মুহররম মাসের সিয়াম।
মুহররম মাসের সিয়ামের কয়েকটি স্তর রয়েছে। যথা:
(১) পুরো মুহররম মাস জুড়ে বেশি বেশি সিয়াম রাখা উত্তম। হাদীসে এসেছে:
«أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ المُحَرَّمِ، وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الفَرِيضَةِ صَلاَةُُ اللَّيْلِ
"রমজানের পর শ্রেষ্ঠ সিয়াম হল মুহররম মাসের সিয়াম, ফরজ সালাতের পর শ্রেষ্ঠ সালাত হলো তাহাজ্জুদের সালাত।" (মুসলিম ১১৬৩, তিরমিযী ৪৩৮, ৭৪০, আবূ দাউদ ২৪২৯, ইবনু মাজাহ ১৭৪২, আহমাদ ৭৯৬৬, ৮১৫৮, ৮৩০২, দারেমী ১৭৫৭, ১৭৫৮)
(২) দশই মহররম বা আশুরার সিয়াম পালন করা।
হাদীসে এসেছে:
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আশূরার দিনের (১০ ই মুহাররম) রোযার দ্বারা আমি আল্লাহর নিকট বিগত বছরের গুনাহ মাফের আশা রাখি। (তিরমিযী ৭৫২, আবূ দাউদ ২৪২৫, আহমাদ ২২০৮২, ইরওয়াহ ৪/১০৯, সহীহ আবী দাউদ ২০৯৬ তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ।)
(৩) আশুরার সিয়াম এর ক্ষেত্রে উত্তম হল ৯ ই মহররম সহ দুই দিন সিয়াম রাখা। হাদীসে এসেছে:
عن ابْنَ عَبَّاسٍ - رضى الله عنهما - يَقُولُ حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ - إِنْ شَاءَ اللَّهُ - صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ " . قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আশূরার দিন সিয়াম (রোজা/রোযা) পালন করেন এবং লোকদেরকে সিয়াম (রোজা/রোযা) পালনের নির্দেশ দেন, তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ই য়া হু দ এবং না সা রা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সিয়াম (রোজা/রোযা) পালন করব। বর্ণনাকারী বলেন, এখনো আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকাল হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম: ২৫৫৬)
(৪) কোন কারণে নয় তারিখে সিয়াম রাখতে না পারলে সে ক্ষেত্রে ১০, ১১ তারিখ এই দুইদিন সিয়াম রাখা। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
صُومُوا يَوْمَ عَاشُورَاء، وَخَالِفُوا اليَهُودَ، صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا أَوْ بَعْدَهُ يَوْمًا
"তোমরা আশুরার সিয়াম রাখো। এক্ষেত্রে ই হু দি দে র বিরোধিতা করো। এর আগে একদিন অথবা পরের একদিন ও সিয়াম রাখো।" (হাদীসটিকে আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী সহীহ আখ্যা দিয়েছেন, সহীহ ইবনু খুযাইমা: ৩/২৯০)
(৫) ৯, ১০ এবং ১১ তিন দিন সিয়াম রাখা।
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ বলেন:
صيام عاشوراء على ثلاث مراتب: أدناها أن يصام وحده، وفوقه أن يصام التاسع معه، وفوقه أن يصام التاسع والحادي عشر
"আশুরার সিয়াম এর তিনটি স্তর রয়েছে। সর্বনিম্ন স্তর হলো শুধু আশুরার সিয়াম রাখা। এর চেয়ে ভাল হল ৯ তারিখ সহ দুই দিন সিয়াম রাখা। সবচেয়ে ভালো এর সাথে ৯, ১১ মোট তিন দিন সিয়াম রাখা।" (ফাতহুল বারী: ৪/২৪৬)
উল্লেখ্য যে, আরবি নববর্ষ হিসেবে পহেলা মহররম সিয়াম রাখা বিদ'আত। কেননা এভাবে দিবস পালন সালাফগণ করেননি। (মাজমূ ফাতাওয়া শাইখুল ইসলাম: ২৪/৩১৬; আল মুগনী: ৩/৪৯৬; মাজমূ ফাতাওয়া বিন বায: ৯/৩২৫ প্রভৃতি।)
---------------------------------
সূত্র: দো’আ যিকির প্রশ্নোত্তর(ফেইসবুক গ্রুপ)
উত্তর প্রদানে: শাইখ মোঃ হযরত আলী।
ভাইস প্রিন্সিপাল, ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট, উত্তরা, ঢাকা।
0 Comments