Recent Tube

লাইকি, টিকটক, ফ্রি ফায়ার, পাবজি, ফেসবুক এসবের বিকল্প কি? -- কুতুব শাহ।







 লাইকি, টিকটক, ফ্রি ফায়ার, পাবজি,ফেসবুক এসবের বিকল্প কি? 

     দীর্ঘ ছুটিতে গিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস  ছেড়ে চলে এসেছি প্রবাসে। ঘুরেছি গ্রাম থেকে শহরে দেখেছি অনেক পরিবর্তন কিন্তু যা খোঁজেছি তা পাইনি। এখন সকালে বাড়ি থেকে বুড়া-বুড়ির তেলাওয়াতের স্বর তেমন শুনা যায়না, দেখিনি সকাল বেলা চোখ মুছতে মুছতে লাইন ধরে শিশুদের মক্তবে যেতে! 

     সে সময় সকালে মক্তবে যাওয়ার তাগিদ ছিল, রাস্তা দিয়ে চলার সময় কিচিরমিচির শব্দে তেলাওয়াত শুনা যেত, মানুষের মাঝে শালীনতা ছিল,  নারীর বুকে কাপড় ছিল, মুখের ভাষায় মাধুর্য ছিল, সরল আন্তরিকতা ছিল, দল বেঁধে ছোটছোট বাচ্চাদের খেলা,দৌড়াদৌড়ি ছিল, চিঠির ভাষায় ছিল বিনয় আর সভ্য শব্দাবলীর রেশ! কাগজের উপর কলমের আচরে লেখা হতো কতশত আবেগ! কত ভালোবাসা। কত প্রেম! কোন মোবাইল গেইম ছিলনা, ফেসবুক ছিলনা, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ আর ভিডিও কনফারেন্স ছিলনা। তাতে কি? জীবন তো থেমে ছিলনা। বেশ চলছিল তার আপন গতিতে। সেই জীবনের রংটা খোঁজেছি সারাক্ষণ কারণ সেই জীবনই মধুর ছিল!

    ছোট্ট সোনামণিদের কানামাছি,রান্নাবাটি আর কত হরেক রকম খেলায় দিন কেটে যেত বেশ! সেই ছোট্ট মণিরা এই যুগে এখন এলোমেলো কাপড় পরে টিকটকে অভিনয় করে। অনেক ফেমাস। রেপ কেসের মামলা গুলো বিচারহীন ভাবেই পড়ে থাকে এখন। এত অসংখ্য মামলা লড়বে কে? বাড়ছে বাড়ুক। ওতো সময় নেই!লোকলজ্জার ভয়ে মামলাই হয়নি এমন সংখ্যাটাই বরং বেশি। কারও কিছু আসে যায়না। আবার গেইমের নেশায় মত্ত, পকেট করছে খালী, দামী মোবাইল আর ইন্টার নেটেই কাটে তাদের শিশু কৈশোর যৌবন কাল! আগেকার সময়ের আমাদের সেই আড্ডা, ঘুরাঘুরি, খেলাধুলা খোঁজেছি পথপ্রান্তে কিন্তু এর ছিটেফোঁটাও নাই।

      ছোট্ট কিশোর ছেলেরা চষে বেড়াতো গায়ের মাঠ, ঘাট,প্রান্তর। হেসে খেলে ঘুড়ি ওড়াতো। নদীর জলে দাপিয়ে বেড়াতো। সাতরে পাড়ি দিত নদীর এপার থেকে ওপার। অল্প জলের বিলে নেমে কাঁদায় মাখামাখি হয়ে নানারকম মাছ কুড়াতো। উচ্ছ্বলতা নিয়ে সারাদিন বাঁদরামি করার পর সাঝের বেলায় ঠিকই কেরোসিনের মিটমিটে কুপি জ্বালিয়ে ডুব দিত পরের দিনের স্কুল পাঠে। ভোর বেলায় বুকে কায়দা, কুরআন নিয়ে দলবেঁধে ছুটে যেতো মক্তবে। ওদের মনে পিতা আর শিক্ষক উভয়ের জন্য ছিল অগাধ সম্মান,শ্রদ্ধা আর ভয়। সেই ছোট্ট কিশোরদের পুত্রেরা এখন ইফটিজিং এ নাম লিখিয়েছে। বাইকের পেছনে নারী না নিয়ে ঘুরলে নাকি আজকাল ফ্যাশনের জগত থেকে পিছিয়ে যাবে অনেকদূর। আবার রাতে বউকে বাউকে  নিয়ে ঘুরাঘুরি যেন এক ধরণের বিনোদন! সিগরেটের টান দিতে না জানলে নাকি আজকাল আধুনিকতার অপমান হয়, প্রগতিশীলতার সর্বনাশ! অভিভাবকেরা  ছেলেমেয়েদের ভয় দেখাবে কি? উল্টো ভয় পায়। কারণ যুগটা যে আধুনিক, ছেলেরা স্মার্ট পিতা মাতা সেই পুরনো তাই তারা কি আধুনিকতা বুঝে! 

