গায়েবানা জানাযা ও একাধিক বার জানাযা করা কি রাজনৈতিক জানাযা?
---------------------------------------------------------------------
ফেসবুকে দেখলাম, কেউ কেউ গায়েবানা জানাযা এবং একাধিক বার জানাযা করাকে বিদয়াত ও রাজনৈতিক জানাযা বলে ব্যঙ্গ করছে। এমনকি শায়েখ আহমাদুল্লাহকেও বলতে শুনলাম তিনি বলেন, "একাধিক বার জানাযা পড়া এটা সুন্নাহ না, সুন্নাহ হল, একবার পড়া আমাদের দেশে যে গায়েবানা জানাযা হয়ে থাকে, এটা একটা রাজনৈতিক জানাযা বলতে পারেন। শরীয়তে এর গ্রহণযোগ্যতা নেই।" (নাউজুবিল্লাহ)
এসব ফতোয়া যারা দিচ্ছেন, তারা মূলত আল্লাহর রাসুল ﷺ এর সাথেই ব্যঙ্গ করছেন এবং শরয়ীতের বিধান নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করেছেন। কারণ মৃতদেহ সামনে না রেখে বা কবর দেওয়ার পর জানাযা সালাত আদায় করাই হচ্ছে গায়েবানা জানাযা। আর গায়েবানা জানাযা এবং একাধিক বার জানাযা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) থেকে সহীহ সনদে প্রমাণিত।
♥ আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم نَعَى النَّجَاشِيَّ فِي الْيَوْمِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ خَرَجَ إِلَى الْمُصَلَّى فَصَفَّ بِهِمْ وَكَبَّرَ أَرْبَعًا. وفى رواية فَقَامَ فَصَلَّى بِهِمْ كَمَا يُصَلِّي عَلَى الْجَنَائِزِ.
হযরত নাজাশী (রাঃ) যেদিন মারা যান সেদিন-ই আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাঁর মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা করেন এবং জানাযার স্থানে গিয়ে সাহাবীদের কাতারবন্দী করেন এবং চার তাকবীর আদায় করেন। অপর বর্ণনায় এসেছে, তিনি তাঁদের নিয়ে দাড়িয়ে সালাত আদায় করলেন, যেভাবে জানাযা সালাত আদায় করা হয়। (সহীহ বুখারী হাঃ ১২৪৫, ১৩১৮, ১৩২৭, ১৩২৮, ১৩৩৩, ৩৮৮০, ৩৮৮১; সহীহ মুসলিম হাঃ ৯৫১; তিরমিযী হাঃ ১০২২; নাসায়ী হাঃ ১৮৭৯, ১৯৭১, ১৯৭২, ১৯৮০, ২০৪১, ২০৪২; আবূ দাউদ হাঃ ৩২০৪; ইবনে মাজাহ হাঃ ১৫৩৪; মুসনাদে আহমাদ হাঃ ৭১০৭, ৭২৪১, ৭৭১৯, ৭৭২৮, ৯৩৬৩, ৯৩৭১, ১০৪৭১, ২২৬৩৯; মুয়াত্তা মালিক হাঃ ৫৩০; সহীহ ইবনু হিব্বান হাঃ ৩০৬৮; শামায়েলে তিরমিযী হাঃ ৫৮; মিশকাত হাঃ ১৬৫২; ইরওয়াহ ৭২৯)
♦ বাদশা নাজ্জাশী (রাঃ) এর জানাযা সংক্রান্ত হাদীস আবু হুরায়রা (রাঃ) ছাড়াও একাধিক সাহাবী থেকে বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইমাম ইবনু হাযম (রাহঃ) বলেন,
ﻭﻳﺼﻠﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﺍﻟﻐﺎﺋﺐ، ﻭﻗﺪ ﺻﻠﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ـ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ـ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺠﺎﺷﻲ ﻭﺻﻠﻰ ﻣﻌﻪ ﺃﺻﺤﺎﺑﻪ ﺻﻔﻮﻓﺎ، ﻭﻫﺬﺍ ﺇﺟﻤﺎﻉ ﻣﻨﻬﻢ ﻻﻳﺠﻮﻭ ﺗﻌﺪﻳﻪ .
