Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৭৯, নুর মুহাম্মদ চৌধূরী ( মুবিন)



          
                   বিতি কিচ্ছা;
                             পর্ব -৭৯;


    "ভাবীরা"

 বয়োবৃদ্ধ করিম উল্লাহ একটি খাতা হাতে এলেন আমার বারান্দায়। তাকে বৈঠকখানায় বসতে দিয়ে ভিতর বাড়ীতে চা-পানির ফরমায়েশ দিতে গেলাম। ফিরতে না ফিরতে তিনি একটি কবিতা লিখে ফেললেন। কিছুটা সময় নিয়ে বেশ ছন্দবদ্ধ কবিতাটির খানিকটা সংশোধন করে তিনি তাকে একে সনেটে রুপ দিয়ে দিলেন। কবিতাটি কোভিড-১৯ নিয়ে। কবিতায় কবির মন ও মননের প্রতিচ্ছবি থাকে। সুতরাং কবিতাটি পড়ে বুঝা গেল করিম উল্লাহ আদতে করোনাকে কোন পাত্তাই দেন না। কবিতাটির নাম ভাবীরাস দিলে কেমন হয় -এই পরামর্শ চাইলেন তিনি আমার কাছে। আমি বললাম , কবিতা আপনার, কবিত্ব আপনার , ভাবও আপনার - সুতরাং নাম যেটা আপনি পছন্দ করবেন সেটাতো আপনারই এখতিয়ার । তবে ভাবীরাস শব্দটি এর আগে শুনিনি বলে আমি একটু ইতস্তত করছিলাম। খানিক পরই কেন জানি শব্দটারে বেশ মানানসই মনে হতে লাগল। 
কবিতাটি হল:- 

        ভাবীরাস" (সনেট)

 ভাইরাস্ ভাবীরাস্ মিছে সব ভূয়া-
শুধূ চাই একরাশ মালিকের দয়া।
আঁতংক জুজু ভীতি আষাঢ়ের গপ্-
পেরুলো বছর তবু সেই কলরব।
মহামারী নামে এ তো ধোঁকার বাহন-
নাশিল বসতি শত , জ্ঞাতি, পরিজন।
ভূ-তলে পড়েনা তাই বহু কায়াধন-
তবে কি এড়িয়ে যাবে যমের সমন?

 যারা ছিল আঁতংকে কিবা মনরোগে-
তাঁরাই মরিল আগে করোনায় ভোগে।
কত আসে, যায় কত হিসাবের খাতা-
আমি বলি বেহুদাই ঘাটানো এ মাথা।
দেখোনা জনতা হেতা নাই ক্লান্তি, ক্লেশে-
দিব্বি করে ঘোরাফেরা প্রভূর খোশেষে।

 করিম উল্লাহ বললেন, ভাবীরাস হচ্ছে ভাইরাসের স্ত্রী-লিঙ্গ। মানে মেয়ে ভাইরাস্। যা বড়জোর সর্দিজ্বর পর্যন্তই বিস্তৃতি ঘটাতে পারে, এর বেশী কিছু নয়। আমি বললাম , কিন্তু দৃশ্যমান পরিস্তিতিতো আপনার ধারণাকে প্রমান করে না। কত হাজারে হাজার লোক পাড়ি জমালো পরপারে, কত আতংকের মধ্যে থেকে উলট-পালট হয়ে গেল  বিশ্বব্যবস্থা-আপনি তার কি ব্যাখ্যা দিবেন?

 উত্তরে করিম উল্লাহ বললেন, দেখো Seasonal Virus প্রতি বৎসরই প্রাণী বসতিতে আসে। এতে যারা আক্রান্ত হয় তাদের সকলেই কিন্তু বিছানায় পড়ে থাকতে হয়না। সকলের জন্য ঔষধেরও প্রয়োজন হয়না। ভাইরাস আসে ভাইরাস যায়। জন জীবনে খানিকটা ছন্দ পতন হয় । অত:পর আবার সব ঠিকঠাক । কিন্তু এবারকার এই ভাইরাসটি পলিটিসিয়ানের হাতে পড়ে গিয়েছে। ভাইরাস নিয়ে রীতিমত রাজনীতিতে মেতে উটেছে বিশ্ব মোড়লদের হর্তাকর্তারা। ভাইরাসটির একটি নাম দেয়া হয়েছে, যেভাবে নামকরণ হয় আইলা, নার্গিস্ ,ইত্যাদী সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের। এই ভাবে তারা ভাইরাসটির শুধু নাম দিয়েই ক্ষান্ত হয় নাই, তারা কতগুলো কাল্পনিক বৈশিষ্টও জুড়ে দিল তার দেহে। আদৌ করোনা এই সব কাল্পনিক বৈশিষ্টের ধারে কাছে না থাকলেও বোকা জনসাধারকে তা মানতে বাধ্য করা হচ্ছে। আনুবিক্ষনিক এই ভাইরাসের যত জটিল বৈশিষ্টই থাক না কেন, মানুষকে তা বিশ্বাস করতেই হবে। কারণ এখানে পুলিটিশিয়ানদের সাথে যুক্ত আছে সয়ং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। এবার বিশ্বাস না করে মানুষ যাবে কোথায়? তারপরও দেখেন অনেকেই তা বিশ্বাস করেনি, যেভাবে করিনি আমি। ফলে দেশে দেশে লক্ ডাউন তথা কারফিউ জারী করার প্রয়োজন পড়লো। দেখা গেল বন্দুকের নলা দিয়ে পিটিয়েও বহুত জনগনকে ঘরে ঢোকানো যাচ্ছে না।

