Recent Tube

মরুভুমির হাতছানি -১৭ ৷ --মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরী,

                                                   মরুভুমির হাতছানি, 
                                                              পর্ব-১৭;

    রহস্যে ঘেরা ওয়াদিয়ে জ্বীন বা জ্বীন    
    উপত্যাকা  (Valley of ghosts)

      মদীনা থেকে উত্তর-পশ্চিমদিকে ৪৫ কিলোমিটার দূরের এই পাহাড়টাকে জ্বীনেরা নিয়ন্ত্রন করে কিনা জানিনা তবুও এটির নাম জ্বীনের পাহাড় । এখানে স্টার্ট ছাড়াই গাড়ী চলে । সৌদী সরকার এই রাস্তাটি নির্মাণ করতে গিয়ে বেশীদূর অগ্রসর হতে পারেনি । শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় । অতঃপর রাস্তাটিকে গোল বৃত্তের মত ঘুরিয়ে নিয়ে অাসে । এরপরে চোখ যতদূর যায় শুধু পাহাড় অার পাহাড় । 
          যাওয়ার সময় ঐ এলাকায় প্রবেশের পর অাপনার গাড়ী যদি ৬০ কিলোমিটার বেগে এগুতে চায় তবুও অপনি গাড়ীর গতিবেগ পাবেন ২০ কিলোমিটার।। কোন এক অদৃশ্য শক্তি অাপনার গাড়ীকে টেনে ধরবে । ফিরে অাসার সময় নিউট্রালেই চলবে ৫০/৬০/৭০ কিলোমিটার গতিবেগে । 
সব মিলিয়ে বলা যায় এখানে এমন এক অলৌকিক শক্তি কাজ করছে যাকে দেখা যায়না,ধরা যায়না,ছোঁয়া যায়না । 
     পাহাড়টিকে কেউ বলে জ্বীনের পাহাড় ।  কেউ বলে যাদুর পাহাড় । 
স্থানীয় আরবরা অবশ্য এই পাহাড়কে না ডাকেন ওয়াদিয়ে জ্বীন বা জ্বীনের পাহাড় নামে অার না চেনেন  যাদুর পাহাড় নামে । তাদের কাছে এই পাহাড়ের নাম ওয়াদি আল আবইয়াদ বা ওয়াদি আল বায়দা  । 
পাহাড়টিকে দেখতেও অারবের অন্যান্য পাহাড়ের মত এতটা শক্ত  পাথুরে বলে মনে হয়না । পাহাড়ের গাঁয়ে লেগে অাছে ঝুরিঝুরি মাটি । অনেকটা এখনই যেন ভেঙ্গে পড়বে এমন ভাব । 

        জ্বিনের পাহাড়কে যে যেই নামে ডাকুক না কেন সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে এটি এক রহস্যে ঘেরা জায়গা ।  যেখানে  প্রতিনিয়তই যান্ত্রিকতাকে ঠেলে দেয় মদীনার দিকে । 
কি অাছে তাহলে সেখানে? 

   অনেকেই ধারণা করেন, জায়গাটিতে প্রচুর চুম্বকজাতীয় পদার্থ রয়েছে বিধায় এমন ঘটনা ঘটে।

    তথ্যসুত্র বলছে, ২০১০ সালের দিকে সৌদি সরকার ওয়াদি আল বায়দায় একটি সড়ক তৈরির পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তাতে ঘটে বিপত্তি। ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত কাজ করার পর হিতে বিপরীত। হঠাৎ দেখা যায়, রাস্তা নির্মাণের যন্ত্রপাতি ধীরে ধীরে মদিনা শহরের দিকে একা একাই চলে যাচ্ছে।

   অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যেন কোন এক অলৌকিক মহাশক্তির নির্দেশে সবকিছু গড়াচ্ছে অপেক্ষাকৃত উঁচুর দিকে । 

   জায়গাটি ভ্রমণে অামার সাথে ছিলেন চ্যানেল ৭১ এর সিলেট বিভাগের ব্যুরো চীফ জনাব ইকবাল মাহমুদ এবং সিলেট রসময় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব অাব্দুজ জহীর । 
অামরা গাড়ী থেকে নেমে অনেকক্ষণ হাঁটাহাটি করলাম কোন রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারলামনা । হাতে থাকা পানির বোতলটি ছেড়ে দিলাম । ওমা!  একি? পানির বোতলও যাচ্ছে উল্টোপথে ! 
  যারা মনে করেন চুম্বকীয় অাকর্ষণের ফলে উল্টোপথে চলছে সবকিছু ! সেটারও কোন ভিত্তি অাছে বলে মনে হলোনা । যদি তাই হবে তাহলে পানির বোতলকে উল্টোদিকে টানে কিসে? । 
শুনেছি এই পাহাড়ের ওপর দিয়ে নাকি কোন প্লেনও চলতে পারে না! 
তবে কী অাসলেও এগুলো দৈত্য-দানবের কারসাজি?। 
স্থানীয় অারবদের মাঝেও তা এক অপার রহস্যে ঘেরা । 
     এ নিয়ে রয়েছে অনেক লোককথা ।  কেউ কেউ মনে করেন এই অতিপ্রাকৃত বিষয়টিতে জ্বীন-ভূতের কোন হাত নেই । বরং এটি ''ওয়াদিয়ে মুক্বাদ্দাসা ''। এখানে হুজুর (স) জ্বীন জাতির কাছে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছিলেন । নবীজি উঠেছিলেন পাহাড়ের উপরেও । 
     এই পাহাড়ে উঠে নবী করিম (সা.) জ্বীনদের ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন। তখন নাকি কিছু জ্বীন দুষ্টুমি করে পালিয়ে যেতে  চেয়েছিল । পরে বয়স্ক জ্বিনেরা রাস্তা উল্টে দিয়ে তাদের পালানো রোধ করে ।   তাই এখানে সবকিছু উল্টো চলে । 

      তবে এটি শুধুই লোককথা ! যা হাদীসসম্মত নয় ।  কারণ রাসূল (স) তায়েফ থেকে ফেরার পথে একদল জ্বীনকে মক্বায় দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছিলেন ।  সাথে ছিলেন হযরত অাব্দুল্লাহ ইবনে অাব্বাস (রা) ।  যেখানে অাজও মসজিদে জ্বীন রয়েছে । 

 ৷ মহান অাল্লাহর অসংখ্য নিদর্শণাবলীর ভেতরে এমনিতেই  পাহাড়-পর্বত এক বিশাল নিদর্শন । তার মধ্যে মদীনার এই পাহাড়টি বিশেষভাবে রহস্যাবৃত । কোন একদিন উন্নত গবেষণা হয়তো এর রহস্য উদ্ধার করবে ।  বলে দেবে  কি অাছে সেখানে ।
-------------------------------------------
লেখকঃ কলামিস্ট ও প্রবন্ধ লেখক।        

Post a Comment

0 Comments