ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা ছাড়া কি সালাত ও যাকাতের হক আদায় করা সম্ভবঃ
--------------------------------------
ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুইটি রুকুন হলো সালাত ও যাকাত। আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বারংবার أَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ. বলে সালাত ও যাকাত ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আফসোসের বিষয় হলো আমরা অনেকেই এর মর্মার্থ জানিনা। তাই আমরা অনেকেই মনে করি, ব্যক্তিগত ভাবে সালাত আদায় ও যাকাত প্রদান করলেই أَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ. এর ষোল আনা হক আদায় হয়ে যায়। কিন্তু এটি একটি মারাত্মক ভ্রান্তি। কেননা, রাষ্ট্রীয়ভাবে সালাত ও যাকাত প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্তু. َأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ. এর পূর্ণ হক আদায় করা সম্ভব নয়।
.
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
الَّذِينَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ ۗ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ.
তারা এমন (লোক) যাদেরকে আমি জমিনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে। (সূরা হাজ্জঃ২২/৪১)
.
এখানে সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান বলতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সালাত ও যাকাত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাকে বুঝানো হয়েছে। কেননা, ব্যক্তিগত ভাবে সালাত আদায় ও যাকাত প্রদান করতে রাষ্ট্রক্ষমতার প্রয়োজন নেই। সালাত কায়েম করার অর্থ এই যে, রাষ্ট্রের (মুসলিম) নাগরিকদেরকে সালাত পড়ার নির্দেশ দেয়া এবং কেউ এ নির্দেশ অমান্য করলে কৈফিয়ত তলব করা ও তার বিচারের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা। যাকাতের বিষয়েও একই কথা। প্রয়োজনে হযরত আবূ বকর (রা) এর মত যুদ্ধ করা শাসকের জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী হাঃ ১৪০০, সহীহ মুসলিম হাঃ ২০, মুসনাদে আহমদ হাঃ ২৪)
.
ইসলামে সালাত প্রতিষ্ঠা এবং যাকাত আদায় ও বন্টনের যে নির্দেশাবলী দেয়া হয়েছে সেজন্য তা সুস্পষ্টভাবে এমন একটি সরকারের ধারণা পেশ করেছে যে, রাষ্ট্রীয়ভাবে জনগণের মাঝে সালাত প্রতিষ্ঠিত রাখবে (সহীহ মুসলিম হাঃ ৪৬৯৮) এবং একটি নির্দিষ্ট নিয়মানুসারে যাকাত আদায় করে হকদারদের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব নেবে (আত তাওবা ৯/৬০ ও ১০৩)।
.
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,
أَنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً فِي أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ
আল্লাহ তাদের উপর তাদের সম্পদের মধ্য থেকে যাকাত ফরয করেছেন। যা ধনীদের মধ্য থেকে নেয়া হবে এবং গরীবের মাঝে বন্টন করা হবে।" (সহীহ বুখারী, হাঃ১৩৯৫)
.
শাসক যদি রাষ্ট্রে সালাত প্রতিষ্ঠা না করে তবে সে ক্ষমতায় থাকার অধিকার হারায়। আউফ ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ﺧِﻴَﺎﺭُ ﺃَﺋِﻤَّﺘِﻜُﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺗُﺤِﺒُّﻮْﻧَﻬُﻢْ ﻭَﻳُﺤِﺒُّﻮْﻧَﻜُﻢْ ﻭَﻳُﺼَﻠُّﻮْﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﺗُﺼَﻠُّﻮْﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﺷِﺮَﺍﺭُ ﺃَﺋِﻤَّﺘِﻜُﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺗُﺒْﻐِﻀُﻮْﻧَﻬُﻢْ ﻭَﻳُﺒْﻐِﻀُﻮْﻧَﻜْﻢُ ﻭَﺗَﻠْﻌَﻨُﻮْﻧَﻬْﻢُ ﻭَﻳَﻠْﻌَﻨُﻮْﻧَﻜْﻢُ ﻗِﻴْﻞَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠّٰﻪِ ﺃَﻓَﻠَﺎ ﻧُﻨَﺎﺑِﺬُﻫُﻢْ ﺑِﺎﻟﺴَّﻴْﻒِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﺎ ﻣَﺎ ﺃَﻗَﺎﻣُﻮْﺍ ﻓِﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ.
তোমাদের উত্তম রাষ্ট্রনায়ক তারাই যাদের তোমরা ভালবাস এবং তারাও তোমাদের ভালবাসে, আর তোমরা তাদের জন্য দোয়া কর তারাও তোমাদের জন্য দোয়া করে এবং তোমাদের নিকৃষ্ট রাষ্ট্রনায়ক তারাই যাদের প্রতি তোমরা অসন্তুষ্ট এবং তারাও তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট এবং তোমরা তাদেরকে অভিসম্পাত কর, তারাও তোমাদের অভিসস্পাত করে। বলা হলো, ইয়া রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমরা কি তলোয়ার দ্বারা তাদেরকে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎখাত করে দেব না? তিনি বললেন, তারা যতদিন তোমাদের মাঝে (রাষ্ট্রে) সালাত কায়েম রাখে ততদিন এরূপ করনা। (সহীহ মুসলিম হাঃ ৪৬৯৮, ইফাবা হাঃ ৪৬৫১, ইসে হাঃ ৪৬৫৩)
.
এ হাদীস আমাদের এই নির্দেশনাই দেয় যে, রাষ্ট্রে সালাত প্রতিষ্ঠা না করা একজন মুসলিম শাসকের জন্য এমন অপরাধ যে, এর ফলে সে রাষ্ট্রক্ষমতার মসনদে থাকার অধিকার হারায়। যাকাতের বিষয়েও একই কথা। কেননা, সালাত ও যাকাতের একই বিধান। (সহীহ বুখারী হাঃ ১৪০০, সহীহ মুসলিম হাঃ ২০, মুসনাদে আহমদ হাঃ ২৪)
.
সালাত ও যাকাতের সাথে রয়েছে রাষ্ট্রের গভীর সম্পর্ক। ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা ছাড়া সালাত কায়েম করা এবং যাকাত ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। যেহেতু সালাত কায়েম করা ও যাকাত প্রদান করা মুসলিমদের জন্য ফরয। সুতরাং সালাত কায়েম করতে এবং যাকাত ব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা (جهاد) করাও প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয।
0 Comments