Recent Tube

দ্যা চয়েস ইজ ইউরস-১৪; জিয়াউল হক।

 
          দ্যা চয়েস ইজ ইউরস
                    পর্ব-১৪,
                 
    তাঁর মধ্যে এই ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন দেখা না দেবার একমাত্র কারণ হলো মহান আল্লাহ পাক, তাঁকে ও তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকে এরকম পরিস্থিতি থেকে সম্পূর্ণ হেফাজত করেছেন। আর এর পাশাপাশি আমাদের ক্ষুদ্র বিবেচনায় ডিপ্রেশন জেঁকে না বসার যে কালন দেখতে পাই, সটো হলো তাঁর মধ্যে ঐ কোপিং মেকাজিনজমের সঠিক মাত্রায় বিদ্যমান থাকার বিষয়টি।
এই যে ‘কোপিং মেকানিজমে’র কথা বললাম, এর জন্য বেশ কিছু উপাদান মানুষের প্রয়োজন হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ‘আশা’ (Hope)। 

    আশা না থাকলে মানুষের জীবন ধারন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই আশাই তাকে বাঁচিয়ে রাখে। যে কোন বৈরি পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে অনুকুল পরিস্থিতির অপেক্ষায় থাকার এবং সম্ভাব্য সকল শক্তি ও রসদ দিয়ে বৈরিতাকে মোকাবেলা করে ভালো সময় তৈরি করে নেবার সাহস জোগায়। 

   তাই ‘আশাবাদী’ হওয়াটা বা হতে পারাটা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় যে তিরিশটা বা একত্রিশটা কোপিং মেকানিজম রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা।

    সহসাই স্বামী ফিরে আসবেন, এ আশা ছাড়াও আরও একটা বিরাট আশা ইতোমধ্যেই মা আমিনার মনে দাঁনা বেঁধেছে সবার অলক্ষ্যে। কেউ তা জানে না, জানেন মাত্র দু’টো প্রাণ; মা আমিনা আর কিশোরী উম্মে আইমান। 

    সিরিয়ার উদ্দেশ্যে আব্দুল্লাহ যাত্রা করার সপ্তাহখানেক না যেতেই আমিনা এক রাতে স্বপ্নে দেখলেন, আকাশ থেকে উজ্জল একটা তারকা চারিদিক আলো করে উড়ে এসে পড়লো তার কোলে। ঘুম ভেঙ্গে যেতেই তিনি বারাকাহকে তাঁর অদ্ভূত এ স্বপ্নের কথাটা বললেন। তা শুনে বারাকাহ হেসে বলে উঠলেন; ‘আমার কি মনে হয় জানেন? মনে হয় আপনার একটা সুন্দর সন্তান হবে।’

    এমনকি, তিনি স্বপ্নে এমন নির্দেশও পান যে, তাঁর সন্তানের নাম যেন ‘আহমদ’ রাখা হয়। স্বপ্ন তো স্বপ্নই। তবে তার একটা স্থায়ী বা অস্থায়ী ছাপ অবশ্যই রয়েছে মানুষের মনের উপরে, তার বিশ্বাস ও কর্মকান্ডের উপরে। স্বপ্নকে কে কতোটা বিশ্বাস করবে বা না করবে, সেটা নির্ভর করে ব্যক্তি, সমাজ ও সংস্কৃতিক বোধ বিশ্বাসের উপরে। 

   আরব সমাজে স্বপ্নকে বিরাট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হতো। এখনও হয়। আমাদের সমাজ’সহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি সমাজেই হয়ে থাকে। দেড় হাজার বছর আগেকার সেই মধ্যযুগীয় সমাজে এর ব্যাপকতা ছিল আজকের চেয়ে অনেক বেশি।

   তা ছাড়া, ইসলাম বলে মু’মিনের স্বপ্ন নবুওয়তের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ। সব স্বপ্ন না হলেও কোন কোন স্বপ্ন এবং কারো কারো স্বপ্ন সত্য হয়ে পরবর্তিতে ফলে যায়। আমাদের প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই কোন না কোন পর্যায়ে এরকম অভিজ্ঞতা রয়েছে। 