“অনুপস্থিত মৃতের জানাযা পড়া যাবে। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) নাজ্জাশীর জানাযা পড়েছিলেন। তাঁর সাথে কাতারবন্দী হয়ে সাহাবীরাও পড়েছিলেন। এটা হচ্ছে তাদের এমন ইজমা (ঐকমত্য) যা এড়িয়ে যাওয়া বৈধ নয়।”
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) নিজে পড়েছেন, সাহাবীদের পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। এ কথা উল্লেখ করে ইবনু হাযম আরো বলেন,
ﻓﻬﺬﺍ ﺃﻣﺮ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻋﻤﻠﻪ ﻭﻋﻤﻞ ﺟﻤﻴﻊ ﺃﺻﺤﺎﺑﻪ ، ﻓﻼ ﺇﺟﻤﺎﻉ ﺃﺻﺢ ﻣﻦ ﻫﺬﺍ .
“এটি হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নির্দেশ, তার আমল এবং সমস্ত সাহাবীর আমল। এর চেয়ে বিশুদ্ধ কোন ইজমা হতে পারে না”।
♥ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাহঃ) এর একটি কাওল নকল করে ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহঃ) বলেছেন,
ﺇﺫﺍ ﻣﺎﺕ ﺭﺟﻞ ﺻﺎﻟﺢ ﺻﻠﻲ ﻋﻠﻴﻪ
“কোন নেককার ব্যক্তি মারা গেলে তার গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে”। (আল-ফাতওয়া আল-কুবরা ৪/৪৪৪)
♦ তাছাড়া, গায়েবানা জানাযার উদ্দেশ্য হলো, মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ ও ইস্তেগফার করা। যেমনটি ইমাম আহমাদ (রাহঃ) তার মুসনাদে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে নাজ্জাশী (রাঃ) এর জানাযা সংক্রান্ত ঘটনায় বর্ণনা করেন,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَى النَّجَاشِيَّ لِأَصْحَابِهِ ثُمَّ قَالَ اسْتَغْفِرُوا لَهُ.
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) নাজ্জাশী (রাঃ) এর মৃত সংবাদ দিয়ে সাহাবীদেরকে বললেন: তোমরা তাঁর জন্য ইস্তেগফার কর। (মুসনাদে আহমাদ হাঃ ১০৪৭১; সুনান নাসায়ী হাঃ ২০৪১)
এ কথা সুবিদিত, দু‘আ ইস্তেগফার লাশ সামনে থাকলে যেমন করা যায়; লাশ না থাকলেও করা যায়। অনেক মুজতাহিদ ইমামগণ গায়েবানা জানাযা জায়েজের পক্ষে ফতোয়া দিয়েছেন। (তাবারানী, কাবীর ১৯/৪২৮; শরহুস সুন্নাহ, ৫/৩৪১; মুয়ালিমুস সুনান ১/২৭০-২৭১; আল-ফাতওয়া আল-কুবরাত ৪/৪৪৪; এলাউস সুনান ৮/২৩৪; আওনুল মাবুদ ৯/৯-১০)।
♣ তবে কতিপয় ইমাম গায়েবানা জানাযা নামাজ আয়াদ করা জায়েজ নেই বলে মত দিয়েছেন। এ বিষয়ে তারা কোনো দলিল পেশ করতে পারেননি, উপরে উল্লেখিত হাদীসের বিরুদ্ধে যুক্তি ও আপত্তি তুলে ধরেছেন। যেমন,
১. গায়েবানা জানাযা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথেই খাস। তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য তা বৈধ নয়।
জবাবঃ
