Recent Tube

বাংলাদেশ কি রংধনুর রং-এ সাজবে? জিয়াউল হক

বাংলাদেশ কি রংধনুর রং-এ সাজবে?
  

     আলেমদের মধ্যে চলমান অনৈক্য ও করোনার তান্ডবে অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যেই সমকামীতা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দীর্ঘদিনের চলমান কর্মসূচী সম্ভবত বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে প্রকাশ্যে আসছে। একটা সুপরকিল্পিত কার্যক্রমের অংশমাত্র।
     অতি সম্প্রতি ইংল্যান্ডের ‘The Week  নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার ৩রা এপ্রিল, ২০২০ সংখ্যায় ‘The countries where homosexuality is illegal’ শিরোনামে প্রকাশিত এক নিবন্ধে সমকমাীতা অবৈধ যে সব দেশে, সে তালিকা দিতে গিয়ে বাংলাদেশের বেলায় বলা হয়েছে; ‘মেল অনলি’ (Male only)।

     অর্থাৎ বাংলাদেশে শুধুমাত্র পুরুষদের সমকামীতা অবৈধ হিসেবে উল্লেখ করে প্রকারান্তরে লেসবেনিয়াজিম’কে বৈধ হিসেবেই দেখানো হয়েছে (সুত্র: www.theweek.co.uk ৩রা এপ্রিল, ২০২০)।
   ফুটনোটে দাবী করা হয়েছে তাদের দেয়া এ তালিকা ২০১৯ সালের সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সঠিক, বলাই বাহুল্য, এটা সর্বৈব মিথ্যা। সত্যের সাথে মিথ্যা মিশিয়ে সমকামীতাকে এ দেশের একটা গোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্য করার সুক্ষ প্রয়াস ও কর্মসূচীর অংশবিশেষ।

   কর্মসূচীটির শুরু প্রায় ৩৪ বছর আগে। ১৯৮৮ সালে আমেরিকায় ১৭৫ জন সমকামী এক বৈঠকে বিশ্বব্যাপী সমকামীতাকে ছড়িয়ে দেয়া ও সমাজে মূলধারার কাছে তা গ্রহণযোগ্য করার উপায় পর্যালোচনা করে। 

   পরের বছর ১৯৮৯ সালে Marshall Kirk  এবং Hunter Madsen নামের দুইজন ব্যক্তি  বিশ্বের কাছে সমকামীতাকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার উপায় নিয়ে ছয়দফা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ‘ After The Ball- How America will conquer its fear and Hatred of Gay’s in the 90’s ’ নামে ৩৯৮ পৃষ্ঠার একটা বই রচনা করে। বইটা এখনও বাজারে রয়েছে। 

    বইটাতে বর্ণিত ছয়দফা পরিকল্পনা ও কর্মসূচীর প্রতিটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আমেরিকান সমাজে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেখানে সমকামীতাকে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়। এ সাফল্য তাদেরকে উজ্জীবিত করে। 

    সেই থেকে প্রতিটি পশ্চিমা দেশে সমকামীতাকে ব্যক্তির অধিকার ও স্বীকৃত পার্সোনাল চয়েস হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চলছে। তারা যে সফলতা লাভ করেছে, সেটা উন্নতবিশ্ব বলে পরিচিত দেশসমূহের দিকে নজর দিলেই বুঝা যায়। 

     ইউরোপ, আমেরিকা ও খৃষ্টবিশ্বের বেশিরভাগ দেশে পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন শেষে এখন সেই পরিকল্পনাগুলোই মানবাধিকার, সমঅধিকারের চটকদার শ্লোগাণের আড়ালে মুসলিম দেশসমূহে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চলছে। 

       সেই ছয়দফা পরিকল্পনাগুলো এক নজরে; (এক) অত্যন্ত বলিষ্ঠতার সাথে, কোনরকম রাখ ঢাক না করেই সমকামীতার কথা সমাজে বলতে হবে। এভাবে সমকামীতা নিয়ে কথা বলতে বা শুনতে শুনতে মানুষের মনে বিদ্যমান দ্বিধা কেটে যাবে। 

    (দুই) সমকামীদেরকে তাদের নিজ নিজ সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা মজলুম, নিস্পেষিত, নিগৃহিত, বঞ্চিত হিসেবে তুলে ধরতে হবে। তারা নানারকম ঝুঁকিতে রয়েছে, সে বিষয়টাকে প্রতিষ্ঠত করতে হবে। ধর্ম-বর্ণ বা লিঙ্গ কিংবা স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে যে কোন নির্যাতিত ব্যক্তির অধিকার রয়েছে সে সমাজের কাছে তার অধিকার চাইবার। নিপীড়িত ও নির্যাতিত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা গেলে তাদের দিয়েই সমাজে সমকামীতার পক্ষে কথা বলানো সহজ হবে। প্রথম পরিকল্পনা; জোরে শোরে সমকামীতা নিয়ে কথা বলতে হবে। সেটাও এভাবে অর্জিত হচ্ছে।

