Recent Tube

"বিতিকিচ্ছা-২০" নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।-


বিতি কিচ্ছা, পর্ব-২০
---------------------------------------- 
ইতরের দখলে বাংলার হাটঃ
          -নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।


          আমাদের দেশে সেলস্-ম্যানসীপে তেমন কোন প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা নাই। তবে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় শতভাগই কোন না কোনভাবে এই সেলস- ম্যানসীপের চর্চা করে থাকতে হয়। আপন আইডিয়াটা অন্যের মগজে স্থানান্তর করার শিল্পকলাই হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সেলস্-ম্যানশীপ। কত সুনিপুণ ও মার্জিত কর্মকাণ্ডের ফলেই সাধিত হয় এই আাইডিয়া বিকি-কিনির ব্যপার-স্যাপার। অথচ এই অতি মূল্যবান শিল্পকর্মে নেহায়েত অশিক্ষিত, মূর্খরা প্রভাব বিস্তার করে বসে আছে আমাদের এই সোনার বাংলাদেশে। আমার কেন জানি  প্রতিনিয়ত এই দেশের সর্বত্র ইতরের হাট দৃশ্যমান হয়। যেখানে শতত লাঞ্ছিত হন কতনা ভদ্রজন, প্রতারিত হন অকপটে।  যার খাসারতে বিশ্ববাজারে  দেশের সম্মানহানী ঘটে।

       মূলতঃ ভদ্রলোকের হাটে ভদ্রজনেরই যাতায়াতে  সৌন্দর্য্য বিকাশিত হয়। তবে অগত্যা যদি কোন ভদ্রলোক ইতরের হাটে হাজির হয়ে যান, তবে যে অভিজ্ঞতা তিনি লাভ করবেন তা দিয়ে একটা ছোটগল্প এমনকি একটা উপন্যাস রচনা করাও সম্ভব। 

       বিশ্বের সর্বত্রই পশুর হাট বিদ্যমান। আমাদের দেশের পশুর হাটকে এক প্রকার ইতরের হাটই বলতে হয় গুটিকয়েক ইতরের জন্য। বাঁশ বেতের তৈরী জিনিষ পত্রের হাট, মাটির তৈরী কারুকার্য খচিত তৈজস পত্রের হাট, এগুলোর মধ্যেও আছে অনেকটা ইতরামি কাণ্ড কারখানা। ইতর অথবা ভদ্র দু'য়েরই অধিকার আছে হাটে যাবে, তবে ইতরের হাটে ইতরামিকে উৎসাহিত করা হয়। খরিদ্দারকে নাজেহাল করার মধ্যে কৃতিত্ব থাকে ইতরের হাটে। এবং এই কৃতিত্বের জন্য ওরা রীতিমত পুরুষ্কৃতও হয়। এখানকার আঞ্চলিক বিচার ব্যবস্থায়ও দস্তুরমত এই ইতরামির পক্ষে পক্ষপাতিত্ব করা হয়। মুল সমস্যা  কিন্তু এখান থেকেই বিস্তৃতি লাভ করে থাকে। 

        সেলস ম্যানশীপ একটি আর্ট। বিশ্ব স্বীকৃত একটি পেশা এটি। অথচ ইতরের হাটে অভিজ্ঞ সেলস্ ম্যানের প্রধান হাতিয়ার হয় চাতুরী। এই চাতুরীর সাথে অতোপ্রোত ভাবে জড়িত থাকে মিথ্যাচারীতার। এগুলো ইতরের হাটের বাহার বা উপাদান। এগুলো দ্বারা ক্রেতা তথা ভদ্রজনদেরে নাজেহাল করা হয় অহরহ। 

         বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় বেশী মুনাফা লাভের জন্য সমিতি গঠন করে থাকে, এই সমিতি বা সিণ্ডিকেটের সহায়তায় সমিতির সভ্যগন বা সদস্যগন ক্রেতা সাধারণের উপর অন্যায্য চাপ বলবৎ করার সুযোগ লাভ করে থাকেন। ক্ষেত্র বিশেষে এই সমিতিগুলো এতই শক্তিশালী হয় যে ওরা প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র শক্তিকেও বড় কমই তোয়াক্কা করে। যাকে ভদ্রতার খেলাফ বললে অত্যুক্তি হবে না। হর বৎসর বিভিন্ন উপলক্ষ সামনে রেখে সিন্ডিকেটের কবলে দ্রব্য মুল্য ভোক্তা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে গিয়ে দুর্বিসহ করছে জীবন যাত্রা, আর স্বল্প আয়ের সাধারণ জনগন হচ্ছেন নাজেহাল। এই সব বাজারে মূর্খ, অভদ্র সেলস্-ম্যানদের  অনাকাঙ্ক্ষিত আচারের  প্রতিবাদ দুরে থাক্ সামান্য বচসা করারও উপায় থাকে না। আজ অসভ্য সেলস্ ম্যানশীপ আর্টের এমন কল্যাণে- সভ্য সমাজে নানাভাবে অসভ্য আচরণ অহরহ হচ্ছে, অথচ তা দেখার কেউ আছে বলে মনে হয় না। ক্রমান্বয়ে পুরো বাজার ব্যবস্থাই যদি ইতরের হাটে পরিনত হয়ে যায় তবে সমাজ কি আর বসবাসযোগ্য থাকবে।
------------------------------------------------

Post a Comment

0 Comments