Recent Tube

হরতাল কি আসলেই অবৈধঃ আসলাম হোসাইন।


             হরতাল কি আসলেই  
       অবৈধঃ


      ইদানিং এটা নিয়ে বেশকিছু আলোচনা-সমালোচনা চলছে। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষতি থাকার কারণে এটাকে কেউ কেউ হারাম ফত‌ওয়া দিচ্ছেন।

     আমি শরিয়তের একটা মূলনীতি দিয়ে এই আলোচনা শুরু করতে চাচ্ছি।

      ইসলামী শরিয়ার উসুল বা মূলনীতি হচ্ছে, আপনি যদি দুটো ক্ষতির মুখোমুখি হন এবং তৃতীয় কোনো রাস্তা না থাকে তাহলে কম ক্ষতিটা গ্রহণ করা আপনার জন্য জরুরি। এইজন্য যদি ইসলাম বিদ্বেষী দুইজন লোক নির্বাচনে দাঁড়ায় এবং এর বাহিরে কোনো ব্যক্তি না থাকে তাহলে কম ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া আবশ্যক। কাউকেই পছন্দ হয়নি বলে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। কেননা ইসলামের বেশি ক্ষতি হওয়ার চাইতে কম ক্ষতি হওয়া উত্তম অর্থাৎ মন্দের ভালো।

       এই মূলনীতি কে সামনে রেখে আমরা হরতালের বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে পারি।

        আজ বাংলাদেশে শ্বাসরুদ্ধ অবস্থা চলছে। মানুষের নিরাপত্তা নাই, বাকস্বাধীনতা নাই। গুম, খুন, হত্যা, নারী ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি মহাপাপের গোডাউন হয়ে গেছে এই দেশটি। তার পাশাপাশি দীনকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। মানুষকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। ইসলামের কথা বললেই বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে তার ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হচ্ছে। নামাজ পড়া, মুখের দাড়ি রাখা, মাথায় টুপি পরা অর্থাৎ সুন্নতি লেবাসে চললেই একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কাছে ব্যক্তি চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছে। ঈমান-আমল নিয়ে বাঁচা মুশকিল হয়ে পড়েছে। এই দেশকে ভারতের কাছে বিক্রির জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। 

     প্রশ্ন হচ্ছে, ক্ষতির দিক থেকে এইগুলো বেশি গুরুতর নাকি এইগুলোর প্রতিবাদে ও সমাধানের জন্য হরতাল করলে যে ক্ষতি হয় সেটা বেশি গুরুতর? হরতাল করলে মানুষ সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা সত্য কিন্তু প্রতিবাদ না করে যদি লাগামহীনভাবে ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে এই মানুষ এই দেশে ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকাও মুশকিল হয়ে যাবে। তাই  বৃহত্তর ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য ক্ষুদ্রতর ক্ষতিকে গ্রহণ করা অপরাধ নয় বরং এটাই উচিত।

উদাহরণস্বরূপ খন্দকের যুদ্ধকে আমরা এখানে উপস্থাপন করতে পারি। 

       রাসুলুল্লাহ সা তিন দিক থেকে পরিখা খনন করে গোটা বিশ্ব থেকে মদিনাকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। এটা ছিল এত কঠিন অবরোধ আজ পর্যন্ত বিশ্বের ইতিহাসে এত শক্ত অবরোধ কোথাও হয়নি। এতে কেউ বলতে পারেন এটা তো যুদ্ধের ঘটনা আর হরতাল তো যুদ্ধ নয়। তার উত্তরে আমরা বলব।

        আপনাদের কথার যৌক্তিকতা আছে কিন্তু এখানে যুদ্ধ-অযুদ্ধ মূল বিষয় নয়। যে ক্ষয়ক্ষতির কারণে হরতালকে হারাম বলা হচ্ছে সেই ক্ষয়ক্ষতি এখানে বিদ্যমান কিনা? এই পরিখা খননের ফলে মদিনার মহিলা সাহাবি এবং শিশুদের কষ্ট হয়নি? তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েনি? তাহলে রাসূলুল্লাহ কি অবৈধ কাজ করেছিলেন?
#ইসলামের বৃহৎ স্বার্থের জন্য ছোটো ছোটো স্বার্থ বিসর্জন দিতে হবে এটাই নিয়ম।

       আর যদি জনগণের কষ্ট ও ক্ষয়ক্ষতির দিকে লক্ষ রেখে হরতাল হারাম ফতোয়া দেওয়া হয় তাহলে জনসমাবেশ করা এবং মানববন্ধন করাও হারাম। কেননা এইগুলোতে হরতালের মতো বড়ো আকারের ক্ষতি না হলেও ছোটো আকারে ক্ষতি হয়ে থাকে। বিশেষ করে মানুষের চলাচলের অনেক কষ্ট হয়। মানুষকে কষ্ট দেওয়া কি বৈধ? কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে এই বড়ো বড়ো জনসমাবেশ আহলে হাদীসসহ সবাই করে থাকেন। এমনকি রাস্তাঘাট বন্ধ করেও আহলে হাদিসে একটা জনসমাবেশের ভিডিও দেখেছি। আমরা এইগুলোকে হারাম বলছি না কিন্তু হরতাল হারাম বললে একই কারণে এটাও হারাম হয়ে যায়।

      স্বাভাবিক অবস্থায় দেশের স্বার্থে ও ইসলামের স্বার্থে হরতাল বৈধ। কিন্তু হরতালের নামে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, দোকানপাট ভাঙচুর ও মারধর ইত্যাদি বৈধ নয়, বরং মহাপাপ। বিশেষ করে যেসব গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত সেইগুলোকে কোনো অবস্থায় বাধা দেওয়া যাবে না। কিন্তু যেসব গাড়ি বের করা নিষিদ্ধ এইসব গাড়ির ড্রাইভার যখন উদ্যত হয়ে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে, তখন সমস্যা হয়। আর তখন অপরাধী শুধু ভাঙচুরকারীরা নয়, যে গাড়ি বের করেছে সেও অপরাধী। তবুও জানমালের ক্ষতি করা বৈধ নয়।

     আর আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ইসলামী আন্দোলনের কোনো নেতা বা দায়িত্বশীল এগুলো কখনোই করেন না । উশৃংখল কিছু পোলাপাইন আছে এরা আবেগতাড়িত হয়ে এগুলো করে ফেলে। তাই দায়িত্বশীলদের উচিত এই বিষয়ে সতর্ক থাকা। তারপরও এরকম দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে গেলে গোটা হরতালকে অবৈধ ফত‌ওয়া দিয়ে জালিমকে জুলুম করার জন্য আরো সুযোগ করে দেওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত সেটাও ভাবনার বিষয়।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ইসলামিক আর্টিকেল প্রকাশ  ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments