Recent Tube

সূরা মুলকের ফযীলত ও আমল বিষয়ে দালিলিক পর্যালোচনা। আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।




সূরা মুলকের ফযীলত ও আমল বিষয়ে দালিলিক পর্যালোচনা। 
---------●●---------
প্রশ্ন: 
সূরা মুলকের ফযীলত কি? এটি পাঠ করলে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এ মর্মে বর্ণিত হাদীসটি কি সহীহ?
---------●◈●---------
 উত্তর: 
 সূরা মুলক অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি সূরা। তাই আসুন, এ ব্যাপারে হাদীসে কী বলা হয়েছে তা জেনে নেই:

▪আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

إِنَّ سُورَةً مِنْ الْقُرْآنِ ثَلَاثُونَ آيَةً شَفَعَتْ لِرَجُلٍ حَتَّى غُفِرَ لَهُ وَهِيَ سُورَةُ تَبَارَكَ 
الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ -وحسنه الألباني في صحيح الترمذي 
 
"কুরআনের তিরিশ আয়াত বিশিষ্ট এমন একটি সূরা আছে , যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষাবধি তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। সেটা হচ্ছে ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিয়্যাদিহিল মূলক (অর্থাৎ সূরা মূলক)।” 
(তিরমিযী, শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ. উক্ত হাদীসটিকে তার সহীহ তিরমিযীতে ’হাসান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. মাজমু ফতোয়াতে  এটিকে সহীহ বলেছেন।)

সউদী আরবের ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি এ প্রসঙ্গে বলেন:

এর উপর ভিত্তি করে আশা করা যায়,  যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে এ সূরাটি পড়ার প্রতি যত্মশীল হবে, এর মধ্যে যে সব উপদেশ ও শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং এর বিধিবিধানগুলোর প্রতি আমল করবে এ সূরাটি কিয়ামতের তার জন্য দিন শাফায়াত করবে।" (সউদী আরব ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি ৪/৩৩৪-৩৩৫)

▪ এ সূরার ফযিলতে আরেকটি হাদীস আছে কবরের আযাব থেকে রক্ষা প্রসঙ্গে। কিন্তু সেটি সহীহ কি না সে বিষয়ে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। কেউ বলেন, সহীহ/হাসান আর কারো মতে তা যঈফ।
হাদীসটি হল:
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন:
من قرأ { تباركَ الذي بيدِه الملكُ } كلَّ ليلةٍ ؛ منعه اللهُ عز وجل بها من عذابِ القبرِ . وكنا في عهدِ رسولِ اللهِ نسميها :  المانعةَ 
"যে ব্যক্তি প্রতি রাতে ‘তাবারাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক’ পাঠ করবে আল্লাহ তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। আমরা রাসূল সা. এর যুগে এ সূরাটির নাম المَانِعَة বা (বাধাদানকারী/ রক্ষাকারী) বলতাম।
(সহীহ আত তারগীব, হাদীসের মান: হাসান-শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ.)

আল্লামা মুবারকপূরী রাহ. বলেন, এর অর্থ হল: 
“দুনিয়ার জীবনে এ সূরাটির তিলাওয়াত তিলাওয়াতকারীর জন্য কবরের আযাব হতে মুক্তির কারণ হবে।” (মিরআতুল মাফাতীহ ৭/২৩১)

এ হাদীসটির সনদের ব্যাপারে কোন কোন মুহাদ্দিস বলেন যে, এতে দূর্বলতা আছে। কেউ কেউ বলেছেন, এটি মাউকুফ হাদীস; মারফু নয় অর্থাৎ  এটি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. এর নিজস্ব বক্তব্য; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্তব্য নয়। কিন্তু  এটি মাউকুফ হলেও মরফু’র এর হুকুমে। কেননা, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হয়ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেই এ কথা বলেছেন। নিজের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা তার দ্বারা সম্ভব নয়।

মোটকথা, এ সুরাটি রাতে হোক, দিনে হোক তেলাওয়াতের চেষ্টা করতে হবে, এর শিক্ষা ও বিধিবিধানগুলো বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করতে হবে তাহলে আল্লাহ চাইলে কবরের আযাব থেকে মুক্তি, এবং আখিরাতের শাফাআত লাভ করা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মহান দয়ালু ও দাতা।
আল্লাহ আলাম।               
---------●◈●---------
উত্তর প্রদানে: 
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব.। 

Post a Comment

0 Comments