Recent Tube

জামায়াতে ইসলামী'র মৌলিক আকিদা: --১ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

 'জামায়াতে ইসলামী'র মৌলিক আকিদা:-১
---------------------------------------
  ঈমান ও আকিদার মূল মন্ত্র হলো: 

لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّه (محمد:١٩) مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ ٱللَّهِ (فتح:٢٩)
  অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল।
.
   ব্যাখ্যা: (ক) এই আকিদার প্রথমাংশ আল্লাহর একমাত্র ইলাহ হওয়া এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও ইলাহ না হওয়ার অর্থ এই যে, আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে সেই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা, স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধানদাতা, রব প্রতিপালক, মাবুদ, ইলাহ এবং প্রাকৃতিক ও বিধিগত সার্বভৌম সত্তা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। এই সবের কোন এক দিক দিয়েও কেউ তাঁর সহিত শরীক নাই।
.
   এই মৌলিক সত্য কথা কথাটি জেনে ও মেনে নিলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অনিবার্যভাবে গ্রহণ করতে হয়ঃ (আর এসব জামায়াত গ্রহণ করেছে)
----------------------------------------------
(১) মানুষ আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে নিজের পৃষ্ঠপোষক, কার্য সম্পাদনকারী, প্রয়োজন পূরণকারী, বিপদ দূরকারী, ফরিয়াদ শ্রবণকারী ও গ্রহণকারী এবং সাহায্যদাতা ও রক্ষাকর্তা মনে করবে না। কেননা তিনি ব্যতীত আর কারও নিটক কোন ক্ষমতা নাই।
.
(২) আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে কল্যাণকারী মনে করবে না, কারও সম্পর্কে অন্তরে ভীতি অনুভব করবে না, কারও উপর নির্ভর করবে না, কারও প্রতি কোন আশা পোষণ করবে না এবং এই কথা বিশ্বাস করবে না যে, আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কারও উপর কোন বিপদ মুসীবত আপতিত হতে পারে। কেননা সকল প্রকার ক্ষমতা ও ইখতিয়ার একমাত্র আল্লাহই।
.
(৩) আল্লাহ ছাড়া কারও নিকট দোয়া বা প্রার্থনা করবে না, কারও নিকট আশ্রয় খুঁজবে না, কাউকে সাহায্যের জন্য ডাকবে না এবং আল্লাহর ব্যবস্থাপনায় কাউকে এতখানি প্রভাবশালী বা শক্তিমান মনে করবে না যে, তার সুপারিশে আল্লাহ ফায়সালা পরিবর্তন করতে বাধ্য। কেননা তাঁর রাজ্যে সকলেই ক্ষমতাহীন প্রজামাত্র।
.
(৪) আল্লাহ ছাড়া আর কারও সম্মুখে মাথা নত করবে না  এবং কারও উদ্দেশ্যে মানত করবে না। কেননা এক আল্লাহ ব্যতীত (দাসত্ব, চূড়ান্ত আনুগত্য ও উপাসনা সহ যাবতীয়) ইবাদত পাইবার অধিকারী আর কেউ নাই।
.
(৫) আল্লাহ ব্যতীত অপর কাউকে রাজাধিরাজ, বাদশাহ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মেনে নিবে না, কাউকে নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করার অধিকারী মনে করবে না, কাউকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধানদাতা ও আইন প্রণেতা মেনে নিবে না এবং আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর দেওয়া আইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন আনুগত্য মেনে নিতে অস্বীকার করবে। কেননা স্বীয় সমগ্র রাজ্যের নিরঙ্কুশ মালিকানা ও সৃষ্টিলোকের সার্বভৌমত্বের অধিকার আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও আসলেই নাই।
.
 উপরোক্ত আকিদা অনুযায়ী নিম্নলিখিত বিষয়গুলিও মেনে নেওয়া আবশ্যকঃ
---------------------------------------
(১) মানুষ স্বীয় স্বাধীন ইচ্ছা ও আযাদী কুরবানী করবে, নফসের ইচ্ছা-বাসনার দাসত্ব পরিত্যাগ করবে এবং যে আল্লাহকে ইলাহ মেনে নিয়েছে একনিষ্ঠভাবে একমাত্র তাঁরই বান্দাহ ও দাস হয়ে জীবন যাপন করবে।
.
(২) নিজেকে কোন কিছুরই স্বাধীন ইচ্ছাসম্পন্ন মালিক মনে করবে না বরং স্বীয় জীবন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, মানসিক ও দৈহিক শক্তি তথা সবকিছুেক আল্লাহর মালিকানাধীন ও তাঁর নিকট থেকে প্রাপ্ত আমানত মনে করবে। 
.
(৩) নিজেকে আল্লাহর নিকট দায়ী ও জবাবদিহি করতে বাধ্য মনে করবে, শক্তি-সামর্থের ব্যবহার এবং স্বীয় আচারণ ও ক্ষমতা প্রয়োগে সবসময় সত্যের প্রতি লক্ষ্য রাখবে যে, পরকালে আল্লাহ তা'য়ালার সম্মুখে এইসব বিষয়ে হিসাব অবশ্যই দিতে হবে।
.
(৪) আল্লাহ যা পছন্দ করে তাকেই নিজের পছন্দ এবং যা তাঁর অপছন্দ তাকেই নিজের অপছন্দ রূপে গ্রহণ করবে।
.
(৫) আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর নৈকট্য লাভকেই নিজের যাবতীয় চেষ্টা সাধনার চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং নিজের সমগ্র তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে গ্রহণ করবে।
.
(৬) নিজের নৈিতক চরিত্র, আচার-ব্যবহার এবং সামাজিক, স্বাংস্কৃিতক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড, এক কথায় জীবনের সর্ববিষয়ে কেবল আল্লাহর বিধানকেই একমাত্র হিদায়াত হিসাবে মেনে নিবে এবং আল্লাহর দেওয়া শরীয়তের বিপরীত যাবতীয় নিয়ম-নীতি ও পন্থা-পদ্ধতিেক প্রত্যাখ্যান করবে।
(জামায়াতে ইসলামী, গঠনতন্ত্র, ধারাঃ২ থেকে সংগ্রহীত) 
.
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 
.
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ
.
   নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অতঃপর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের কাছে নাযিল হয় (এবং বলে,) ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছিল’।
[সূরা (ফুসসিলাত) হা-মীম-সাজদাহঃ৪১/৩০]
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।          

Post a Comment

0 Comments