Recent Tube

তাফসীর ও হাদীসের উপর আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) গভীর ইলমের অধিকারী ছিলেন: ভাস্কর্য বিষয়ে তাফসীরে তার যথেষ্ট প্রমাণ মিলেঃ তানজিল ইসলাম।

তাফসীর ও হাদীসের উপর আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) গভীর ইলমের অধিকারী ছিলেন: ভাস্কর্য বিষয়ে তাফসীরে তার যথেষ্ট প্রমাণ মিলেঃ
-------------------------------------
আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
يَعْمَلُونَ لَهُ مَا يَشَاءُ مِنْ مَحَارِيبَ وَتَمَاثِيلَ وَجِفَانٍ كَالْجَوَابِ وَقُدُورٍ رَاسِيَاتٍ ۚ 
তারা তৈরী করত সুলাইমানের ইচ্ছানুযায়ী তার জন্য প্রাসাদ, ভাস্কর্য, সুবিশাল হাউযের মত বড় পাত্র ও অনড় বৃহদাকার ডেগসমূহ। (সূরা সাবা: ৩৪/১৩)

 এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) তাঁর প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ তাফহীমুল কুরআনে লেখেন, 
মূলে ﺗَﻤَﺎﺛِﻴﻞَ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এটি ﺗﻤﺜﺎﻝ শব্দের বহু বচন। আল্লাহর সৃষ্ট জিনিসের মতো করে তৈরি করা প্রত্যেকটি জিনিসকে আরবীতে বলে। এসব জিনিস মানুষ, পশু, গাছ, ফুল, নদী বা অন্য যে কোন নিষ্প্রাণ জিনিসও হতে পারে।
ﺍﻟﺘﻤﺜﺎﻝ ﺍﺳﻢ ﻟﻠﺸﺊ ﺍﻟﻤﺼﻨﻮﻥ ﻣﺸﺒﻬﺎ ﺑﺨﻠﻖ ﻣﻦ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ ‏(ﻟﺴﺎﻥ ﺍﻟﻌﺮﺏ )
“এমন প্রত্যেকটি কৃত্রিম জিনিসকে তিমসাল বলা হয় যা আল্লাহর তৈরি করা জিনিসের মতো করে তৈরি করা হয়েছে।”
ﺍﻟﺘﻤﺜﺎﻝ ﻛﻞ ﻣﺎﺻﻮﺭ ﻋﻠﻰ ﺻﻮﺭﺓ ﻏﻴﺮﻩ ﻣﻦ ﺣﻴﻮﺍﻥ ﻭﻏﻴﺮ ﺣﻴﻮﺍﻥ -
“এমন প্রত্যেকটি কৃত্রিম আকৃতিকে তিমসাল বলা হয়, যা অন্য কোন জিনিসের আকৃতি অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে, তা সপ্রাণ ও নিষ্প্রাণ যাই হোক না কেন।” (তাফসীরে কাশশাফ)
এ কারণে কুরআন মজিদের এ বর্ণনা থেকে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের জন্য যে ভাস্কর্য বা ছবি তৈরি করা হতো তা মানুষের ও প্রাণীর ভাস্কর্য অথবা তাদের মূর্তি হওয়াটা অপরিহার্য ছিল না। হতে পারে হযরত সুলাইমান (আ) নিজের ইমারতগুলো যেসব ফুল, পাতা, প্রাকৃতিক দৃশ্য ও কারুকাজে শোভিত করেছিলেন সেগুলোকেই তামাসীল বলা হয়েছে।

 হযরত সুলাইমান (আ) ফেরেশতা ও নবীদের ছবি অংকন করিয়েছিলেন, কোন কোন মুফাসসিরের এ ধরনের বক্তব্যই বিভ্রান্তির উদগাতা। বনী ইসরাঈলের পৌরাণিক বর্ণনাবলী থেকে তাঁরা একথা সংগ্রহ করেন এবং তারপর এর ব্যাখ্যা এভাবে করেন যে, পূর্ববর্তী শরীয়াতগুলোতে এ ধরনের ভাস্কর্য তৈরি করা নিষিদ্ধ ছিল না। কিন্তু কোন প্রকার অনুসন্ধান না করে এ বর্ণনাগুলো উদ্ধৃত করার সময় এ মনীষীবৃন্দ একথা চিন্তা করেননি যে, হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম যে মূসার শরীয়াতের অনুসারী ছিলেন সেখানেও শরীয়াতে মুহাম্মাদীর ﷺ মতো মানুষের ও প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণ একই পর্যায়ে হারাম ছিল। আর তারা একথাও ভুলে যান যে, বনী ইসরাঈলের একটি দলের তাঁর সাথে শত্রুতা ছিল এবং এরই বশবর্তী হয়ে তারা শিরক, মূর্তি পূজা ও ব্যভিচারের নিকৃষ্টতম অপবাদ তাঁর প্রতি আরোপ করে। তাই তাদের বর্ণনার ওপর নির্ভর করে এ মহিমান্বিত পয়গম্বর সম্পর্কে এমন কোন কথা কোন ক্রমেই মেনে নেয়া উচিত নয় যা আল্লাহ‌ প্রেরিত কোন শরীয়াতের বিরুদ্ধে চলে যায়। একথা সবাই জানেন, হযরত মূসা আলাইহিমুস সালামের পরে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত ইসরাঈলে যত নবীই এসেছেন তাঁরা সবাই ছিলেন তাওরাতের অনুসারী। তাঁদের একজনও এমন কোন শরীয়াত আনেননি যা তাওরাতের আইন রদ করে দেয়। 

