Recent Tube

জিহাদ ছেড়ে দেয়া মুসলিমদের ধ্বংসের কারণ অন্তরের রোগের ফলে যুদ্ধ জিহাদকে ভয় করেঃ ----শামীম আজাদ।

 জিহাদ ছেড়ে দেয়া মুসলিমদের ধ্বংসের কারণ ;
অন্তরের রোগের ফলে যুদ্ধ জিহাদকে ভয় করেঃ
---------------------------- 

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন;
وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ وَأَحْسِنُوا ۛ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না। আর তোমরা ইহ্‌সান কর। নিশ্চয় আল্লাহ মুহ্‌সীনদেরকে ভালবাসেন। 
সূরাআল-বাকারাহ্‌: ১৯৫

“ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করা” বলতে কি বোঝানো হয়েছে? এ প্রসঙ্গে মুফাসসিরগণের অভিমত বিভিন্ন প্রকার। কারো নিকট এর অর্থ হল, আল্লাহর পথে ব্যয় না করা। কেউ বলেছেন, জিহাদ না করা। আবার কেউ বলেছেন, অব্যাহতভাবে পাপ করা। আর এর সবগুলোই ধ্বংস ডেকে আনে। যদি জিহাদ পরিত্যাগ কর অথবা জিহাদে সম্পদ ব্যয় করা থেকে বিরত থাকো, তাহলে শত্রুরা শক্তিশালী হবে এবং তোমরা হবে দুর্বল, ফলে ধ্বংস হতে হবে। এ আয়াত নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সহীহ হাদীসে এসেছে; আবূ আইয়ুব আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন;
إِنَّمَا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ فِينَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ لَمَّا نَصَرَ اللَّهُ نَبِيَّهُ، وَأَظْهَرَ الْإِسْلَامَ قُلْنَا: هَلُمَّ نُقِيمُ فِي أَمْوَالِنَا وَنُصْلِحُهَا، فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: {وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ} فَالْإِلْقَاءُ بِالْأَيْدِي إِلَى التَّهْلُكَةِ أَنْ نُقِيمَ فِي أَمْوَالِنَا وَنُصْلِحَهَا وَنَدَعَ الْجِهَادَ ، قَالَ أَبُو عِمْرَانَ: فَلَمْ يَزَلْ أَبُو أَيُّوبَ يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَتَّى دُفِنَ بِالْقُسْطَنْطِينِيَّةِ
এ আয়াত আমাদের আনসারদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁর নবী (ﷺ)-কে সাহায্য করলেন এবং দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন। তখন আমরা বললাম, এসো! ‘এখন আমরা নিজেদের গৃহে অবস্থান করে ধন-সম্পত্তির দেখাশুনায় মনোযোগী হই।’ তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন; “তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না।” 
সূরা আল-বাকারাহঃ ১৯৫

আমাদের নিজের হাতকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করা অর্থ হচ্ছে, ধন-সম্পদ নিয়েই ব্যস্ত থাকা। এর পরিবৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করা এবং জিহাদ ছেড়ে দেয়া। আবূ ইমরান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এরপর থেকে আবূ আইয়ূব আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু সর্বদা মহান আল্লাহর পথে জিহাদে অংশ নিতেন, অবশেষে তিনি জিহাদ করতে করতে ইস্তাম্বুলে শহিদ হন। (আবু দাউদ ২৫১২, তিরমিযী ২৯৭২, সহীহ)
.
অপর হাদীসে ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, 
إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِينَةِ، وَأَخَذْتُمْ أَذْنَابَ الْبَقَرِ، وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ، وَتَرَكْتُمُ الْجِهَادَ، سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ذُلًّا لَا يَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ
যখন তোমরা ঈনাহ পদ্ধতিতে ব্যবসা করবে, গরুর লেজ আঁকড়ে ধরবে, কৃষিকাজেই সন্তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা ও অপমান চাপিয়ে দিবেন। তোমরা তোমাদের দ্বীনে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদেরকে এই অপমান থেকে মুক্তি দিবেন না। (আবূ দাউদ ৩৪৬২, সহিহ)

অন্তরের রোগের ফলে যুদ্ধ জিহাদকে ভয় করেঃ
===============================
وَيَقُولُ الَّذِينَ آمَنُوا لَوْلَا نُزِّلَتْ سُورَةٌ ۖ فَإِذَا أُنْزِلَتْ سُورَةٌ مُحْكَمَةٌ وَذُكِرَ فِيهَا الْقِتَالُ ۙ رَأَيْتَ الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ يَنْظُرُونَ إِلَيْكَ نَظَرَ الْمَغْشِيِّ عَلَيْهِ مِنَ الْمَوْتِ ۖ فَأَوْلَىٰ لَهُمْ طَاعَةٌ وَقَوْلٌ مَعْرُوفٌ ۚ فَإِذَا عَزَمَ الْأَمْرُ فَلَوْ صَدَقُوا اللَّهَ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ
যারা ঈমান এনেছে তারা বলে, ‘একটি সূরা নাযিল করা হয় না কেন?’ অতঃপর যদি সুস্পষ্ট মর্মবিশিষ্ট কোন সূরা নাযিল হয় এবং তাতে যুদ্ধের কোন নির্দেশ থাকে, তখন তুমি দেখবে, যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা মৃত্যুভয়ে বিহ্বল মানুষের মত তোমার দিকে তাকাচ্ছে। সুতরাং তাদের জন্য উত্তম হতো, আনুগত্য করা ও ন্যায়সঙ্গত কথা বলা। সুতরাং জিহাদের সিদ্ধান্ত হলে যদি তারা আল্লাহর প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করত তাহলে তাদের জন্য তা কল্যাণকর হতো।
সূরা মুহাম্মাদ: ২০-২১

অন্য আয়াতে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে;
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ قِيلَ لَهُمْ كُفُّوا أَيْدِيَكُمْ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ يَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْيَةِ اللَّهِ أَوْ أَشَدَّ خَشْيَةً ۚ وَقَالُوا رَبَّنَا لِمَ كَتَبْتَ عَلَيْنَا الْقِتَالَ لَوْلَا أَخَّرْتَنَا إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ ۗ قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِمَنِ اتَّقَىٰ وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلً
তুমি কি তাদেরকে দেখনি যাদেরকে বলা হয়েছিল, তোমরা তোমাদের হস্ত সংবরণ করো এবং সলাত কায়েম কর ও যাকাত প্রদান কর? অতঃপর যখন তাদেরকে যুদ্ধের বিধান দেয়া হলো, তখন তাদের একদল, মানুষকে ভয় করতে লাগল, আল্লাহকে ভয় করার মতো অথবা তার চেয়েও বেশী ভয়। আর বলল, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান কেন দিলেন? আমাদেরকে কিছু দিনের অবকাশ কেন দিলেন না’? তুমি বল, ‘পার্থিব ভোগ অতি সামান্য আর যে তাকওয়া অবলম্বন করে তার জন্য আখিরাতই উত্তম। আর তোমাদের প্রতি সূতা পরিমাণ যুলমও করা হবে না’। 
সূরা আন-নিসা: ৭৭
--------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।            

Post a Comment

0 Comments