Recent Tube

মাযহাব প্রেমীদের আসল রূপঃ; -মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম

মাযহাব প্রেমীদের আসল রূপঃ
-----------------------------------
ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহঃ) মাযহাব সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে যা বলেছিলেন তার সারাংশ হল, আমাদের দেশের কেউ মাযহাব মানে না। লামাযহাবীরাও মাযহাব মানে না, মাযহাবীরাও মাযহাব মানে না। মাযহাবী, লামাযহাবী তারা প্রত্যেকেই তাদের দলীয় অালেমদের অনুসরণ করে। তাই দেখবেন বাংলাদেশের হানাফি মাযহাবের সাথে তুরস্ক, মালয়েশিয়া বা অন্য দেশের হানাফি মাযহাবের অনেক ইখতিলাফ পাবেন। আবার বাংলাদেশে যারা হানাফি (কাওমী, সুন্নী) তাদের মধ্যেও অনেক ইখতিলাফ পাবেন।  লামাযহাবীদের বিষয়েও একই কথা।
এ কথা ষোলআনা সত্য। যারা লামাযহাবীদের মাযহাব বিদ্বেষী বলে গালী দেয় তারাও মাযহাব বিদ্বেষী। যার কারণে অন্য কোনো মাযহাবের মত কেউ প্রকাশ করলেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তার উপর ফতোয়াবাজী শুরু করে দেয়। মিজানুর রহমান আযজারীর ব্যাপারে তারা এ কাজটিই করেছেন। আযহারীর কোনো দোষ নয়, দোষ হল কেন এমন ফতোয়া দেওয়া হয় যা তাদের নিজেস্ব মতের সাথে মেলে না? শুধু তাই নয়, তাদের মতের সাথে না মিললে হানাফি মাযহাবের বড় বড় ইমাম ও ফকীহর মতের বিরোধীতা করে এবং তাঁদের ফাসিক ও বিদয়াতি প্রমাণ করতেও দ্বিধা করে না। এ বিষয়ে একাধিক উদাহরণ দেওয়া যায়। তবে এখানে আমি একটি উদাহরণ পেশ করছি। আমরা জানি যে, এদেশের কথিত হানাফি ভাইয়েরা দাড়ির ব্যাপারে একমুষ্ঠি সীমানা নির্ধারণ করেছেন। অর্থাৎ তাদের মতে কমপক্ষে একমুষ্ঠি দাড়ি রাখা ওয়াজিব, যদিও এ বিষয়ে তাদের নিকট ওয়াজিবের কোনো দলিল নেই তবুও তারা ইজমার দাবী করেছেন। এর ব্যতিক্রম ফতোয়াদাতাকে ও আমলকারীকে তারা ফাসিক বলে ফতোয়া দেয়। 
এক প্রশ্নের জবাবে যখন আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেনঃ
"দাড়ি ব্যাপারে নবী (সা) কোন পরিমাণ নির্ধারণ করেন নি। শুধু এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, দাড়ি বাড়াতে হবে। আপনি যদি ফাসিক লোকের ফ্যাসান থেকে দূরে থাকতে চান, তাহলে অন্তত এতটুকু পরিমাণ দাড়ি রেখে দেন, যা দেখে সমাজের সাধারণ লোকেরা বুঝতে পারে যে, আপনি দাড়ি রেখেছেন।" (রাসায়েল মাসায়েল, ১/১১৩ এবং ৭/২০) তখন থেকে আমাদের মাযহাবী প্রেমী কিছু লোক তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ফতোয়া ছুড়তে শুরু করল। অথচ  হানাফি ও শাফেয়ী মাযহাবের বড় বড় ফকীহ ও ইমাম এই ফতোয়াই দিয়েছেন।
.
বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস, সহীহ বুখারীর প্রসিদ্ধ ভাষ্যকার, হানাফি মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফকিহ, শ্রদ্ধেয় ইমাম, হাফেজে হাদীস, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর বিখ্যাত কিতাব, বুখারীর শরাহ, "উমদাতুল ক্বারী"র 'কিতাবুল লেবাস' 'বাবু তাকলিমীল আযফার' এ দাড়ি রাখা বিষয়ক হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শাফিয়ী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও ফকিহ ইমাম তাবারী রাহিমাহুল্লাহ এর বরাতে বলেনঃ
ﻗﺪﺛﺒﺖ ﺍﻟﺤﺠﺔ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻠﻲ ﺧﺼﻮﺹ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺨﺒﺮ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﺤﻴﺔ ﻣﺤﻈﻮﺭ ﺍﻋﻔﺎﺀﻣﺎ ﻭﺍﺟﺐ ﻗﺼﻬﺎ ﻋﻠﻲ ﺍﺧﺘﻼﻑ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﻓﻲ ﻗﺪﺭ ﺫﻟﻚ ﻭﺧﺪﻩ ﻓﻘﺎﻝ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﺣﺬ ﺫﻟﻚ ﺍﻥ ﻳﺰﺍﺩ ﻋﻠﻲ ﻗﺪﺭ ﺍﻟﻘﺒﻀﺔ ﻃﻮﻻ ﻭﺍﻥ ﻳﻨﺘﺸﺮ ﻋﺮﺿﺎ ﻓﻴﻘﺒﺢ ﺫﺍﻟﻚ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺧﺮﻭﻥ ﻳﺄﺧﺬﻩ ﻣﻦ ﻃﻮﻟﻬﺎ ﻭﻋﺮﺿﻬﺎ ﻣﺎﻟﻢ ﻳﻔﺤﺶ ﺍﺧﺬﻩ ﻭﻟﻢ ﻳﺠﺪﻭﺍ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺣﺬﺍ .
"রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে এ কথা প্রমাণ আছে যে, (দাড়ি লম্বা করা) হাদীসের অর্থ একেবারেই ছেড়ে দেওয়া নয় বরং এর মধ্যে একটা সীমাবদ্ধতা আছে। দাড়ি স্বতঃস্ফূর্তভাবে লম্বা হতে দেয়া নিষিদ্ধ। বরং তা কাটছাট করে সাইজমত রাখা ওয়াজিব। তবে এতে সালফে সালেহীনদের মধ্যে এ সম্পর্কে মতভেদ বিদ্যমান রয়েছে। কেউ বলেছেন, দাড়ির দৈর্ঘ্য এক মুঠোর চেয়ে লম্বা হবে এবং প্রস্থে এমন ভাবে যেন ছড়িয়ে না পড়ে যাতে দৃষ্টিকটু মনে হয়।.... অন্যান্য ফকীহগণ বলেছেন যে, দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ছাটবে কিন্তু খুব বেশি খাটো করবে না। তবে তাঁরা এ ব্যাপারে কোন সীমা নির্ধারণ করেন নি।"
 