 এখন তাওরাতের প্রতি দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে সেখানে মানুষ ও পশুর মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণকে বারবার একেবারেই হারাম বলে ঘোষণা করা হচ্ছেঃ
“তুমি আপনার নিমিত্তে খোদিত প্রতিমা নির্মাণ করিও না; উপরিস্থ স্বর্গে, নীচস্থ পৃথিবীতে ও পৃথিবীর নীচস্থ জলমধ্যে যাহা যাহা আছে, তাহাদের কোন মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ করিও না।” ‍‌(যাত্রা পুস্তক ২০: ৪)
“তোমরা আপনাদের জন্য অবস্তু মূর্তি ভাস্কর্য নির্মাণ করিও না, না ক্ষোদিত মূর্তি ভাস্কর্য কিংবা স্তম্ভ স্থাপন করিও না, ও তাহার কাছে প্রণিপাত করিবার নিমিত্তে তোমাদের দেশে কোন ক্ষোদিত প্রস্তর রাখিও না।” (লেবীয় পুস্তক ২৬: ১)
“পাছে তোমরা ভ্রষ্ট হইয়া আপনাদের জন্য কোন আকারের মূর্তিতে ক্ষোদিত প্রতিমা নির্মাণ কর, পাছে পুরুষের বা স্ত্রীর প্রতিকৃতি, পৃথিবীস্থ কোন পশুর প্রতিকৃতি, আকাশে উড্ডীয়মান কোন পক্ষীর প্রতিকৃতি, ভূচর কোন সরীসৃপের প্রতিকৃতি, অথবা ভূমির নীচস্থ জলচর কোন জন্তুর প্রতিকৃতি তথা ভাস্কর্য নির্মাণ কর।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৪: ১৬-১৮)
“যে ব্যক্তি কোন ক্ষোদিত কিংবা ছাদে ঢালা প্রতিমা, সদাপ্রভুর ঘৃণিত বস্তু, শিল্পকরের হস্তনির্মিত ভাস্কর্য নির্মাণ করিয়া গোপনে স্থাপন করে, সে শাপগ্রস্ত।” (দ্বিতীয় বিবরণ ২৭: ১৫)
এ পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট বিধানের পর কেমন করে একথা মেনে নেয়া যেতে পারে যে, হযরত সুলাইমান (আ) জিনদের সাহায্যে নবী ও ফেরেশতাদের ভাস্কর্য তৈরি করার কাজ করে থাকবেন। আর যেসব ইহুদী হযরত সুলাইমানের বিরুদ্ধে অপবাদ দিতো যে, তিনি নিজের মুশরিকা স্ত্রীদের প্রেমে বিভোর হয়ে মূর্তি পূজা করতে শুরু করেছিলেন, তাদের বর্ণনার ওপর নির্ভর করে একথা কেমন করে মেনে নেয়া যায়। (দেখুন বাইবেলের রাজাবলী-১, ১১অধ্যায়)

  তবুও মুফাসসিরগণ বনী ইসরাঈলের এ বর্ণনা উদ্ধৃত করার সাথে সাথে একথাও সুস্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, মুহাম্মাদের ﷺ শরীয়াতে এটি হারাম। তাই এখন হযরত সুলাইমানের (আ) অনুসরণ করে ছবি ও ভাস্কর মূর্তি নির্মাণ করা কারো জন্য বৈধ নয়। কিন্তু বর্তমান যুগের কিছু লোক পাশ্চাত্যবাসীদের অনুকরণে চিত্রাংকন ও ভাস্কর্য নির্মাণকে হালাল করতে চান। তাঁরা কুরআন মজীদের এ আয়াতকে নিজেদের জন্য প্রমাণ হিসেবে গণ্য করছেন। তারা বলেন, একজন নবী যখন এ কাজ করেছেন এবং আল্লাহ‌ নিজেই যখন তাঁর কিতাবে একথা আলোচনা করেছেন এবং এর ওপর তাঁর কোন প্রকার অপছন্দনীয়তার কথা প্রকাশ করেননি তখন অবশ্যই তা হালাল হওয়া উচিত।

