Recent Tube

আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে অন্য বিধান গ্রহণকারীদের ব্যাপারে আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহঃ), মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে অন্য বিধান গ্রহণকারীদের ব্যাপারে আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহঃ),
--------------------------------------
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
.
وَأَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَنْ يَفْتِنُوكَ عَنْ بَعْضِ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ ۖ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ أَنْ يُصِيبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ ۗ وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ لَفَاسِقُونَ أَفَحُكْمَ ٱلْجَٰهِلِيَّةِ يَبْغُونَۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ 
.
আর তাদের মধ্যে তার মাধ্যমে ফয়সালা কর (বিধান কায়েম কর), যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাক যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার কিছু থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করবে। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রাখ যে, আল্লাহ তো কেবল তাদেরকে তাদের কিছু পাপের কারণেই আযাব দিতে চান। আর মানুষের অনেকেই ফাসিক। তারা কি জাহিলিয়্যাতের শাসন-ব্যবস্থা কামনা করে? দৃঢ় বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আইন প্রণেতা হিসেবে আল্লাহর চাইতে উত্তম কে আছে? (সূরা মায়েদা: ৪৯-৫০)
.
উক্ত আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন:
"হে মুহাম্মদ (সা) তুমি আল্লার বিধানাবলী ছড়িয়ে দাও আরব হোক বা আযম হোক শিক্ষিত হোক বা অশিক্ষিত হোক। 'আল্লাহর নাযিলকৃত' এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ ওহী। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, এ আয়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহর ওহী মোতাবেক ফয়সালা করা ওয়াজিব (জরুরী)। তাঁকে বলা হচ্ছে, হে নবী (সা)! এ দূর্ভাগা অজ্ঞরা নিজের পক্ষ থেকে যে আইন তৈরি করে নিয়েছে (তথা মানব রচিত মতবাদ) এবং তার কারণে আল্লাহর কিতাবের বিধানকে যে পরিবর্তন করে ফেলেছে, কোন ক্রমেই তুমি তাদের প্রবৃত্তির (মানব রচিত মতবাদের) পিছনে পড়ে সত্যকে ছেড়ে বসো না।"
একটু এগিয়ে আল্লামা ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ আরো বলেনঃ 
.
ﻳﻨﻜﺮ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻠﻰ ﻣﻦ ﺧﺮﺝ ﻋﻦ ﺣﻜﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻤﺤﻜﻢ ﺍﻟﻤﺸﺘﻤﻞ ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﺧﻴﺮ ﺍﻟﻨﺎﻫﻲ ﻋﻦ ﻛﻞ ﺷﺮ ﻭﻋﺪﻝ ﺇﻟﻰ ﻣﺎ ﺳﻮﺍﻩ ﻣﻦ ﺍﻵﺭﺍﺀ ﻭﺍﻻﻫﻮﺍﺀ ﻭﺍﻻﺻﻄﻼﺣﺎﺕ ﺍﻟﺘﻲ ﻭﺿﻌﻬﺎ ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ ﺑﻼ ﻣﺴﺘﻨﺪ ﻣﻦ ﺷﺮﻳﻌﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﺎﻫﻠﻴﺔ ﻳﺤﻜﻤﻮﻥ ﺑﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻀﻼﻻﺕ ﻭﺍﻟﺠﻬﺎﻻﺕ ﻣﻤﺎ ﻳﻀﻌﻮﻧﻬﺎ ﺑﺂﺭﺍﺋﻬﻢ ﻭﺃﻫﻮﺍﺋﻬﻢ ﻭﻛﻤﺎ ﻳﺤﻜﻢ ﺑﻪ ﺍﻟﺘﺘﺎﺭ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻴﺎﺳﺎﺕ ﺍﻟﻤﻠﻜﻴﺔ ﺍﻟﻤﺄﺧﻮﺫﺓ ﻋﻦ ﻣﻠﻜﻬﻢ ﺟﻨﻜﺰ ﺧﺎﻥ ﺍﻟﺬﻱ ﻭﺿﻊ ﻟﻬﻢ ﺍﻟﻴﺎﺳﻖ ﻭﻫﻮ ﻋﺒﺎﺭﺓ ﻋﻦ ﻛﺘﺎﺏ ﻣﺠﻤﻮﻉ ﻣﻦ ﺃﺣﻜﺎﻡ ﻗﺪ ﺍﻗﺘﺒﺴﻬﺎ ﻋﻦ ﺷﺮﺍﺋﻊ ﺷﺘﻰ ﻣﻦ ﺍﻟﻴﻬﻮﺩﻳﺔ ﻭﺍﻟﻨﺼﺮﺍﻧﻴﺔ ﻭﺍﻟﻤﻠﺔ ﺍﻻﺳﻼﻣﻴﺔ ﻭﻏﻴﺮﻫﺎ . ﻭﻓﻴﻬﺎ ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺍﻻﺣﻜﺎﻡ ﺃﺧﺬﻫﺎ ﻣﻦ ﻣﺠﺮﺩ ﻧﻈﺮﻩ ﻭﻫﻮﺍﻩ ﻓﺼﺎﺭﺕ ﻓﻲ ﺑﻨﻴﻪ ﺷﺮﻋﺎ ﻣﺘﺒﻌﺎ ﻳﻘﺪﻣﻮﻧﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺤﻜﻢ ﺑﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺳﻨﺔ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻓﻤﻦ ﻓﻌﻞ ﺫﻟﻚ ﻓﻬﻮ ﻛﺎﻓﺮ ﻳﺠﺐ ﻗﺘﺎﻟﻪ ﺣﺘﻰ ﻳﺮﺟﻊ ﺇﻟﻰ ﺣﻜﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻓﻼ ﻳﺤﻜﻢ ﺳﻮﺍﻩ ﻓﻲ ﻗﻠﻴﻞ ﻭﻻ ﻛﺜﻴﺮ
‏[ ﺗﻔﺴﻴﺮ ﺍﺑﻦ ﻛﺜﻴﺮ ]
.
“(এই আয়াতে) আল্লাহ তায়ালা এমন ব্যক্তির নিন্দা করেছেন যারা আল্লাহর বিধানকে ছেড়ে দেয়, অথচ তা (আল্লাহর বিধান) সকল কল্যাণকে সমন্বিত করে এবং সকল ক্ষতিকারক বিষয় থেকে নিষেধ করে। কুরআন-সুন্নাহ বাদ দিয়ে সে ফিরে যায় মানবরচিত মতামত, খায়েশাত, রীতিনীতি ও প্রথার দিকে যা আল্লাহর শরীয়াতের সাথে সম্পর্কহীন। এ কাজটিই করেছিল জাহেলী যুগের মানুষেরা। তারা তাদের মস্তিস্ক প্রসূত চিন্তাধারা ও খায়েশাত দিয়ে তৈরী (মানব রচিত) বিধান দ্বারা ফায়সালা প্রদান করতো।
আর তাতারীরা রাজতান্ত্রিক রাজনীতির সুবাদে তাদের বাদশাহ চেঙ্গিস খান থেকে আইন গ্রহণ করে এভাবেই বিচার ফায়সালা করছে। এই চেঙ্গিস খানই তাদের জন্য ‘ইয়াসিক’ (তাদের সংবিধান) প্রণয়ন করেছিল যা দ্বীন ইসলামী, খ্রীষ্টান ধর্ম, ইয়াহুদী ধর্ম সহ বিভিন্ন শরীয়াতের আইনের সমন্বয়ে গঠিত। তাতে এমন অনেক বিধানও ছিল যা সে শুধুমাত্র নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারা থেকেই গ্রহণ করেছে। আর সেটাই তার সম্প্রদায়ের নিকট পরিণত হয়েছে অনুসরণীয় এক আইন-বিধান রূপে। ইয়াসিককে তারা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের (সাঃ) সুন্নাহর উপর স্থান দিয়েছিল।
যে ব্যক্তি এমন কাজ করে সে কাফের। তার বিরুদ্ধে জিহাদ করা ওয়াজিব যতক্ষণ পর্যন্ত না সে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের (সাঃ) সুন্নাতের দিকে ফিরে আসে, এবং কোন অবস্থাতেই আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য কোন বিধান দ্বারা কম, বেশী, গুরুত্বপূর্ণ বা সাধারণ ব্যাপারেও ফায়সালা গ্রহণ না করে।” 
(তাফসীর ইবনে কাসীর)
.
এদেশের একদল রাজনীতিবিদও কি কুরআন-সুন্নাহ বাদ দিয়ে মানবরচিত মতামত, খায়েশাত, রীতিনীতি ও প্রথার দিকে ফিরে যাচ্ছে না, যা আল্লাহর শরীয়াতের সাথে সম্পর্কহীন?
এদেশেও কি তাতারীদের মতো বাদশাহ চেঙ্গিস খান এর উত্তরসূরীদের (ব্রিটিশ ও আমেরিকান আইন) থেকে আইন গ্রহণ করে বিচার-ফায়সালা করা হচ্ছে না?
এদেশেও কি একটি “তথাকথিত সংবিধান” রচনা করা হয় নি তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারা থেকে? আর সেটাই কি অনেকের কাছে অনুসরণীয় একমাত্র আইন-বিধান রূপে পরিণত হয় নি? অতীতের “ইয়াসিক” এর ন্যায় বর্তমানের এই “তথাকথিত সংবিধানকে” কি তারা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের (সাঃ) সুন্নাহর উপর স্থান দিচ্ছে না?
.
আল্লামা ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ এর মতে, "যে ব্যক্তি এমন কাজ করে সে কাফের। তার বিরুদ্ধে জিহাদ করা ওয়াজিব যতক্ষণ পর্যন্ত না সে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের (সাঃ) সুন্নাতের দিকে ফিরে আসে, এবং কোন অবস্থাতেই আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য কোন বিধান দ্বারা কম, বেশী, গুরুত্বপূর্ণ বা সাধারণ ব্যাপারেও ফায়সালা গ্রহণ না করে।" 
আর আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এর মতে, "আল্লাহর ওহী মোতাবেক ফয়সালা করা ওয়াজিব (জরুরী)।"
.
সুতরাং প্রত্যেকটি মুমিন বান্দার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব (ওয়াজিব) হলো মানব রচিত জাহেলী আইন অপসরণ করে আল্লাহর আইন সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করা এবং আল্লাহর আইন অনুযায়ী যারা রাষ্ট্র পরিচলানা করতে চায় তাদের সাহায্য সহযোগীতা করা।
.
মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ

وَتَعَاوَنُوا عَلَى ٱلْبِرِّ وَٱلتَّقْوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى ٱلْإِثْمِ وَٱلْعُدْوَٰنِۚ وَٱتَّقُوا ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلْعِقَابِ 
.
(হে মুমিনগণ) সৎকর্ম ও আল্লাহভীরু কাজে তোমরা পরস্পর কে সাহায্য সহযোগীতা কর। খারাপ কাজ ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরকে সাহায্য সহযোগীতা কর না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা'য়ালা শাস্তি প্রদানে অত্যন্ত কঠোর।
(সূরা মায়িদাঃ০২)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।         

Post a Comment

0 Comments