Recent Tube

চলমান সংকট মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি পাঁচদফা কর্মসূচী : -জিয়াউল হক।

চলমান সংকট মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি পাঁচদফা কর্মসূচী
           
     সুরা বাকারার ১৫৫ নম্বর আয়াতটির প্রতি আপনাদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। গভীর মনযোগ দিয়ে দেখুন সেখানে আল্লাহ পাক মানুষকে পরীক্ষার জন্য পাঁচ ধরনের বিপদের মুখোমুখি করবেন বলেছেন। আল্লাহ বলছেন; অবশ্যই আমি তোমাদেরকে আতংক বা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জীবনহানী এবং পণ্য ফসলাদি হারানোর মতো কিছু কিছুবিষয় দিয়ে পরীক্ষা করবো। এমতাবস্থায় যারা ধৈর্য ধারণ করে, তাদের সুসংবাদ দাও (বাকারা-১৫৫)। 

  কুরআনে কারিমে মূল আরবিতে আল্লাহপাক কর্তৃক যে ক্রমধারায় সম্ভাব্য পাঁচটি বিপদের কথা উল্লেখিত হয়েছে সেগুলো হলো যথাক্রমে;

  এক- ভয় বা আতংক- এটা সৃষ্টি হয় যেসব কারণে তার মধ্যে অন্যতম হলো অনিশ্চিত অবস্থা, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না থাকা ইত্যাদি।

 দুই - ক্ষুধা। খাদ্য গ্রহণ মানুষের মৌলিক ও সবচেয়ে বড়ো প্রয়োজন।  কোন কারণে যদি খাদ্য ঘাটতি দেখায় দেয় বা যথাসময়ে খাদ্য প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়, মানুষ তখন স্বাভাবিকভাবেই ভীত হয়ে পড়ে।

তিন - সম্পদহানী। সম্পদহানী বহুকারণে হতে পারে। মানুষের হাতে বিদ্যমান সম্পদহানী হতে পারে দূর্ঘটনা, ব্যবসায় লোকসান এবং আয়ের মাধ্যম বা উৎস বিঘিœত হবার মাধ্যমে।

চার - ইতোপূর্বে তালিকার তিন নম্বর বিপদ সম্পদহানীর সাথেই মৃত্যুর কথা এসেছে, তার মানে হলো, অভাব বা দুর্ভিক্ষের কারণে অনাহারে মৃত্যুকে ইংগিত করা হয়েছে এবং 

পঞ্চম - সবশেষে এসেছে শষ্য বা ফসলহানীর কথা। এর আগে সম্পদহানীর কথা উল্লেখ করার পরেও যখন ফসলহানীর কথা বলা হয়েছে আলাদা করে, তখন বিষয়টা খুবই তাৎপর্যময়। মালিকানায় থাকা সম্পদহানী ছাড়াও নিকটভবিষ্যতে মালিকানায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে, এমন ফসল, তথা চাষাবাদের মাধ্যমে অর্জিতব্য শষ্যাদি হানী বা মুনাফা না পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারী বাংলাদেশেও ছড়িয়েছে। দেশের প্রায় সবক’টি জেলাতেই করোনায় আক্রান্ত বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। মানুষের মনে এক ধরনের আতংক বাঁসা বেঁধেছে। 

এই একই সময়ে স্থানীয়, আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। বেকারের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। সামনে আরও বাড়বে। মানুষের হাতে সঞ্চয় যা ছিল, তাও ইতোমধ্যেই শেষ প্রায়। সবার মনে এক ধরনের আতংক বাসা বেঁধেছে।

প্রবাসীদের রেমিটেন্স স্মরণকালের সবচেয়ে বড়ো ধাক্কা খাচ্ছে। রপ্তানী কমে যাচ্ছে। আভ্যন্তরীণ শিল্পোৎপাদন যেটুকুই ছিল, তাও মুখ থুবড়ে পড়েছে, ছোট খাটো ব্যাবসা বাণিজ্যগুলো বন্ধ হয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পথে বসেছে বা বসছে। 

আরও একটা বিষয় লক্ষণীয়, গেল একটা মাস, বা তারও বেশি সময়কাল ধরে বাংলােেশ আবহাওয়াও অস্বাভাবিক ও অসময়োচিত আচরণ করছে, এর ফলে মাঠে রয়ে যাওয়া ফসলের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়েছে। চাষী মাঠ থেকে যেসব ফসল ঘরে তোলার অপেক্ষায় ছিলেন, তা মাঠে মারা যাবার উপক্রম। এর ফলে আগামি দিনে যে এক ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ আসছে এ দেশে, তা প্রায় নিশ্চিত। এ থেকে বাঁচার উপায় কি? 

বাঁচার উপায় হলো; মহামারী আকারে যিনি এ আজাবকে পাঠিয়েছেন, তার কাছে আত্মসমর্পণ করে ধৈর্যের সাথে তাঁর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে, এটা হলো সর্বপ্রথম শর্ত। ধৈর্য ধরা ও সাহায্য চাওয়া মানে চুপচাপ ঘরের মধ্যে বসে থাকা নয়, বরং  বিপদ মোকাবেলায় বুদ্ধি খাটিয়ে চেষ্টা করার নামই হলো ধৈর্য ধরা। 

দ্বিতীয়; সারা বিশ্ব যে হোম কেয়ারান্টাইনের কথা বলছে, সেটা কঠোরভাবে নিশ্চিত করা।

তৃতিয়; পরস্পরকে সহযোগীতা করা, পরামর্শ ও সাহস দেয়া। একইসাথে কর্মতৎপর হয়ে নিজ নিজ বাড়িতে শাক শব্জি (শহরগুলোতে ছাদে কিংবা কার্নিশেও হতে পারে) ও ফলমূলের চাষ করা, কৃষকদের ধান গম’সহ রবিশষ্য উৎপাদনে উৎসাহ প্রদান এবং খাদ্যদ্রব্য ব্যতিত অন্যান্য ফসল উৎপাদনে (যেমন তামাক) নিরুৎসাহিত করা।

চতুর্থ, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে কৃচ্ছতাসাধন। সকল পর্যায়ে কৃচ্ছতাসাধন আগামি দিনে বড় বিপর্যয় থেকে বাঁচাবে, এবং  

পঞ্চম কর্মসূচী হলো; জীবনধারা পাল্টে ফেলতে হবে, পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে সহজ জীবন যাপন করার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা সকলে জোটবদ্ধভাবে আল্লাহর সাহায্যে এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবো।
,------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও বিশ্লেষক        

Post a Comment

0 Comments