Recent Tube

না বুঝে কুরআন পড়লে শয়তান সন্তুষ্ট না অসন্তুষ্টঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

------------------------------------------------------------- 
      'কুরআন না বুঝে পড়লে শয়তানের পরাণ জুড়ায় কি না বা এতে শয়তান সন্তুষ্ট না অসন্তুষ্ট'- এ বিষয়ে কুরআন হাদীসে স্পষ্ট কোন কথা নেই। তবে তিলাওয়াত ও শ্রবণ উভয় ক্ষেত্রেই কুরআনের অর্থ বুঝলেই কুরআনের হক যথাযথ আদায় করা সম্ভব। অধিকাংশ মুসলিমই না বুঝে পড়াকেই চূড়ান্ত ও পরিপূর্ণ ইবাদত বলে মনে। না বুঝে তিলাওয়াত করলে আমরা আল্লাহর কালাম মুখে আউরানোর জন্য কিছু সাওয়াব পাবো, ইনশাআল্লাহ। তবে কি না বুঝে শুধু মুখে আউরানোর জন্য অাল্লাহ তা'আলা কুরআন নাযিল করেছেন? কখনোই না। বরং আল্লাহ বারবার বলেছেন, কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য হলো যেন মানুষেরা তা বুঝে, চিন্তা গবেষণা করে এবং তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করে। যেমন- আল্লাহ তা'আলা শপথ করে বলেন:
ص ۚ وَالْقُرْآنِ ذِي الذِّكْرِ.
সোয়াদ; কসম উপদেশপূর্ণ কুরআনের। (সূরা সোয়াদঃ৩৮/০১)
.
كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ.
অনুরূপ ভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা গবেষণা কর। (সূরা বাকারাঃ২/২৬৬)
.
وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ.
আর আমি তো কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। অতএব কোন উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি? (সূরা কামারঃ৫৪/১৭, ২২, ৩২, ৪০)
.
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন:
كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ.
আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা সোয়াদঃ৩৮/২৯)
.
যারা আল্লাহর বাণী কুরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ করে না তাদের বিষয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেন:
فَمَا لَهُمْ عَنِ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِينَ.
আর তাদের কী হয়েছে যে, তারা উপদেশ বাণী (কুরআন) হতে বিমুখ? (সূরা মুদ্দাসসিরঃ৭৪/৪৯)
.
যারা কুরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে না, তাদের ধমক দিয়ে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, 
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا.
তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা- ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ? (সূরা মুহাম্মাদঃ৪৭/২৪)
.
আল্লাহর কিতাব পাঠ করাকে কুরআনুল কারীমে 'তিলাওয়াত' বলা হয়েছে। কারণ তিলাওয়াত অর্থ পিছে চলা, অনুসরণ করা। যেমন আল্লাহ বলেন, ﻭَﺍﻟْﻘَﻤَﺮِ ﺇِﺫَﺍ ﺗَﻠَﺎﻫَﺎ কসম চাঁদের, যখন তা সূর্যের অনুসারী হয়। (সূরা শামসঃ৯১/২) শুধুমাত্র না বুঝে পাঠ করলে তিলাওয়াত হয় না। তিলাওয়াত মানে পাঠের সময় মন পঠিত বিষয়ের পিছে চলবে, এর তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করে জীবনটাও তার পিছে চলবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ أُولَٰئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ ۗ وَمَنْ يَكْفُرْ بِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ.
যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি, তারা তা যথার্থভাবে তিলাওয়াত করে, তারাই তার প্রতি ঈমান আনে। আর যে তা অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (বাকারাঃ২/১২১)
.
বুঝে পাঠের নামই 'যথার্থভাবে তিলাওয়াত'। আর যারা এরূপ তিলাওয়াত করেন তারাই প্রকৃত ঈমানদার। কুরআনের পাশাপাশি বিভিন্ন হাদীসেও কুরআন তিলাওয়াতের সাথে সাথে অর্থ চিন্তা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি কোন কোন হাদীসে বলা হয়েছে যারা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত পাঠ করবে কিন্তু অর্থ নিয়ে চিন্তা করবে না তাদের জন্য শাস্তি রয়েছে। (তাফসীরে কুরতুবী ২/২০১; তাফসীরে ইবনু কাসীর ১/৪৪২; খুতবাতুল ইসলাম, পৃঃ ২৮৩)
