Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৩৯ নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।


                বিতি কিচ্ছা,
                          পর্ব-৩৯;


ভাল থাকতে দিলানা লো সই-

    একটি ধ্বংসোন্মুখ জাতিকে ধ্বংসের অতল থেকে টেনে তুলে আনবে -এমন পুরুষ আজ সমাজে বিরল। প্রতিটি মানুষ আজ এতোটা আত্মকেন্দ্রিক ও ভীতু যে, অতীতের কোন অধ্যায়ই আজ তাকে আন্দোলিত করতে পারে না। বর্তমানকে স্বীয় স্বার্থের অনুকুলে নিয়ে হিসাব নিকাশ করাই আজ বুদ্ধিমানের কাজ। সিসিটিবির ক্যামেরাকে ফাঁকি দিতে পারলেই আসল চেহারায় আভির্ভুত হতে দেরী করে এমন বোকা আবার থাকে কোথায়? অতঃপর শতভাগ চুরের খনিতে মাথা মেরে উন্নয়নের মহাসড়কে গতিশীল গুটিকয়েক মানুষ আজ যার পর নাই উল্লোসিত। চব্বিশ বছরের সরকারী চাকুরী জীবনে গড় পড়তা দৈনিক দুই কুটি টাকা লোপাট করে বহাল তবিয়তে আছেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। এদের একেক জনের হাতে সঞ্চিত অর্থের মধ্যে কম বেশী ত্রিশ হাজারেরও বেশী লোকের সচ্ছলতা লুক্কায়িত। ফলে গরীব জনগোষ্ঠী আজ দ্রুত গরীব হতে থাকলো। এদিকে ধনী বলতে এক শ্রেণীর ডাকাত ছাড়া আর কাউকে ভাবাই যায় না। এমন সোনার দেশ আজ পৃথীবির বুকে আছে কয়টা।

   অন্যদিকে রাষ্ট কর্তৃক নিরীহ জনগোষ্ঠীর উপর অনৈতিক অর্থনৈতিক চাপ- যা অসহনীয় পর্যায়ে আছে বলে ভূক্তভোগীদের অভিমত। এ,আই,টি (এডভান্স ইনকাম টেক্স) নামে মড়ার উপর খাড়ার ঘা সমেত চাপ- যা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অপাত্রে প্রয়োগ হচ্ছে। অতিশয় স্বল্প আয়ের মানুষ যাদের উপর সর্বনিম্ন আয়কর বর্তায় না, তারা কেন এ,আই,টি প্রদান করবে? তারা কেন ছোট খাটো প্রয়োজনে রাজস্ব দিতে আগ্রহী হয়ে অতিরিক্ত একটি বোঝা কাধে বহন করবে। যা বহন করার সাধ্যই তার নাই। ফলত সুশীল ও আগ্রহী রাজস্ব দাতাদের অনেকেই এখন রাজস্ব প্রদানে আগ্রহ হারাচ্ছে।

এমন দেশে রেল গাড়ী চড়তে হলে লাইনে দাড়ালে টিকিট নাই। তবে কালোবাজারে টিকেটের কোন অভাবই নাই। আবার বিনে টিকিটে ভ্রমনের জন্য কর্তা ব্যক্তির ঈশারা অগ্রাহ্য করলে হেনস্তার সীমা নাই। এই আমাদের সোনার খনি। স্বচ্ছ যদি চলতে চাও- চলতে দেয়া হবে না। দু'নাম্বারি করতে চাও- তুমিই হবে এক নাম্বার। ঘুষ বখশিস না দিলে গোদামে মাল পচে যাবে, খালাস হবে না। তাইতো গ্লাক্সোর মত বিশ্ব খ্যাত কোম্পানি আজ এই মুলুকে থাকতেই নারাজ। আর ভৈরবে দেশীয় ডিমওয়ালার তিন লাখ টাকার চালান উল্টে দিলে পুলিশের বাপের কিইবা আসে যায়। গ্ল্যাক্সোতো চলে গেল, কিন্তু বেটা ডিমওয়ালা আর যাবে কই দেশ ছেড়ে।

এক কথায় নৈতিক মানে দু' নাম্বার হতে না পারলে এই মুলুকে কাউকে ভাল থাকতে দেয়া হবে না - এটাই আজকের বাস্তবতা।

হালে বহুল বাজার পাওয়া একটি গান আছে," মধু কই কই বিশ খাওয়াইলা"। গানটি হয়ত নতুন কিন্তু একটি দীর্ঘ ইতিহাসের বিষয়বস্তু লুক্কায়িত এই গানটিতে। দীর্ঘ প্রায় অর্ধ শত বৎসর ধরে আমাদের কর্তাব্যক্তিগন বিভিন্ন নামে আমাদের সামনে উন্নয়নের মুলা ঝুলিয়ে মধুর ভঙ্গিমায় পান করিয়েছেন। আমরা আশার আশায় বহিয়া বহিয়া, বিশ্বাসের রেলগাড়ি চড়িয়া চড়িয়া, নানান স্বপ্নের জাল বুনিয়া এই সব বস্তাপচা মুলাকে মুল্য দিয়া যার পর নাই হইলাম প্রতারিত। আজ এই অবেলায় আসিয়া দেখিনু দাঁড়ায়ে, সব স্বপ্ন মোর ধুলোয় গড়ায়ে কাদিতেছে অবিরত। এদিকে আমলারা গামলা ভর্তি মুদ্রা পাচার কাজে মনের সুখে জড়িত থাকিয়া আখের গোছাতে ভুল করছেন না কেউই। এতে দেশ ও জাতীর বারোটা বাজলে কার কি আসে যায়। বিদেশের মাটিতে বিলাসবহুল অট্টালিকা নির্মান করে তথায় পাড়ি জমাবার দিনক্ষন হিসাব নিকাশের আনন্দই আলাদা। জনসাধারণকে আসলেই তারা মধু কই কই কী যে খাওয়াইলা। দিনে দিনে উন্নয়নের মুলা ঝুলাইয়া রসাতল দিলা।

তবে দুদকের সাথে তাল মিলিয়ে কিছু কিছু আধা পাগল এখনও এমন গান গায়," এক সাগর রক্তের সাথে বে-ঈমানী করে, বাংলার বারোটা বাজাইলো যারা, আমরা তোমাদের ছাড়বো না।"

কিন্তু ছাড়বোনা কইলেই কি আর পাকড়াও হয়ে যায়? প্রতিপক্ষ বলতে প্রায় শতভাগ চুরের খনিতে মুষ্টিমেয় দু' একজন দুদকওয়ালাদের অসহায় আর্তি ছাড়া আর কোন কিছুই বাতাসে ভেসে উটার লক্ষণ দেখা যায় না। এমতাবস্থায় যারা অতি কষ্ট করে হলেও ভাল থাকতে চায় - তারা যার পর নাই আশাহত।
-------------------------------------------------------------
 

Post a Comment

0 Comments