তাহাজ্জুদের সালাত-- প্রভূর প্রেমে গভীর অবগাহন ;
---------------------------------
হুজুর (স) বলেছেন মহান আল্লাহ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। আর বলতে থাকেন,কোন প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তার প্রার্থনা কবুল করবো। কোন চাওয়ার প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে দান করবো। কোন ক্ষমা প্রার্থী অাছে কি? আমি তাঁকে ক্ষমা করবো। (বুখারী)
রাতের শেষ তৃতীয়াংশটাই তাহাজ্জুদের আদর্শ সময় । তবে এশার সালাতের পরেও তাহাজ্জুদের সালাত পড়া যায় ।
তবে এশার সালাত আদায়ান্তে ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের আগে এই সালাত আদায় করা হয় বলেই এই সালাতের নাম তাহাজ্জুদ।
উপরের হাদীস অনুযায়ী তখন রাজাধিরাজ মহান আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আসমানে অবস্থান করেন। আর এদিকে তাঁর প্রিয় বান্দারা দাঁড়ায় মুসাল্লায়।
তাহাজ্জুদের সালাত জান্নাতীদের আলামত ।
কোন লোক জান্নাতি হবে আর তাহাজ্জুদ আদায় করবে না এটা হতেই পারে না ।
এ জন্য মহান আল্লাহ তা'আলা জান্নাতিদের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন '' তারা জীবদ্দশায় রাতের অল্প অংশ ঘুমাতো, আর বাকি অংশ ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাতো ''
তাহাজ্জুদ নামাজ হল সমস্ত আম্বিয়াগণের সুন্নাত। বিশ্বনবী (স) এর প্রতি ছিল এ সালাত অবধারিত । আল্লাহ তায়ালার মাহবুব বান্দাগণের ছিল নিয়মিত অভ্যাস। আল্লাহর সাথে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপন তথা নৈকট্য ও সন্তোষ অর্জনের অন্যতম পন্থা তাহাজ্জুদের সালাত ।
মহান আল্লাহ তাঁর হাবিবকে নির্দেশ দিচ্ছেন এভাবে।
''‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ কায়েম করুন। এটা আপনার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়- আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন মাকামে মাহমুদ তথা প্রশংসিত স্থানে’। (সূরা বানী ইসরাইল, আয়াত : ৭৯।)
মহান আল্লাহ তাঁর নিয়ামাতপ্রাপ্ত বান্দাহদের পরিচয় দিচ্ছেন-, ‘
তারা শয্যা ত্যাগ করে আকাঙ্খা ও আশঙ্কার সাথে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা দান করে।’ (সূরা সেজদা, আয়াত : ১৬।)
তাহাজ্জুদ সালাত নফসের পরিশুদ্ধি ও তরবিয়াতের এক বিশেষ মাধ্যম।গভীর রাতে সুখশয্যা ত্যাগ করেই আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হন প্রভূর রহমত প্রার্থনকারী বান্দাহরা। । এ নামাজ মন ও চরিত্রকে নির্মল করে, পবিত্র করে এবং সত্য পথে অবিচল রাখে। পবিত্র কুরআনের সূরা মুজাম্মিলে এর উল্লেখ করা হয়েছে-
‘নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা জিকির করা খুবই কার্যকর।’ (সূরা মুজাম্মিল, আয়াত : ৬।) অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সেজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়’। (সূরা ফুরকান, আয়াত : ৬৪।)
সমস্থ আল্লাহওয়ালা ব্যক্তিরা ছিলেন তাহাজ্জুদগোজার । ইসলামের দিগ্বিজয়ী সেনানীরা রাতে থাকতেন জায়নামাজে আর দিনে থাকতেন ঘোড়সওয়ার। যার বদৌলতে প্রায় অর্ধপৃথিবী মুসলিম মুজাহিদদের পদতলে লুটোপুটি খেয়েছিল ।
জাগুন,আরামের বিছানা ছাড়ুন। ওজু করুন । জায়নামাজে দাঁড়ান । প্রভূর প্রেমে গভীরভাবে অবগাহন করুন । লম্বা লম্বা সেজদায় চোখের পানি ছাড়ুন । কৃত অপরাধের জন্য মাফ চান । মনের সব কথাগুলো রাহমানুর রাহিমের কাছে তুলে ধরুন ।
আপনি চাওয়ার মত চাইতে পারেননা সেটাও আল্লাহকে বলুন । তাঁর করুনার দরীয়ায় ঢেউ লেগে যাবে । আপনি সিক্ত হবেন তাঁর অবারিত করুনাধারায়।
0 Comments