Recent Tube

ইসলামের দৃষ্টিতে হাট-বাজারে গিয়ে করনীয় এবং বর্জনীয় শামীম আজাদ


 ইসলামের দৃষ্টিতে হাট-বাজারে গিয়ে করনীয় এবং বর্জনীয়। 

    আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা হলো হাট-বাজার। এটি এমন একটি জায়গা, যা মানুষকে আল্লাহর জিকির ও ইবাদত থেকে ভুলিয়ে রাখে। মানুষের অধিক দুনিয়াপ্রীতির কারণে হাট-বাজারগুলো হয়ে উঠেছে ধোঁকা-প্রবঞ্চনা, মিথ্যাচার, বিশ্বাসঘাতকতা প্রভৃতি পাপাচারের স্থান; পাশাপাশি পর্দার লঙ্ঘন তো আছেই। তথাপি জীবনের তাগিদে মানুষকে হাট-বাজারে যেতে হবে। কেনাবেচাও করতে হবে।

        কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা কেনাকাটাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আল্লাহ ও তাঁর হুকুমকে ভুলে গেলে চলবে না। জীবনের তাগিদে জীবিকা অর্জনও মুমিনের জন্য ইবাদত। তবে তা হতে হবে আল্লাহর দেওয়া হুকুম এবং রাসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী। ইসলামে হাট-বাজারে যাওয়ার কিছু আদব রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে প্রথম শর্ত হলো হালাল ও হারাম পণ্য সম্পর্কে ধারণা রাখা। এটি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই কর্তব্য।

হারাম-হালালের জ্ঞান থাকা, 

   একজন মুমিনের জন্য পণ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে পণ্যটি হালাল কি না তা জেনে নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে যাঁরা অমুসলিম দেশে থাকেন, তাঁদের জন্য এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য। বিশেষ করে কোনো প্রাণীর গোশত কেনার ক্ষেত্রে প্রাণীটি হালাল পন্থায় জবাই করা হয়েছে কি না। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, 
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللّهِ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلاَ عَادٍ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ
নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।  
সূরা বাকারাঃ ১৭৩

     অন্যান্য খাবারের ক্ষেত্রে তাতে হারাম কিছু মিশ্রিত আছে কি না। পানীয় ও সুগন্ধির ক্ষেত্রে তাতে কোনো হারাম অ্যালকোহল আছে কি না ইত্যাদি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।

ِ، قَالَ قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ لاَ يَبِعْ فِي سُوقِنَا إِلاَّ مَنْ قَدْ تَفَقَّهَ فِي الدِّينِ
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেছেন, দ্বীন সম্পর্কে যার সম্যক জ্ঞান আছে, সে ব্যতীত আর কেউ যেন আমাদের বাজারে লেনদেন না করে। 
তিরমিজি ৪৮৭

হাট-বাজারে যাওয়ার আগে দোয়া পড়া,

حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ مُعَاذٍ الضَّرِيرُ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، مَوْلَى آلِ الزُّبَيْرِ عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ مَنْ قَالَ حِينَ يَدْخُلُ السُّوقَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ كُلُّهُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ - كَتَبَ اللَّهُ لَهُ أَلْفَ أَلْفِ حَسَنَةٍ وَمَحَا عَنْهُ أَلْفَ أَلْفِ سَيِّئَةٍ وَبَنَى لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ ‏"‏ ‏.‏

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

    তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশকালে বলেঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু মুলকু ওয়ালাহুল হামদু য়ুহ্‌য়ী ওয়া য়ুমীতু ওয়া হুয়া হায়্যুন লা ইয়ামূতু বিয়াদিহিল খাইর কুল্লুহু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন কাদীর” (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নাই, রাজত্ব তাঁরই এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। তিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। তিনি চিরঞ্জীব, কখনো মরবেন না, তাঁর হাতেই সমস্ত কল্যাণ নিহিত এবং তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান), আল্লাহ তার আমলনামায় এক লক্ষ পুণ্য লিপিবদ্ধ করেন, তাঁর এক লক্ষ গুনাহ মাফ করেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরী করেন। 
তিরমিযী ৩৪২৮, ৩৪২৯, আহমাদ ৩২৯, দারেমী ২৬৯২, তাখরীজুল মুখতার ১৭৬-১৭৮, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৪, তাখরীজু কালিমুত তায়্যিব ২২৯, সুনানে ইবনে মাজাহ ২২৩৫

একে অপরকে সালাম দেওয়া,

     সাহাবায়ে কেরামের কেউ কেউ শুধু সালামের ফজিলত অর্জনের উদ্দেশ্যেই বাজারে যেতেন। 

و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ إِسْحَقَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ أَنَّ الطُّفَيْلَ بْنَ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ أَخْبَرَهُ

أَنَّهُ كَانَ يَأْتِي عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ فَيَغْدُو مَعَهُ إِلَى السُّوقِ قَالَ فَإِذَا غَدَوْنَا إِلَى السُّوقِ لَمْ يَمُرَّ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ عَلَى سَقَاطٍ وَلَا صَاحِبِ بِيعَةٍ وَلَا مِسْكِينٍ وَلَا أَحَدٍ إِلَّا سَلَّمَ عَلَيْهِ قَالَ الطُّفَيْلُ فَجِئْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ يَوْمًا فَاسْتَتْبَعَنِي إِلَى السُّوقِ فَقُلْتُ لَهُ وَمَا تَصْنَعُ فِي السُّوقِ وَأَنْتَ لَا تَقِفُ عَلَى الْبَيِّعِ وَلَا تَسْأَلُ عَنْ السِّلَعِ وَلَا تَسُومُ بِهَا وَلَا تَجْلِسُ فِي مَجَالِسِ السُّوقِ قَالَ وَأَقُولُ اجْلِسْ بِنَا هَاهُنَا نَتَحَدَّثُ

قَالَ فَقَالَ لِي عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ يَا أَبَا بَطْنٍ وَكَانَ الطُّفَيْلُ ذَا بَطْنٍ إِنَّمَا نَغْدُو مِنْ أَجْلِ السَّلَامِ نُسَلِّمُ عَلَى مَنْ لَقِيَنَا

  ইসহাক ইব্নু আবদুল্লাহ্ ইব্নু আবূ তালহা (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:,

      তুফাইল ইব্নু উবাই ইব্নু কা‘ব (রহঃ) সকালে সকালে আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ)-এর নিকট আসতেন এবং তাঁর সঙ্গে বাজারে গমন করতেন। তুফাইল (রাঃ) বলেন, আমরা বাজারে পৌঁছালে ইব্নু উমার (রাঃ) যে কোন মামুলী জিনিস বিক্রেতাকে যেকোন দোকানদারকে, যেকোন মিসকীনকে, এমন কি প্রত্যেককে সালাম দিতেন। তুফাইল বলেন, একদা আমি আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। পরে তিনি আমাকে বাজারে নিয়ে যেতে চাইলেন। আমি বললাম, আপনি বাজারে যেয়ে কি করবেন? বেচাকেনার নিকটে আপনি যান না, কোন বস্তু সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞেস করেন না, কোন জিনিসের দামও জিজ্ঞেস করেন না কিংবা বাজারের কোন মজলিসেও বসেন না। এর চাইতে এখানে বসে থাকুন এবং আমরা পরস্পর আলাপ-আলোচনা করি। অতঃপর আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ) বললেন  হে ভুঁড়িওয়ালা! (তুফাইলের পেট মোটা ছিল বলে এই রকম বললেন) আমি সালাম করবার জন্যই বাজারে যাই, যার সাথে সাক্ষাৎ হয় তাকে সালাম করি। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
মুয়াত্তা ইমাম মালিক ১৭৩৫

 বাজারে পৌঁছার পূর্বে শহরের বাইরে গিয়ে পণ্যদ্রব্য কেনা নিষেধ, 

حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، أَخْبَرَنَا سُلَيْمَانُ التَّيْمِيُّ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ نَهَى عَنْ تَلَقِّي الْبُيُوعِ ‏.‏ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ وَابْنِ عَبَّاسٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ وَأَبِي سَعِيدٍ وَابْنِ عُمَرَ وَرَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏.‏

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

      পণ্যদ্রব্য আমদানী করে আনা কাফিলার দিকে এগিয়ে গিয়ে পণ্য ক্রয় করতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন।
জামে' আত-তিরমিজি ১২২০

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَى أَنْ يُتَلَقَّى الْجَلَبُ فَإِنْ تَلَقَّاهُ إِنْسَانٌ فَابْتَاعَهُ فَصَاحِبُ السِّلْعَةِ فِيهَا بِالْخِيَارِ إِذَا وَرَدَ السُّوقَ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ حَدِيثِ أَيُّوبَ وَحَدِيثُ ابْنِ مَسْعُودٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَقَدْ كَرِهَ قَوْمٌ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ تَلَقِّيَ الْبُيُوعِ وَهُوَ ضَرْبٌ مِنَ الْخَدِيعَةِ ‏.‏ وَهُوَ قَوْلُ الشَّافِعِيِّ وَغَيْرِهِ مِنْ أَصْحَابِنَا ‏.‏

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

     বাজারে পণ্যদ্রব্য নিয়ে আসা লোকের সামনে এগিয়ে গিয়ে তাদের নিকট হতে পণ্য ক্রয় করতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারণ করেছেন। (ব্যবসায়ীদের) কোন ব্যক্তি যদি এগিয়ে গিয়ে তার পণ্যদ্রব্য কিনে, তবে বাজারে    পৌঁছার পর বিক্রেতা বিক্রয় বাতিল করার স্বাধীনতা পাবে।
জামে' আত-তিরমিজি ১২২১

হাট-বাজারে হৈ-হুল্লোড় না করা,

عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، قَالَ لَقِيتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ ـ رضى الله عنهما ـ قُلْتُ أَخْبِرْنِي عَنْ صِفَةِ، رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي التَّوْرَاةِ‏.‏ قَالَ أَجَلْ، وَاللَّهِ إِنَّهُ لَمَوْصُوفٌ فِي التَّوْرَاةِ بِبَعْضِ صِفَتِهِ فِي الْقُرْآنِ يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا، وَحِرْزًا لِلأُمِّيِّينَ، أَنْتَ عَبْدِي وَرَسُولِي سَمَّيْتُكَ الْمُتَوَكِّلَ، لَيْسَ بِفَظٍّ وَلاَ غَلِيظٍ وَلاَ سَخَّابٍ فِي الأَسْوَاقِ، وَلاَ يَدْفَعُ بِالسَّيِّئَةِ السَّيِّئَةَ وَلَكِنْ يَعْفُو وَيَغْفِرُ، وَلَنْ يَقْبِضَهُ اللَّهُ حَتَّى يُقِيمَ بِهِ الْمِلَّةَ الْعَوْجَاءَ بِأَنْ يَقُولُوا لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ‏.‏ وَيَفْتَحُ بِهَا أَعْيُنًا عُمْيًا، وَآذَانًا صُمًّا، وَقُلُوبًا غُلْفًا‏.‏ تَابَعَهُ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ أَبِي سَلَمَةَ عَنْ هِلاَلٍ‏.‏ وَقَالَ سَعِيدٌ عَنْ هِلاَلٍ عَنْ عَطَاءٍ عَنِ ابْنِ سَلاَمٍ‏.‏ غُلْفٌ كُلُّ شَىْءٍ فِي غِلاَفٍ، سَيْفٌ أَغْلَفُ، وَقَوْسٌ غَلْفَاءُ، وَرَجُلٌ أَغْلَفُ إِذَا لَمْ يَكُنْ مَخْتُونًا‏.‏

‘আতা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

    তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ)-কে বললাম, আপনি আমাদের কাছে তাওরাতে বর্ণিত আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গুণাবলী বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, আচ্ছা। আল্লাহর কসম! কুরআনে বর্ণিত তাঁর কিছু গুণাবলী তাওরাতেও উল্লেখ করা হয়েছেঃ “হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে প্রেরণ করেছি” এবং উম্মীদের রক্ষক হিসাবেও। আপনি আমার বান্দা ও আমার রসূল। আমি আপনার নাম মুতাওয়াক্কিল (আল্লাহর উপর ভরসাকারী) রেখেছি। তিনি বাজারে কঠোর রূঢ় ও নির্দয় স্বভাবের ছিলেন না। তিনি মন্দর প্রতিশোধ মন্দ দ্বারা নিতেন না বরং মাফ করে দিতেন, ক্ষমা করে দিতেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে ততক্ষণ মৃত্যু দিবেন না যতক্ষণ না তাঁর দ্বারা বিকৃত মিল্লাতকে ঠিক পথে আনেন অর্থাৎ যতক্ষণ না তারা (আরববাসীরা) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর ঘোষনা দিবে। আর এ কালিমার মাধ্যমে অন্ধ-চক্ষু, বধির-কর্ণ ও আচ্ছাদিত হৃদয় খুলে যাবে। 
বুখারী ২১২৫

হালাল পণ্য কেনাবেচা করা,

 سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَوَاللَّهِ لَا أَسْمَعُ بَعْدَهُ أَحَدًا، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " إِنَّ الْحَلَالَ بَيِّنٌ، وَإِنَّ الْحَرَامَ بَيِّنٌ، وَإِنَّ بَيْنَ ذَلِكَ أُمُورًا مُشْتَبِهَاتٍ - وَرُبَّمَا قَالَ: وَإِنَّ بَيْنَ ذَلِكَ أُمُورًا مُشْتَبِهَةً - "، قَالَ: " وَسَأَضْرِبُ لَكُمْ فِي ذَلِكَ مَثَلًا إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَمَى حِمًى، وَإِنَّ حِمَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مَا حَرَّمَ، وَإِنَّهُ مَنْ يَرْتَعُ حَوْلَ الْحِمَى يُوشِكُ أَنْ يُخَالِطَ الْحِمَى، - وَرُبَّمَا قَالَ: إِنَّهُ مَنْ يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى يُوشِكُ أَنْ يُرْتِعَ فِيهِ - وَإِنَّ مَنْ يُخَالِطُ الرِّيبَةَ يُوشِكُ أَنْ يَجْسُرَ "

নু'মান ইব্ন বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর কসম! তাঁর পর আর কাঊকে বলতে শুনবনা যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, আর উভয়ের মধ্যে অনেক সন্দেহজনক বিষয় রয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "এ ব্যাপারে আমি তোমাদের সামনে একটি উদাহরণ পেশ করছিঃ নিশ্চয় আল্লাহ এক চারণভূমি সংরক্ষন করেছেন, আল্লাহর চারন ভূমি হলো, যা তিনি হারাম করেছেন। আর যে ব্যক্তি সেই চারণ ভূমির আশে পাশে পশু চরায়, হয়তো তার পশু তাতে ঢুকে পড়বে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত কাজে লিপ্ত হবে, অচিরেই তার (হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার) দুঃসাহস দেখা দেবে।
বুখারী ২০৫১, মুসলিম ৩৯৮৯, আন-নাসায়ী ৪৪৫৩

বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীরা (আখিরাতে) নাবীগণ, সিদ্দীকগণ (সত্যবাদীগণ) ও শহীদগণের সাথে থাকবে।

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ التَّاجِرُ الصَّدُوقُ الأَمِينُ مَعَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ ‏"‏.‏ 

আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:,

  নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীরা (আখিরাতে) নাবীগণ, সিদ্দীকগণ (সত্যবাদীগণ) ও শহীদগণের সাথে থাকবে।
জামে' আত-তিরমিজি ১২০৯

দালালি করা হারাম ও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ,

وَعَنْهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ: «لاَ تَنَاجَشُوا». متفق عَلَيْهِ

উক্ত রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘(ক্রয় করার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বিক্রেতার জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি করার জন্য ক্রেতা আকৃষ্ট করে) দালালি করো না।’’

বুখারী ২১৪০, ২১৪৮, ২১৫০, ২১৫১, ২১৬০, ২১৬২, ২৭২৩, ২৭২৭, ৫১৫২, ৬৬০১, মুসলিম ১০৭৬, ১৪১৩, ১৫১৫, তিরমিযী ১১৩৪, ১১৯০, ১২২১, ১২২২, ১২৫১, ১২৫২, ১৩০৪, নাসায়ী ৩২৩৯, ৩২৪০, ৩২৪১, ৩২৪২, ৪৪৮৭, ৪৪৯০, ৪৪৮৯, ৪৪৯১, ৪৪৯৬, ৪৫০২, ৪৫০৬, ৪৫০৭, আবূ দাউদ ২০৮০, ৩৪৩৭, ৩৪৩৮, ৩৪৪৩, ৩৪৪৪, ৩৪৪৫, ইবনু মাজাহ ১৮৬৭, ২১৭২, ২১৭৪, ২১৭৫, ২১৭৮, ২২৩৯, আহমাদ ৭২০৭, ৭২৬৩, ৭২৭০, ৭৩৩৩, ৭৪০৬, ৭৪৭১, ৭৬৪১, ৮০৩৯, ৮৫০৫, ৮৭১৩, ৮৭৮০, ৮৮৭৬, ৯০১৩, ৯০৫৫, ৯৬১১, ৯৯০৬, মুয়াত্তা মালিক ১১১১ দারেমী ২১৭৫, ২৫৫৩, রিয়াদুস সলেহিন ১৫৮৮

وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، نَهىَ عَنِ النَّجْشِ . متفق عَلَيْهِ

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:,

 (তিনি বলেন,) ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ক্রেতাকে ধোঁকা দিয়ে মূল্য বৃদ্ধি করার) দালালি করতে নিষেধ করেছেন।’

 বুখারী ২১৪২, ৬৯৬৩, মুসলিম ১৫১৬, নাসায়ী ৪৪৯৭, ৪৫০৫, ইবনু মাজাহ ২১৭৩, আহমাদ ৫৮২৮, ৬৪১৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৩৯২, রিয়াদুস সলেহিন ১৫৮৯

প্রতারণা থেকে বিরত থাকা,

      হাট-বাজার কেনাবেচার ক্ষেত্রে ক্রেতা বা বিক্রেতা কোনো পক্ষেরই মিথ্যা, ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া উচিত নয়। ভেজাল পণ্য বিক্রির ব্যাপারে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, 
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنِ الْعَلاَءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ عَلَى صُبْرَةٍ مِنْ طَعَامٍ فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِيهَا فَنَالَتْ أَصَابِعُهُ بَلَلاً فَقَالَ ‏"‏ يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ مَا هَذَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ أَفَلاَ جَعَلْتَهُ فَوْقَ الطَّعَامِ حَتَّى يَرَاهُ النَّاسُ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ قَالَ ‏"‏ مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنَّا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنِ ابْنِ عُمَرَ وَأَبِي الْحَمْرَاءِ وَابْنِ عَبَّاسٍ وَبُرَيْدَةَ وَأَبِي بُرْدَةَ بْنِ نِيَارٍ وَحُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ كَرِهُوا الْغِشَّ وَقَالُوا الْغِشُّ حَرَامٌ ‏.‏

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

        কোন একসময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (বাজারে) একটি খাদ্যশস্যের স্তূপ অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। তিনি নিজের হাতকে স্তূপের মধ্যে প্রবেশ করালেন। তিনি তাঁর হাতে ভিজা অনুভব করেন। স্তূপের মালিককে তিনি প্রশ্ন করেনঃ এ কি? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটা বৃষ্টির পানিতে ভিজে গিয়েছিল। তিনি বললেনঃ ভিজাগুলো স্তূপের উপরে রাখলে না কেন, যাতে লোকেরা দেখতে পেত? অতঃপর তিনি বললেনঃ প্রতারণাকারী ও ধোঁকাবাজকারীদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। 

সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (২২২৪)
জামে' আত-তিরমিজি ১৩১৫

  তেমনি মাপে কম দেওয়াও জঘন্যতম অপরাধ। 
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, 
وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِينَ. الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُواْ عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ. وَإِذَا كَالُوهُمْ أَو وَّزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ
  ‘দুর্ভোগ মাপে কম দানকারীদের জন্য, যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় নেয় এবং যখন লোকদের মেপে দেয় বা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়।’ 
সূরা মুতাফফিফিনঃ ১-৩

দালালির মধ্যে ক্রেতাকে প্রতারিত করাও নিষেধ। 
قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ عَنْ مَالِكٍ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ النَّجْشِ

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ক্রেতার উপর দিয়ে অন্য ক্রেতার দরাদরি করতে নিষেধ করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯২) 
বুখারী ৬৯৬৩

 
 ক্রেতাদের বিপদে ফেলার উদ্দেশ্যে পণ্য মজুদ করাও নিষিদ্ধ। 
তিরমিজি ১২১০

পণ্য বিক্রির জন্য মিথ্যা কসম করা থেকে বিরত থাকা,

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ شَقِيقٍ، عَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِي غَرَزَةَ، قَالَ كُنَّا نُسَمَّى فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ السَّمَاسِرَةَ فَمَرَّ بِنَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَسَمَّانَا بِاسْمٍ هُوَ أَحْسَنُ مِنْهُ فَقَالَ ‏ "‏ يَا مَعْشَرَ التُّجَّارِ إِنَّ الْبَيْعَ يَحْضُرُهُ الْحَلِفُ وَاللَّغْوُ فَشُوبُوهُ بِالصَّدَقَةِ ‏"‏ ‏.‏

কায়স বিন আবু গারাযাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

      তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে আমাদের সামাসিরা (দালাল) নামে ডাকা হত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট দিয়ে অতিক্রমকালে আমাদের আগের নামের চেয়ে অধিক সুন্দর নামকরন করেন। তিনি বলেনঃ ‘হে তাজের (ব্যবসায়ী) সম্প্রদায়! ক্রয়-বিক্রয়কালে শপথ ও বেহুদা কথাবার্তা হয়ে যায়। তাই কিছু দান-খয়রাত করে তা ধুয়েমুছে(পরিচ্ছন্ন করে) নিও। 
তিরমিযী ১২০৮, নাসায়ী ৩৮০০, ৪৪৬৩, আবূ দাউদ ৩৩২৬ আহমাদ ১৫৭০১, ১৭৯৯৯, মিশকাত ২৭৯৮, রাওদুন নাদীর ৮৪০, ইবনে মাজাহ ২১৪৫

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ خَلَفٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى، ح وَحَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَيَّاشٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ، عَنْ مَعْبَدِ بْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ إِيَّاكُمْ وَالْحَلِفَ فِي الْبَيْعِ فَإِنَّهُ يُنَفِّقُ ثُمَّ يَمْحَقُ ‏"‏ ‏.‏

আবূ কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা ক্রয়-বিক্রয় করাকালে শপথ করা থেকে বিরত থাকো। কেননা মিথ্যা শপথের ফলে পণ্য বিক্রয় হলেও তার বরকত নষ্ট হয়ে যায়।  
মুসলিম ১৬০৭, নাসায়ী ৪৪৬০, আহমাদ ২২০৩৮, ২২০৬৫, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৩১, ইবনে মাজাহ ২২০৯

পরনিন্দার আসর বর্জন করা,

     গ্রামগঞ্জের বাজারের চায়ের দোকানগুলোতে সাধারণত পরনিন্দার আসর সহজেই জমে যায়; যেহেতু সবাই পরিচিত। শহরেও পরিচিত এলাকায় থাকলে এমনটা হতে পারে। তাই শহর কিংবা গ্রাম—যেখানেই হোক, বাজারে গেলে পরনিন্দার আসর জমবে এমন জায়গা পরিহার করতে হবে। কেননা গিবত (পরনিন্দা) ও অপরের দোষচর্চা নিকৃষ্টতম অভ্যাস। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, 
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ
‘পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস।’ 
সূরা হুমাজাহঃ ১

শরয়ি পর্দা মেনে চলা,

     নারী-পুরুষ উভয়ের পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায় হলো ইসলামের পর্দা বা হিজাব বিধান। এই বিধানের অনুসরণের মাধ্যমেই হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন সম্ভব। পর্দার এই সুফল স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, 

إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
‘এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। 
সূরা আহযাবঃ ৫৩

     তাই কোনো নারীর নিরুপায় হয়ে যদি বাজারে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে অবশ্যই শরয়ি পর্দা অবলম্বন করে যাবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, 
قُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে।
সূরা নূরঃ ৩১

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মুমিনদের নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। 
সূরা আহযাবঃ ৫৯

      আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ওই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদের আদেশ করেছেন, যখন তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে, তখন যেন মাথার ওপর থেকে ওড়না বা চাদর টেনে স্বীয় মুখমণ্ডল আবৃত করে। আর (চলাফেরার সুবিধার্থে) শুধু এক চোখ খোলা রাখে। (ফাতহুল বারি, ৮/৫৪, ৭৬, ১১৪)

নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও তাদের দৃষ্টি সংযত রাখবে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, 

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ
‘মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে।’ 
সূরা নুরঃ ৩০

কেনাকাটায় মধ্যপন্থা অবলম্বন,

কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন-,

وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا
‘(রহমানের বান্দা তো তারাই), যারা অপব্যয়ও করে না, আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এ দুইয়ের মধ্যবর্তী।’ 
সূরা ফুরকান ৬৭

 আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে তার বিধান মেনে চলার তৌফিক দান করুন। 
আমিন
------------------------------------------. 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।          


Post a Comment

0 Comments