Recent Tube

বিশ্বনবীর ‎(স) ‏মক্কা বিজয় ‎(فتح مكة) ‏ ‏ ‏ ‏ ‏ ‏মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরী। ‎



বিশ্বনবীর (স) মক্কা বিজয় 
(فتح مكة), 
Conquest of Mecca
সবগুলো পর্ব একসাথে।
---------------------------------

   মক্কায় খবর ছড়িয়ে পড়লো মুহাম্মাদ (স) ঝাঁকেঝাঁকে সঙ্গী-সাথী নিয়ে মক্কার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন ।

     মক্কাবাসীরা ঘর থেকে বেরিয়ে তাকিয়ে দেখলো শুধু মানুষ অার মানুষ । আজ অার বাঁচবার কোন উপায় নেই।  তাদের দরোজাগুলি বন্ধ করে দিল। খুঁজতে লাগলো নিরাপদ আশ্রয় ।

     বিশ্বনবীর (স) দশ হাজার সাহাবীর কন্ঠে এক অাচমকা ধ্বনী মক্কার আকাশ বাতাসকে ভারী করে তুললো । বাতাসে পতপত করে উড়তে লাগলো কালো কাপড়ে সাদা অারবী হরফে লিখা কালেমার পতাকা ।
ঐতো দেখা যায় অসংখ্য মানুষের ভীড়ে উটের পিটে  সওয়ার হয়েছেন এক উজ্জল পুরুষ।  পরেছেন কালো পাগড়ীর উপরে লোহার শিরোস্ত্রান । ইনিই তাহলে মুহাম্মদ (স)। যাকে আমরা এই মক্কায় থাকতে দেইনি । আজ কী তবে মুহাম্মাদের (স) প্রতিশোধের পালা? 
 ভয়ে দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করতে লাগলো কুরাইশ নারী-পুরুষেরা। 

      অযুত কন্ঠে বুলন্দ কালেমার আওয়াজ ইথারে ভর করে জাবালে আবি কুবাইস পর্বতমালায় প্রতিধ্বনিত,রনিত অনুরনিত হচ্ছে, মক্কাবাসীদের হৃদয়ে ভয় জাগানিয়া তাওহীদের ঘোষণা -

   ''আল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ । 
আল্লাহু আকবার কাবীরা,ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাসীরা,ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও ওয়া অাসিলা''।

    হিজরী অষ্টম সনের ১০ ই রামাদ্বান, মঙ্গলবার আসরের নামাজের পর দশ হাজার সাহাবীর বিশাল এক বাহিনী নিয়ে মদীনা থেকে মক্কা অভিযানের  উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজেতা, নবগঠিত মদীনা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বিশ্বনেতা,বিশ্বনবী,আলোর নবী আল-আমীন (স)

    শায়খ উসায়মিন তাঁর মাজালিছু শাহরু রামাদ্বান গ্রন্থে উল্লেখ করেন,অষ্টম হিজরীর ২০ শে রামাদ্বান  মহান আল্লাহ মক্কা নগরীকে শিরক মুক্ত করেন । তাওহীদ প্রতিষ্টিত করেন। 
গোত্রে গোত্রে ভাগ হয়ে পতাকাবাহী সেনাদলগুলে মক্কায় প্রবেশ করে ।
হুজুর (স) ছোট্র একটি সেনাদলের সাথে একটি উঠে চড়ে মক্কায় প্রবেশ করেন।। তার সাথে  পেছনে বসেন একজন সাহাবী । হুজুর (স) বায়তুল হারামে প্রবেশের সময় এতটা বিনয় প্রকাশ করেছিলেন যে,সামনের দিকে ঝুকে থাকার কারণে উঠের কোঁজ নবীজির ললাটে লেগে গিয়েছিল।

