Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৫৯, নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।

 
 
     
                          বিতি কিচ্ছা
                            পর্ব-৫৯;
------------------------------------------------ 

"আমরা চলছি কোন পথে"?

       গেলো রবিবার ৪টা জানুয়ারী ২০২০ ইংরেজী তারীখে অনুষ্টিত হয়ে গেল জাতীয় পার্টির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এতে বিশেষ অতিথি নয়, বরং প্রধান অতিথীই ছিলেন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের!!! এ আবার কেমন জাতীয় পার্টি??? একটি গৃহপালিত বিরোধী দল বলেই কি ?? আসলে বিরোধীতা যা- তা কেবল লোক দেখানো নয় তো কি? রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশন মিলনায়তনে  জাতীয় পার্টির এই সম্মেলনে প্রধান অতিথী! আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, " পঁচাত্তরের ১৫  ই আগষ্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে বিভেদের দেয়াল সৃষ্টি করেছে বিএনপি"। এই অদ্ভুত কথার মর্ম বুঝিনি বলেই হয়ত আমি রাজনীতিতে হাত পাকাতে পারিনি।
         আমিতো জানি পঁচাত্তরের  ১৫ ই আগষ্ট বিএনপি'র জন্মও হয়নি। তবে জন্মের আগেই ওরা কিভাবে রাজনীতিতে বিভেদ সৃষ্টি করতে তৎপর হতে পারলো? আমার মনে হয় প্রশ্নটি ওবায়দুল কাদের সাহেবকে করলে তিনি ঠিকই  তার উত্তর দিয়ে দিবেন। তারপর তার দেয়া গুজামিল উত্তরের পক্ষে হাজারো তালি বৃষ্টি ধ্বনিত হবে, মুখরিত হবে আটষট্টি হাজার গ্রাম। ইহারই নাম রাজনীতি। তিনি হয়ত বলবেন তার পছন্দের সনাতন ধর্মের কোন এক অবতারের জন্ম তার বাবার জম্মের দুই বৎসর আগে হতে পারলে বিএনপি কেন পারবে না তার জন্মের আগে তৎপর হতে?  কিন্তু আমরা যারা ওবায়দুলের সনাতন ধর্মের অনুসারী নয়, তাদের  কাছে বিষয়টি ততটুকু অযৌক্তিক যতটুকু অযৌক্তিক বাবার জন্মের আগে ছেলের জন্ম হওয়া। 
       পঁচাত্তরের ১৫ ই আগষ্টের ঘটনার নায়ক কারা ছিল, জাতি তা জেনেছে। আপন মস্তিষ্ক প্রসূত জ্ঞান বিশ্লেষণ করে হিসাব নিকাশ করে যে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হবার সে তার সিদ্ধান্তে অটল আছে। এখন যতই ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানোর অপচেষ্টা করা হোক না কেন জনগনের তাতে কিছুই যায় আসে না।
        কিন্তু রাজনীতি যারা করেন তারা প্রাণের মায়ায় কাবু হবার পাত্র হলে চলে না। দেশ ও জাতির স্বার্থ সংরক্ষণের অদম্য আগ্রহই হয়  তাদের অগ্রযাত্রার পাথেয়। বিনিময়ের হিসাব নিকাশ তাদের কাছে মোটেও প্রধান্য পাবার কথা নয়। অথচ একটি দলের কর্ণধাররা  কিভাবে আপন প্রাণ রক্ষা ও অন্যান্য ক্ষুদ্র স্বার্থের জালে আবদ্ধ থেকে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের  স্বাক্ষর রাখতে পারলো, তথা নিজেদের দলীয় স্বকীয়তা তথা অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে পারলো - এটা খুবই আশ্চর্য্যের কথা। অবশ্য যারা দূনিয়াবি স্বার্থের হিসাব নিকাশ নিয়ে রাজনীতি করেন তাদের দৃষ্টিতে এটাই তাদের বড় পাওয়া ও চাওয়া হতে পারে। দৃষ্টিভঙ্গি তো সকলের একই রকম হয় না।
         অনেকের মতে দেশ আজ বড় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ভিনদেশী  তাবেদারী কার্যক্রম দিয়ে আত্ন মর্যাদাশীল জাতী গঠন সম্ভব হয় না। বরং   বংশানুক্রমিক গোলামীর জিঞ্জিরে আবিষ্ট হয় জাতিসত্তা। ক্রমশ দেউলিয়া হয় দেশ তথা প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থা। আর আমরা নাকি আজ সেই তিমিরেই দ্রুত গতিতে ধাবমান। একটি কার্যত শক্তিশালী বিরোধীদলই কেবল পারে এহেন অবস্থার পরিবর্তন সাধনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে। অথচ এই বিরোধীতাই যদি হয় আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব বা লোকদেখানো, আর বিরোধী দলই যদি হয় কার্যত গৃহপালিত - তবে জাতীর অধ:পতন রুখে দেয়ার পথ আর কিছু বাকি থাকে কি?  সুতরাং চিন্তা করা উচিত নয় কি " আমরা যাচ্ছি কোন পথে? "
     এরপরও আমরা আপন চামড়া বাচানোর ঘৃণিত খায়েস চরিতার্থ করত: তাবৎ দেশদ্রোহী অপশক্তির লেজুড়বৃত্তিতে মগ্ন থাকিয়া, ও পরস্পর চরিত্র হননে মত্ত থাকিয়া একদল আরেক দলের সরুপ উদঘাটনে মহাব্যস্ত রহিয়া যার পর নাই তৃপ্ত আছি।  এতএব কপাল পুড়লেতো আমাদেরই পুড়া উচিৎ -তা নয় তো কি? চক্ষুষ্মান মাত্রই বিষয়াদি বিশ্লেষণ করলে দেখতে পায় এইসব কাজে কোন সচ্চরিত্রবানের না আছে কোন শারীরিক সহযোগীতা, আর না আছে কোন প্রকার আর্থিক যুগসূত্র। এতে সুস্পষ্টভাবে উন্মোচিত হয়ে যায় তাদেরই সরুপ যারা এসমস্তের আয়োজক। সুতরাং জীবনের যাত্রাপথে চোঁখ কান খোলা রেখে ভেবে দেখা উচিৎ নয় কি একবার " আমরা যাচ্ছি কোন পথে"?
---------------------------------

Post a Comment

0 Comments