    মা আমিনাও এরকম বেশ কিছু স্বপ্ন দেখেন। তার মধ্যে অন্যতম একটা স্বপ্নের কথা ইবনে সাদের লেখা থেকে মা আমিনার উদ্ধৃতি দিয়ে সুদানের জুবা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চ্যন্সেলর, বর্তমানে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ লেস্টার, ইংল্যান্ডের প্রখ্যাত সীরাত গবেষক ও ঐতিহাসিক প্রফেসর ড: জাকারিয়া বশির তাঁর লেখা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। উক্ত গ্রন্থ থেকেই তুলে দিচ্ছি দেখুন;
   I did not feel that I was pregnant, --- -- -- - words and respect them.
ভাবানূবাদ: আমার মনেই হয়নি যে, আমি গর্ভবতি হয়েছি। গর্ভাবস্থায় নারীরা সাধারণত যেমন ভার বোধ করে আমার ক্ষেত্রে তেমনটাও হয়নি। তবে, মাসিক বন্ধ হয়ে যাবার কারণে আমি এক ধরনের গোলকধাঁধাঁর মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো এটা আবার শুরু হয়ে যাবে। 
একবার ঝিমুনির মতো ঘুম ঘুম ভাব এলে একটা স্বপ্ন দেখলাম। আমাকে বলা হলো; তুমি কি বুঝতে পারছো যে, তুমি গর্ভবতী হয়ে পড়েছো? বললাম, তা তো জানি না! আবার বলা হলো; তুমি এই জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব আর পয়গম্বরকে গর্ভে ধারণ করেছো। 

  এর পরে প্রসবের সময় হওয়া পর্যন্ত (স্বপ্নটা) আর ফেরত আসেনি। প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলে একদিন আবার স্বপ্নে এসে আমাকে কয়েকটা বাক্য শিখিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি বলো; আমি একে (গর্ভের সন্তানকে) সকল অকল্যাণ এবং হিংসুকের সমস্ত অনিষ্ঠতা থেকে সেই চীরঞ্জীব একক সত্তার আশ্রয়ে তুলে দিলাম সবাই যাঁর আশ্রয় প্রার্থনা করে।’ এর পর থেকে আমি ভক্তিভরে নিয়মিত এই দোওয়া করতাম।’ 

    মা আমিনা যখন গর্ভবতি, তখন তাঁর কোন শারিরিক কষ্ট ও ক্লেশ ছিল না, বা হলেও তা খুবই নগণ্য ছিল। একজন নারী হিসেবে এরকম কষ্ট ক্লেশহীন গর্ভধারণ তাঁর জন্য শারিরিকভাবে তো বটেই, এমনকি, মানসিকভাবেও অনেকটা স্বস্তিদায়ক হয়েছিল, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

      আমরা ইতোমধ্যেই দেখেছি যে, পুরো আরব সমাজই একজন পয়গম্বরের আগমণের প্রতিক্ষায় রয়েছে। পয়গম্বর একজন আসবেন এ সমাজে, প্রচলিত এরকম কথা সবাই’ই শুনেছেন। অনেকে তা বিশ্বাসও করতেন। কেউ কেউ তো আবার সেই মহান পয়গম্বর কোন বংশ ও পরিবারে, কার ঔরসে জন্ম নেবেন, তাও সুনির্দিষ্ঠ করে বলেছেন, পরবতিতে যা সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

     মা আমিনা প্রচলিত এসব বিশ্বাস ও ধারণা খুব ভালো করেই অবহিত ছিলেন মক্কাবাসী অন্যদের মতো। আর এর পাশাপাশি তাঁর নিজের জীবনেই এখন যেসব আশ্চর্যজনক বিষয় ঘটে চলেছে, সে সব মিলিয়ে দেখলে তার মনে এক বিষ্ময়কর আশা জাগারই কথা। 

   এই আশার পাশাপাশি স্বামীও খুব সহসাই বাণিজ্য সফর থেকে ফিরে আসছেন, সেই আশাও তাঁকে সুস্থ থাকতে প্রয়োজনীয় মানসিক শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে। স্বামীকে দেখার ও তাঁর কাছে এইসব স্বপ্নের কথাগুলো বলার আশায় তিনি ব্যাকুল হয়ে দিন গুনছেন। 

     আর তা ছাড়া ভাসুর হারিস ইয়াসরিব থেকে স্বামীকে নিয়ে ফিরে আসার সময়ও হয়ে গেছে। কাজেই তাঁর অপেক্ষা এখন আগের যে কোন সময়ের চেয়ে আরও বেশি কষ্টকর হয়ে উঠেছে! (ক্রমশ; প্রকাশিতব্য গ্রন্থ থেকে সংক্ষিপ্তকৃত)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ও বিশ্লেষক।          

Post a Comment

0 Comments