Recent Tube

প্লিজ হুজুর, প্লিজ- প্রথম পর্ব: জিয়াউল হক।



 
                   প্লিজ হুজুর, প্লিজ-   
                              প্রথম পর্ব:



     বদরের প্রান্তর। এ প্রান্তরের পুবের দিকে বালুকাময় খোলা মাঠ ছিল। একদিকে আল উদাওয়াতুদদ্দুনিয়া এবং অপরপ্রান্তে আল উদাওয়াতুল কুসওয়া। দুই প্রান্তরের মাঝ দিয়ে রাস্তা চলে গিয়েছে মদিনার দিকে। আর পশ্চিমে উঁচু আল আসফাল পাহাড়ের সারি। উত্তর দিকে সিরিয়া অভিমূখে চলাচলকারী গিরিপথ। আর আল উদাওয়াতুল কুসওয়া'র পাশ দিয়ে দক্ষিণপূর্ব কোণা বরাবর  গেছে মক্কামূখীসরু রাস্তা। এ দু'টো ধুলিময় প্রান্তর নিয়ে আলোচনা হয়েছে কুরআনুল কারিমে (সুরা আনফাল-৪২)।

     বালুময় দু'টো প্রান্তর আর পাহাড়ের সারির মাঝে খোলা জায়গা, তারই বুকে দক্ষিণ দিকে, মক্কামুখী পথের ধার ঘেঁষে কুরাইশরা ছাউনি ফেলেছে। আর প্রিয় মুহাম্মদ সা: এঁর নেতৃত্বে মুসলমানরা মদিনা অভিমুখে রাস্তা বাদ দিয়ে প্রান্তরের উত্তর দিকে সিরিয়াগামী রাস্তার মুখে আল উদাওয়াতুদদ্দুনিয়া প্রান্তরটিকে বামে রেখে তাঁবু ফেলেছেন। পাশেই ছিল একটি পানির কুপ, সেটির নিয়ন্ত্রণ  নেবার পাশাপাশি মদিনামূখী পথের পাশের পানির কুপটিকে ধ্বংস করে দেন, যেন কাফিররা পানি না পায়। 
 
     মদিনা, ৬২৭ খৃষ্টাব্দের জানুয়ারি মাস, শীতকাল। এক উত্তর দিক ছাড়া অপর তিন দিকেই ছোট বড়ো পাহাড় থাকায় সেদিকগুলোতে প্রাকৃতিকভাবেই প্রতিরক্ষাব্যুহ বিদ্যমান ছিল। উত্তরের ফাঁকাপথে সহজেই ঢোকা যায় মদিনায়। যাওয়া আসার সহজ রাস্তা। মক্কার কাফের, খাইবারের ইহুদি আর মদিনার ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা মুনাফিকরা জোট বেঁধেছে। তিনদলীয় মহাজোট। দশহাজার সৈন্য'সহ এগিয়ে আসছে মুসলিম রাষ্ট্র মদিনা উৎখাতে। 

    প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: প্রিয় সাহাবিদের সাথে পরামর্শ করে হযরত সালমান ফারসি রা: এর দেয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে মদিনায় আসা যাওয়ার সেই সহজ পথটিতেই গর্ত খুঁড়লেন। ৩০০০ মুসলমান'সহ শহরে ঢোকার সহজ পথটিতে অবরোধ  ও প্রতিবন্ধকতা বসালেন, নিজে বসলেন অনতিদূরে পাহাড়ের উপরে যেন, মুশরিকদের গতিবিধি সহজেই নজরে পড়ে। 

   এর আগে বদর বা ওহুদের যুদ্ধে শত্রু জানা ছিল; মক্কার কুরাইশরা। এবারেও তারাই এসেছে।তবে আরও আছে নিজেদের দেশেরই ইহুদি ও মুনাফিক গোষ্ঠী। কাজেই বিপদটা কেবল কাফেরদের তিনগুন বেশি সৈন্য সংখ্যাতেই নয়, বিপদটা ছিল নিজেদের ঘরেই লুকিয়ে থাকা শত্রুগোষ্ঠীও।

      ঠিক এসময় প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: কাজে লাগালেন সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবি হযরত নুআঈম ইবনে মাসুদ রা:'কে। হযরত নুআঈম রা: এঁর ইসলাম গ্রহণের কথা তখনও মক্কার কুরাইশরা কিংবা মদিনার ইহুদি ও মুনাফিকরা, কেউই জানতো না। প্রিয় রাসুল সা: এর নির্দেশে তিনি নিজের ইসলাম গ্রহণের সত্যতা গোপন রেখেই মুশরিক, ইহুদি ও মুনাফিক শিবিরে অবাধে যাতায়াত করলেন, প্রতিটি পক্ষের মনে একে অপরের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস আর সন্দেহের বীজ রোপন করালেন, মুশরিকদের ঐক্য সহসাই ভেঙ্গে পড়লো পারস্পরিক সন্দেহের বাতাবরণে! দীর্ঘ ২৭দিন পর শেষপর্যন্ত কাফিররা ফিরে যেতে বাধ্য হলো।
 