 পাশ্চাত্য সভ্যতার এসব অন্ধ অনুসারীর এ যুক্তি দু’টি কারণে ভুল। প্রথমত কুরআনে এই যে, “তামাসীল” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে এ থেকে সুস্পষ্টভাবে মানুষ ও পশুর মূর্তির অর্থ প্রকাশ হয় না। বরং এ থেকে নিষ্প্রাণ জিনিসের ছবিও বুঝা যায়। তাই নিছক এ শব্দটির ওপর ভিত্তি করে কুরআনের দৃষ্টিতে মানুষের ও পশুর ভাস্কর্য তথা মূর্তি হালাল এ বিধান দেয়া যেতে পারে না। দ্বিতীয়ত বিপুল সংখ্যক শক্তিশালী সনদযুক্ত মুতাওয়াতির হাদীস থেকে একথা প্রমাণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রাণী জাতীয় যে কোন জিনিসের ছবি নির্মাণ ও সংরক্ষণকে অকাট্যভাবে ও চূড়ান্তভাবে হারাম ঘোষণা করেছেন। এ প্রসঙ্গে নবী করীম (সাঃ) থেকে যেসব উক্তি প্রমাণিত হয়েছে এবং সাহাবীগণ থেকে যেসব বাণী ও কর্ম উদ্ধৃত হয়েছে সেগুলো আমি এখানে উল্লেখ করছিঃ

০১. উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। হযরত উম্মে হাবীবা (রা.) ও হযরত উম্মে সালামাহ (রা.) আবিসিনিয়ায় একটি গীর্জা দেখেছিলেন, তাতে ছবি ছিল। তাঁরা নবী করীম (সাঃ) কে একথা বলেন।
ﺇِﻥَّ ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻴﻬِﻢُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺢُ ﻓَﻤَﺎﺕَ ﺑَﻨَﻮْﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﺒْﺮِﻩِ ﻣَﺴْﺠِﺪًﺍ ، ﻭَﺻَﻮَّﺭُﻭﺍ ﻓِﻴﻪِ ﺗِﻠْﻚَ ﺍﻟﺼُّﻮَﺭَ ، ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﺷِﺮَﺍﺭُ ﺍﻟْﺨَﻠْﻖِ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ -
"তাদের অবস্থা এমন ছিল যে, যখন তাদের মধ্যে কোন সৎলোকের জন্ম হতো, তার মৃত্যুর পর তার কবরের ওপর তারা একটি উপাসনালয় তৈরি করতো এবং তার মধ্যে এ ছবিগুলো তৈরি করতো। কিয়ামতের দিন তারা আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি হিসেবে গণ্য হবে।” (বুখারীঃ সালাত অধ্যায়, মুসলিমঃ মসজিদ অধ্যায়, নাসায়ীঃ মসজিদ অধ্যায়)

০২. “আবু হুজাইফা (রাঃ) বলেন, 
ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟَﻌَﻦَ ﺍﻟْﻤُﺼَﻮِّﺭَ –
রসূলুল্লাহ (সাঃ) চিত্রকর্মের প্রতি লানত বর্ষণ করেছেন। (বুখারীঃ ব্যবসা-বাণিজ্য অধ্যায়, তালাক অধ্যায়, পোশাক অধ্যায়)

০৩. আবু যুর’আহ বলেন, একবার আমি হযরত আবু হুরাইরার (রা.) সাথে মদীনার একটি গৃহে প্রবেশ করলাম। দেখলাম, গৃহের ওপর দিকে একজন চিত্রকর চিত্র নির্মাণ করছে। এ দৃশ্য দেখে হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, মহান আল্লাহ‌ বলেন,
 ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﻇْﻠَﻢُ ﻣِﻤَّﻦْ ﺫَﻫَﺐَ ﻳَﺨْﻠُﻖُ ﻛَﺨَﻠْﻘِﻰ ﻓَﻠْﻴَﺨْﻠُﻘُﻮﺍ ﺣَﺒَّﺔً ، ﻭَﻟْﻴَﺨْﻠُﻘُﻮﺍ ﺫَﺭَّﺓً -
"তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে যে আমার সৃষ্টির অনুরূপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে! তারা একটি শস্যদানা অথবা একটি পিঁপড়ে বানিয়ে দেখাক তো।” (বুখারী: পোশাক অধ্যায়, মুসনাদে আহমাদ ও মুসলিমের বর্ণনায় পরিষ্কার হয়েছে, এটি ছিল মাওয়ানের গৃহ)

