Recent Tube

টুকটাক সংলাপ-৩ ; জিয়াউল হক।




                টুকটাক সংলাপ-৩, 

    

পরিমিতিবোধ; সুশৃংখলসফল জীবনের পূর্বশর্ত-;


      এর আগের পর্বে কথা প্রসঙ্গে আমরা ইটের উদাহারণ দিয়েছি। আপনার আশে পাশে থাকা একটা ইটকে একটু ভালো করে লক্ষ্য করুন এবং কিছুক্ষণের জন্য এটাকে নিয়ে, এর গঠনপ্রণালী নিয়ে ভাবুন। বিশেষ ধরনের একটা নির্দিষ্ঠ পরিমান মাটিকে পানিতে ভিজিয়ে নির্দিষ্ঠ আকার দান করে তা আগুনে পোড়ানো হয়েছে একটা নির্দিষ্ঠ সময় ধরে। এর প্রতিটি স্তরে, মাটির ধরন বা কোয়ালিটি থেকে শুরু করে আগুনের ধরণ, পোড়ানোর সময়কাল সবকিছুতেই ‘পরিমান’ নামক বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে।


   দু‘টো বিষয়, ‘আগুন’ আর ‘পরিমান’, তথা, পরিমিতি এই ইটটার জন্মের প্রতিটি স্তরে কাজ করেছে। এই পরিমান বা পরিমিতির মধ্যে কোনরকম ব্যাত্যয় হলেই ইটের মান, তথা, কোয়ালিটির মধ্যেই পরিবর্তন ঘটেছে। 

আপনি আমি, আমরা যারা ইটের নির্মাণ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত নই, তারা হয়তো বিষয়টাকে খুব ভালো বুঝবো না, তবে যারা ইট প্রস্তুত এবং এর ব্যবহারের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের এ ব্যাপারে চমৎকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা বিষয়টাকে অতি সহজেই বুঝে উঠতে পারবেন এবং আমার কথার সত্যায়ন করতে পারবেন।


শুধু ইটই বা কেন, আশে পাশে এরকম শত শত বস্তু ও উপাদান রয়েছে, যাদের জন্ম ও প্রস্তুত প্রক্রিয়ায় এইরকম পরিমিতি বোধের অনিবার্যতা মিশে রয়েছে ওতপ্রোতভাবে। বরং, ঐসব বস্তুর অস্তিত্ব, মৌলিক কাঠামো,  কার্যকারিতা এসবের সকল কিছুই নির্ভর করে এরকম সুনির্দিষ্ঠ সময়, ধরন, পরিমান ও পরিবেশের উপর।


প্রকৃতিতেও সেই একই অবস্থা। উপযুক্ত সময় ও পরিবেশ না হলে পদ্মায় ইলিশ ধরা পড়ে না, মাঠে ফসল ফলে না, অগ্রাহায়ন মাস না এলে আমের মুকুল দেখা যায় না, বর্ষা না এলে অঝোর ধারায় বৃষ্টির দেখা মেলে না। বসন্ত না এলে বাগানের গাছে গাছে ফুলের সমারোহ শোভা পায় না। আমাবশ্যা কিংবা পূর্ণিমা না হলে নদীতে বা সমুদ্রে জোয়ার বা ভাটার দেখাও মেলে না। রাত না হলে জোৎ¯œা নেই, দিন না হলে সুর্যের দেখাও মেলে না।


উদাহারণ দিতে গেলে প্রকৃতি থেকে, পরিবেশ থেকে, আমদের নিজেদের শরির ও জীবন থেকে, নিজেদের চারিপাশ থেকে শত শত উদাহারণ দেয়া যাবে। প্রকৃতির প্রতিটি স্তরে স্তরে দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমানভাবে এই নিয়মের ছড়াছড়ি। একটা সুপরিকল্পিত ও সুনিয়ন্ত্রিত শৃংখলার বাতাবরণে সকল কিছুই সুসজ্জিত রয়েছে। আমাদের আচারে আচরণে, কথা বার্তাতেও এরকম নিয়ম ও শৃংংখলাবোধের প্রয়োজন। 


মানুষকে জানতে হয় কথা বার্তার ক্ষেত্রে কখন তাকে থামতে হবে? কোথায় থামতে হবে? দু:খজনকভাবে কেউ কেউ খুব অল্প বয়সেই কথা বলতে শিখলেও ‘অল্প কথা’ বলাটা সারাজীবনেও শিখতে পারেন না। একবার বলা শুরু করলে কোথায় গিয়ে থামতে হবে, সেটা জানেন না। কোন কথা বলতে হবে, কোথায় বলতে হবে, কিভাবে কথাটা বলতে হবে, সেটাও অনেকের কাছে অজানা। অপরের আত্মসম্মান ও অহংবোধে আঘাত না করে কথা বলতে পারাটা সামাজিক সভ্য আচরণের অন্যতম একটা অনুষংগ। এটাকে রপ্ত করতে হয়, আয়ত্বে নিতে হয়।

শুধু কথা বার্তাতেই নয়, জীবনের প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে, প্রতিটি আচারে আচরণের বেলায় স্বনিয়ন্ত্রণ ও সুনিয়ন্ত্রণ এবং শৃংখলার সাথে সাথে পরিমিতি বোধের উপস্থিতি প্রয়োজন। আর এর চর্চা হতে হয় জীবনের একেবারে শুরু থেকে, পরিবার থেকেই। সন্তানকে এটা শিখিয়ে দেবার দায়িত্বটা হলো বাবা মা এবং তার অভিভাবকদের।


দু:খজনকভাবে আমাদের অধিকাংশ পরিবারে, এবং বৃহত্তর সমাজেও এরকম চর্চার অভাব রয়েছে, (এবং আফসোস, আমার নিজের মধ্যেও সেটা টের পাই!)। প্রত্যেকের জন্যই, তবে বিশেষ করে, আজকের যুবপ্রজন্ম, যারা আগামি দিনের সমাজ ও সভ্যতার নেতৃত্ব দেবেন, তাদের জন্য ‘পরিমিতি বোধ’টাকে বুঝে নেয়া আর চলার পথে সজ্ঞানে প্রতিটি স্তরে তার চর্চা করার অভ্যাসটা গড়ে তোলা খুবই প্রয়োজন।

Post a Comment

0 Comments