Recent Tube

মুহিবখান কি সত্যিই বলেছেন?" রব্বানী রউফ।


পয়েন্ট: ১  প্রসঙ্গ কওমি

কওমি বাগানে আর
ফুটবে না ফুল,
পানি ঢেলে লাভ নেই
পঁচে গেছে 'মূল'।

  এখানেই সবাই ধুয়ে দিচ্ছেন কবিকে। অবাক না হয়ে পারছি না। একটা জিনিস ভালোভাবে বুঝতে হলে সেই জিনিস সম্পর্কে আপনার বেশি না হলেও মোটামুটি ধারণা থাকা চাই। 

  একটা ব্যাখ্যা দেখুন তো।
আর মাহযুফ ইবারাতগুলো একটু পড়ুন তো! 

কওমি বাগানে (ইঁদুর ঢুকে গেছে, গাছগুলোকে মেরেরে ফেলবে অচিরেই) আর
 ফুটবে না ফুল
    আপনি যদি ইমরাউল কায়েস, মুতানাব্বি কিংবা আরবী কবিতা আর ভাষা সাহিত্যের ছাত্রও হয়ে থাকেন তাহলে আশা করি প্রথম লাইনের মাহযুফ ইবারাতগুলো আপনার অবশ্যই বুঝে আসার কথা। 
পানি ঢেলে লাভ নেই 
(আগে ইঁদুর মারো, গাছগুলো তুলে ফেলতে হবে না।  ফলজ বৃক্ষের ডাল দিয়ে কলম করে বাগান সাজাও। বাগানে আবার ফুল ফুটবেই। নইলে জেনে রাখো ইঁদুরেরা কাটাকুটি না করলে তাদের দাত লম্বা হয়ে চলাফেরা খানাপিনায় সমস্যা হয় তাই তারা কাটাকুটি করবেই। ফলে যা হবার তাই হবে। কওমি বাগানে আর ফুল ফুটবে না। নিশ্চিত-)
পঁচে গেছে 'মূল'।

  আরেকটি ব্যাখ্যা দেখুন:
কওমি বাগানে আর ফুটবে না ফুল
(ইঁদুরেরা কেটে কুটে করে নির্মূল)
পানি ঢেলে লাভ নেই পঁচে গেছে মূল
(ইঁদুর তাড়াও আগে ফুটবেই ফুল।)

পরিস্থিতির উপর আন্দাজ করে কবি এডভান্স চিন্তায় সবাইকে সতর্ক করতে গিয়ে বলছেন " যদি কওমি বাগানে এমন রাঘব বোয়ালদের আনাগোনা চলতেই থাকে তাহলে এই বাংলাদেশের কওমি বাগানের মূল একদিন একেবারেই পঁচে যাবে। আর পঁচা মূল নিয়ে বাগানে ফুল পাওয়ারর আশা করা বোকামি বৈ কিছুই না। 

   একজন কবি তার মেধা শ্রম ব্যয় করে সামনের পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে জাতিকে সতর্ক করতেই পারেন। জাতি যদি সতর্ক না হয়ে বরং উল্টো কবিকে বাঁশ দেয় তাহলে এই জাতির কপালে কী আছে কবির কবিতা থেকে কিছুটা হলেও আচ করা যাচ্ছে।
----------------------------------------------------

পয়েন্ট: ২ প্রসঙ্গ হেফাজতে নাজাসত

হেফাজত নিয়ে যে লাইনগুলো বলেছেন কবি সেই লাইনগুলোর সাথে কারো কোনো দ্বিমত থাকলে থাকতেও পারে। আমার কোনো দ্বিমত নেই। কবি এখানে "হেফাজত নাজাসত" বলেন নি।
বরং বলেছেন "হেফাজতে নাজাসত।"

 এখানে কিছু স্বার্থবাজ নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য কবির কবিতার " হেফাজতে" শব্দটি থেকে ত এর ে কার কেটে দিয়ে পুরো হেফাজতকেই নাজাসত বানিয়ে পানি ঘোলা করছেন।

অথচ কবি  হেফাজতের ত তে  যুক্ত করে:
"হেফাজতে নাজাসত" বলেছেন। 

কবি বুঝাতে চেয়েছেন হেফাজত একটি পাত্র। এখানে তিনি পাত্রকে নাজাসত না বলে পাত্রের মালকে নাজাসত বলেছেন। 
হেফাজতে নাজাসত কি না এটা বুঝতে হলে আপনাকে শ্রদ্ধেয় রশীদ জামিল এর  বিশ্বাসের বহুবচন পড়তে হবে।  আর বিশ্বাসের বহুবচন পেতে হলে কালান্তর প্রকাশনী থেকে কিনে নিতে হবে। 

আর  "বেফাকে নেফাক " বর্তমান পরিস্থিতে মনে হয়না এই লাইনেরও ব্যাখ্যা প্রয়োজন।

আল্লামা ইকবাল শেকওয়া লিখার পর কী অবস্থাটাই না করেছিল লোকেরা।  

পরে কী হলো?
ইকবাল যখন জওয়াবে শেকওয়া  লিখলেন তখন কী হলো?

কবির কথাগুলোর ব্যপারে বেশি কিছু বলছি না।।  শুধু বলছি একটি বছর ঘুরতে দাও। দেখো আরো কতো রাঘব বোয়াল বের হয়। 

এটা নিতান্তই আমার পাঠে উদ্ধারকৃত অর্থ থেকে আলোচনা।  আপনার বুঝে আসলে ভালো।  না আসলে বুঝার চেষ্টা করতে পারেন।  নইলে অযথা প্যাঁচাল থেকে দূরে থাকতে পারেন।

এই আলোচনায় ভুল হলে এটা কেবলই আমার।  আর যদি জাতির ঘুমন্ত বিবেকের ঘুম ভাঙ্গে তাহলে এর কৃতিত্ব কেবলই কবি মুহিবখানের।

আসুন মুহিব খানের একটা পুরনো কবিতা পড়ি 

 ‘ক্ষমা করো ইসলাম’
             মুহিব খান 
আমরা তোমাতে প্রবেশ করিনি
সঠিক জ্ঞানের সাথে,
প্রবেশ করাতে চেয়েছি তোমায়
নিজ নিজ কৌটাতে।

আমরা নিজের দোকানে দোকানে
এঁটেছি তোমার নাম।
ক্ষমা করো ইসলাম!

আমরা তোমায় কেটে ছিঁড়ে ভোগ
করেছি নিজের মতো,
তোমার আড়ালে বাঁচিয়েছি পিঠ
দেখিনি তোমার ক্ষত।

তোমার দোহাই দিয়ে নিজ কাজ
দিয়ে গেছি আঞ্জাম।
ক্ষমা করো ইসলাম!

বুঝিনি তোমার নিগুঢ়তত্ত্ব
শিখেছি আচার কিছু,
ঠুনকো জ্ঞানের মহড়া দেখিয়ে
তোমায় করেছি নিচু।

নিজ মুর্খতা টিকিয়ে তোমার
করে গেছি বদনাম।
ক্ষমা করো ইসলাম!

আমরা কোরান হাদীসের বাণী
বুঝেছি ক্ষুদ্র-জ্ঞানে,
সীরাত মেনেছি নিজ সুবিধার
কিছু দিক জেনে জেনে।

সুন্নাহ মেনেছি ততটুকু, যাতে
পেয়েছি নিজ আরাম।
ক্ষমা করো ইসলাম!

আমরা তোমাতে বিদাত এনেছি
এনেছি নানান প্রথা,
দলিল মেনেছি নাহুর কায়দা,
বুজুর্গানের কথা।

পীর-পুরোহিতে জীবন সঁপেছি
দিইনি তোমাকে দাম।
ক্ষমা কর ইসলাম!

আমরা তোমার দয়া-ক্ষমা-প্রেম
দেখাই শত্রু সাথে,
বুদ্ধি-শক্তি-কৌশল দিয়ে
বন্ধুকে মারি ভাতে।

গোঁড়া মতবাদে শঙ্কা ছড়াই
লোকের ঝরাই ঘাম।
ক্ষমা করো ইসলাম!

আমরা তোমাকে সহজ করিনি
করেছি কঠোরতর,
মানুষে বলেছি- ইসলাম এলো,
সাবধান! সর! সর!

তোমার উদার পথকে ভুলেছি
দিইনি সে পয়গাম।
ক্ষমা করো ইসলাম!

আমরা তোমাকে এগুতে দিইনি
দু’হাতে রেখেছি চেঁপে,
তোমার সার্বজনীনতা ভুলে
চলেছি স্বার্থ মেপে।

তোমাকে বিফল করে রেখে নিজে
হয়েছি সফলকাম।
ক্ষমা করো ইসলাম!

আমরা তোমার শিক্ষা নিয়েছি
দীক্ষা নিইনি মূল,
অন্যের ভুল খুঁজেছি শুধুই
বুঝিনি নিজের ভুল।

আমাদের সব ভুলের মাশুল
তুমি দিলে অবিরাম।
ক্ষমা করো ইসলাম!

আমরা বুঝিনি তুমি যে বিশাল
রেখেছি ক্ষুদ্র করে,
বিকাশ করিনি, মুঠো করে রেখে
বেচেছি তুচ্ছ দরে।

বিশ্বে তোমায় বিজয়ী করিনি
দিয়েছি করে ‘নিলাম’।
ক্ষমা করো ইসলাম!

রব্বানী রউফ
------------------------------------------------  
রব্বানী রউফ : বিশ্লেষক। 

Post a Comment

0 Comments