       তখন পশ্চিমা সিরিয়াল ছিলনা। গৃহিণী মন দিয়ে সন্তানদের লালনপালন করতো। ছেলে মন দিয়ে পড়বে সেজন্য মা পাশে বসে গায়ে বাতাস দিত। মশা তাড়াতো। সন্তানগুলো মানুষও হতো বেশ! সংসারে অভাব থাকলেও সুখ ছিল। সাজানো সংসারে মান অভিমান ছিল কিন্তু ভাঙন খুব কম। এখন দিন পাল্টেছে৷ সন্তান কি করছে কোনো খবর নেই ৷ মা নিজেই উল্টো ফেসবুকে মজে আছে। স্বামীকে ভুলে অন্য পুরুষের সাথে চ্যাটিং করতেও শিখে গেছে, প্রেম নয় যাস্ট ফ্রেন্ড নামের এক অজুহাত আছে। এর ফাঁকে ঢুকেছেব পরকিয়া৷ নামের ব্যাধি যাতে আক্রান্ত বক্তা, হুজুর থেকে সব ক্যাটাগরির পাব্লিক। কেউ পরের বউকে দামী আঙ্কটি বড় দিলের দাবী করছে কেউ নিজের বউয়ের ডিমান্ড পুরা করতে না পেরে করছে আফসোস। সংসারের সেই আগের সুখ কি আছে? নদীর মত ভাঙ্গছে পরিবার! যুগটা যে ডিজিটাল!

     এই নোংরা অভ্যস্ততার পৃথিবীর প্রাচীর ভেদ করে পুরোনো পৃথিবীর ঘ্রাণ নিতে ভীষণ ইচ্ছে করে। কিন্তু সেইদিন আর ফিরে আসবেনা। আমাদের মৃত্যু হবে সন্তান থাকবে বিলাতে কিংবা অন্য নগরে হুজুর দিয়ে যিয়ারত করিয়ে নিবে কবর। কিন্তু নিজেই কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মুনাজাতের সেই যোগ্যতা কই, সেই আবেগ কই, সেই অনুভূতি দরদ কই? যুগটা যে আধুনিক! মরার পর কবরের পাশে সন্তান না আসুক তাতে হয়ত আক্ষেপ নাই কিন্তু জীবত অবস্থায় যেন বৃদ্বাশ্রমে না পাঠায় সেই দোয়া। 

      ইটপাথরে গড়া ইমারতবাসীর অন্তরটাও যেন ইট পাথরের মত শক্ত হয়ে যাচ্ছে, তাই আগে মাটির ঘরে বসবাস করা  মানুষ গুলোর মত সে মায়া, সামাজিকতা, অন্তরের টান নাই। আমার পাড়ার অনেক ছেলেও আমাকে হয়ত চিনবেনা! তারা যে শহরে থাকে! দূরের কেউ ভেবে হয়ত কেউ জিজ্ঞেস করবে আঙ্কেল লাইটার হবে? আমি অবাক হয়ে থাকিয়ে দেখব! আমরা তো প্রতিবেশী গরম মেজাজের চাচাদের ভয়ে ভর দূপুরে বের হতে ভয় পেতাম, রাতে কোথাও থেকে ফিরতে দেরী হলে রাস্তায় কেউ ধরে এতক্ষণ কোথায় ছিলি বলে কান ধরে টানে কিনা আতঙ্কে থাকতাম। এখন কি সেই সব কালচার আছে? প্রতিবেশীর ছেলেকে শাসন করলে নতুন দাঙ্গা হবে! যুগটা যে আধুনিক। 

       ফ্রি ফায়ার পাবজি নয় আমাদের সেই কানামাছি, হাডুডু গেইম চাই, ভার্চুয়াল আড্ডা নয় সবুজ মাঠের ঘাসে কিংবা প্রচন্ড গরমে পুকুর ঘাটে বসে সেই আড্ডা চাই। কিন্তু সেই আগের দিন কি আর ফিরে আসবে? প্রযুক্তি অনেক কিছু দিয়েছে কিন্তু যা কেড়ে নিয়েছে তা জীবনের জন্য বেশ মায়াবী, মধুময় ছিল। আমার ছেলেকে কিভাবে বুঝাবো যান্ত্রিক এসির চেয়ে আমাদের সময়ে মা'য়ের হাতপাখার বাতাস অনেক সুখময় ছিল। বুঝাতে পারবেন?

Post a Comment

0 Comments