০৪. আবু মুহাম্মাদ হাযালী হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ ﷺ একটি জানাযায় শরীক হয়েছিলেন। তিনি বলেন,
َ ﺃَﻳُّﻜُﻢْ ﻳَﻨْﻄَﻠِﻖُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻤَﺪِﻳﻨَﺔِ ﻓَﻼَ ﻳَﺪَﻉُ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﺛَﻨﺎً ﺇِﻻَّ ﻛَﺴَﺮَﻩُ ﻭَﻻَ ﻗَﺒْﺮﺍً ﺇِﻻَّ ﺳَﻮَّﺍﻩُ ﻭَﻻَ ﺻُﻮﺭَﺓً ﺇِﻻَّ ﻟَﻄَّﺨَﻬَﺎ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺟُﻞٌ ﺃَﻧَﺎ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺎﻧْﻄَﻠَﻖَ ﻓَﻬَﺎﺏَ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟْﻤَﺪِﻳﻨَﺔِ ﻓَﺮَﺟَﻊَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻋَﻠِﻰٌّ ﺃَﻧَﺎ ﺃَﻧْﻄَﻠِﻖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺎﻧْﻄَﻠِﻖْ ﻓَﺎﻧْﻄَﻠَﻖَ ﺛُﻢَّ ﺭَﺟَﻊَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻢْ ﺃَﺩَﻉْ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﺛَﻨﺎً ﺇِﻻَّ ﻛَﺴَﺮْﺗُﻪُ ﻭَﻻَ ﻗَﺒْﺮﺍً ﺇِﻻَّ ﺳَﻮَّﻳْﺘُﻪُ ﻭَﻻَ ﺻُﻮﺭَﺓً ﺇِﻻَّ ﻟَﻄَّﺨْﺘُﻬُﺎ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣَﻦْ ﻋَﺎﺩَ ﻟِﺼَﻨْﻌَﺔِ ﺷَﻰْﺀٍ ﻣِﻦْ ﻫَﺬَﺍ ﻓَﻘَﺪْ ﻛَﻔَﺮَ ﺑِﻤَﺎ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ -
"তোমাদের মধ্যে কে আছে যে মদীনায় গিয়ে সকল মূর্তি ভেঙ্গে ফেলবে। সকল কবর ভূমির সমান করে দেবে এবং সকল ছবি নিশ্চিহ্ন করে দেবে? এক ব্যক্তি বললো, আমি এজন্য প্রস্তুত। কাজেই সে গেলো কিন্তু মদীনাবাসীদের ভয়ে এ কাজ না করেই ফিরে এলো। তখন হযরত আলী (রা.) নিবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি যাই? নবী করীম ﷺ বললেন, ঠিক আছে তুমি যাও। হযরত আলী (রা.) গেলেন এবং ফিরে এসে বললেন, আমি কোন মূর্তি না ভেঙ্গে কোন কবর ভূমির সমান না করে এবং কোন ছবি নিশ্চিহ্ন না করে ছাড়িনি। একথায় নবী করীম ﷺ বললেন, এখন যদি কোন ব্যক্তি এ জাতীয় কোন জিনিস তৈরি করে তাহলে সে মুহাম্মাদের ﷺ ওপর যে শিক্ষা অবতীর্ণ হয়েছে তার সাথে কুফরী করলো।" (মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম: জানাযাহ অধ্যায় এবং নাসাঈ: জানাযাহ অধ্যায়েও এ বিষয়বস্তু সম্বলিত একটি হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে)।

০৫. ইবনে আব্বাস (রা.) নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেছেন,
ﻭﻣَﻦْ ﺻَﻮَّﺭَ ﺻُﻮﺭَﺓً ﻋَﺬَّﺏَ ﻭﻛﻠﻒ ﺍﻥ
ﻳﻨﻔﺦ ﻓﻴﻬﺎ ﻭَﻟَﻴْﺲَ ﺑِﻨَﺎﻓِﺦ
আর যে ব্যাক্তি ছবি অংকন করলো তাকে শাস্তি দেয়া হবে এবং তাকে বাধ্য করা হবে তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করার জন্য। কিন্তু সে প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে না। (বুখারী: তাফসীর অধ্যায় ; তিরমিযী: পোশাক অধ্যায় ; নাসাঈ: সৌন্দর্য অধ্যায় এবং মুসনাদে আহমাদ)