এ দাবীটি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, ﻷﻥ ﺍﻷﺻﻞ ﻋﺪﻡ ﺍﻟﺨﺼﻮﺻﻴﺔ রাসূলের সাথে একান্তভাবে সম্পৃক্ত না হওয়াটাই হচ্ছে মৌলিক অবস্থা। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: ﻟﻘﺪ ﻛﺎﻥ ﻟﻜﻢ ﻓﻲ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺳﻮﺓ ﺣﺴﻨﺔ “তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে সর্বোত্তম আদর্শ”। রাসূল (স.) বলেন: ﺻﻠﻮﺍ ﻛﻤﺎ ﺭﺃﻳﺘﻤﻮﻧﻲ ﺃﺻﻠﻲ “আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখ, তোমরা ঠিক সেভাবেই নামায পড়”। আমরা দেখেছি, তিনি সাহাবীদেরকে নিয়ে নাজ্জাশীর গায়েবানা জানাযা পড়েছেন। অতএব, গায়েবানা জানাযা বৈধ।
♥ এ মর্মে ইমাম খাত্তাবী (রাহঃ) বলেন,
ﻭﺯﻋﻤﻮﺍ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻛﺎﻥ ﻣﺨﺼﻮﺻﺎً ﺑﻬﺬﺍ ﺍﻟﻔﻌﻞ ﺇﺫ ﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﺣﻜﻢ ﺍﻟﻤﺸﺎﻫﺪﻳﻦ ﻟﻠﻨﺠﺎﺷﻲ ﻟﻤﺎ ﺭﻭﻱ ﻓﻲ ﺑﻌﺾ ﺍﻷﺧﺒﺎﺭ ﺃﻧﻪ ﻗﺪ ﺳﻮﻳﺖ ﻟﻪ ﺃﻋﻼﻡ ﺍﻷﺭﺽ ﺣﺘﻰ ﻛﺎﻥ ﻳﺒﺼﺮ ﻣﻜﺎﻧﻪ . ﻭﻫﺬﺍ ﺗﺄﻭﻳﻞ ﻓﺎﺳﺪ ﻷﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺇﺫﺍ ﻓﻌﻞ ﺷﻴﺌﺎً ﻣﻦ ﺍﻓﻌﺎﻟﻪ ﺍﻟﺸﺮﻳﻔﺔ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﻣﺘﺎﺑﻌﺘﻪ ﻭﺍﻹﻳﺘﺴﺎﺀ ﺑﻪ ﻭﺍﻟﺘﺨﺼﻴﺺ ﻻ ﻳﻌﻠﻢ ﺇﻻ ﺑﺪﻟﻴﻞ . ﻭﻣﻤﺎ ﻳﺒﻴﻦ ﺫﻟﻚ ﺃﻧﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺧﺮﺝ ﺑﺎﻟﻨﺎﺱ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻤﺼﻠﻰ ﻓﺼﻒ ﺑﻬﻢ ﻓﺼﻠﻮﺍ ﻣﻌﻪ ﻓﻌﻠﻤﺖ ﺍﻥ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺘﺄﻭﻳﻞ ﻓﺎﺳﺪ.
“তারা ধারণা করছে যে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এই কাজটির সাথে বিশেষভাবে জড়িত; অন্যরা নয়। কারণ, তিনি নাজ্জাশীকে প্রত্যক্ষকারীদের মধ্যে গণ্য। যেমনটি কোন কোন হাদীসে রয়েছে, “ভূ-পৃষ্ঠের উপরিস্থিত সবকিছু তাঁর জন্য সমতল করে দেয়া হলো এবং তিনি নাজ্জাশীর অবস্থান দেখতে পেয়েছিলেন”। এটি একটি অশুদ্ধ ব্যাখ্যা। কারণ, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যখন কোন একটি কাজ করেন তখন তাকে সে ক্ষেত্রে অনুসরণ করা ও সে কাজটি করা আমাদের জন্য অনিবার্য হয়ে যায়। আর তার সাথে কোন কাজকে একান্তভাবে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি দলীল ছাড়া জানা যায় না। এখানেতো এমন কোন দলীল নেই। এটি যে একটি অশুদ্ধ ব্যাখ্যা তার বিবরণ হলো, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) লোকদেরকে নিয়ে জানাযার মাঠে গেলেন এবং তাদেরকে কাতারবন্দী করলেন। অতঃপর তাদেরকে নিয়ে নামায পড়লেন। সুতরাং বোঝা গেল এটি শুধু তার সাথেই বিশেষভাবে সম্পৃক্ত নয়। (মুয়ালিমুস সুনান ১/২৭০-২৭১)
♥ ইমাম বগভী (রহঃ) বলেন,
ﻭﺯﻋﻤﻮﺍ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻛﺎﻥ ﻣﺨﺼﻮﺻﺎً ﺑﻪ، ﻭﻫﺬﺍ ﺿﻌﻴﻒ ﻷﻥ ﺍﻹﻗﺘﺪﺍﺀ ﺑﻪ ﻓﻲ ﺃﻓﻌﺎﻟﻪ ﻭﺍﺟﺐ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻜﺎﻓﺔ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﻘﻢ ﺩﻟﻴﻞ ﺍﻟﺘﺨﺼﻴﺺ ﻭﻻ ﺗﺠﻮﺯ ﺩﻋﻮﻯ ﺍﻟﺘﺨﺼﻴﺺ ﻫﺎﻫﻨﺎ ﻷﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻟﻢ ﻳﺼﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺣﺪﻩ ﺇﻧﻤﺎ ﺻﻠﻰ ﻣﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ.