অতঃপর আল্লামা আইনী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
ﻏﻴﺮﺍﻥ ﻣﻌﻨﻲ ﺫﻟﻚ ﻋﻨﺪﻱ ﻣﺎﻟﻢ ﻳﺨﺮﺝ ﻣﻦ ﻋﺮﻑ ﺍﻟﻨﺎﺱ -
"আমার মতে এর অর্থ হলো দাড়ি এ পর্যন্ত ছাটা জায়েজ, যে পর্যন্ত লোক সমাজের প্রচলিত রীতি বহির্ভূত না হয়।" (উমদাতুল ক্বারী শরহে সহীহুল বুখারী, খণ্ড: ১৮, পৃঃ ৯১)
.
আপনারা নিশ্চয় একমত হবেন যে, ইসলাম ও মাযহাব প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে ইমাম তাবারী ও ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (রাহঃ) এর অবদান অনস্বীকার্য এবং তাঁদের ইলমের কাছে আমাদের দেশীয় হানাফি আলেম একেবারেই নগণ্য। এখন বলেন, আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) বিরোধীতা করতে গিয়ে আমাদের দেশীয় হানাফি ভাইয়েরা কি  ইমাম তাবারী ও আইনী (রাহঃ) এর মত জগৎ বিখ্যাত ইমামদেরকে ফাসিক বলে ফতোয়া দিচ্ছেন না? এমনতাবস্থায় তাদের কি বলবেন- মাযহাব প্রেমী, না মাযহাব বিদ্বেষী?

Post a Comment

0 Comments