০৬. সাঈদ ইবনে আবুল হাসান বলেন, আমি ইবনে আব্বাসের (রা.) কাছে বসে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যাক্তি এলো এবং সে বললো, হে আবু আব্বাস! আমি এমন এক ব্যক্তি যে নিজের হাতে রোজগার করে এবং এ ছবি তৈরি করেই আমি রোজগার করি। ইবনে আব্বাস জবাব দিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যা বলতে শুনেছি তোমাকেও তাই বলবো। আমি নবী করীম ﷺ থেকে একথা শুনেছি যে, 
ﻣَﻦْ ﺻَﻮَّﺭَ ﺻُﻮﺭَﺓً ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣُﻌَﺬِّﺑُﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻨْﻔُﺦَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺍﻟﺮُّﻭﺡَ ﻭَﻟَﻴْﺲَ ﺑِﻨَﺎﻓِﺦٍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﺑَﺪﺍً ﻓَﺮَﺑَﺎ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺭَﺑْﻮَﺓً ﺷَﺪِﻳﺪَﺓً ﻭَﺍﺻْﻔَﺮَّ ﻭَﺟْﻬُﻪُ - ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻭَﻳْﺤَﻚَ ﺇِﻥْ ﺃَﺑَﻴْﺖَ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥْ ﺗَﺼْﻨَﻊَ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻚَ ﺑِﻬَﺬَﺍ ﺍﻟﺸَّﺠَﺮِ ﻭَﻛُﻞِّ ﺷَﻰْﺀٍ ﻟَﻴْﺲَ ﻓِﻴﻪِ ﺭُﻭﺡ
"যে ব্যক্তি ছবি তৈরি করবে আল্লাহ‌ তাকে শাস্তি দেবেন এবং যতক্ষন সে তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার না করবে ততক্ষন তাকে রেহাই দেবেন না। আর সে কখনো তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে না। একথা শুনে সে ব্যক্তি বড়ই উত্তেজিত হয়ে উঠলো এবং তার চেহারা হলুদ হয়ে গেলো। এ অবস্থা দেখে ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, হে আল্লাহর বান্দা! যদি তোমার ছবি আঁকতেই হয়, তাহলে এই গাছের ছবি আঁকো অথবা এমন কোন জিনিসের ছবি আঁকো যার মধ্যে প্রাণ নেই।” (বুখারী: ব্যবসায় অধ্যায় ; মুসলিম: পোশাক অধ্যায় ; নাসাঈ: সৌন্দর্য অধ্যায় এবং মুসনাদে আহমাদ)

০৭. আবুদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, 
ﺇِﻥَّ ﺃَﺷَﺪَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻋَﺬَﺍﺑﺎً ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺍﻟْﻤُﺼَﻮِّﺭُﻭﻥ
কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছ চিত্রকরেরা সবচেয়ে কঠিন শাস্তি পাবে।” (বুখারী: পোশাক অধ্যায়; মুসলিম: পোশাক অধ্যায়; নাসাঈ: সৌন্দর্য অধ্যায় এবং মুসনাদে আহমাদ)

০৮. আবুদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, 
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺼْﻨَﻌُﻮﻥَ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺼُّﻮَﺭَ ﻳُﻌَﺬَّﺑُﻮﻥَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻳُﻘَﺎﻝُ ﻟَﻬُﻢْ ﺃَﺣْﻴُﻮﺍ ﻣَﺎ ﺧَﻠَﻘْﺘُﻢ
“যারা এ ছবি আঁকে তাদেরকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে, যা কিছু তোমরা তৈরি করেছো তাকে জীবিত করো।” (বুখারী: পোশাক অধ্যায়, মুসলিম: পোশাক অধ্যায়, নাসাঈ: সৌন্দর্য অধ্যায় মুসনাদে আহমাদ)

০৯. হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি একটি বালিশ কেনেন। তার গায়ে ছবি আঁকা ছিল। তারপর নবী (সা.) এলেন। তিনি দরজায়ই দাঁড়িয়ে রইলেন। ভিতরে প্রবেশ করলেন না। আমি বললাম, আমি এমন প্রত্যেকটি গোনাহ থেকে তাওবা করছি যা আমি করেছি। নবী করীম ﷺ বললেন, এ বালিশটি কেন? বললাম, আপনি এখানে আসবেন এবং এর গায়ে হেলান দেবেন এজন্য এটা এখানে রাখা হয়েছে। তিনি বললেন, 
َﺇِﻥَّ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏَ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺼُّﻮَﺭِ ﻳُﻌَﺬَّﺑُﻮﻥَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻳُﻘَﺎﻝُ ﻟَﻬُﻢْ ﺃَﺣْﻴُﻮﺍ ﻣَﺎ ﺧَﻠَﻘْﺘُﻢْ ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔَ ﻻَ ﺗَﺪْﺧُﻞُ ﺑَﻴْﺘًﺎ ﻓِﻴﻪِ ﺍﻟﺼُّﻮﺭَﺓُ 

এই ছবি অংকনকারীদেরকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে, যা কিছু তোমরা তৈরি করেছো তাকে জীবিত করো। আর ফেরেশতারা (রহমতের ফেরশতারা) এমন কোন গৃহে প্রবেশ করে না যেখানে ছবি থাকে।” (বুখারী: পোশাক অধ্যায়; মুসলিম: পোশাক অধ্যায়; নাসাঈ: সৌন্দর্য অধ্যায়; ইবনে মাজাহ: ব্যবসায় অধ্যায়, মুআত্তা: অনুমতি চাওয়া অধ্যায়)

