Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৭৪, নুর মুহাম্মদ চৌধূরী ( মুবিন)।








 
          বিতি কিচ্ছা
             পর্ব-৭৪;


 নু মুচীথুক্কু:

    ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন হয়ে গেল। এনু মুচী হাসবেন না কাঁদবেন কিছুই বুঝে উটতে পারছেন না। কারণ তিনি হয়ে গেলেন প্রেসিডন্ট । এ যাবৎ তার কর্ম তৎপরতায় লালিত হয়নি প্রেসিডন্ট পদের নিয়ামক কোন সূচী কিংবা স্বপ্ন। এ ছাড়া শিক্ষাদিক্ষায়ও নাই তার তেমন কোন হাতেখড়ি। তার আন্দাজ অনুমানে নিজস্ব যোগ্যতার বিচারে ক্রীড়া সম্পাদক হওয়াই মানানসই ছিল বটে, তবে ক্ষমতাসীন সরকারী ঘরাণায় সম্পর্ক গড়ার সুবাদে এ যাবৎ কিছু মূল্যায়নে আসা আর এমন কি?  তাছাড়া প্রেসিডন্ট হবার মত পর্যাপ্ত বুদ্ধিশুদ্ধিও তার ঘটে বা ঘিলুতে নেই। অথচ  খ্যাতির বিড়ম্বনায় নাকানি-চুবানি খেয়ে যারা চুলে পাঁক ধরিয়েছেন তাদের কৌশলেই এনু মূচী হয়ে গেলেন প্রেসিডন্ট । যা হউক আজীবন খামখেয়ালী খেলাধুলায় মত্ত এনু মূচী প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেনই যখন, তখন প্রথমেই ধারে বুদ্ধি কিনতে দ্বারস্থ হলেন করিমউল্লার দরবারে ।

      করিমউল্লাহ তাকে একটি গল্প শুনালেন। এক ছিল বাবুর্চি। ভাগ্যক্রমে হয়ে গেল কোন এক দেশের রাজা। রাজা হয়ে তার দেমাকে পরিবর্তন সূচিত হল, ঘন ঘন বাইজি এনে নাচ-গানে মত্ত হল রাজা। প্রথমদিনেই আগত বাইজির নাচে ও গানে মুগ্ধ হয়ে রাজা ঘোষনা করলেন," তোমাকে আমার প্রথম স্ত্রী করলাম"। এইভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ করে ক্রমান্বয়ে সপ্তমে উপনীত হল বাবুর্চী রাজার সংসার। রাজ্যের কাজকর্মের কোন খবরদারীতে নাই রাজার কোন যোগসাজশ্। চারিদিকে বিশৃংখলা, বিদ্রোহের চারা শীকড় গজাতে শুরু করল। 

       কিছুদিন অতিবাহিত হল এভাবে। সূশীল সার্ভেন্টদের পরম ও চরম চেষ্টায় মোটামোটীভাবে চলছে বাবুর্চি রাজার রাজ্য। কিন্তু খাবার সময় হলে বাবুর্চি রাজার সংসারে শুরু হল ভিন্ন এক বিড়ম্বনা। সাপুড়ে বাইজিদের রাম্নাবান্না রাজার পেটে সয়না তেমন। তাই খাবার টেবিলের পাশে গেলেই শুরু হয় -"ওয়াক্ , থু" । মাঝে মাঝে অতিমাত্রায় রাগান্বিত হয়ে বলতে থাকেন " তোরা আমাকে রান্না শিখাবি ?" ইত্যাদী বিতিকিচ্ছা।

      গল্পের শেষাংশ আর বললেন না করিমউল্লাহ। তিনি এনু মূচীকে পরামর্শ দিলেন আকাশের দিকে না তাকানোর জন্য। কারণ মূচীদের জাত স্বভাব বিকাল বেলা মাঠে বেরুলেই আকাশের দিকে তাকানো। কোথায় শকুন উড়ছে দেখা। অর্থাৎ যেখানে শকুন উড়বে - সেখানেই আছে মরা গরুর সন্ধান। অর্থাৎ তিনি এনু মূচীকে তার জাত খাছলত পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে বিদায় দিলেন। 

    কিন্তু এনু মূচী কি বুঝে উটতে পারে করিমউল্লাহর এই মুল্যবান উপদেশ। 

        সভাসদ বসল। এবার জনতার প্রত্যাশা পূরণের পালা। সকলে বললো, জনাব প্রেসিডন্ট কিছু একটা করুন। এনু মূচী বললেন, 'তাইতো। কিছুদিন পর ঘোষিত হল "বিশাল প্রেসিডন্ট গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট" । খেলার আমেজে কেটে গেল মাস তিন। জনতা বললো, জনাব, নতুন কিছু চাই। প্রেসিডন্ট বললেন, "সবুর"। অত:পর এলো আন্তজেলা নৌকাদৌড় প্রতিযোগিতা । পুরষ্কার একজোড়া টগবগে বলদ। এতে উৎসবে, আমেজে আর হৈ-হুল্লোড়ে পার হয়ে গেল আরোও কিছুদিন। এবার জনতারা বললো, জনাব প্রেসিডন্ট , ভাল কিছু একটা করেন। এনু মূচী বললেন,"সবুর"। এবার এলো পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন "ষাঁড় / মহিষের লড়াই। পুরষ্কার হিসাবে থাকলো ২১" রঙিন টেলিভিশন ।  

    জনতারা বললো , হয় নাই জনাব প্রেসিডন্ট । ভাল কিছু একটা চাই, জনগনের উন্নয়নের সুত্রে নতুন কিছু চাই। মাননীয় প্রেসিডন্ট এনু মূচী বললেন, এরপর আর কি চাই? অত:পরে এলো মাসব্যাপী বানিজ্যমেলা। সাথে লাকী কূপন নামক ঝমকালো জুয়ার আড্ডা। এতে সর্বস্বান্ত হল খেটে খাওয়া ক্ষুদে জনগোষ্টীর আপদকালীন যাবতীয় সংগ্রহ। তবু থেমে যায়নি বানিজ্য মেলা। মাস গড়িয়ে দুই মাস পার করে আড়াই মাসের শেষ তীরে এসে পৌছলো মানবতা বিধ্বংসী এই অপতৎপরতার ভয়াল থাবা। 

   এদিকে কথিত সুবিধাভোগীরা স্বীয় আখের গোছাতে মহাব্যস্ত , উন্নয়ন বিপর্যস্ত, জনতারা সর্বস্বান্ত আর মাননীয় প্রেসিডন্ট বলতে গেলে প্রায় উদভ্রান্ত। এদিকে বিদ্রোহের আগুনে জ্বলে বাতাস ভীষণ উত্তপ্ত। এনু মূচী আহ্বান করলেন পরিষদ সভা। সভায় জ্বলে উটলো বিদ্রোহের অনল। তাই--এনু মূচী বললেন," আমি ক্রীড়া মন্ত্রী "থুক্কু" ক্রীড়া সম্পাদক হতে চাই, গোল্লায় যাক্ প্রেসিডন্ট।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক,ফার্মাসিস্ট  ও অনলাইন এক্টিভিস্ট 

Post a Comment

0 Comments