“যারা ধারণা করছে যে, বিষয়টি শুধু রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্যই খাস, তাদের এই অবস্থানটি দুর্বল। কারণ, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সমস্ত কর্মকান্ডে তাঁর অনুসরণ করা সকলের উপর ওয়াজিব যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর সাথে খাস হওয়ার দলীল না পাওয়া যায়। এখানে খাস হওয়ার দাবীটা ঠিক নয়; কারণ তিনিতো শুধু একাই গায়েবানা জানাযা পড়েন নি; বরং তার সাথে লোকেরাও পড়েছে।”। (শরহুস সুন্নাহ, ৫/৩৪১)
♥ আওনুল মাবুদ গ্রন্থকার আরো ব্যাখ্যা প্রদান করে বলেন:
ﻗﻠﺖ ﺩﻋﻮﻯ ﺍﻟﺨﺼﻮﺻﻴﺔ ﻟﻴﺲ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺩﻟﻴﻞ ﻭﻻ ﺑﺮﻫﺎﻥ ﺑﻞ ﻗﻮﻟﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ :- ( ﻓﻬﻠﻤﻮﺍ ﻓﺼﻠﻮﺍ ﻋﻠﻴﻪ ) ﻭﻗﻮﻟﻪ : ( ﻓﻘﻮﻣﻮﺍ ﻓﺼﻠﻮﺍ ﻋﻠﻴﻪ ) ﻭﻗﻮﻝ ﺟﺎﺑﺮ : ( ﻓﺼﻔﻔﻨﺎ ﺧﻠﻔﻪ ﻓﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻧﺤﻦ ﺻﻔﻮﻑ ) ﻭﻗﻮﻝ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ : ( ﺛﻢ ﻗﺎﻝ : ﺍﺳﺘﻐﻔﺮﻭﺍ ﻟﻪ ﺛﻢ ﺧﺮﺝ ﺑﺄﺻﺤﺎﺑﻪ ﻓﺼﻠﻰ ﺑﻬﻢ ﻛﻤﺎ ﻳﺼﻠﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺠﻨﺎﺯﺓ ) ﻭﻗﻮﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ( ﻓﻘﻤﻨﺎ ﻓﺼﻔﻔﻨﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻛﻤﺎ ﻳﺼﻒ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﻭﺻﻠﻴﻨﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻛﻤﺎ ﻳﺼﻠﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻴﺖ ) ﻭﺗﻘﺪﻡ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺮﻭﺍﻳﺎﺕ ﻳﺒﻄﻞ ﺩﻋﻮﻯ ﺍﻟﺨﺼﻮﺻﻴﺔ ﻷﻥ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻐﺎﺋﺐ ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺧﺎﺻﺔ ﺑﺎﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓﻼ ﻣﻌﻨﻰ ﻷﻣﺮﻩ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺑﺘﻠﻚ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺑﻞ ﻧﻬﻰ ﻋﻨﻬﺎ ﻷﻥ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺧﺎﺻﺎً ﺑﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﻓﻌﻠﻪ ﻷﻣﺘﻪ . ﺃﻻ ﺗﺮﻯ ﺻﻮﻡ ﺍﻟﻮﺻﺎﻝ ﻟﻢ ﻳﺮﺧﺺ ﻟﻬﻢ ﺑﻪ ﻣﻊ ﺷﺪﺓ ﺣﺮﺻﻬﻢ ﻷﺩﺍﺋﻪ ﻭﺍﻷﺻﻞ ﻓﻲ ﻛﻞ ﺃﻣﺮ ﻣﻦ ﺍﻷﻣﻮﺭ ﺍﻟﺸﺮﻋﻴﺔ ﻋﺪﻡ ﺍﻟﺨﺼﻮﺻﻴﺔ ﺣﺘﻰ ﻳﻘﻮﻡ ﺍﻟﺪﻟﻴﻞ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻭﻟﻴﺲ ﻫﻨﺎ ﺩﻟﻴﻞ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺨﺼﻮﺻﻴﺔ ﺑﻞ ﻗﺎﻡ ﺍﻟﺪﻟﻴﻞ ﻋﻠﻰ ﻋﺪﻣﻬﺎ.
“রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর বিশেষত্বের অন্তর্ভুক্ত করার দাবীটির স্বপক্ষে এখানে কোন দলীল-প্রমাণ নেই। কারণ, সংশ্লিষ্ট ঘটনায় রাসুলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণিত বিভিন্ন রেওয়ায়েত এর বিপরীত। সেগুলো হচ্ছে : রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর বাণী: “চলো তার জানাযা পড়তে”, “তোমরা দাঁড়াও এবং নামায পড়”। জাবিরের কথা: “আমরা রাসূলের পেছনে কাতারবন্দী হলাম। অতঃপর তিনি নামায পড়লেন আর আমরা কাতারে ছিলাম”। হযরত আবু হুরাইরার কথা “অতঃপর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: “তোমরা তার জন্য ইস্তেগফার করো। তারপর তিনি সাহাবীদের নিয়ে বের হলেন এবং যেভাবে জানাযার নামায পড়েন সেভাবে নামায পড়লেন”। হযরত ইমরান বিন হুসাইন এর কথা: “অতঃপর আমরা দাঁড়ালাম এবং কাতারবন্দী হলাম যেমন জানাযার কাতারবন্দী হয় এবং নামায পড়লাম ঠিক যেভাবে জানাযার নামায পড়া হয়”। এ সব রেওয়ায়েত দ্বারা বিশেষত্বের দাবী বাতিল হয়ে যায়। কারণ, তা যদি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বিশেষত্ব হতো, তাহলে সাহাবীদেরকে তা করার আদেশ প্রদানের কোন অর্থই হয় না। বরং তাদেরকে তা থেকে নিষেধ করাই ছিল বাঞ্জনীয়। কারণ, যা কিছু নবীর বিশেষত্ব উম্মতের জন্য তা বৈধ নয়: যেমন: একাধারে রোজা (সওমে ভেসালের) বিষয়টি। সাহাবীদের প্রবল আগ্রহ সত্বেও রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরকে এ মর্মে অনুমতি দেননি। শরীয়তের সমস্ত বিষয়ে মূলনীতি হলো, দলিল ব্যতীত কোন কিছুকেই বিশেষত্বের অন্তর্ভুক্ত না করা। এখানে এর কোন দলিল তো নেইই; বরং এর বিপরীতে দলীল রয়েছে।” (আওনুল মাবুদ ৯/৯)
২. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) গায়েবানা জানাযা পড়েননি। কারণ তাঁর সামনে নাজ্জাশীর লাশ তুলে ধরা হয়েছিল, তিনি লাশ সামনে রেখে জানাযা পড়েছেন।
জবাবঃ
এ কথাটিও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীস সহীহ নয়। অধিকন্তু সহীহ সনদে এসেছে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সামনে লাশ ছিল না।
♥ শামসুল হক আযীম আবাদী বলেন,
ﺃﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﺒﺎﺭﻙ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ﻟﻘﺎﺩﺭ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺃﻥ ﻣﺤﻤﺪﺍً - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻷﻫﻞ ﻟﺬﻟﻚ ﻟﻜﻦ ﻟﻢ ﻳﺜﺒﺖ ﺫﻟﻚ ﻓﻲ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﻟﻨﺠﺎﺷﻲ ﺑﺴﻨﺪ ﺻﺤﻴﺢ ﺃﻭ ﺣﺴﻦ ﻭﺇﻧﻤﺎ ﺫﻛﺮﻩ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪﻱ ﻋﻦ ﺇﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺑﻼ ﺳﻨﺪ ﻓﻼ ﻳﺤﺘﺞ ﺑﻪ . ﻭﻟﻬﺬﺍ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻌﺮﺑﻲ : ﻭﻻ ﺗﺤﺪﺛﻮﺍ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﺜﺎﺑﺘﺎﺕ ﻭﺩﻋﻮﺍ ﺍﻟﻀﻌﺎﻑ .
“আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা এমনটি করার ক্ষমতা রাখেন এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) এর যোগ্য। তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে নাজ্জাশীর হাদীসে এ রকম কিছু সহীহ বা হাসান সনদ দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি। বরং ইবুন আব্বাস (রা.) এর সূত্রে ওয়াহেদী সনদ ব্যতীত এ রকম কিছু উল্লেখ করেছেন, যা প্রমাণ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। এজন্যই ইবনুল আরাবী বলেছেন, যা প্রতিষ্ঠিত হয়নি তা বলো না। দুর্বল রেওয়ায়েতগুলো ছেড়ে দাও”।
♥ ইবনু হিব্বান কর্তৃক ইমরান বিন হুসাইনের হাদীসের জবাবে আওনুল মাবুদ গ্রন্থকার বলেন:
ﻭﻣﻌﻨﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺃﻧﺎ ﺻﻠﻴﻨﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﺧﻠﻒ ﺍﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻛﻤﺎ ﻳﺼﻠﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﻭﺍﻟﺤﺎﻝ ﺃﻧﺎ ﻟﻢ ﻧﺮ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﻟﻜﻦ ﺻﻔﻔﻨﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻛﻤﺎ ﻳﺼﻒ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﻛﺄﻥ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﻗﺪَّﺍﻣﻨﺎ ﻭﻧﻈﻦ ﺃﻥ ﺟﻨﺎﺯﺗﻪ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻱ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻟﺼﻼﺗﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻛﻌﻠﻰ ﺍﻟﺤﺎﺿﺮ ﺍﻟﻤﺸﺎﻫﺪ .. ﻭﻳﺆﻳﺪ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﻌﻨﻰ ﺣﺪﻳﺚ ﻣﺠﻤﻊ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ " ﻓﺼﻔﻔﻨﺎ ﺧﻠﻔﻪ ﺻﻔﻴﻦ ﻭﻣﺎ ﻧﺮﻯ ﺷﻴﺌﺎ.
এ হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হয় না যে, নাজ্জাশীর মৃতদেহ তাঁদের সামনে ছিলো। বরং এর অর্থ হলো, আমরা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর পেছনে ঐ ভাবে নামায পড়েছি যেভাবে মুতব্যক্তির উপর নামায পড়া হয়। অর্থাৎ জানাযার মত করেই। আর আমাদের অবস্থাটা এমন ছিল যে, আমরা মৃতকে দেখছি না। তবুও এমনভাবে কাতারবন্দী হলাম ঠিক যেভাবে উপস্থিত লাশের সামনে কাতারবন্দী হতে হয়। যেন মৃতব্যক্তি আমাদের সামনেই রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যেন উপস্থিত দৃশ্যমান ব্যক্তির জানাযাই পড়ছেন। ইমাম তবারানী কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে বিষয়টি সুস্পষ্ট করেই বলা হয়েছে: “আমরা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর পিছনে দুই কাতারে দাঁড়ালাম। আমরা কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না”। (আওনুল মাবুদ ৯/৯-১০)।
৩. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কিংবা সাহাবায়ে কেরাম নাজ্জাশী ছাড়া অন্য কারো গায়েবানা জানাযা পড়েন নি। তাই গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে না।
জবাবঃ
♥ ইমাম খাত্তাবী (রাহঃ) বলেন,
ﻭﻫﺬﺍ ﺗﺄﻭﻳﻞ ﻓﺎﺳﺪ ﻷﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺇﺫﺍ ﻓﻌﻞ ﺷﻴﺌﺎً ﻣﻦ ﺍﻓﻌﺎﻟﻪ ﺍﻟﺸﺮﻳﻔﺔ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﻣﺘﺎﺑﻌﺘﻪ.