     হারাম শরীফে প্রবেশ করে তাঁর হাতে থাকা ধনুক দিয়ে আল্লাহর ঘরে রক্ষিত মূর্তিগুলোকে খুচিয়ে মাটিতে ফেলতেছিলেন আর পবিত্র জবান দিয়ে পড়তেছিলেন ''সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত, মিথ্যার পতন অবশ্যম্ভাবী। ''
অতঃপর কা'বার অভ্যন্তরে ধীরে ধীরে চক্কর দেন আর নিজ হাতে শির্কের অংকিত এবং ঝুলন্ত নিশানাগুলোকে ছুড়ে ফেলে দেন ।
আর বলেন এখানে আর কেনদিন শয়তানের উপাসনা হবেনা, আর কোনদিন শির্কের সূচনাও হবেনা। অতঃপর মানবতার নবী বিজয়ীর বেশে আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ করেন ।

    এদিকে ভয়কাতুরে কোরাইশদের উদ্দেশ্য করে জানতে চাইলেন তোমরা আজ আমার কাছে কেমন আচরণ আশা করো?  তারা বললো ভাই,  ভাইয়ের কাছে ভাই যেমন আচরণ আশা করে,  চাচা যেমন ভাতিজার কাছে উত্তম অনাচরণ আশা করে আমরাও আপনার কাছে সেরকম অনাচরণ আশা করি।

    রহমতের নবী মক্কাবাসীদেরকে রহমতের কোলে তুলে নিলেন ।  তাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন।। 

    এই মহাবিজয়ের কারণ ছিল নবী করিম (স) কুরাইশরাদের সাথে সন্ধী করেছিলেন ষষ্ট হিজরীতে। সেই সন্ধীর যে দফা ছিল তার একটি ছিল দশ বছরের মধ্যে যে চাইবে সে নবী করিম (স) এর সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হবে। আর কেউ যদি চায় মক্কার কুরাইশদের সাথে শান্তিচুক্তিতে আবদ্ধ হবে তাতেও কোন দোষ নেই। সেই হিসেবে খোজয়া নামক গোত্র হুজুর (স) এর সাথে এবং বকর গোত্র কোরাইশদের সাথে চুক্তিতে অাবদ্ধ হয়। 

     প্রকৃতপক্ষে হুদাইবিয়ার সন্ধি এবং মক্কা বিজয় দুটিই হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর অতুলনীয় দূরদর্শীতার ফল। হুদাইবিয়ার সন্ধির মাধ্যমে যে বিজয়ের সূত্রপাত হয়েছিল তার চূড়ান্ত রূপই ছিল মক্কা বিজয়। 

     ষষ্ঠ হিজরির জিলকদ মাসে নবীজি (সা.) ওমরাহর উদ্দেশ্যে মক্কা যাত্রা করলেন। কুরাইশরা বাধা দিলে হজরত মুহাম্মদ (সা.) হুদায়বিয়া নামক জায়গায় অবস্থান করেন। এখানেই সম্পাদিত হয় ইতিহাসে ‘হুদায়বিয়ার সন্ধি’ নামে বিখ্যাত বিশ্বের প্রথম লিখিত সন্ধি চুক্তি।
উল্লেখিত গোত্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা ছিল।

  মক্কা বিজয়
 নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) খ্রিস্টীয় ৬৩০ অব্দে রক্তপাতহীনভাবে মক্কা নগরী দখল করেন। ইতিহাসে এই ঘটনা মক্কা বিজয় নামে খ্যাত। ঐতিহাসিকদের মতে মক্কা বিজয় ইসলামের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয় যদিও আল কুরআনে হুদায়বিয়ার সন্ধিকেই প্রকাশ্য বিজয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত প্রকৃতপক্ষে হুদায়বিয়ার সন্ধি এবং মক্কা বিজয় দুটিই মুহাম্মদ (স) এর অতুলনীয় দূরদর্শীতার ফল। হুদায়বিয়ার সন্ধির মাধ্যমে যে বিজয়ের সূত্রপাত হয়েছিল তার চূড়ান্ত রূপই চিল মক্কা বিজয়। এই বিজয়ের ফলে মুসলমানদের পক্ষে আরবের অন্যান্য এলাকা বিজয় করা সহজসাধ্য হয়ে পড়ে। হুদায়বিয়ার সন্ধি মোতাবেক সন্ধির পরবর্তী বছর মুহাম্মদ ২০০০ সাহাবা নিয়ে মক্কায় উমরাতুল ক্বাযা পালন করতে আসেন এবং এ সময়ই তিনি মক্কার কুরাইশদের মধ্যে নেতৃত্বের শুন্যতা লক্ষ্য করেন। তাদের ক্ষাত্রশক্তির সঠিক পরিমাপ করতে পেরেছিলেন তিনি এবং এজন্যই অধীর ছিলেন মক্কা বিজয়ের জন্য। এর ১ বছরের মাথায়ই তিনি তা সম্পন্ন করার জন্য মনস্থির করেন।