 এছাড়াও দেখা যায় এই কল্পিত ভাইরাসে আক্রান্তদের শতকরা ৯৪% রোগী সেরে উটছে, অক্কা পায় মাত্র ৬% রোগী। আমি যদি বলি এই ৬% রোগী মারা যাচ্ছে না, বরং মারা হচ্ছে , অথবা তিলে তিলে নির্যাতন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে- তাও প্রমান করা সম্ভব। 

দেখো কারো মনোবল ভেঙ্গে দেয়া তাকে জীবন ধারণের আকাংখা মাটির সাথে মিশিয়ে দেবার সামিল। করোনার কল্পিত বৈশিষ্টে যে ভীতি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে তাতে বিশ্বাসীদের অন্তরের অন্তস্থল দারুণভাবে আহত হয়েছে। এরা তাদের স্বজনদের প্রতি যে আচরণ প্রদর্শন করেছে তা ইতিহাসে নজিরবিহীন । কত পুত্র কন্যা তাদের আপন প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে পিতা মাতা থেকে দুরত্বে অবস্থান করেছে, করেছে কত দুর্ব্যবহার। কত বিবাহে ঘটেছে বিচ্ছেদ, দীর্ঘ্য দিনে তিলে তিলে গড়ে তোলা কত ভালবাসার তোরণ খান খান হয়েছে। এগুলো সংশ্লিষ্টদের হৃদয়মন্দিরকে করেছে ক্ষত-বিক্ষত। অত:পর সামান্য সর্দিজ্বর এলো কি এলো না- সে দেখতে পেলে জীবন ধারণের অসারতা কত সমুদ্রসম। অত:পর হয় করেছে আত্নহনন, না হয় করেছে হার্ট-এ্যাটাক। কোথাও ভীত ডাক্তার , নার্স, অথবা তৎসংশ্লিষ্ট সেবকরা যথোপযুক্ত সেবা দান থেকে থেকেছে বিরত, নয়ত করেছে অবহেলা । এতসবের পরেও এই করোনার আক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শতকরা মৃতের হার মাত্র ৬%, তাও আবার যারা নেহায়েৎ বয়োবৃদ্ধ তাঁরাই মৃতের শিকীর প্রায় ৯০ ভাগের উর্ধ্বে। এইসব সমীকরণ থেকে সুস্পষ্ট প্রমান হয় করোনা নিয়ে একটি মহল বিশ্বময় এক "বৃদ্ধ নিদন" খেলায় মেতে উটেছে। 

 আমি বললাম তাতে ক্রীড়ণকদের লাভ কি? 
করিম উল্লাহ বললেন, অমানবিক এই কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অনেকেই অনেক রখমের সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে, আর আল্লাহ করেছেন মুমিনের ঈমানে তথা অন্তরের পরীক্ষা। এতএব বলি মৃত্যুর হাতছানি করোনায় নাকি আল্লাহর ইচ্ছায় সেই পরীক্ষায় বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীদের এক মহা পরীক্ষা কেন্দ্র হল এই দুনিয়ার জমিন। আর তাতে পাশ করেছে আল্লাহতে বিশ্বাসীরা আর অকৃতকার্য হয়েছে করোনায় বিশ্বাসীরা। এতএব ভাইরাস্ ভাবীরাস নিয়ে বস্তুবাদী পুলিটিশিয়ানদের সাড়াশী আক্রমণ তাদেরই জন্য যারা পৃথিবীকে বস্তুবাদী মতবাদের চারণভূমি হিসাবে দেখতে চায়।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল প্রবন্ধ,রম্য লেখক ও ফার্মাসিস্ট  
এবং অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments