Recent Tube

জামায়াতের ভুল ধরতে গিয়ে উসামা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে চ্যালেঞ্জ করে রিসালাত নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছেঃ পর্ব ০২. মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম




জামায়াতের ভুল ধরতে গিয়ে উসামা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে চ্যালেঞ্জ করে রিসালাত নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছেঃ পর্ব ০২
-----------------------------------------------------

আলী হাসান উসামার অভিযোগঃ
'মুহাম্মাদ ﷺ-ই মানবজীবনের সবক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য একমাত্র আদর্শ নেতা' কথাটার অর্থও বা কী দাঁড়াচ্ছে? 'একমাত্র' শব্দটাই মূল সংশয় সৃষ্টি করছে। তবে কি জামাআতে সাহাবা জীবনের সবক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য মডেল নন? এখন তারা বাক্যটা যেভাবে লিখেছে, তাতে তাদের আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত না বলে আহলে মুজাররাদ সুন্নাহ বলাই শোভনীয়। কারণ, ওয়াল জামাআহ বলার অর্থই হলো, জামাআতে সাহাবাকেও মি'য়ারে হক (সত্যের মডেল ও মাপকাঠি) ঘোষণা করা। 

 ❤️ আমাদের জবাবঃ 
 মহান আল্লাহ বলেন,
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُوا اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْءَاخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا.
অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। (সূরা আহযাব  ৩৩/২১)

আল্লাহ তা'য়ালা মুমিনদের জন্য মুহাম্মাদ (ﷺ) কে সবক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য একমাত্র আদর্শ নেতা হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। তিনি আরও বলেন,
مَّآ وَمَآ ءَاتٰىكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهٰىكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর। (সূরা হাশর ৫৯/০৭)

 মুহাম্মাদ (ﷺ)-ই মানবজীবনের সবক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য একমাত্র আদর্শ নেতা। কারণ একমাত্র রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর ইত্তিবা ও আনুগত্যের উপরই নাজাত ও সফলতা নির্ভর করে। আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন,
كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى.
 আমার উম্মাতের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে অস্বীকারকারী ব্যতীত। জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসুল (ﷺ) কে অস্বীকারকারী। তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার নাফরমানী করবে সে অস্বীকারকারী। (সহীহ বুখারী হাঃ ৭২৮০; মুসনাদে আহমদ হাঃ ৮৫১১; রিয়াযুস স্বালিহীন হাঃ ১৬২; মিশকাত হাঃ ১৪৩)

 ❤️ জামায়াতে সাহাবা আমাদের মডেল তবে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ব্যতীত উম্মতের কেউ সত্যের মাপকাঠি নয়। সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, একদল ফেরেশতা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসেছে বলেছেন,
فَمَنْ أَطَاعَ مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ عَصَى مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَمُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرْقٌ بَيْنَ النَّاسِ.
যারা মুহাম্মাদ (ﷺ) এর অনুসরণ করল, তারা আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যারা মুহাম্মাদ (ﷺ) এর অবাধ্যতা করল, তারা আসলে আল্লাহরই অবাধ্যতা করল। মুহাম্মাদ (ﷺ) হলেন মানুষের মাঝে পার্থক্যের (হক-বাতিলের) মাপকাঠি।" (সহীহ বুখারী হাঃ ৭২৮১; আধুনিক প্রকাশনী হাঃ ৬৭৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাঃ ৬৭৮৪)

 ইমামুল হিন্দ মাওলানা আবুল কালাম আযাদ (রহঃ) বলেন:
شرعا معيار حق صاحب وحى هي - صحابه کرام کو جو مقام حاصل هے وه تبعا حاصل ہے یعنی انھوں نے انحضرت صلى الله عليه وسلم کے قول وفعل كا حتى الا مكان اتباع کیا اس لئے ان کی شخصیت بھی ہمارے لئے قابل احترام ہوئی لیکن هر حال میں اصل شخصیت صاحب وحی کی هے نه که کسی اور کی انحضرت صلى الله عليه وسلم کے سوا ہمارے عقیدہ میں کوئی شخص معصوم عن الخطأ نهيں هي - يهي وجه هے كه امام مالک نے انحضرت صلى الله عليه وسلم کی قبر کی طرف اشارہ کر کے کہا : اس قبر والے کے سوا ھر شخص سے دلیل پوچھی جائے گی اور غلطی پر باز پرس هو گی ۔
ملفوظات آزاد ص ۱۱۰
 ওহী প্রাপ্ত রাসূল (ﷺ)-ই শরীয়তের দৃষ্টিতে মিয়ারে হক বা সত্যের মাপকাঠি। সাহাবায়ে কেরামের যে মর্যাদা অর্জিত হয়েছে তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অনুসরণের দরুণ অর্জিত হয়েছে। অর্থাৎ তাঁরা যথাসাধ্য নবী কারীম (ﷺ) এর কথা ও কাজের অনুসরণ করেছেন। এ জন্য তাঁদের ব্যক্তিত্বও আমাদের জন্য সম্মান উপযোগী। তবে সর্বাবস্থায় মূল ব্যক্তিত্ব ওহী প্রাপ্ত নবীর জন্যই স্বীকৃত, অন্য কারো জন্য নয়। এ জন্য ইমাম মালিক (রাহঃ) নবী কারীম (সাঃ) এর কবরের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন:
ما من أحد إلا ومأخوذ من كلامه ومردود عليه إلا صاحب هذه الروضة-
'এ কবরবাসী ছাড়া আর কোন ব্যক্তি নেই, যার সকল কথা গ্রহণীয় ও বর্জনীয়'। (কিতাবুল মীযান ১/৬৪; মালফুজাতে আযাদ, পৃঃ ১১০)

 ❤️ আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ ۖ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا.
"হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের আমীরের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।" (সূরা নিসাঃ ৪/৫৯)

 এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ)-এর শর্তহীন ভাবে আনুগত্য করতে হবে। আর অন্যদের আনুগত্য হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আনুগত্যের অনুকূলে, শর্তসাপেক্ষে; তিনি আমীর হোক বা সাহাবী। সাহাবাগণ কখনোই কোন সাহাবীকে সত্যের মাপকাঠি মানতেন না, যদিও সেই সাহাবী তাঁদের আমীর নিযুক্ত হন তবুও। খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত আলী (রাঃ) বলেন,
ﺑَﻌَﺚَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﷺ ﺳَﺮِﻳَّﺔً ﻭَﺍﺳْﺘَﻌْﻤَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺭَﺟُﻼً ﻣِﻦَ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِ ﻭَﺃَﻣَﺮَﻫُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﺴْﻤَﻌُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﻭَﻳُﻄِﻴﻌُﻮﺍ ﻓَﺄَﻏْﻀَﺒُﻮﻩُ ﻓِﻰ ﺷَﻰْﺀٍ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﺟْﻤَﻌُﻮﺍ ﻟِﻰ ﺣَﻄَﺒًﺎ . ﻓَﺠَﻤَﻌُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻭْﻗِﺪُﻭﺍ ﻧَﺎﺭًﺍ . ﻓَﺄَﻭْﻗَﺪُﻭﺍ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻟَﻢْ ﻳَﺄْﻣُﺮْﻛُﻢْ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﷺ ﺃَﻥْ ﺗَﺴْﻤَﻌُﻮﺍ ﻟِﻰ ﻭَﺗُﻄِﻴﻌُﻮﺍ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺑَﻠَﻰ . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺎﺩْﺧُﻠُﻮﻫَﺎ . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻨَﻈَﺮَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻓَﺮَﺭْﻧَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﷺ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ . ﻓَﻜَﺎﻧُﻮﺍ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻭَﺳَﻜَﻦَ ﻏَﻀَﺒُﻪُ ﻭَﻃُﻔِﺌَﺖِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺭَﺟَﻌُﻮﺍ ﺫَﻛَﺮُﻭﺍ ﺫَﻟِﻚَ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻰِّ ﷺ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻮْ ﺩَﺧَﻠُﻮﻫَﺎ ﻣَﺎ ﺧَﺮَﺟُﻮﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟﻄَّﺎﻋَﺔُ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ-
“রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একটি সেনাদল যুদ্ধাভিযানে প্রেরণ করলেন। এক আনসারী ব্যক্তিকে তাদের সেনাপতি/আমীর নিযুক্ত করলেন এবং সাহাবীদেরকে তার কথা শুনা ও মানার জন্য নির্দেশ দিলেন। অতপর তাদের কোন আচরণে সেনাপতি রাগ করলেন। তিনি সকলকে লাকড়ি জমা করতে বললেন। সকলে লাকড়ি জমা করলো এরপর আগুন জ্বালাতে বললেন। সকলে আগুন জ্বালালো। তারপর সেনাপতি বললো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করার এবং আমার কথা শুনা ও মানার নির্দেশ দেন নাই? সকলেই বললো, হ্যা। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সকলেই আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়। সাহাবীগণ একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলেন এবং বললেন, আমরাতো আগুন থেকে বাঁচার জন্যই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এসেছি। এ অবস্থায় কিছুক্ষন পর তার রাগ ঠান্ডা হলো এবং আগুনও নিভে গেল। যখন সাহাবারা মদীনায় প্রত্যাবর্তণ করলেন তখন বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে উপস্থাপন করা হলো। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন ‘তারা যদি আমীরের কথা মতো আগুনে ঝাঁপ দিতো তাহলে তারা আর কখনোই তা থেকে বের হতে পারতো না। প্রকৃতপক্ষে আনুগত্য কেবল ন্যায় এবং সৎ কাজের'।” (সহীহ বুখারী হাঃ ৪৩৪০, ৭১৪৫; সহীহ মুসলিম হাঃ ১৮৪০, নাসায়ী হাঃ ৪২০৫, আবু দাউদ হাঃ ২৬২৫, আহমদ হাঃ ৬২৩, ৭২৬, ১০২১) 

 ❤️ সাহাবাগণ (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
وَعَسَىٰ أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ.
"হতে পারে কোন বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে কোন বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর (সত্য ও সঠিক বিষয়) আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।" (সূরা বাকারাঃ ২/২১৬) 

 সুতরাং সাহাবাগণ (রাঃ) এর প্রত্যক কথা ও কর্মে হক বা সত্য সুস্পষ্ট নয়। হাদীস বিশারদ শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন,
 فمن المحال ان يـامـر رسول الله ﷺ باتباع كل قائل من الصحابة رضي الله عنهم وفيهم من يحلل الشئ وغيره يحرمه ولو كان ذلك. لكان بيع الخمر حلالا اقتداء بسمرة بن جندب ولكان اكل البرد للصائم حلالا اقتداء بأبي طلحة وحراما اقتداء بغيره منهم ولكان ترك الغسل من الاكسال واجبا اقتداء بعلى وعثمان وطلحة وابي ایوب وابى بن كعب وحراما اقتداء بعائشة وابن عمر وكل هذا مروى عندنا بالاسانيد الصحيحة- سلسلة الاحاديث الضعيفة والموضوعة ٨٣/١ الطبعة الرابعة بيروت
 রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কর্তৃক প্রতিজন সাহাবী প্রবক্তার অনুসরণের নির্দেশ দেয়া একটি অসম্ভব বিষয়। কেননা, তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন আছেন যে, যিনি একটি বিষয়কে হালাল মনে করেন অথচ আরেকজন সেটিকে হারাম মনে করেন। যদি প্রত্যেক সাহাবীর অনুসরণ জরুরী হতো তাহলে সামুরা ইবনে জুনদুব (রা)-এর অনুসরণে মদের ব্যবসা হালাল হয়ে যেত। আবু তালহা (রা)-এর অনুসরণে রোযাদারের জন্য আকাশ থেকে পড়া সীল খাওয়া হালাল হয়ে যেত আবার অন্যজনের অনুসরণে তা হারাম বিবেচিত হতো। তেমনিভাবে বীর্যপাতহীন সহবাসের কারণে গোসল বর্জন করা ওয়াজিব হয়ে যেত। আলী (রা), উসমান (রা), তালহা (রা), আবু আইউব (রা) ও উবাই ইবনে কা'বা (রা)-এর অনুকরণে। আবার গোসল বর্জন হারাম হতো আয়েশা (রা) ও ইবনে উমর (রা)-এর অনুকরণে। এ সবই তো আমাদের নিকট বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে। (সিলসিলাতুল আহাদীসুল যয়ীফা ওয়াল মাওদুয়া ১/৮৩ ৪র্থ সংস্করণ)

  ❤️ নুদওয়াতুল মুসান্নিফিন -এর সদস্য এবং দেওবন্দের বিশিষ্ট আলেম উস্তাদ মাওলানা বদরে আলম মদনী (রাহঃ) তাঁর গ্রন্থ তরজুমানুস সুন্নাহ-তে বলেন, "রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ফায়সালা ছাড়া আর কারো ফায়সালাকে আল্লাহর ফায়সালা বা হুকুম বলা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কথা ছাড়া অপর কোনো মানুষের ফায়সালা সমালোচনার ঊর্ধে হতে পারে না। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাড়া প্রতিটি লোকের সিদ্ধান্তকে সর্বান্তকরণে স্বীকার করে নেওয়া অনিবার্য রূপে গণ্য করা সম্ভব নয়।" (তরজুমানুস সুন্নাহ, খন্ড ৩য়, পৃঃ ৪২৬)

  শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী বলেনঃ "যখন এটা সাহাবীদের কর্ম, তখন সেটা হুজ্জাহ/দলীল নয়।" (তাকারীর শাইখুল হিন্দ পৃঃ ৩০) তিনি আরো বলেনঃ "এটা একটি সাহাবীর কথা, এটি হানাফীদের জন্য দলীল হতে পারে না।" (তাকারির শাইখুল হিন্দ পৃঃ ৪৩)

  আল্লামা যাফর আহমেদ থানভী দেওবন্দী বলেনঃ "(রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাওল) মারফূ হাদীসের মুকাবিলায় সাহাবীদের কওল দলীল হয় না।" (ইলাউস সুনান ১/৪৬৩)

  সায়েদেনা আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) ফজরে দোয়ায়ে কুনুত পড়ত, তো এ ব্যাপারে শাইখুল হাদীস ত্বকী উসমানী দেওবন্দী বলেনঃ "এই রেওয়াত মওকূফ সুতরাং এ দ্বারা দলীল হবে না।" (দারসে তিরমিযী ২/১৬৯)
ত্বকী উসমানী সাহেব আরো বলেনঃ "প্রথমত এটা আবু হুরাইরা (রাঃ) এর ব্যাক্তিগত ইজতেহাদি আমল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মারফু হাদীসের সামনে এটি হুজ্জাত নয়।" (দারসে তিরমিযী ২/৮৪)

  ❤️ বিঃদ্রঃ আলী হাসান উসামার আকাবীরগণ কিন্তু সাহাবীদের জীবনের সবক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য মডেল গ্রহণ করেননি। শুধু দেওবন্দী আলেমই নয় বরং মুসলিম উম্মাহ সকল ইমাম ও আলেম রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ব্যতীত কাউকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য মডেল হিসেবে গ্রহণ করেননি বরং তাদের সারকথা হল, 'রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাড়া প্রতিটি লোকের সিদ্ধান্তকে সর্বান্তকরণে স্বীকার করে নেওয়া অনিবার্য রূপে গণ্য করা সম্ভব নয়'। এখন কি তাদেরকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত না বলে আহলে মুজাররাদ সুন্নাহ বলতে হবে? (নাউজুবিল্লাহ) 

  সুতরাং এসব তত্ত্ব স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ছাড়া উম্মতের সকল ব্যক্তির কথা ও কাজকে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নিখুঁদ ও সত্যের মানদণ্ডে যাচাই ও পরখ করতে হবে। ইসলামী শরীয়াতে এমনটি করা ওয়াজিব। অন্যথায় হক-বাতিল, ঠিক-বেঠিকের তারতম্য উঠে যায়। সুতরাং উসামা কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর স্থলে সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড বলে দাবী করার অর্থই হলো তাঁদের ভালো মন্দ সকল কর্মকে সত্যায়ণ করা এবং রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সমকক্ষ বানিয়ে রিসালাতের আসনে বসিয়ে স্বয়ং আল্লাহর রাসুল (ﷺ) কে চ্যালেঞ্জ করা, যা সুস্পষ্ট কুফুরী।
------------------------- 
লেখক: ইসলামি চিন্তাবিদ প্রবন্ধ লেখক ইতিহাস  গবেষক, অনলাইন একটিভিস্ট ও শিক্ষক। 

Post a Comment

0 Comments