খোলা চিঠি ;
প্রিয় মানুষজাতি,
মনে হয় না, আমার পরিচয় দেয়ার কোনো প্রয়োজন আছে। সবাই আমাকে নিয়ে কথা বলছে। এই যে ঘরের মধ্যে তোমাদের বন্দী জীবন কাটিয়ে সময় নষ্ট করা লাগছে তা তো আমার জন্যই। তবে আমি কিন্তু তোমাদের মতো না- আমার নষ্ট করার মতো এক মুহূর্তও নেই। তাই যা বলার তা সরাসরিই বলে ফেলছি। আমি এমন কিছু কথা বলব যা মিডিয়া তোমাদের কখনোই বলবে না।
সব মানুষই আমার কাছে সমান। চাই সে যুবক হোক কিংবা বৃদ্ধ, রোগী কিংবা রোগহীন, ধার্মিক কিংবা পাপী। আমাকে নিষ্ঠুর বলে অপবাদ দিয়ো না। আমি তো কেবল আমার সেই রবের কথা মেনে চলছি যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন।
আমি হচ্ছে সে, যে সব জালিম শাসকদেরকে মুসলিম সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করতে দিচ্ছি না। আমি হচ্ছি সে, যে এই একুশ শতকের সব ফেরাউনকে নত করেছি, ওদের দম্ভ চূর্ণ করেছি। আমি হচ্ছি সে, যে সব নাইটক্লাব, মদের বার, পতিতালয়, জুয়া-মদ-সিগারেটের আসর বন্ধ করেছি। সব সুদখোরের মনে ভয় সৃষ্টি করেছি। সব কাফিরকে এখন বন্ধ দরজার পেছনে ভয় দেখিয়ে চলছি। আমি হচ্ছে সে, যে প্রত্যেক গুনাহগারের মনে ভয় সৃষ্টি করেছি, তাকে তাওবা করতে বাধ্য করেছি। খারাপ কাজ করলে তার প্রতিফল পেতে হবে- এটা আমিই তোমাদের বুঝতে বাধ্য করেছি।
আর আমি এসব করেছি বলে আমার গর্ব হয়। ক্ষমা চাওয়ার কিংবা লজ্জা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। লজ্জা তো সেসব পাথর-দিল মানুষের পাওয়া উচিত যে তাদের শিক্ষা দেয়ার জন্য আমার আসার প্রয়োজন হলো।
আমি জানি, তোমরা এখন অনেকে মনে মনে কী ভাবছ। হ্যাঁ, ঠিকই ভাবছ।
আমিই মসজিদের দরজাগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। সত্যি বলতে, শুধু এই কাজটা করতেই আমার কষ্ট হয়েছে। কিন্তু কী করব! আল্লাহ তা‘আলার ফয়সালাও যে এটাই। আল্লাহর ঘর মসজিদে যেতে পারা, মসজিদে ফেরেশতাদের সানিধ্যে থাকতে পারা যে কতো সম্মানের ব্যাপার সেটা হয়তো এতোদিন বুঝতে পারোনি। এখন পারছ। আশ্চর্য, এতো অসাধারণ সম্মানটাকে বুঝতে পারার জন্যেও তোমাদের আমাকে প্রয়োজন হলো?
আজ তোমাদের পুরো জীবন স্থবির হয়ে গেছে আমার জন্যে।
আমার জন্যে, যে কিনা আল্লাহর খুবই ক্ষুদ্র সৃষ্টি। আচ্ছা, ভাবতে পারো যদি তিনি আমার আরো ভাইকে তোমাদের ওপর পাঠান তখন কী হবে? কিংবা কওমে লুতের মতো তোমাদের দেশগুলোকে উল্টিয়ে দেন তখন তোমরা কোথায় থাকবে? কোথায় থাকবে তোমাদের এই সম্পদ যদি তিনি শুয়াইব (আ)- এর লোকদের মতো তোমাদের ওপর আগুন বর্ষণ করেন? কোথায় যাবে তোমাদের নিজেকে বড়ো ভাবার অহম, যদি তিনি পৃথিবী দিয়ে কারুনের মতো তোমাদের মতো গিলে ফেলেন?
আমাকে দোষ দিও না। আমার কোনো দোষ নেই। ওয়াল্লাহি, দোষ তোমাদের। আমার রব বলেছেন, দোষ তোমাদের-
“ওদের প্রত্যেককেই আমি তার পাপের কারণে পাকড়াও করেছিলাম। তাদের কারো উপর আমি পাথরকুচির ঝড় পাঠিয়েছি, কাউকে পাকড়াও করেছে বিকট আওয়াজ, কাউকে আবার মাটিতে দাবিয়ে দিয়েছি আর কাউকে পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ এমন নন যে, তাদের উপর যুলম করবেন বরং তারা নিজেরা নিজেদের ওপর যুল্ম করত।” (সূরা আনকাবুত, ২৯:৪০)
আমাকে ভয় করো না, ভয় তাঁকে করো যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন।
কীভাবে আমার থেকে দূরে থাকবে এটা ভেবে নিজেকে ব্যস্ত রেখো না। বরং, তোমাদের রবের কাছে ফিরে যাও। তাঁর কাচ্ছে ক্ষমা চাও। তিনিই তো আমাকে পাঠিয়েছেন।
আমি-তুমি, আমরা সবাই তাঁর দয়ার ওপর নির্ভরশীল। আমাদের কপাল যে তাঁর হাতে!
তাঁর ইচ্ছাই আমার আদেশ। আর আমি কেবল তাঁকেই সিজদা করি। আমার দ্বারা কিংবা অন্য কিছুর দ্বারা কখনো নিজেকে ব্যস্ত রেখো না। আল্লাহর প্রশংসা করো। তাঁর প্রতি ভালো ধারণা রাখো।
আমি নিজের সম্পর্কে তোমাদের চেয়ে ভালো জানি। তাই বলছি-
তোমরা অনেকেই আমার কারণে মারা যাবে। যারা নেককার অবস্থায় মারা যাবে, তারা ভালোভাবেই আল্লাহর সাথে দেখা করবে। আর শহীদের মর্যাদা পাবার আশা করবে। কিন্তু যারা নিজের ইমানকে গুরুত্ব দেয়নি, কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এ জীবন বাঁচেনি, তওবা করেনি- তারা খুব দ্রুতই বুঝবে তাদের আসল ক্ষতি কীসে হয়েছে? মৃত্যুতে নাকি তাদের নোংরা জীবনে!
আমি জানি না আর কতোক্ষণ আমার রব আমাকে তোমাদের কাছে রাখবেন। কখনো প্রচণ্ড ঝড় হবার আগের পরিবেশটা দেখেছ? কেমন নিস্তব্ধ। শান্ত। আমি সেই শান্ত প্রকৃতি যে তোমাদের আরো বড়ো ঝড়ের খবর দিচ্ছে। যখন সে ঝড় আসবে হয়তো তখন তোমরা বুঝতে পারবে- আমি অভিশাপ না বরং আশীর্বাদই ছিলাম।
আরেকবার তোমাদের মমতার স্বরে ডাকছি। কেবল আরেকটিবার বলছি-
ক্ষমা কি চাবে তোমাদের রবের নিকট?
কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কি বাঁচবে এ জীবন?
তোমাদের সব গুনাহ কি আজ থেকেই তওবা করে ছেড়ে দেবে?
ইতি,
তোমার অস্থায়ী অতিথি, শুভাকাঙ্ক্ষী ও আল্লাহর নগণ্য বান্দা,
করোনা
[উস্তাদ আলি হাম্মুদার মূল লেখা থেকে অনুবাদকৃত]
0 Comments