.
তাই আসুন, আমরা সকলেই কুরআনের তালবে ইলম (শিক্ষার্থী) হয়ে যাই। কুরআনের অর্থ বুঝে তিলাওয়াত করার চেষ্টা করি। তাহলেই আমরা কুরআনের যথাযথভাবে হক আদায় করতে পারব এবং এতে করে আমাদের দেহ মন আল্লাহর বিধানের প্রতি, উপদেশের প্রতি ঝুকে পড়বে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُتَشَابِهًا مَثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ.
আল্লাহ সর্বোত্তম বাণী (কুরআনকে) সুসমঞ্জস এবং বারংবার আবৃত্তিকৃত গ্রন্থ হিসাবে নাযিল করেছেন। যারা তাদের রবকে ভয় করে, এই গ্রন্থ (পাঠ বা শ্রবণ করা) থেকে তাদের শরীর রোমাঞ্চিত ও শিহরিত হয়। অতঃপর তাদের দেহ ও মন প্রশান্ত হয়ে আল্লাহর উপদেশের প্রতি ঝুকে পড়ে। (সূরা যুমারঃ৩৯/২৩)
কুরআনের অর্থ হৃদয়ে প্রবেশ করে হৃদয়কে নাড়া না দিলে শরীর কিভাবে শিহরিত হবে? মন কিভাবে প্রশান্ত হয়ে অাল্লাহর উপদেশের প্রতি ঝুকে পড়বে?  
.
কুরআনকে মানুষের হেদায়াত এবং সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারী বলা হয়েছে। (সূরা বাকারাঃ২/১৮৫) কুরআনের এর অর্থ বুঝার  মধ্যেই রয়েছে সৎ পথের নির্দশন ও হেদায়াত। আমরা কুরআনের ভাষায় পিতামাতা, এতিম, প্রতিবেশী, দরিদ্র ও অন্যদের অধিকারের কথা, হক ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ, সৎ কাজে সহযোগীতা ও আদেশ করা, অসৎ কাজে বাধা প্রদান করা, জুলুম, মিথ্যা, ওজনে কম দেওয়া, ফাঁকি দেওয়া, গীবত করা, উপহাস করা, অহংকার করা ও অন্যান্য পাপের ভয়াবহতা ইত্যাদি সবই শুনছি কিন্তু কিছুই বুঝছি না। ফলে নামায থেকে বেরিয়ে আমরা সকল পাপ কাজই করছি। ফজর বা যোহরের পরে নিজে কুরআন পাঠ করলাম, শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শক্র (সূরা বাকারাঃ২/১৬৮, আনআমঃ৬/১৪২, ইউসুফঃ১২/৫); শয়তান মানুষকে পাপ ও অশ্লীল কাজের আদেশ দেয় (সূরা নূরঃ২৪/২১); শয়তান পাপ কাজকে সুন্দর করে দেখায় (সূরা আনআমঃ৬/৪৩); শয়তানের অনুসারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে (সূরা নিসাঃ৪/১১৯) এবং জাহান্নামে যাবে (সূরা সোয়াদঃ৩৮/৮৪ ও ৮৫)। এরপর প্রগাঢ় ভক্তিতে কুরআনে চুমু দিয়ে কর্মস্থলে যেয়ে বিভিন্ন পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে শয়তানের অনুসরণ করলাম! (ইন্নাহলিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!!)
এমনতাবস্থায় যদি শয়তানের প্রাণ না জুড়ায়, শয়তান সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে কি আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন? 
.
আনাস ইবনু মালিক হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: 
طلب العلم فريضة علي كل مسلم.
জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফারজ। (সুনান ইবনু মাজাহ, হাঃ ২২৪; বায়হাকী, ১৫৪৪; মিশকাত হাঃ ২১৮; সহীহুল জামি, হাঃ ৩৯১৩; তালীকুল রগীব ১/৫৪; সহীহ- মুশকিলাতুল ফিকার হাঃ ৮৬, ফিকহুস সীরাহ ৭)
.
এই ফরজ জ্ঞান অর্জনের কুরআন জানা ও বুঝা আমাদের জন্য আবশ্যক। এরপরও যারা কুরআন বুঝে না পড়ার জন্য শয়তানের হয়ে দালালী করে তাদের শানে আমি সেই কথায় বলব, যেটা অাল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا.
মূলত শয়তান তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে চায়। (সূরা নিসাঃ৪/৬০)
.
رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ.
হে আমার রব! শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই’। (সূরা মু'মিনুনঃ২৩/৯৭)।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ ও মাওলানা।       

Post a Comment

0 Comments