Recent Tube

করোনা কড়চা - ৪: আকাশ লকডডাউন হয়নি, আসুন তাওবা করি, জিয়াউ আহমেদ

করোনা কড়চা - ৪: আকাশ লকডডাউন হয়নি, আসুন তাওবা করি
                                ******
    হযরত আদম আ: এর ওফাতের একশত ছেচল্লিশ বছর পর হযরত নুহ আ: এর জন্ম। তিনি ছিলেন তাঁর দশম অধস্তন পুরুষ। দু’জনের  মধ্যে সময়কালের ব্যবধান ছিল ১০৫৬ বছর। নুহ আ: হায়াত পেয়েছিলেন ৯৫০ বছর (সুরা আনক্বাবুত, আয়াত- ১৪)।

    দীর্ঘসময় দাওয়াতি কাজের পরেও তার কওম আল্লাহর উপরে ঈমান এনে নুহ আ: কে নবী হিসেবে মেনে নিতে চায়নি। তাদের আরোপিত মিথ্যা অপবাদ, অপপ্রচার, টিটকারী আর সর্বপ্রকার যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তির জন্য নুহ আ: আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে দোওয়া করেছিলেন ( সুরা মু'মিনুন/২৬)।

আবেদনের প্রেক্ষিতে আল্লাহ নুহ আ: কে নৌকা তৈরি করে আদেশ আসা মাত্র প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া এবং তাঁর পরিবারবগ ও অনুসারীগর্ণকে তাতে তুলে নিতে বললেন ( সুরা মুমিনুন-২৭)।

এর পরে যখন সেই নির্ধারিত সময় আসল। আকাশ থেকে বৃষ্টি ও ভূমি থেকে বের হয়ে আসা পানি মিলিত হল এক পরিকল্পিত কাজে। বন্যাটা একটা পরিকল্পিত কাজের জন্য এসেছিল, তথা, একটা সুনির্দিষ্ঠ এ্যসাইনমেন্ট নিয়ে এসেছিল( সুরা ক্বামার/১০-১২)। 

পরিকল্পত আজাবে অবিশ্বাসীদের ডুবিয়ে মারলেন (সুরা আরাফ ৬৪) এবং নুহ আ: আর তাঁর অনুসারীদের উদ্ধার করলেন। এর মাধ্যমেই তাঁর সে মিশন শেষ হয়ে গেল ( সুরা হুদ ৪৪)।

এ ঘটনাটা নি:সন্দেহে ছিল বিপজ্জনক ঘটনা। যারা আল্লাহর নির্দেশকে মানতে চায়নি, তার অবাধ্য হয়েছে, তাদের জন্য এগুলো ছিল কঠোর আজাবের ঘটনা। এর মাধ্যমে তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। 

বাহ্যিক দৃষ্টিকোণে এগুলোকে যতই বিপজ্জনক বলে মনে হোক না কেন, একজন মুসলমান হিসেবে হযরত নুহ আ: এবং তার অনুসারী নৌকারোহীদের কাছে এটা ছিল মুক্তির পয়গাম। মুক্তির নিদর্শন। সাড়ে নয়শত বছর ধরে দাওয়াতি কাজ করতে গিয়ে যে নির্মম নিপীড়ন, অবজ্ঞা নির্যাতন আর টিটকারীসহ বিদ্রুপ উপহাসের মুখোমুখি হয়েছেন, সামাজিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছেন, তার অনুসারী মুসলমানরাও একইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, সেই নির্যাতন থেকে মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছিল এই বিপজ্জনক বন্যাটি। 

আজ বিশ্বজুড়ে  ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসজনিত  মহামারীও কারো কারো জন্য আজাব। আবার কারো কারো জন্য তা মুক্তি ও সাহায্যের বারতা নিয়ে হাজির। মাত্র কদিন আগেও বিশ্বের বুকে শুধু মাত্র ফিলিস্তিন বা চীন, সিরিয়া কিংবা ইয়েমেন, কাশ্মির বা আফগানিস্থান’সহ বিশ্বের বিভিন্ন জনপদে মুসলমানদের জীবনটাই ছিল আশংকা আর অনিশ্চিয়তায় ভরপুর। কখন তাদের মাথার উপরে এসে পড়ে নিরাপদ দুরত্ব থেকে ছুঁড়ে দেয়া মিসাইলের জলন্ত পিন্ড আর লন্ড ভন্ড করে দেয় তাদের জীবন ও সংসার। 

ভারত, বার্মা, শ্রীলংকার মতো বিধর্মী সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে তো বটেই, এমনকি, অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশেও প্র্যাকটিসিং মুসলমানদের ‘মৌলবাদী’ ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে বিনা বিচারে বা বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে মারা ও ভিটেমাটি ছাড়া করা হয়েছে।। 

আমরা মুসলমান হয়েও জালিমের সামনে প্রতিবাদের জন্য উঠে দাঁড়াইনি। মজলুমের কান্না আমাদের কানেই ঢুঁকেনি যেন! নিশ্চুপ বসে বসে তামাশা দেখেছি। কখনও কখনও জালিমকে প্রকাশ্যে বা গোপনে সহায়তাও করেছি। আজ সে সবের সাময়িক অবসান হলেও হয়েছে, কারণ, জালিম নিজের বা নিজেদের জান বাঁচাতেই ব্যস্ত। 

করোনা ভাইরাসের এ মহামারী জুলুমে জুলুমে জর্জরিত বিশ্বের বুকে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক আজাব। আল্লাহর ইশারা ছাড়া বিশ্বের বুকে কিছুই ঘটে না। ঘটতেই পারে না। সে হিসেবে আল্লাহর ইশারাতেই পুরো বিশ্বব্যাপী এ আজাব প্রেরিত হয়েছে। 

এর যেমন শুরু আছে, তেমনি শেষও রয়েছে। কখন কিভাবে এবং কোথায় এর শেষ, সেটা আমরা জানি না। বিজ্ঞানীরাও এ ব্যাপারে কোনরকম ধারণা দিতে অপারগ, কারণ তাদের কাছে এর কোন জ্ঞান নেই। বিশ্বাস করি যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে মিশন, তথা, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ধরার বুকে এ ভাইরাসের আগমন ও ছড়িয়ে পড়া, সেই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জিত হলেই তার ইতি ঘটবে। 

তবে ততোদিনে এ ভাইরাস বেছে বেছে অনেকের উপরেই আপতিত হবে, অনেকের জীবনে কেয়ামতের (কেয়ামতে ছুগরা) সূচনা ঘটিয়ে দেবে, তথা, তাদের হিসাব নিকাশের শুরুটা করিয়ে দিয়ে যাবে।

ঠিক এখানটাই মুসলমানদের সামনে চিন্তার এক বিরাট সুত্র রয়েছে। কেয়ামত মানেই হলো হিসেব নিকেশের পালা। আমি আমার হিসেবে নিকেশের ফিরিস্তিটা আল্লাহর সামনে তুলে ধরার মতো অবস্থায় রয়েছি কি? এটাই ভাবতে হবে এখন।

পাহাড়ের চুড়ায় আশ্রয় নিয়ে প্রাণ বাঁচানোর মতো ফন্দি যেমন পয়গম্বর নুহ আ: এর ছেলেকে বাঁচাতে পারেনি, তেমনি পিপিই কিংবা নিজেকে কোয়ারান্টাইনে রেখেও বাঁচানোর পরিকল্পনা সফল হবে না , সেটা বিশ্বের বুকে কঠোর নিরাপত্তা প্রোটোকল ও স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, যুবরাজ কিংবা স্বাস্থ্যমন্ত্রী, অথবা কানাডা প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী বা স্প্যানিশ রাজকন্যাদের জীবন থেকেই প্রতিয়মান হয়।

মুসলমানদের চুড়ান্ত সফলতা প্রাপ্তি হয় তখন, যখন তারা আল্লাহর আক্রোশ থেকে বেঁচে যায়। যখন তারা আল্লাহর রহমতের কল্যাণে নিজেদের পাপ থেকে মুক্তি পায়। আর এই কঠিন মুহর্তে তার একমাত্র পথ হলো আল্লাহর কাছে নি:শর্ত আত্মসমর্পণ করা; আল্লাহর সুস্পষ্ট ঘোষণা হলো; ‘আর আমি অবশ্যই ক্ষমাকারী তার জন্য, যে তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং হেদায়েত প্রাপ্ত হয়।’ (সুরা ত্বাহা, আয়াত : ৮২) 

হাদিসেও এসেছে; ‘কোনো ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য (কেয়ামতের সবচেয়ে  বড়নিদর্শন) ওঠার আগে তওবা করলে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন।’ (মুসলিম )

আকাশ এখনও লকডডাউন হয়নি, পশ্চিমেও সূর্য ওঠেনি। অতএব, আসুন, তাওবা করি।
-------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ, গ্রন্থপ্রনেতা, গীতিকার ও  বিশ্লেষক।         

Post a Comment

0 Comments