১০. হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রসূলুল্লাহ ﷺ আমার কাছে এলেন। তখন আমি একটি পর্দা টাঙিয়ে রেখেছিলাম। তার গায়ে ছবি আঁকা ছিল। তার চেহারার রং বদলে গেলো। তারপর তিনি পর্দাটা নিয়ে ছিড়ে ফেললেন এবং বললেন, 
ﺍﻥ ﻣِﻦْ ﺃَﺷَﺪِّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳﺸﺘﻬﻮﻥ ﺑﺨﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ -
কিয়ামতের দিন যাদেরকে কঠিনতম শাস্তি হবে তাদের মধ্যে আল্লাহর সৃষ্টির অনুরূপ সৃষ্টি করার চেষ্টা যারা করে তারাও রয়েছে।” (বুখারী: পোশাক অধ্যায়, মুসলিম: পোশাক অধ্যায়, নাসাঈ: সৌন্দর্য অধ্যায়)

১১. হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, 
ﻗَﺪِﻡَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣِﻦْ ﺳَﻔَﺮٍ ﻭَﻗَﺪْ ﺳَﺘَّﺮْﺕُ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﺎﺑِﻰ ﺩُﺭْﻧُﻮﻛًﺎ ﻓِﻴﻪِ ﺍﻟْﺨَﻴْﻞُ ﺫَﻭَﺍﺕُ ﺍﻷَﺟْﻨِﺤَﺔِ ﻓَﺄَﻣَﺮَﻧِﻰ ﻓَﻨَﺰَﻋْﺘُﻪُ -
একবার রসূলুল্লাহ ﷺ সফর থেকে ফিরে এলেন। তখন আমি আমার দরজায় একটি পর্দা টাঙিয়ে রেখেছিলাম। তার গায়ে পক্ষ বিশিষ্ট ঘোড়ার ছবি আঁকা ছিল। নবী করীম (সাঃ) হুকুম দিলেন, এটি নামিয়ে ফেলো। আমি তা নামিয়ে ফেললাম।” (মুসলিম: পোশাক অধ্যায় এবং নাসাঈ: সৌন্দর্য অধ্যায়)

১২. জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন,
ﻧَﻬَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺼُّﻮﺭَﺓِ ﻓِﻰ ﺍﻟْﺒَﻴْﺖِ ﻭَﻧَﻬَﻰ ﺃَﻥْ ﻳُﺼْﻨَﻊَ ﺫَﻟِﻚَ -
রসূলুল্লাহ (সাঃ) ঘরের মধ্যে ছবি রাখতে মানা করেছেন এবং ছবি আঁকতেও নিষেধ করেছেন।” (তিরযিমী: পোশাক অধ্যায়)

১৩. ইবনে আব্বাস (রা.) আবু তালহা আনসারী (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, 
ﻻَ ﺗَﺪْﺧُﻞُ ﺍﻟْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔُ ﺑَﻴْﺘًﺎ ﻓِﻴﻪِ ﻛَﻠْﺐٌ ﻭَﻻَ ﺻُﻮﺭَﺓٌ-
ফেরেশতারা (অর্থাৎ রহমতের ফেরেশতারা) এমন কোন গৃহে প্রবেশ করে না যেখানে কুকুর পালিত থাকে এবং এমন কোন গৃহেও প্রবেশ করে না যেখানে ছবি থাকে।” (বুখারী: পোশাক অধ্যায়)

১৪. আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, একবার জিব্রীল নবী (সা.) এর কাছে আসার ওয়াদা করেন কিন্তু অনেক দেরী হয়ে যায় এবং তিনি আসেন না। নবী করীম (সাঃ) এতে পেরেশান হন। তিনি ঘর থেকে বের হয়ে পড়েন এবং তাঁকে পেয়ে যান। তিনি তাঁর কাছে অভিযোগ করেন। তাতে তিনি বলেন, 
ﺇِﻧَّﺎ ﻻَ ﻧَﺪْﺧُﻞُ ﺑَﻴْﺘًﺎ ﻓِﻴﻪِ ﺻُﻮﺭَﺓٌ ﻭَﻻَ ﻛَﻠْﺐٌ -
আমরা এমন কোন গৃহে প্রবেশ করি না যেখানে কুকুর বা ছবি থাকে।” (বুখারী: পোশাক অধ্যায়, এ বিষয়বস্তু সম্বলিত বহু হাদীস বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজা, ইমাম মালেক ও ইমাম মুহাম্মাদ বিভিন্ন সাহাবী থেকে উদ্ধৃত করেছেন)

এসব হাদীসের মোকাবিলায় আরো কিছু হাদীস এমন পেশ করা হয় যেগুলোতে ছবির ব্যাপারে ছাড় পাওয়া যায়। যেমন আবু তালহা আনসারীর এ হাদীসঃ যে কাপড়ে ছবি উৎকীর্ণ থাকে তা দিয়ে পর্দা তৈরি করে টানিয়ে দেবার অনুমতি আছে। বুখারী, পোশাক অধ্যায়) হযরত আয়েশার (রা.) এ বর্ণনাঃ ছবিযুক্ত কাপড় ছিড়ে যখন তিনি তা দিয়ে তোষক বা গদি বানিয়ে নেন তখন নবী করীম ﷺ তা বিছাতে নিষেধ করেননি। (মুসলিম) সালেম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমরের (রা.) এ হাদীসঃ প্রকাশ্য স্থানে যে ছবি টাংগিয়ে দেয়া হয়েছে তা নিষিদ্ধ, ছবি সম্বলিত যে কাপড় বিছানায় বিছিয়ে দেয়া হয়েছে তা নিষিদ্ধ নয়। (মুসনাদে আহমাদ) কিন্তু এর মধ্য থেকে কোন একটি হাদীসও ওপরে উদ্ধৃত হাদীসগুলো খণ্ডন করে না। ছবি অঙ্কন করার বৈধতা এর মধ্য থেকে কোন একটি হাদীস থেকেও পাওয়া যায় না। এ হাদিসগুলোতে যদি কোন কাপড়ের গায়ে ছবি অংকিত থাকে এবং তা কিনে নেয়া হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তা কিভাবে ব্যবহার করতে হবে কেবলমাত্র সে কথাই আলোচিত হয়েছে। এ বিষয়ে আবু তালহা আনসারীর বর্ণিত হাদীসটি কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এটি এমন বহু সহীহ হাদীসের পরিপন্থী যেগুলোতে নবী (সা.) ছবি সম্বলিত কাপড় টানিয়ে দিতে কেবল নিষেধই করেননি বরং তা ছিঁড়ে ফেলেছেন। তাছাড়া তিরমিযী ও মুআত্তায় হযরত আবু তালহার নিজের যে কার্যক্রম উদ্ধৃত হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, তিনি ছবি সম্বলিত পর্দা ঝুলানো তো দূরের কথা এমন বিছানা বিছাতেও অপছন্দ করতেন যাতে ছবি আঁকা থাকতো। আর হযরত আয়েশা ও সালেম ইবনে আবদুল্লাহর রেওয়ায়াত সম্পর্কে বলা যায়, তা থেকে কেবলমাত্র এতটুকু বৈধতাই প্রকাশ পায় যে, ছবি যদি মর্যাদাপূর্ণ স্থানে না থাকে বরং হীনভাবে বিছনায় রাখা থাকে এবং তাকে পদদলিত করা হয়, তাহলে তা সহনীয়। যে সভ্যতা ও সংস্কৃতি চিত্রাংকন ও মূর্তি ভাস্কর্য নির্মাণ শিল্পকে মানব সভ্যতার সবচেয়ে গৌরবোজ্জাল কৃতিত্ব গণ্য করে এবং তা মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত করতে চায় সার্বিকভাবে তার বৈধতা এ হাদীসগুলো থেকে কেমন করে প্রমাণ করা যেতে পারে?

ছবির ব্যাপারে নবী (সা.) চূড়ান্তভাবে উম্মাতের জন্য যে বিধান রেখে গেছেন তার সন্ধান বর্ষীয়ান ও শ্রেষ্ঠ সাহাবীগণের অনুসৃত কর্মনীতি থেকেই পাওয়া যায়। ইসলামে এটি একটি স্বীকৃত মূলনীতি যে, সমস্ত পর্যায়ক্রমিক বিধান ও প্রাথমিক উদারনীতির পর সর্বশেষে নবী করীম ﷺ যে বিধান নির্ধারণ করেন সেটাই নির্ভরযোগ্য ইসলামী বিধান। নবী করীমের ﷺ পর শ্রেষ্ঠ ও বর্ষীয়ান সাহাবীগণ কর্তৃক কোন পদ্ধতিকে কার্যকর করা একথাই প্রমাণ পেশ করে যে, নবী করীম ﷺ উম্মাতের ঐ পদ্ধতির ওপরই রেখে গিয়েছিলেন। এবার দেখুন ছবির ব্যাপারে এই পবিত্র দলটির আচরণ কিরূপ ছিলঃ
“হযরত উমর (রা.) খৃস্টানদের বলেন, 
ﺇِﻧَّﺎ ﻻَ ﻧَﺪْﺧُﻞُ ﻛَﻨَﺎﺋِﺴَﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﻞِ ﺍﻟﺘَّﻤَﺎﺛِﻴﻞِ ﺍﻟَّﺘِﻰ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺍﻟﺼُّﻮَﺭَ 

আমরা তোমাদের গীর্জায় প্রবেশ করবো না, কারণ তার মধ্যে ছবি রয়েছে।” (বুখারী: সালাত অধ্যায়)
ﻛﺎﻥ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻳﺼﻠﻰ ﻓﻰ ﺑﻴﻌﺔ ﺍﻻﺑﻴﻌﺔ ﻓﻴﻬﺎ ﺗﻤﺎﺛﻴﻞ -
“ইবনে আব্বাস (রা.) গীর্জায় নামায পড়ে নিতেন কিন্তু এমন কোন গীর্জায় পড়তেন না যার মধ্যে ছবি থাকতো।” (বুখারী: সালাত অধ্যায়)
“আবুল হাইয়াজ আসাদী বলেন, হযরত আলী (রা.) আমাকে বলেছেন, 
ﺃَﻻَّ ﺃَﺑْﻌَﺜُﻚَ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺑَﻌَﺜَﻨِﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺗَﺪَﻉَ ﺗِﻤْﺜَﺎﻻً ﺇِﻻَّ ﻃَﻤَﺴْﺘَﻪُ ﻭَﻻَ ﻗَﺒْﺮًﺍ ﻣُﺸْﺮِﻓًﺎ ﺇِﻻَّ ﺳَﻮَّﻳْﺘَﻪُ ﻭﻻﺻﻮﺭﺓ ﺍﻻﻃﻤﺴﺘﻬﺎ -
রসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে যে অভিযানে পাঠিয়েছিলেন আমি কি তোমাকে সেখানে পাঠাবো না? আর তা হচ্ছে এই যে, তুমি মূর্তি-ভাস্কর্য না ভেঙ্গে ছাড়বে না, কোন উঁচু কবর মাটির সমান না করে ছেড়ে দেবে না এবং কোন ছবি নিশ্চিহ্ন না করে ছাড়বে না।” (মুসলিম: জানাযাহ অধ্যায় এবং নাসাঈ: জানাযাহ অধ্যায়)

“হানশুল কিনানী বলেন, হযরত আলী (রা.) তাঁর পুলিশ বিভাগের কোতায়ালকে বলেন, 
ﺃَﺗَﺪْﺭِﻯ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺃَﺑْﻌَﺜُﻚَ ؟ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺑَﻌَﺜَﻨِﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻥْ ﺃَﻧْﺤَﺖَ ﻛُﻞَّ ﺻُﻮﺭَﺓً ﻭَﺃَﻥْ ﺃُﺳَﻮِّﻯَ ﻛُﻞَّ ﻗَﺒْﺮٍ -
তুমি জানো আমি তোমাকে কোন অভিযানে পাঠাচ্ছি? এমন অভিযানে যাতে রসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে পাঠিয়েছিলেন। তা হচ্ছে এই যে, প্রত্যেকটি ভাস্কর্য নিশ্চিহ্ন করে দাও এবং প্রত্যেকটি উঁচু কবরকে জমির সাথে মিশিয়ে দাও।” (মুসনাদে আহমাদ)

  এই প্রমাণিত ইসলামী বিধানকে ইসলামী ফকীহগণ মেনে নিয়েছেন এবং তাঁরা একে ইসলামী আইনের একটি ধারা গণ্য করেছেন। কাজেই আল্লামা বদরুদ্দীন “আইনী তাওযীহ” এর বরাত দিয়ে লিখছেনঃ
“আমাদের সহযোগীগণ (অর্থাৎ হানাফী ফকীহগণ) এবং অন্যান্য ফকীহগণ বলেন, কোন জীবের ছবি আঁকা, ভাস্কর্য তৈরি করা কেবল হারামই নয় বরং মারাত্মক পর্যায়ের হারাম এবং কবীরাহ গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। অংকনকারী হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে তা তৈরি করলেও সর্বাবস্থায় তা হারাম। কারণ এতে আল্লাহর সৃষ্টিকর্মের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। অনুরূপভাবে ছবি কাপড়ে, বিছানায়, দীনারে বা দিরহামে অথবা পয়সায় কিংবা কোন পাত্রে বা দেয়ালে যেখানেই অংকন করা হোক না কেন তা হারাম। তবে জীব ছাড়া অন্য কোন জিনিস যেমন গাছ পালা ইত্যাদির ছবি অংকন করা হারাম নয়। এ সমস্ত ব্যাপারে ছবির ছায়াধারী হবার বা না হবার মধ্যে কোন ফারাক নেই। এ অভিমতই প্রকাশ করেছেন ইমাম মালেক (রা.), ইমাম সুফিয়ান সওরী (রা.) ইমাম আবু হানীফা (রা.) এবং অন্যান্য উলামা।” (উমদাতুল কারী ২২ খণ্ড, ৭০ পৃষ্ঠা, এ অভিমতকেই ইমাম নববী মুসলিমের ব্যাখ্যায় আরো বেশী বিস্তারিত আকারে উদ্ধৃত করেছেন। দেখুন শারহে নববী, মিসরে মুদ্রিত, ১৪ খন্ড, ৮১-৮২ পৃষ্ঠা) [তাফহীমুল কুরআন: ১২/১৫৭-১৬৮ থেকে সংক্ষেপিত]
----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments