Recent Tube

কিতাব–সুন্নাহর অনুসরণের অর্থ বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের একটিভুলঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

        কিতাব–সুন্নাহর অনুসরণের অর্থ বোঝার          ক্ষেত্রে আমাদের একটি
         ভুলঃ

         শায়খ আবদুল্লাহ ইবনে জইফুল্লাহ আররুহাইলী যাকে হিজাযের ভালো ও বড় আলিমদের মাঝে গণ্য করা হয়। তিনি ফকীহও এবং মুহাদ্দিসও। তাঁর একটি সারগর্ভ ও দলিল সম্বলিত কিতাবের নাম- ﺩﻋﻮﺓ ﺇﻟﻰ
ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻓﻲ ﺗﻄﺒﻴﻖ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻣﻨﻬﺠﺎ ﻭﺃﺳﻠﻮﺑﺎ
অত্যন্ত দরদের সাথে পুস্তিকাটি লেখা হয়েছে। তিনি তাঁর এই কিতাবে বলেনঃ

এ যুগের একটি ভুল, যা কিতাব ও সুন্নাহর দিকে দাওয়াত দিতে গিয়ে আমরা করে থাকি তা হচ্ছে ইত্তিবার নামে স্থবিরতা। কিতাব ও সুন্নাহ যে অবশ্যঅনুসরণীয় এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এরজন্য তো জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাগবে এবং কিতাব ও সুন্নাহ সঠিকভাবে বুঝতে হবে। আজ আমাদের ভুল এখানেই যে, আমরা ইত্তিবা ও অনুসরণের নামে জুমুদ ও স্থবিরতার আশ্রয় নিয়েছি। সঠিকভাবে বোঝাছাড়াই নিজের বুঝের দিকে দাওয়াত দিচ্ছি।

★ কারো কারো প্রবণতা এই যে, কোনো কিছুকে হারাম বলার আগে পর্যাপ্ত চিন্তা-ভাবনা করে না।

★ কেউ শরীয়তের বিধান বোঝার ক্ষেত্রে কাঠিন্য ও কড়াকড়ির দিককে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

★ কেউ ইখতিলাফী মাসায়েলের ক্ষেত্রে সর্বদা একটি মতই স্বীকার করে এবং অন্যসব মত প্রত্যাখ্যানকরে।

★ কেউ মুস্তাহাব বিষয়ের সাথে ওয়াজিবের মতো আচরণ করে।
.
★ কেউ মনে করে, সকল বিষয়ে সুন্নাহ ও পদ্ধতি কেবল একটিই হয়।

এভাবে একটি প্রশস্ত ক্ষেত্রকেতারা সংকীর্ণ বানিয়ে ফেলে। অথচ কোনো কোনো বিষয়ে সুন্নাহর দুটি পন্থা থাকে (অর্থাৎ উভয় পন্থাসুন্নাহ সম্মত হয়)। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুধু মূল বিষয়টি সুন্নাহ হয়ে থাকে, বিশেষ কেনো পন্থা নয়।(পৃ. ৫০-৫১)

তিনি আরো বলেনঃ
এর দ্বারা মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এ সকল বিষয়ের পিছনে পড়ে উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির বিষয়টি ভুলে যাওয়া হয়েছে; বরং শাখাগত মাসাইলের পিছনে পড়ে কিছু মৌলিক বিষয়ও চিন্তা থেকে অন্তর্হিত হয়েছে।

★ এসব বিষয়ে বাহাস বিতর্কের পন্থা অনুসরণ করে সময়ের অপচয় করা হয়েছে। ঈমানী মহববত খতম করা হয়েছে। শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়েছে, যা কোনো মুসলিম তার মুসলিম ভাইয়ের প্রতিপোষণ করতে পারে না।

★ (যে মতপার্থক্য শরীয়তসম্মত ছিল তাতে মতপার্থক্যের নীতি ও বিধান ত্যাগ করে ভুল পন্থা অনুসরণ করার ফলে) মানুষের মাঝে অন্যায় পক্ষপাত ও দলীয় চেতনা সৃষ্টি হয়েছে, যার অনিবার্য ফল হচ্ছে, মূর্খতা ও অবিচার।

★ এই কর্মপদ্ধতির কারণে ছোট ছোট তালিবুল ইলমও নিদ্বির্ধায় ইজতিহাদ ও ফতোয়ার ময়দানে প্রবেশ করেছে, যা বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা ছাড়া নতুন কোনো সুফল দিতে সক্ষম হয়নি।

★ এই ভুল কর্মপন্থার কারণে শাখাগত বিষয়গুলোকে বড় বানিয়ে পেশ করা, সুন্নত মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা এবং এমন সব বিষয় পয়দা হচ্ছে, যা ইসলামে বৈধ নয়। সুন্নত মুস্তাহাবকে না তার অবস্থান থেকে উপরে তোলা যাবে, না নীচে নামানো যাবে। দ্বীনের মাঝে কোনো প্রকারের
প্রান্তিকতাই বৈধ নয়। কর্মপন্থার ভুলে দ্বীনের বিষয়ে বিভেদ ও উম্মাহর মাঝে বিবাদ সৃষ্টি হয়েছে, যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

আল্লাহ তাআলার আয়াতসমূহই সাক্ষ্য দেয়, কত কঠিনভাবে তিনি তা নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সীরাত, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনের সীরাতও এ বিষয়ে সাক্ষী।

সত্যিকারের সংস্কারক তো তিনিই, যার সংস্কার কর্মে ধ্বংসের উপাদান থাকে না।- (পৃ.৪৮-৪৯)
--------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।         

Post a Comment

0 Comments