Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৮১; নুর মুহাম্মদ চৌধূরী (মুবিন)।

   


                   বিতি কিচ্ছা;
                             পর্ব-৮১;

 সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে বিগ্ধ আমরা:

 অভিবাদনের ইসলামী সংস্কৃতি আস্ সালামু আলাইকুম।  যেন জোর করেই ভুলতে চায় এ জাতী। কেন এ অবজ্ঞা? তথাকথিত প্রগতির অন্তরায়? কী আজব প্রগতি! কি আছে গুড মর্ণিং আর গুড নাইটে? সুখবর শ্রবণে কেন বলিনা আমরা "আলহামদুলিল্লাহ" অথবা "শোকরাণ"? শুধু শুধুই "থেন্কু" "থেন্কু" (Thank you) করে পার করে দেই ভব! কী আশ্চর্য্য, কী আজব!! 

   মূলত: সাংস্কৃতিক আগ্রাসনই হচ্ছে কোন জাতীকে গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ করার সর্বপ্রথম প্রক্রিয়া। বরং বলা যায় এটাই একমাত্র টেকসই প্রক্রিয়া। নিজস্ব সংস্কৃতিকে নিয়ে গর্বিত হতে  না পারা এবং পরানুকরণে প্রনিপাত করা মূলত: বুদ্ধি ভিত্তিক দেউলিয়াত্বেরই পরিচায়ক। 

  আমাদের চারিপাশে অর্থাৎ শহরাঞ্চলে এসবের চর্চ্চা এত বেশী পরিমানে ও বেশী ক্ষেত্রে যে তার হিসেব করা কঠিন। শহরে চাচা কিংবা কাকা নাই । আজ সবাই হয়ে গেছেন আংকেল। গলায় টাঁই পরে আপডেট হবার কসরত করে রীতিমত নাকানি-চুবানি খাচ্ছেন কত উটতি যুবকেরা। অথচ এদের ভিতরবাটিতে নুন আনতে পানতা ফুরায় সুলভ যাচ্ছেতাই অবস্থা। কাঁককে ময়ুর ভেবে ময়ুরের পেখম মেলার প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে আপন স্বকীয়তা হারায়ে লেজে-গুবরে অবস্থা আজ আমাদের। অথচ একটি সুমহান সংস্কৃতির উত্তরাধিকার এই জাতী । আমরা আপন বলয়ে তার চর্চ্চা করে তার উৎকর্ষ সাধন করত: বিশ্বময় আধিপত্য প্রতিষ্টায় ও একটি জনকল্যানমুলক সমাজ ব্যবস্থা প্রণয়নে কি বাস্তব ভূমিকা রেখেছি অতীতে তা সর্বজনবিদিত ।

  পবিত্র কোরআনে মুসলিমদেরকে "একটি মধ্যমপন্থী উম্মাহ " বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পৃথীবির সকল জাতীসমুহের মধ্য থেকে বেছে বেছে এমন কিছু লোককে একীভূত করে গঠন করা হয়েছে এই জাতী। আত্নীয়তা তথা গোষ্টীভিত্তিক জাতীয়তার প্রশ্ন এখানে একেবারেই অপ্রাসঙ্গীক। কি ভৌগলিক জাতীয়তা, কি ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা, কি বর্ণভিত্তিক জাতীয়তা-যার কোন কিছুই স্থান পায়নি এখানে। এখানে একটি সুমহান আদর্শ লালনের মাধ্যমে একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মান পূর্বক একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সামাজিক মিলনমেলা যে জাতীর উপহার- সে জাতীর নাম মুসলিম। এদের কথা এবং কাজ হয় পারষ্পরিক সামঞ্জস্যপূর্ণ, সার্বিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্টায় সহায়ক, সর্বোপুরি পরকালীন কল্যানের নিমিত্তে নিয়ন্ত্রিত। সারা বিশ্বে এরা একটি নির্দিষ্ট বিউগলের সুরে আলোড়িত হয়, একই স্রষ্টার কুদরতি পদে কপাল ঠেকায়, তার কাছেই সকল আশা পোষন করে, তার বিরাগভাজন হওয়াকেই সমুহ অকল্যাণ হিসাবে মেনে নিয়ে সন্তুষ্টচিত্তে তারই আরাধনা করে। তাদের জাবনাচারে অথবা খাদ্য তালিকায় তা ই গ্রহনীয় -যা তাদের মালিকের কাছ থেকে অনুমতিপ্রাপ্ত, অথবা তাই বর্জনীয় -যা তাদের মালিকের কাছ থেকে বর্জনীয় হিসাবে চিহ্নিত বা নির্দেশিত। এভাবে বিশ্বময় বিস্তৃত এক জাতী " মুসলিম"। কি পূর্ব, কি পশ্চিম, কি সাদা, কি কালো, কি নাক বোচা, কি ধারালো-ওরা সকলেই সকলের ভাই তথা সার্বিক কল্যাণকামী। এইরূপ একটি  কালজয়ী ও বিশ্বজয়ী সতন্ত্র সংস্কৃতির নাম ইসলামী সংস্কৃতি। 
   এতএব সারা বিশ্বময় এরা একই অভিবাদন পদ্মতির চর্চ্চা করে। "আস্ সালামু আলাইকুম" , যার অর্থ আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। কেমন নি:স্বার্থ কল্যাণ কামনা। যার জন্য এ কল্যান কামনা তিনি প্রতি উত্তরে বলবেন" ওয়ালাইকুম ওয়াস্ সালাম" । যার অর্থ "আপনাদের উপরও বর্ষিত হোক শান্তি" মুলত: শান্তি বর্ষনের ক্ষমতা যার হাতে তিনির কাছেই এ কামনা। পারষ্পরিক এই কল্যানকামীতার মধ্যেই নিহিত আছে সার্বিক সামাজিক কল্যাণ। গুড মর্ণিং বা গুড আফটার নুনে এমন কল্যাণময় অর্থ প্রকাশ করে না। এভাবে কারো সাহায্য প্রাপ্ত হয়ে আল্লাহর শোকর আদায় করার সেই বাক্য- যা আমাদের নবী করীম (দ:) শিখিয়ে দিয়েছেন, সেই অমীয় বাক্য "আলহামদুলিল্লাহ" না বলে থেন্কু থেন্কু বলাতে কোন সওয়াব পাওয়া যায় না। তদ্রুপ "আসতাগফিরুল্লাহ" এর পরিবর্তে "সরি" বলে কি যে হয় তা আসলেই অননুমেয়। 

   মুলত: বিজাতীয় সংস্কৃতির চর্চ্চার ব্যাপারে আল্লাহর কিতাব কোরআন মজিদে ও ইসলামের নবী মুহাম্মদ (দ:) এর হাদীসের কড়া হুঁশিয়ারীর প্রতি আমাদের অজ্ঞতাহেতু আমাদের এই দুরবস্থা।

    বর্তমানে মুসলিম সমাজে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণে থার্টি ফাষ্ট নাইট উদযাপন, কিশোর বালকদের রকমারী কায়দায় চুলকাটা, যুবকদের হাফপ্যান্ট পরা, ছেলেদের ক্ষেত্রে হাতে চুড়ি পরা ও কানে দুল ঝুলানো, মেয়েদের জিন্সের টাইট পোষাক পরিধান করা সহ পহেলা বৈশাখ উদযাপন ইত্যাদী নানাবিধ বিজাতীয় সংস্কৃতি দ্বারা মুসলিম সমাজ আজ আক্রান্ত। আজ এসবের অনেকটিকে গর্হিত কাজ বলে অনেকে ধারণাও করেন না। অর্থাৎ সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এ জাতীর উপর বেশ ভালই প্রভাব বিস্তার করে নিতে সক্ষম হয়েছে বলা যায়। এমতাবস্থায় সঠিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলে জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য প্রতিটি পিতামাতাসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সার্বিক সহযোগীতা একান্ত প্রয়োজন।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ফার্মাসিস্ট ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments