদি ধর্মাবলম্বী! মালিক ক্বারিবের সন্তান আসা’দ আবু ক্বারিব বাবার মৃত্যুর পরে ক্ষমতায় আসীন হয়ে ৪০০ খৃষ্টাব্দে ইয়াসরিবে গিয়ে ইহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। এই আসাদ আবু ক্বারিবই সর্বপ্রথম ক্বাবা ঘরে গেলাফ পরান।

  এবং ইহুদি ধর্মকে রাজ্যের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেলে এতদাঞ্চলে ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে এক বিরাট অস্থিরতা ও পরিবর্তনের সূচনা করে। 
আবিসিনিয়া ছিল এক খৃষ্টরাজ, বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যও। তারা বার বার জেরুজালেমে ইহুদিদের সাথে সংঘাতে জড়িয়েছে,  ইহুদি ও খৃষ্টানদের মধ্যে একটা স্থায়ী সংঘাত বহু পুরোনো। সেই ইহুদিরাই দক্ষিণ আরবে, খৃষ্টান রাজ্য আবিসিনিয়ার পাশে ইহুদিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে! সেটা নীরবে মেনে নেওয়া সম্ভবপর ছিল না।

    এরকম মনস্তাত্বিক প্রেক্ষাপট ও বৈরিতার সুত্র ধরেই জু’নেওয়াজ ( ইউসুফ বিন নওয়াজ ইউসুফ বিন শারাহবিল) আকসুমে আগ্রাসন চালিয়ে নাজরানকে (সউদি আরবের দক্ষিণ পশ্চিমে ইয়েমেনের সীমান্তঘেঁষা শহর) ধ্বংস এবং বহু খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীকে হত্যা করলে বাইজান্টাইন ও আকসুম খৃষ্টান জগতে বিরাট প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আকসুম বাদশাহ বিশাল সেনাবাহিনী পাঠান জুনেওয়াজকে শাস্তি দিয়ে হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতে। এই বাহিনীরই সেনাপতি ছিল আবরাহা।

আবরাহা প্রায় এক লক্ষ সৈন্য ও কয়েকশত হাতি নিয়ে এই অভিযান পরিচালনা করে। বাদশাহ জু-নেওয়াজ পরাজিত হয়ে আত্মহত্যা করে। ইতোমধ্যে আকসুম রাজা ক্বালেব তার এক গভর্নরকে (Sumyafa) পাঠান শাসকর্তা হিসেবে কিন্তু আবরাহা তার বিরুদ্ধে ৫৩০ খৃষ্টাব্দে বিদ্রোহ এবং হত্যা করে ক্ষমতা নেয়।

আবরাহা ছিল অত্যন্ত গোঁড়া খৃষ্টান। ক্ষমতা পাকাপোক্ত ও জনসমর্থন আদায়ে বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণ, খাল খনন ও সেচের ব্যবস্থা এবং পানির সমস্যা দূর করা, রাজ্যে ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারের দ্বারা অতি অল্প সময়ে জনগণ ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়।
 
  রাজ্যের টাকশাল খালি করে দূর দূরান্ত থেকে মূল্যবান পাথর ও কাঠ এনে সানা’আয় একটা চমৎকার গির্জা বানিয়ে সেখানে ওকাজের মতো মেলা চালু করলো। জনগণকে যদি এই গির্জা অভিমূখে আনা যায় উপাসনা, ভ্রমণ ও ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য তাহলে ইয়েমেনের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। 

   ইয়েমেন এবং আরব জনপদে ঘোষণা করে দিলো এখন থেকে সবাই যেন সানা’আয় কেনা বেচা ও খৃষ্টান ধর্মবালম্বীরা গির্জায় উপাসনা করতে আসে।

    আরবদের মধ্যে প্রধান দুটো ধারা; আদনানি ও কাহতানি। কাহতানিরা প্রাচিন বিশুদ্ধ আরব গোষ্ঠী ও সংখ্যায়ও তারা বিশাল। পুরো ইয়েমেনের আানচে কানাচে তাদের বাস। আবরাহাকে হতাশ হতে হলো, আরবের কেউ এলো না কাবা ঘর ও ওকাজ মেলা চালু থাকতে তার উদ্দেশ্যা, তা বাস্তবায়িত হবার কোন সম্ভাবনা নেই। আবরাহার মত ঘাসানি খৃষ্টানরাও একই উদ্দেশ্যে রাজধানী হিরাতে এরকম একটা গির্জা বানিয়েছিল অঢেল সেটাও আরবদের টানতে ব্যর্থ হয়। কাবা ছেড়ে আরবের কোন গোত্রই সেদিকে যায়নি। 

   আবরাহার স্বিদ্ধান্তে মক্কাবাসীরা ক্ষুব্ধ। মুর্তিপূজক হলেও তারা কাবাকে আল্লাহর ঘর হিসেবে সম্মান করতো। এই ঘর ও জমজমকে ঘিরে তাদের জীবন ও সমাজ পরিচালিত হতো। বস্তুত আশে পাশে এদুটোর কারণেই  মক্কাবাসীর এতো কদর। সেই কাবার ধ্বংসে মক্কাবাসীরা সঙ্গতকারণেই নিজেদের স্বার্থহানী দেখেছে। বস্তুত আবরাহার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে পারলে মক্কাবাসীর অস্তিত্তই বিপন্ন হবে। 

    আরবরা আবরাহার আহ্বানে সাড়া দিল না। তার সেই দৃষ্টিনন্দন গির্জা সেরকমই পড়ে রইলো। এরইমধ্যে এক বেদুঈন যুবক মক্কা থেকে ইয়েমেনে গিয়ে গোপনে এক রাতে সেই গির্জায় মলত্যাগ করে আসলে আবরাহা অপমানে, রাগে ফেটে পড়ে। কাবা ধ্বংস না করে সে ছাড়বে না! (সংক্ষেপকৃত)
------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ও বিশ্লেষক।              

Post a Comment

0 Comments