    ইসলামি ঐতিহ্যের কারণেই মুসলমানরা যে কোন নীপিড়ন, বঞ্চনা আর জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। সমকামীদের মজলুম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে সাধারণ মুসলমানদের একটা অংশের মনে তাদের প্রতি সমবেদনা জেগে উঠবে।

    (তিন) সমকামীতাকে একজন ব্যক্তির নিজস্ব পছন্দের একটা বিষয় হিসেবে তুলে ধরতে হবে। ঠিক যেমন একজন নিজের পছন্দের ভিত্তিতে কোনো পোষাক পরতে বা গাড়ি কিনতে বা ব্যবসা করতে, কিংবা পছন্দের খাবার খেতে বা কিনতে পারেন, ঠিক সেরকম একটা চয়েস হিসেবে তুলে ধরতে হবে। 

   ব্যক্তি যদি নিজ পছন্দানুযায়ী পোশাক পরতে, গাড়ি কিনতে,ব্যবসা বাণিজ্য করতে, কিংবা খাবার খেতে পারেন, তা হলে তিনি কেন নিজের পছন্দের ভিত্তিতে যৌনতাকে নির্ধারণ করতে পারবেন না? এরকম একটা যুক্তিকে সর্বসাধারণের কাছে তুলে ধরা। 

   (চার) সমকামীতা ইসলামে হারাম। মুসলিম সমাজে তা হারাম হিসেবেই প্রচার করতে হবে। এটা দ্বিমূখী বলে মনে হতে পারে। কারণ হারাম হিসেবে প্রচার করলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনমানস তা মেনে নেবে কেন? তাদের কে মানিয়ে নেয়াটাও উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হলো, একটা কমন প্লাটফরম তৈরি করা। 

     ফলে মুসলিম সমাজের একটা গোষ্ঠী অন্তত এটা ভাববে যে; যাক, তারা হালাল তো বলছে না। হারাম হিসেবে স্বীকার করে নিচ্ছে। এটা হলো কমন প্লাটফরম। ঐ একই ব্যক্তি আবার ভাববে, ব্যক্তির মানবাধিকার ও নিজস্ব পছন্দ অপছন্দের বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করাটা তো অন্যায়। ফলে সে প্রতিবাদ করবে না, কোন প্রতিবাদে সম্পৃক্ত হবে না, নিস্পৃহ থাকবে। 

     এভাবে কিছু তথাকথিত উদারপন্থী মুসলমানের উদ্ভব হবে। সমাজেও ঘৃণিত ও অভিশপ্ত পাপ কাজটা কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে। আমাদের মনে রাখা দরকার, সূদ ও পতিতাবৃত্তি হারাম হয়েও সেগুলো মুসলিম দেশে দেশে চালু আছে। সেভাবেই একটা সময় এসে দেশের ভেতরের গোষ্ঠী ও বহির্বিশ্বের চাপে সরকার সমকামীতার বিরুদ্ধে বিদ্যমান যে কোন আঈনকে রহিত বা শিথিল করবে এবং এই পাপকম্মটি সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাবে।

   (পাঁচ) যে গোষ্ঠীটি সমকামীতার বিরোধিতায় সোচ্চার, তাদেরকে নিরন্ত প্রচারণা ও সর্বপ্রকার কৌশলে সমাজের কাছে নীপিড়ক, উৎপিড়ক, সেকেলে বা ব্যাকডেটেড, বর্ণবিদ্বেষী, মানবতাবিরোধি হিসেবে তুলে ধরে তাদের চরিত্র হনন করতে হবে। সরকার ও সমাজের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। ক্রমাগত অপপ্রচারে তারা একসময় সমাজে ব্লাকশিপ, বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত হবে। তা দেখে বাঁকি সদস্যদের অনেকেই অযথা ঝামেলাতে জড়াতে আসবে না! এবং

    (ছয়) এভাবে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ যখন সমকামীতাকে সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ ও মানবাধিকারের বিষয় হিসেবে মেনে নেব, ঠিক তখনই জাতিসংঘ ও তার অঙ্গসংগঠন এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যসংস্থার চাপে দেশে ‘সমঅধিকার ও মানবাধিকার’ নিশ্চিত করতে সমকামীতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের বিরোধিতা করা কিংবা ভিন্ন চোখে দেখাটাকে দেশের আঈনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করতে চাপ দেবে। 

প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ কি রংধনুর রং-এ 
সাজবে?
--------------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও বিশ্লেষক।   

Post a Comment

0 Comments