Recent Tube

ধর্ম বীর পুরুষের জন্যে, কাপুষের জন্যে নয়; সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী রহঃ

 
   
ধর্মবীর পুরুষের জন্যে, কাপুষের জন্যে নয়;

  আল্লাহর বিধান ভীরু কাপুরুষদের জন্যে অবতীর্ণ হয়নি। নফসের দাস ও দুনিয়ার গোলামদের জন্যে নাযিল হয়নি। বাতাসের বেগে উড়ে চলা খড় কুটো, পানির স্রোতে ভেসে চলা কীট পতঙ্গ এবং প্রতি রঙে রঙ্গীন হওয়া রংহীনদের জন্যে অবতীর্ণ হয়নি। এমন দুসাহসী নরশার্দুলদের জন্যে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা বাতাসের গতি বদলে দেবার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে, যারা নদীর তরঙ্গের সাথে লড়তে এবং তার স্রোতধারা ঘুরিয়ে দেবার মতো সৎ সাহস রাখে। যারা আল্লাহর রংকে দুনিয়ার সকল রঙেরচাইতে বেশি ভালোবাসে এবং সে রঙেই যারা গোটা দুনিয়াকে রাঙিয়ে তুলবার আগ্রহ পোষণ করে। যে ব্যক্তি মুসলমান তাকে নদীর স্রোতের ভেসে যাওয়ার জন্য পয়দা করা হয়নি। তাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্যই হল জীবন নদীকে তার ঈমান ও প্রত্যয় নির্দেশিত সোজা ও সরল পথে পরিচালিত করা। যদি সেই সোজা পথ থেকে নদী তার স্রোত ফিরিয়ে নেয় আর সেই পরিবর্তিত স্রোতধারায়ই ভেসে চলতে সম্মত হয়ে যায় তো এমন ব্যক্তির ইসলামের দাবী একেবারেই মিথ্যা। বস্তুত যে ব্যক্তি সাচ্চা মুসলমান, সে এই ভ্রান্তমুখী স্রোতের সাথে লড়াই করবে, তার গতি ঘুরিয়ে দেবার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করবে, সাফল্য ও ব্যর্থতার কোন পরোয়াই সে করবেনা। এই লড়াইয়ের যে কোন সম্ভাব্য ক্ষতিই সে বরণ করে নেবে। এমনকি নদীর স্রোতের সঙ্গে লড়াই করতে করতে তার বাহু যদি ভেঙ্গেও যায়, কিংবা তার শক্তিও যদি শিথিল হয়ে পড়ে এবং পানির তরঙ্গাঘাত তাকে আধমরা করে কোন তীরের দিকে ছুড়ে ফেলেও দেয়, তবুও তার আত্মা কখনো পরাজয় বরণ করবেনা। তার দিলে এই বাহ্যিক ব্যর্থতার জন্য এক মুহূর্তের তরেও কোন অনুতাপ জাগবেনা, কিংবা নদীর স্রোতে ভেসে চলা কাফির ও মুনাফিকদের সাফল্যের জন্য ঈর্ষার ভাবধারা ও প্রশ্রয় পাবেনা।

    কুরআন মুসলমানদের সামনে রয়েছে। পয়গম্বরদের আদর্শ ও জীবন চরিত তাদের সামনে রয়েছে। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ইসলামের অমর পতাকাবাহীদের জীবন ও ইতিবৃত্ত তাদের সামনে রয়েছে। ঐসব থেকে কি তারা এই শিক্ষাই পাচ্ছে যে হাওয়া যেদিকে যাবে, তারাও সেদিকেই উড়ে চলবে? পানি যেদিকে প্রবাহিত হবে, তারাও সেদিকে ভেসে চলবে? যমানা যে রং ধারণ করবে, তারাও সেই রঙে রঙিন হবে? এই যদি উদ্দেশ্য হত, তাহলে কোন কিতাবের অবতরণ এবং কোন নবী প্রেরণেরই বা কি প্রয়োজন ছিলো? তাদের হেদায়াতের জন্য বাতাসের জন্য ঢেউ, তাদের পথনির্দেশের জন্য দুনিয়ার জীবনপ্রবাহ এবং তাদেরকে টিকটিকির চরিত্র শেখানোর জন্য যমানার রঙহীনতাই তো যথেষ্ট ছিল। এই ধরণের নাপাক শিক্ষার জন্য আল্লাহ কোন কিতাব অবতরণ করেননি আর এ উদ্দেশ্যে কোন নবী প্রেরণ করেননি। মহান সত্তার কাছে যে পয়গাম এসেছে,তার উদ্দেশ্যই হচ্ছে এই যে, দুনিয়া যে সব ভ্রান্ত পথে এগিয়ে চলছে, সেগুলোকে বর্জন করে একটি সোজা পথ নির্মাণ করতে হবে, তার বিপরীত পথগুলোকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে এবং দুনিয়াকে সেসব পথ থেকে সরিয়ে নেবার চেষ্টা করতে হবে। ঈমানদার লোকদের একটি জামায়াত গঠন করতে হবে এবং সে জামায়াত শুধু নিজে সোজা পথে চলবেনা; বরং দুনিয়াকেও সেদিকে টেনে আনবার চেষ্টা করবে।
-----------------------------------------
লেখকঃ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী রহঃ
গ্রন্থঃঃ  ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব।

Post a Comment

0 Comments