      হুদায়বিয়ার সন্ধির অল্প কিছুদিন পরেই ইসলাম ব্যাপক হারে প্রসারিত হতে শুরু করে যা কুরাইশদের শঙ্কিত করে তোলে। তারা দেখতে পায় এভাবে চলতে থাকলে মক্কা এ তার দক্ষিণাঞ্চলের গোত্রগুলো অচিরেই ইসলাম গ্রহণ করবে। তাই তারা তায়েফের সাকীফ গোত্র এবং হুনায়নের হাওয়াজিন গোত্রদ্বয়ের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে মদীনা আক্রমণের পরিকল্পনা করে। কিন্তু ১০ বছরের এই চুক্তির কারণে তারা আক্রমণ করতে পারছিলনা। তাই তারা প্রথমে চুক্তি বাতিলের ষড়যন্ত্র শুরু করে।

     সন্ধির চুক্তিমতে বনু বকর গোত্র কুরাইশদের সাথে এবং বনু খুযাআ গোত্র মদীনার ইসলামী সরকারের সাথে মৈত্রীসূত্রে আবদ্ধ হয়েছিল। এই দুটি গোত্রের মধ্যে অনেক আগে থেকেই শত্রুতা চলে আসছিলো। এর কারণ অনেকটা এরকম। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে বনু হাদরামি গোত্রের জনৈক এক ব্যক্তি বসবাসের উদ্দেশ্যে খুযাআ গোত্রের এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় খুযাআ গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে। এরপর বনু বকরের লোকেরা খুযাআ গোত্রের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আবার খুযাআ গোত্রের লোকেরা বনুবকরের একাংশ বনু দায়েলের সরদার আসওয়াদের তিন সন্তান সালমা, কুলসুম ও যুবাইরকে হারাম শরীফের সীমানার কাছে হত্যা করে। তখন থেকেই বনু দায়েল তথা সমগ্র বনু বকরের সাথে বানু খুযাআর বিরোধ চরে আসছিলো যা ইসরামের আবির্ভাবের ফলে অনেকটা স্তিমিত হয়ে যায়। কিন্তু হুদায়বিয়ার সন্ধির পর আবার বনু বকর সুযোগ খুঁজতে থাকে।

     এরই জের ধরে একদিন বুন দায়েল পরিবারের প্রধান নাওফেল ইবনে মুয়াবিয়া বনু খুযাআ গোত্রের মুনাব্বিহ নামক এক ব্যক্তিকে ওয়াতির নামক জলাশয়ের নিকট ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে। এতে পূর্ব শত্রুতা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে এবং দুই গোত্রে তুমুল যুদ্ধ আরম্ভ হয়। কুরাইশরা সন্ধি বাতিলের জন্য একে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে এবং এই যুদ্ধে বনু বকরকে অস্ত্র সাহায্য দেয়। তারা ভেবেছিলো বিস্তারিত তথ্য মুহাম্মদের কাছে পৌছাবেনা; তাই তারা রাতের অন্ধকারে বনু বকরের পক্ষে যুদ্ধেও অবতীর্ণ হয়। খুযাআ গোত্রের উপর রাতের অন্ধকারে নিরস্ত্র অবস্থায় আক্রমণ করা হয় এবং নিরুপায় হয়ে তারা হারাম শরীফে আশ্রয় গ্রহণ করে। খুযাআর লোকেরা বলে যে তারা হারাম শরীফে প্রবেশ করেছে যেখানে রক্তপাত নিষিদ্ধ। কিন্তু নাওফেল সবকিছু অমিন্য করে এবং কুরাইশ ও বনু বকরকে নিয়ে হারাম শরীফের অভ্যন্তরে ঝাপিয়ে পড়ে খুযাআ গোত্রের প্রচুর লোককে হত্যা করে। এটি ছিল হুদায়বিয়ার চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

     এই ঘটনার পর খুযাআ গোত্রের আমর ইবনে সালিম এবং বনু কা'ব গোত্রের এক ব্যক্তিসহ মোট ৪০ জন উষ্ট্রারোহীকে নিয়ে মুহাম্মদের কাছে এসে সব ঘটনা বিবৃত করে এবং তার সাহায্যের জন্য আবেদন করে। মুহাম্মদ তাদেরকে সাহায্য করা হবে বলে আশ্বাস দেন এবং তখনই মক্কা বিজয়ের ব্যাপরে মনস্থির করেন। খুযাআর লোকেরা তখন মক্কায় ফিরে যায়। এর পরপরই মুহাম্মদ এই হত্যাকান্ডের কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে এবং তিনটি শর্তারোপ করে কুরাইশদের কাছে একজন দূত প্রেরণ করেন। কথা ছিলো এই শর্তত্রয়ের যেকোন একটি মেনে নিতে হবে। শর্তত্রয় ছিল:

      খুযাআ গোত্রের নিহতদের রক্তপণ শোধ করতে হবে। অথবা
    কুরাইশদের কর্তৃক বনু বকরের সাথে তাদের মৈত্রীচুক্তি বাতিল ঘোষণা করতে হবে। অথবা
    এ ঘোষণা দিতে হবে যে, হুদায়বিয়ার সন্ধি বাতিল করা হয়েছে এবং কুরাইশরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

     কুরাইশদের পক্ষ হতে কারতা বিন উমর তৃতীয় শর্তটি গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে তারা অবশ্য এর জন্য অনুতপ্ত হয়েছিল। যাহোক, এভাবেই ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধি রদ হয়ে যায়।
সন্ধি নবায়নের প্রচেষ্টা

    প্রকৃতপক্ষে সন্ধিচুক্তি অগ্রাহ্য করে বনু বকরকে সহযোগিতা করাটা ছিল প্রচন্ড অন্যায় আর চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তটিও যে তদনুরুপ অন্যায় ও নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক হয়েছে কুরাইশ নেতারা তা অচিরেই উপলব্ধি করতে শুরু করে। তাই তারা চুক্তি নবায়নের জন্য শীঘ্রই তাদের অন্যতম নেতা আবু সুফিয়ানকে মদীনায় প্রেরণ করে। আবু সুফিয়ান কাজটি সহজে আদায় করে নেয়ার লক্ষ্যে প্রথমেই তার কণ্যা উম্মে হাবীবার গৃহে যায়। উল্লেখ্য উম্মে হাবীবা ছিল মুহাম্মদের স্ত্রীদের একজন। কিন্তু হাবীবার গৃহে যেয়ে আবু সুফিয়ান কোন সুবিধা করতে পারেননি; এমনকি উম্মে হাবীবা তাকে বসতেও দেয়নি। কারণ হিসেবে উম্মে হাবীবা বলে যে তার গৃহের বিছানাটি আল্লাহর রাসূলের। পিতা হিসেবে আবু সুফিয়ান শ্রদ্ধেয় হলেও মুহাম্মদের বিছানায় একজন নাপাক মুশরিক বসুক এটা সে চায়না। আবু সুফিয়ান এতে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বেরিয়ে যায়। মুহাম্মদের কাছে সে সন্ধি নবায়নের প্রস্তাব পেশ করলে মুহাম্মদ কোন উত্তর দেননি। এরপর আবু সুফিয়ান একে একে আবু বকর, উমর এবং সবশেষে আলীর কাছে যায়। আবু বকর ও উমর তাদের অপারগতার কথা প্রকাশ করেন এবং আলী তামাশা করে বলেন যে আবু সুফিয়ান যেন কারো উত্তরের অপেক্ষা না করে মদীনার মসজীদে নববীতে তার প্রস্তাবের কথা ঘোষণা করে চলে যায়। উপায়ন্তর না দেখে আবু সুফিয়ান তা-ই করে এবং মক্কায় ফিরে যায়। সন্ধি নবায়নের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়। আর এদিকে মুহাম্মদ (স) মক্কা বিজয়ের জন্য অতি গোপনে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন।
গোপন প্রস্তুতি

    মক্কা অভিযানের পূর্বে মূতার যুদ্ধে যাবার প্রস্তুতির কথা প্রকাশিত হয়ে পড়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছিল। তাই মুহাম্মদ মক্কা অভিযানের প্রস্তুতি সর্বোচ্চ গোপনীয়তার মাধ্যমে শুরু করেন। তিনি কাউকে বলেননি কোথায় অভিযানে বের হবেন। এমনকি তার ঘনিষ্ঠ সহচর আবু বকর বা তার স্ত্রীদেরকেও কিছু বলেননি। তবে একটি উপায়ে তা প্রায় প্রকাশিত হয়ে পড়েছিল। হাতিব ইবনে আবী বালতা নামক একজন সাহাবী, যিনি বদর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, অনুমান করেন যে নবী মক্কা অভিমুখে যাবেন। তিনি অনুমানভিত্তিক এই সংবাদ একটি পত্রের মাধ্যমে কুরাইশদের জানানোর উদ্যোগ নেন এবং একজন মহিলার মাধ্যমে তা মক্কা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু ঐ মহিলা মক্কা পৌছানোর পূর্বেই নবী এই সংবাদ জেনে যান এবং তিনজন সাহাবীকে সেই পত্রটি উদ্ধারের জন্য প্রেরণ করেন। এই তিনজন হলেন আলী, যুবায়ের এবং মিকদাদ। তারা মক্কা অভিমুখে রওযায়ে খাখ নামক স্থানে উক্ত মহিলার সন্ধান পান। প্রথমে অস্বীকার করলেও হুমকির ,মুখে সে চিঠিটি দিয়ে দেয়। এটি মদীনায় আনার পর জানা যায় যে তা হাতিবের লিখা। প্রকৃতপক্ষে হাতিব ইসলামের প্রতি বিদ্বেষের বশে নয় বরং নির্বুদ্ধিতার কারণে কেবল কুরাইশদের সহানুভূতি আদায়ের জন্য এই পত্র লিখেছিলেন। তাই তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।
মক্কা অভিমুখে যাত্রা ও শিবির স্থাপন

     সম্পূর্ণ গোপনে মক্কা অভিযান শুরু হয়। বনু সুলাইম, বনু আশজা, বনু মুযায়না, বনু গিফার এবং বনু আসলাম গোত্রের অনেকেই প্রস্তুতি নিয়ে মদীনা থেকে মুহাম্মদ (স) এর সাথে বের হয়। এই দলের সাথে খালীদ বিন ওয়ালিদ ছিলেন। আবার অনেকেই পথিমধ্যে মিলিত হয়। এভাবে মুসলমানদের মোট সৈন্যসংখ্যা দাড়ায় ১০,০০০। মুসলিম বাহিনী ৮ম হিজরী সালের ১০ রমযান তারিখে মদীনা থেকে মক্কা অভিমুখে যাত্রা করে। তখন মুসলমানদের সবাই রোযা রেখেছিল এবং কাদীদ নামক স্থানে কুদাইদ এবং উসফান নামক এলাকার মধ্যবর্তী একটি ঝর্ণার নিকট আসার পর তারা রোযা ভঙ্গ করেন। এরপর ঐ রমযানে আর কেউ রোযা রাখেননি ।

     অবশেষে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে মুসলিম বাহিনী মার-উজ-জাহরান নামক গিরি-উপত্যকায় পৌছে। এখানেই এশার নামায আদায়ের পর মুসলিম বাহিনী শিবির স্থাপন করে।

    মক্কা বিজয় ছিল রক্তপাতহীন এক মহাবিজয় । সারা দুনিয়ায় যার তুলনা আজও বিরল ।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক কলামিস্ট ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments