Recent Tube

"ভুল সংশোধন" ব‌ইটি রচিত না আমদানিকৃত? আসলাম হোসাইন।



"ভুল সংশোধন" ব‌ইটি রচিত না আমদানিকৃত?
.............................................

মাওলানা ম‌ওদূদী রহ. -এর বিরুদ্ধে লেখা কিতাবের ফিরিস্তি তুললেই প্রথম সারিতে উঠে আসে মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. -এর লেখা "ভুল সংশোধন" ব‌ইটি। কারণ, তিনি সর্বমহলে গৃহীত এবং দেশবরেণ্য আলেম হ‌ওয়ার কারণে মানুষ কে বুঝ দেওয়ার জন্য এই ব‌ইটি তারা ধারাল অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। তাই আসুন, আজ পর্যালোচনা করে দেখি এই অস্ত্র আসল, না নকল।

১. মাওলানা ম‌ওদূদী রহ. -কে নিয়ে মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ.-এর "ভুল সংশোধন" ব‌ইটি লেখা হয়েছে ১৯৬৭ সালে। তিনি ইন্তেকাল করেছেন ১৯৬৯ সালের ২১ জানুয়ারি। দুই বছর অতিবাহিত হলেও তাঁর জীবদ্দশায় বইটি ছাপানো হয়নি। বরং তাঁর ইন্তেকালের প্রায় সাড়ে ছয় বছর পর ১৯৭৫ সালে ব‌ইটি প্রথম মার্কেটে আনা হয়।

২) এই ব‌ইয়ের অভিমতে তাঁর খাছ খাদেম মাওলানা ফজলুর রহমান দাবি করেছেন, ব‌ইটি ১৯৬৭ সালে লিখে পাণ্ডলিপি তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. -এর জীবনী গ্রন্থের ১৫৩ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ফরিদপুরী হুজুর ১৯৬৮ সনের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই ঢাকা থেকে বাড়ি প্রত্যাবর্তন করেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত ১৩ মাস হায়াত পান। আর এই সময়ে তিনি "ভুল সংশোধন" ব‌ইটি লিখেন।

একজন বললেন ১৯৬৭ সালে লেখা হয়েছে। আর তখন তিনি ঢাকায় ছিলেন। আরেকজন বলেছেন মৃত্যুর আগের ১৩ মাসের মধ্যে লেখা হয়েছে আর তখন তিনি বাড়িতে অবসরে ছিলেন। 

তাছাড়া ব‌ইটি উনার মৃত্যুর এত বছর পর প্রকাশের হেতু কী?

এতো গড়মিলের পর‌ও কি আপনাদের মনে হয় ব‌ইটি ফরিদপুরী সাহেবের লেখা? সুস্থ মস্তিষ্ক দিয়ে চিন্তা করলে অনায়াসে উত্তর পাওয়ার কথা। 

বাংলাদেশের একজন বিদগ্ধ আলেম মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ রহ. "জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতার অন্তরালে" ব‌ইটিতে বলেছেন, "মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. মাওলানা ম‌ওদূদী রহ. -এর উদ্দেশ্যে মাত্র কয়েক পৃষ্ঠার একটা রিসালাহ লিখেছেন। এবং পরবর্তীতে তিনি ব‌ইটি ছাপাতে নিষেধ‌ও করে গেছেন। এতো বড়ো ব‌ই কখনোই তাঁর লেখা নয়। আর ব‌ইটির ভাষাও বলছে এটা হুজুরের লেখা নয়। কেননা, "ভুল সংশোধন" ব‌ইতে এমন নিম্নমানের কিছু ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে, যা ফরিদপুরী সাহেবের মতো একজন মহান ব্যক্তির সাথে বেমানান।"

অনুরূপভাবে তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমির মাওলানা জাকারিয়া রহ. -এর লেখা "ফিৎনায়ে ম‌ওদূদী" নামে একটা ব‌ই রয়েছে। 

ব‌ইতে এতো জঘন্য মিথ্যাচার ও কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, কল্পনাও করা যায় না যে, এসব ব্যক্তিরা এমন ভাষায় ব‌ই লিখবেন। তাই বুঝাই যায় ব‌ইটি অন্য কোথাও থেকে আমদানি করে মাওলানা জাকারিয়া সাহেবের নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সারাজীবন শুনে এসেছেন "বেহেস্তি জেওর" মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. -এর লেখা। কিছুদিন আগে চিপায় পড়ে তারা বাধ্য হয়ে স্বীকার করেছে ব‌ইটি উনার লেখা নয়। আরেকজনের লেখা। থানবী সাহেবের নামে চালানো হচ্ছে। 

এইভাবে কতশত ব‌ই তারা নিজে লিখে জালিয়াতি করে বড়ো হুজুরদের নামে চালিয়ে সহজ সরল মুসলমানদের ধোঁকা দিচ্ছে, একমাত্র আল্লাহ তাআলা‌ই ভালো জানেন। 
------------------------- 
লেখক : প্রবন্ধ লেখক কলামিস্ট ইতিহাস ও ইসলামিক গবেষক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। 

Post a Comment

0 Comments