মানুষ আল্লাহর খলীফা: এটা কি গোমরাহী আকিদা?
আহলে হাদীসের বিরাট শায়খ মতিউর রহমান মাদানি বলেছেন,
"মানবজাতি জমিনে খলীফা। মওদুদীর কিতাবে, জামায়াতে ইসলামীর কিতাবে, ইখওয়ানীদের কিতাবে কেমন করে (মানুষকে) গোমড়া করছে যে, আওয়াজ আসছে 'আল্লাহর খলীফা'।" তিনি আরো বলেছেন, "একটি আয়াত দেখান, যেখানে خَلِيفَةُ اللهِ বলা হয়েছে, আদমকে অথবা মানব সন্তানকে বলা হয়েছে আল্লাহর খলীফা।"
তার বক্তব্যেের সারসংক্ষেপ হলো- মানুষ আল্লাহর খলীফা নয়। তাই হযরত আদম (আঃ) সহ কোন মানুষকে আল্লাহর খলীফা বলা গোমড়াহী।
.
পর্যালোচনাঃ
পর্যালোচনাঃ
শায়খ ড. বিএম মফিজুর রহমান (হাফিঃ) এবং শায়খ আবুল কালাম আযাদ বাশার (হাফিঃ) তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে কাবীর, সাফওয়াতুত তাফাসীর, তাফসীরে খাজেন, তাফসীরে বাইযাবী, আল-আসাসুফিত তাফসীরসহ বিভিন্ন প্রাচীন ও আধুনিক তাফসীর থেকে হিন্দুস্থানীর জবাব দিয়েছেন। তাই আমি তাফসীর থেকে এর জবাব দিবো না। বরং সহীহ হাদীস থেকে তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবো। তার আগে আহলে হাদীসের আরেক শায়খ মুহাম্মদ আবূ বকর যাকারিয়া সাহেবের 'তাফসীরে যাকারিয়া' পেশ করছি। মুফতি শফীর তাফসীর 'মাআরেফুল কুরআন' সালাফী আকিদার সাথে মিল না থাকায় আহলে হাদীসগণ সৌদি সরকারের মাধ্যমে তা বাতিল করে এবং আহলে হাদীসের শায়খ যাকারিয়াকে নতুন করে তাফসীর রচনা করার জন্য দাযিত্ব দেন। তিনি সৌদি সরকারের নিয়ন্ত্রণে তাফসীরে যাকারিয়া রচনা করেন এবং সৌদি সরকার তা বিনামূল্যে বিলি করেন।
.
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً.
আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘নিশ্চয় আমি জমিনে একজন খলীফা সৃষ্টি করছি। (সূরা বাকারাঃ২/৩০)
.
মুহাম্মদ আবূ বকর যাকারিয়া অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,
আয়াতে বর্ণিত خَلِيفَةً শব্দের অর্থ নির্ণয়ে বিভিন্ন মত এসেছে।
মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক বলেন, এর অর্থ স্থলাভিষিক্ত হওয়া। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা ফেরেশতাদের সম্বোধন করে বলছেন যে, আমি তোমাদের ছাড়া এমন কিছু সৃষ্টি করতে যাচ্ছি যারা যুগ যুগ ধরে বংশানুক্রমে একে অপরের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে।
ইবনে জারীর বলেন, আয়াতের ব্যাখ্যা হচ্ছে, আমি জমিনে আমার পক্ষ থেকে খলীফা নিয়োগ করতে চাই, যে আমার সৃষ্টিকুলের মধ্যে ইনসাফের সাথে আমার বিধান বাস্তবায়ন করবে। আর এ খলীফা হচ্ছে আদম এবং যারা আল্লাহর আনুগত্য ও আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে তার বিধান প্রতিষ্ঠায় আল্লাহর খলীফা হবে। (তাফসীরে যাকারিয়া)
.
এ তাফসীরে خَلِيفَةً শব্দের একাধিক অর্থ করেছেন। তন্মধ্যে একটি হলো মানুষ আল্লাহর খলীফা। যারা আল্লাহর আনুগত্য ও আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত থাকবে তারা আল্লাহর খলীফা বলে গণ্য হবে।
.
হযরত সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ
يَقْتَتِلُ عِنْدَ كَنْزِكُمْ ثَلَاثَةٌ كُلُّهُمْ ابْنُ خَلِيفَةٍ ثُمَّ لَا يَصِيرُ إِلَى وَاحِدٍ مِنْهُمْ ثُمَّ تَطْلُعُ الرَّايَاتُ السُّودُ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ فَيَقْتُلُونَكُمْ قَتْلًا لَمْ يُقْتَلْهُ قَوْمٌ... فَقَالَ فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَبَايِعُوهُ وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الثَّلْجِ فَإِنَّهُ خَلِيفَةُ اللهِ الْمَهْدِيُّ.
তোমাদের একটি খনিজ সম্পদের নিকট পরপর তিনজন খলীফার পুত্র নিহত হবে। তাদের কেউ সেই খনিজ সম্পদ দখল করতে পারবে না। অতঃপর প্রাচ্যদেশ থেকে কালো পতাকা উড্ডীন করা হবে। তারা তোমাদের সাথে এমন কঠিন ভাবে যুদ্ধ করবে যে, ইতোপূর্বে কোন জাতি তদ্রূপ করেনি। রাসূলুল্লাহ (সা) আরো বলেনঃ (ইমাম মাহদী) তাকে আত্মপ্রকাশ করতে দেখলে তোমরা বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তার হাতে বায়আত করবে। কারণ সে خَلِيفَةُ اللهِ আল্লাহর খলীফা মাহ্দী। (সুনান ইবনে মাজাহ, হাঃ ৪০৮৪; মুস্তাদরাকে হাকীম ৪/৪৬৩-৪৬৪)
ইমাম হাকীম, ইমাম যাহাবী, ইমাম ইবনে কাসীর প্রমুখ হাদীস বিশারদ এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
.
এখন প্রশ্ন হলো- ইমাম ইবনে মাজাহ, ইমাম হাকীম, ইমাম যাহাবী, ইবনে কাসীর প্রমুখ মুহাদ্দিসের কিতাবেও তো আওয়াজ উঠলো মানুষ আল্লাহর খলীফা, এতে করে কি তাঁরা নিজেরা গোমড়া হয়ে গোমড়াহী ছড়াচ্ছেন ? তাঁরা কি মানুষকে গোমড়া বানাচ্ছেন ? আর স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা) যে, মানব সন্তান ইমাম মাহদীকে خَلِيفَةُ اللهِ বললেন, তাহলে কি রাসূলুল্লাহ (সা) গোমড়া? (নাউযুবিল্লাহ!)
এই হলো তথাকথিত আহলে হাদীস! তাদের মতের সাথে একমত না হলে রাসূলুল্লাহ (সা)-কেও ছাড় দেয় না।
.
বিঃদ্রঃ মতিউর রহমান মাদানি সাহেব ১ টি আয়াত চেয়েছিলেন নিন ত, চেয়েছেন মাাাত্র একটি যেখানে خَلِيفَةُ اللهِ বলা হয়েছে। আমি একটি নয় দশটি দিবো, যদি তিনি ও তার অনুসারী একত্রিত হয়ে একটি আয়াত দেখাতে পারেন, যেখানে মানুষ আল্লাহর খলীফা বলাকে গোমড়াহী বলা হয়েছে।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।
0 Comments