এটি একটি অশুদ্ধ ব্যাখ্যা। কারণ, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যখন কোন একটি কাজ করেন তখন সে কাজটি করা আমাদের জন্য অনুসরণীয় হয়ে যায়। (মুয়ালিমুস সুনান ১/২৭০)
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: ﻟﻘﺪ ﻛﺎﻥ ﻟﻜﻢ ﻓﻲ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺳﻮﺓ ﺣﺴﻨﺔ “তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে সর্বোত্তম আদর্শ”। (সূরা আহযাব ৩৩/২১)
সুতরাং যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবীগণ বাদশা নাজ্জাশী (রাঃ) ছাড়া আর কারো গায়েবানা জানাযা পড়েননি, তবুও এ কথা দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় না যে, গায়েবানা জানাযা অবৈধ। কারণ, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর একবার করাই এর বৈধতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। গায়েবানা জানাযা পড়া ওয়াজিব, না পড়লে গুনাহ হবে; বিষয়টিতো এমন নয়। যেহেতু, এতে কোন বাধ্য বাধকতা নেই, তাই কেউ তা না করলেও তাকে সেজন্য ভর্ৎসনা করা যায় না। অবশ্য যদি ইতিপূর্বে মৃত্যু ব্যক্তির জানাযা নামাজ না হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে তা ওয়াজিবের পর্যায়ে পরে।
♦ একই ব্যক্তির একাধিক বার জানাযাঃ
একই ব্যক্তির একাধিক বার জানাযা করার বিধানও রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবীদের আমল দ্বারা প্রমাণিত। কবর দেওয়ার পরেও রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কবরে গিয়ে জানাযা পড়েছেন। ইবনু ওমর (রাঃ) তাঁর ভাই আছেম-এর জানাযা তিনদিন পরে এসে পড়েছেন’ (বায়হাক্বী ৪/৪৯ পৃঃ)
♥ আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أَنَّ امْرَأَةً سَوْدَاءَ كَانَتْ تَقُمُّ الْمَسْجِدَ فَفَقَدَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلَ عَنْهَا بَعْدَ أَيَّامٍ فَقِيلَ لَهُ إِنَّهَا مَاتَتْ قَالَ فَهَلَّا آذَنْتُمُونِي فَأَتَى قَبْرَهَا فَصَلَّى عَلَيْهَا.
এক কালো বর্ণের মহিলা মসজিদে নববীতে ঝাড়ু দিতো। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাকে দেখতে না পেয়ে কয়েক দিন পর তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তাঁকে জানানো হলো যে, সে মারা গেছে। তিনি বলেনঃ তোমরা কেন আমাকে অবহিত করোনি? অতঃপর তিনি তার কবরের পাশে আসেন এবং তার জানাযার সালাত পড়েন। (ইবনে মাজাহ হাঃ ১৫২৭; সহীহ বুখারী হাঃ ৪৫৮, ৪৬০, ১৩৩৭, সহীহ মুসলিম হাঃ ৯৫৬, আবূ দাউদ হাঃ ৩২০৩, আহমাদ হাঃ ৮৪২০; ইরওয়াহ ৩/১৮৪)
লক্ষ্য করুন, ঐ ভদ্র মহিলার জানাযা করে লাশ কবর দেওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তার মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। তারপর তিনি তার কবরের পাশে গিয়ে আবার জানাযা পড়েন। সুতরাং রাসুলুল্লাহ ﷺ এর আমল দ্বারা প্রমাণিত যে, গায়েবানা জানাযা ও একাধিক বার জানাযা করা জায়েজ। তাই এ জানাযা কে রাজনৈতিক জানাযা বলে ব্যঙ্গ করাটাই নাজায়েজ ও হারাম। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন! (আমিন)
0 Comments