     এ যুদ্ধের খবরাখবর আমাদের জানাচ্ছে কুরআনের সুরা আহযাব।
হযরত ওমর রা: এর শাসনামলে একবার মদিনা ও তার আশে পাশে দূর্ভিক্ষ হলো, খাবার সংকট দেখা দিল। সিরিয়া ও ইয়েমেন হতে মদিনা, মক্কায় খাদ্যশষ্য যথাসময়ে এলো না। তিনি ত্বরিৎ সকল গভর্নরদের লিখিত নির্দেশ পাঠালেন, তারা যেন পরবর্তি নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত চুরির শাস্তি হিসেবে হাত কাটা বন্ধ রাখেন।  

      দ্বিতীয় পর্ব:
১- কুরআন আমাদের জানাচ্ছে; তোমরা সত্য গোপন করো না (সুরা বাকারা-৪২)
২- নবীজি সা. বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম সদকা হলো মানুষকে পানি পান করানো (আবু দাউদ)।  
 হজরত সাদ বিন উবাদা (রা.) এসে নবীজিকে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি তার জন্য কোনো কিছুর ওসিয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষ হয়ে কিছু সদকা করি, তবে কি তা আমার মায়ের কোনো উপকারে আসবে? নবীজি বললেন, হ্যা, হবে। তুমি মানুষকে পানি পান করাও।
৩- রাসূল সা. হযরত আবুযর গিফারী রা.কে নসীহত করেন; তার মাঝে একটি উপদেশ ছিল; রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা, হাড্ডি সরানোও সদাকা (তিরমিযী)
 রাসূলুল্লাহ সা.বলেন, ‘ঈমানের সত্তরের অধিক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উৎকৃষ্টতম হচ্ছে আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই বলা এবং নিম্নতম হচ্ছে যাতায়াতের পথ থেকে কষ্টদায়াক বস্তু অপসারণ করা’ (বুখারী, মুসলিম )।  
 ৪-যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের ফল ও আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে -- (সুরা মায়িদাহ:৩৮-৩৯)।  

    তৃতিয় পর্ব: 

     উপরে প্রথম পর্বে ইসলামের ইতিহাস থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা তুলে ধরেছি। আর দ্বিতীয় পর্বে হাদিস ও আল কুরআনের আয়াত তুলে ধরেছি।কি মনে হয়? আল্লাহর রাসুল সা: ও তাঁর হাতে প্রশিক্ষিত সাহাবিরা স্ববিরোধি কাজ করেছেন? (নাউজুবিল্লাহ)
না, তাঁরা তা করেন নি।  তাঁরা যেটা করেছেন, সেটাই ইসলাম।যথার্থ ইসলাম। প্রতিটি টেক্স তার কনটেক্সটের আলোকে বুঝতে পারার নামই হলো কুরআন বুঝা ও তা হতে শিক্ষা নেয়া। উদাহারণ রয়েছে উপরের প্রতিটি ঘটনায়।  
      
       জ্ঞানের পেছনে যে অদৃশ্য যে জ্ঞান থাকে, সেটাই হলো; দর্শন। আপনি কুরআনের আয়াত এবং হাদিস মুখস্থ করলেন, কিন্তু সে সব টেক্সট আর কনটেক্সট বুঝলেন না, তার মানে আপনার কাছে ইনফরমেশন আছে, কিন্তু জ্ঞান নেই। ইনফরমেশন থাকা আর জ্ঞান ও জ্ঞানের পেছনের জ্ঞান থাকা দুটো আলাদা বিষয়। 

     আজকাল অনেককেই দেখি গড় গড় করে কুরআন হাদিস আউড়ে দিয়ে প্রমাণ করছেন হরতাল হারাম, রাস্তা অবরোধ হারাম, জুলুমের প্রতিরোধ করা হারাম। সব হারাম, হারাম। বলি, একুট থামুন, একটু ভাবুন। কি বলছেন? কি বিষয়ে এবং কখন বলছেন? কোন প্রেক্ষাপটে, কোথায় এবং কাদের উদ্দেশ্যে বলছেন? এসবও ভাবুন। আলেম সেজে অযথা লোক হাসাবেন না, আমরা যারা উম্মী; অল্প বিদ্যার লোক, আপনাদের দিকে চেয়ে থাকি নির্দেশনার জন্য, তারা লজ্জা পাচ্ছি। প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন প্লিজ হুজুর, প্লিজ-
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments