Recent Tube

করোনা কড়চা (১):নমরুদের মতো যুদ্ধ নয়, প্রয়োজন আন্তরিক তাওবা: জিয়াউল হক।

করোনা কড়চা (১):
নমরুদের মতো যুদ্ধ নয়, প্রয়োজন আন্তরিক তাওবা
     

          প্রিয় বাংলাদেশ আজ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত! আল্লাহর স্বিদ্ধান্তের সাথে কি যুদ্ধ চলে? তাঁর আক্রোশ থেকে বাঁচতে হলে তাঁর কাছে নি:শর্ত আত্মসমর্পণ ছাড়া কি আর কোন পথ খোলা আছে বিশ্ববাসীর জন্য?

   বিশ্বজুড়ে এই যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক আজাব। আল্লাহ মাঝে মধ্যেই মানবজাতির মধ্যে তার আজাবকে বিভিন্ন অবয়বে প্রেরণ করে থাকেন। এ ব্যাপারে তিনি নিজেই বলেছেন;

    স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা রোম:৪১)

    অপরদিকে প্রিয় রাসুল সা:’ও আমাদেরকে এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন। এরকম বহু হাদিস রয়েছে। সেরকমই একটা হাদিস;

      হযরত আলি (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার উম্মত যখন ১৫টি কাজে লিপ্ত হয়ে পড়বে, তখন তাদের ওপর বিপদ-মুসিবত এসে পড়বে। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কী? তিনি বললেন; যখন গনিমতের মাল ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হবে, আমানত লুটের মালে পরিণত হবে, যাকাত জরিমানা হিসেবে গণ্য হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং মায়ের অবাধ্য হবে। বন্ধুর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে, কিন্তু বাবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে। মসজিদে শোরগোল করা হবে, সবচাইতে খারাপ চরিত্রের লোক হবে, তার সম্প্রদায়ের নেতা। বিভিন্ন লোককে তার অনিষ্টতার ভয়ে সম্মান করা হবে। মদ পান করা হবে, রেশমি বস্ত্র পরিধান করা হবে এবং এই উম্মতের শেষ জমানার লোকেরা তাদের পূর্ব যুগের লোকদের অভিসম্পাত করবে, তখন তোমরা একটি অগ্নিবায়ু অথবা ভূমিধস অথবা চেহারা বিকৃতির আজাবের অপেক্ষা করবে। (তিরমিজি, হাদিস নং: ২২১০)

        আমরা যদি নিজেদের সাথে অন্তত প্রতারণা না করি, তা হলে দেখতে পাবো উপরের ১৫টি পাপকার্যের প্রতিটিই আমাদের ব্যক্তি ও জাতীয় চরিত্রে বিদ্যমান। সারা বিশ্বজুড়েই তা বিদ্যমান। বিগত একটা শতাব্দীর বেশি সময়কাল ধরে বিশ্বজুড়ে সুদ ঘুঁষ, দূর্ণীতি, শোষণ ও অবিচার, গুম, খুন, রাহাজানী ও অশ্লীলতার এক প্রলয়ংকারী বন্যা বয়ে গেছে। বিনা অপরাধে, নানা ছল ছুতায় কোটি কোটি বনি আদমকে হত্যা করা হয়েছে। মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে প্রতিটি দেশে প্রহসনমূলক বিচারের নামে যেমন হত্যাকান্ড ঘটেছে, তেমনি, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক নানা শ্লেগাণের বাতাবরণেও (যেমন ওয়ার অন টেরর বা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ) নির্বিচারে হত্যাকান্ড ঘটে চলেছে আজও। বিশ্ব যেন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছিল এক সর্বগ্রাসী নৈরাজ্যের মধ্যে। ঠিক এরকম একটা প্রেক্ষাপটে যখন আমাদের উপরে আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব আপতিত হয়েই গেছে, তখন তার সাথে যুদ্ধ করে জেতা যাবে না। 

       ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন, হযরত ইব্রাহিম আ: এর আহ্বানকে অস্বীকার করে নমরুদও আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল। আল্লাহপাক নমরুদের বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে মশা পাঠিয়েছিলেন। ইহুদি পন্ডিতদের রচনা থেকে (যেমন; ‘বুক অব জাসের’  Book of Jasher, - হিব্রু Sefer ha-Yashar ) জানা যায় দীর্ঘ বারো বর্গমাইল বিস্তৃত যুদ্ধময়দানে সমবেত হওয়া নমরুদের প্রায় ষাট লক্ষ সৈন্য মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। যুদ্ধের ময়দানে তাদের গলিত লাশ পড়েছিল। সৈন্যদের মগজ নি:শ্বেষ হয়ে গিয়েছিল।

.    ইহুদি সুত্রের এ তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, মশার মাধ্যমে  ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছিল নমরুদের বিশাল বাহিনী। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান দ্বারা আমরা এটা বুঝতে পারি যে, মশার কামড়ে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে মানুষের মধ্যে মারাত্মক West Nile Encephalitis এবং Viral Meningitis রোগের সৃষ্টি হয়, দুটো রোগই খুব ছোঁয়াচে। আর এ দুটি রোগের কারণে মানুষের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম তথা ব্রেন সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে যদি তা যথাসময়ে যথাযথ চিকিৎসা না পায়। 

   সম্ভবত এটাই ঘটেছিল নমরুদের বাহিনীতে। মশার মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমিত হবার ফলে নমরুদের সৈন্যদের মস্তিস্কে প্রদাহ (ইনফেকশন) ঘটে। প্রাচিন ইতিহাসও আমাদের জানান দিয়েছে, মশা নমরুদের সৈন্যদের মাথার ব্রেন খেয়ে ফেলেছিল।  

  নমরুদ ও তার সৈন্যদের জন্য এটা ছিল আজাব আল্লাহর পক্ষ থেকে। হযরত ইব্রাহিম আ: এর সাথে তার কথোপোকথনের (সুরা বাকারা, আয়াত ২৫৮) পরে সুস্পষ্ট আল্লাহদ্রোহীতার কারণেই এ আজাব তার উপরে আপতিত হয়েছিল। এ আজাবকে সে মোকাবেলা করতে চেয়েছিল, কিন্তু তার পরিণতি আজ বিশ্ববাসীর জন্য এক শীক্ষণীয় ইতিহাস।

বস্তুত আল্লাহর ফায়সালার সাথে যুদ্ধ চলে না। বরং বাস্তবতা হলো, আল্লাহর কাছে আন্তরিক তাওবা ও শর্তহীন আনুগত্যের মাধ্যমে তার আজাব থেকে নিস্তার পাওয়া যেতে পারে। তাঁর সুস্পষ্ট ঘোষণা; ‘আর আল্লাহ তাআলা আজাব দেবেন না তাদের, আপনি তাদের মাঝে থাকা অবস্থায়; আর আল্লাহ তাদের আজাব দেবেন না, যখন তারা ইস্তিগফার করে।’ (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ৩৩)। 

অতএব, আসুন করোনার সাথে যুদ্ধ নয়, বরং করোনার মালিকের সাথে আন্তরিক সন্ধি, তাঁর কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ ও তাওবা করে নিজেদের বাঁচাতে তৎপর হই। (চলবে)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ও বিশ্লেষক।          

Post a Comment

0 Comments