Recent Tube

যুলহাজ্জ মাসের নেক আমল: গুরুত্ব ও ফজিলতঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

   যুলহাজ্জ মাসের নেক আমল: গুরুত্ব ও ফজিলতঃ
----------------------------///////----------------------------
     আরবী ক্যালেন্ডারের সর্বশেষ মাস হলো যুলহাজ্জ। এ মাসেই হাজীগণ হজ্জ আদায় করেন। যে সকল মুসলিম হজ্জ করতে পারেন না, তাদের জন্যও যুলহাজ্জ মাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসের দশ তারিখে আমরা ঈদুল আযহা ও কুরবানি আদায় করি। এছাড়াও এ মাসের ১ম ১০ দিন মুমিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতের দিন, যে বিষয়ে আমাদের অনেকেই সতেচন নই। সহীহ বুখারী সহ বিভিন্ন গ্রন্থে সংকলিত হাদীসে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : 
«مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيهَا أَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ يَعْنِي الْعَشْرَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ قَالَ وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْءٍ».
"আল্লাহর নিকট যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের সৎকাজের চাইতে অধিক পছন্দনীয় সৎকাজ আর নেই। সহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ্! আল্লাহর পথে জিহাদও নয় কি? তিনি বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়, কিন্তু যে ব্যক্তি তার জান-মালসহ আল্লাহর পথে বের হয়ে তার কোন কিছু নিয়ে আর ফিরে আসে না (তার মর্যাদা অনেক)।" (সহীহ বুখারী হাঃ ৯৬৯; সুনান তিরমিযী হাঃ ৭৫৭; সুনান আবূ দাউদ হাঃ ২৪৩৮; সুনান ইবনু মাজাহ হাঃ ১৭২৭; মুসনাদে আহমাদ হাঃ ১৯৬৯, ৩১২৯, সহীহ ইবনু খুযাইমা ৪/২৭৩; দারেমী হাঃ১৭৭৩; ইরওয়াহ হাঃ ৯৫৩)
.
  অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : 
 «مَا مِنْ أَيَّامِ الدُّنْيَا أَيَّامٌ أَحَبُّ إِلَى اللهِ سُبْحَانَهُ أَنْ يُتَعَبَّدَ لَهُ فِيهَا مِنْ أَيَّامِ الْعَشْرِ وَإِنَّ صِيَامَ يَوْمٍ فِيهَا لَيَعْدِلُ صِيَامَ سَنَةٍ وَلَيْلَةٍ فِيهَا بِلَيْلَةِ الْقَدْرِ».
"যুলহাজ্জেরর প্রথম দশ দিনের ইবাদতের চেয়ে দুনিয়ার অন্য কোন দিনের ইবাদত মহান আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় নয়। এই ক’দিনের মধ্যকার এক এক দিনের রোযা এক বছর রোযা রাখার সমান এবং তার এক একটি রাত কদরের রাতের সমান।" (সুনান তিরমিযী হাঃ ৭৫৮; সুনান ইবনু মাজাহ হাঃ ১৭২৮ , মিশকাত হাঃ ১৪৭১)
.
    সারা বৎসরই রাতে নফল নামাজ ও দিবসে নফল সিয়াম পালনের জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে; বিশেষত যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশকে। বিশেষ করে যুলহাজ্জ মাসের ৯ তারিখে যেদিন হাজীগণ আরাফার মাঠে অবস্থান করেন সে দিন যারা হজ্জে যান না তাদের কে সিয়াম পালন করতে বিশেষভাবে উৎসাহ দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : 
«صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالَّتِي بَعْدَهُ».
"আমি আল্লাহর নিকট আরাফাত দিবসের রোযার এই সওয়াব আশা করি যে, তিনি তাঁর বিনিময়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।" (সহীহ মুসলিম হহাঃ ১১৬২; সুনান তিরমিযী হাঃ ৭৪৯; সুনান ইবনু মাজাহ হাঃ ১৭৩০; মুসনাদে আহমাদ হাঃ ২২০২৪ , ইরওয়াহ হাঃ ৯৫২)

       যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমলের ফজিলত বর্ণনা করতে রাসূলুল্লাহ (সা) আরো বলেন,
أفضل أيام الدنيا العشر، يعني عشر ذي الحجة.
"দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ফজিলতের দিন হলো যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন।" (মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/২৫৩, ৪/১৭; সহীহুত তারগীব ২/১৫)
.
     সুতরাং যুলহাজ্জ মাসের এ দশ দিন মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতের দিন। এ দিনগুলোকে অবহেলায় নষ্ট করার চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছুই হতে পারে না। প্রত্যেক মুসলিমের চেষ্টা করা দরকার ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি এ দিনগুলোতে বেশি বেশি নফল আমল করা। জিকির, দুয়া, দরুদ ইসতিগফার, নফল নামাজ ও রোজা, কুরআন তিলাওয়াত ও গবেষণা, দান, সাদকা, পরোপকার, মানুষকে সাহায্য করা, সৃষ্টির সেবা করা, রোগী কে দেখতে যাওয়া, সত্য সাক্ষ্য দেওয়া, মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা, আল্লাহর দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করার উদ্দেশ্য পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও চেষ্টা সংগ্রাম করা ইত্যাদি সবই নেক আমল। আমাদের সকলের উচিত এ দিনগুলিতে এ সকল নেক আমলের মধ্য থেকে যতদূর সম্ভব বেশি বেশি করে পালন করা। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। (আমিন)
-------------------------///////---------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ ও মাওলান।      

Post a Comment

0 Comments