Recent Tube

ইসলামের দৃষ্টিতে নির্বাচন ব্যাবস্হাপ্রত্যক্ষ নির্বাচন ও পরোক্ষ নির্বাচন; ইবনে যুবাইর।

ইসলামের দৃষ্টিতে নির্বাচন ব্যাবস্হা;
প্রত্যক্ষ নির্বাচন ও পরোক্ষ নির্বাচন;

     শুধু মাদখালিদের নির্বাচন    
   কেন্দ্রীক ভ্রান্তির জবাব;

    রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন করা জাতির এক সাধারণ ও মৌলিক অধিকার। কিন্তু এ অধিকার তারা কিভাবে প্রয়োগ করবে? জাতির ব্যক্তিগণ প্রত্যক্ষ ও সরাসরিভাবে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন করবে, না পরোক্ষভাবে? সত্যি কথা হচ্ছে এই যে, শরীয়তে এ ব্যাপারে স্পষ্ট ও অকাট্যভাবে কোনো পদ্ধতি নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। বরং তা জাতির ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে, তারা দেশ-স্থান-কাল খেদে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যে কোনো একটা পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে। এ উভয় ধরনের নির্বাচনের-ই অবকাশ ইসলামী শরীয়তে স্বীকৃত। তবে কুরআনের আয়াতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের সনদই অনেকটা স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়।

কুরআনের আয়াত,

       ---------------- আরবী------------------ 

    তাদের যাবতীয় ব্যাপারে পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতেই মীমাংসিত হয়।-সূরা আশ শুরাঃ ৩৮

    বাহ্যত ও স্পষ্টত প্রত্যক্ষ নির্বাচনকেই সমর্থন করে। আর রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন যেহেতু গোটা জাতির একটা সাধারণ অধিকার ও দায়িত্বের ব্যাপার, কাজেই এ কাজের জন্যে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যেন শরীয়ত অনুযায়ী ভোটের অধিকারী প্রত্যেকটি মানুষই ভোটদান করতে পারে। এ ছোট আয়াতের ভিত্তিতে আমরা এইমাত্র যা কিছু বললাম তার স্পষ্ট সমর্থন পাওয়া যায়, এ আয়াতের বিভিন্ন তাফসীরে। ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী লিখেছেনঃ

------------------------ আরবী------------------------ 

     যখন কোনো ঘটনা সংঘটিত হতো তখন তারা সকলে একত্রিত হতেন এবং পরস্পর পরামর্শ করতেন। এজন্যে আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে তাদের প্রশংসা করেছেন। এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, তাঁরা কেউ নিজের ব্যক্তিগত মতে ভিত্তিতে কাজ করতেন না। বরং সবাই একত্রিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কোনো সিদ্ধান্তই গ্রহণ করতেন না।

   তাফসীরুর রাজী, ৩৭খণ্ড, ১৭৭পৃ.।

      অবশ্য পরোক্ষ নির্বাচনের সমর্থন পাওয়া যায় ইসলামের স্বর্ণযুগের ইতিহাসে খিলাফতে রাশেদার নির্বাচনের। এ ছিলো ইসলামের পূর্ণ প্রতিষ্ঠার যুগ। খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রত্যেকের নির্বাচনে প্রথমে অংশগ্রহণ করে মুসলিম জাতির অল্পসংখ্যক লোক। ইসলামী রাষ্ট্র বিজ্ঞানের পরিভাষায় তাদের বলা হয় আহলুল হল্লে ওয়াল আকদ-দায়িত্ব সম্পন্ন সমঝদার লোক। পরে মদীনায় অবস্থিত অপরাপর লোকেরা তাদের অনুসরণ করেছে, তারাও তাকেই খলীফারূপে মেনে নিয়েছে যাকে ইতিপূর্বেই সমাজের দায়িত্বশীল লোকেরা খলীফা পদে বরণ করে নিয়েছে। সমস্ত মুসলমান একত্রে একমত হয়ে কোনো খলীফাকেই নির্বাচিত করেনি। এ বিষয়ে যেমন খলিফাগণ নিজেরা কোনো আপত্তিও তোলেননি, তেমনি জনগণের মধ্য থেকেও এ সম্পর্কে কোনো আপত্তি উত্থাপিত হয়নি। ফলে রাষ্ট্রপ্রধানের এ পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির যুক্তিযুক্ততার ওপর তাদের ইজমা হয়েছে বলা চলে। পরোক্ষ নির্বাচনের স্বপক্ষে এটি এটি দলীল বটে। অতএব রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উভয়ের যে কোনো একটি পদ্ধতি গ্রহণ করার অধিকার জাতির রয়েছে বলা চলে। কেননা কোনো অধিকার সম্পন্ন ব্যক্তি নিজেই তার অধিকারের কাজটি সম্পন্ন করবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। বরং সে ইচ্ছে করলে এ কাজের জন্যে স্বেচ্ছায় অপর একজনকে দায়িত্বশীলও বানাতে পারে। ইসলামের ফকীহগণও এ পরোক্ষ নির্বাচনের স্বপক্ষেই মত জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেনঃ রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন করা আহলুল হল্লে ওয়াল আকদেরই দায়িত্ব। অতএব এ কাজে সমগ্র জাতিকে যোগদান করানো কোনোই প্রয়োজন নেই। আল্লামা ইবনে খালদুন তার ইতিহাসের ভূমিকায় লিখেছেনঃ

------------------------ আরবী------------------------ 

     একথা যখন স্থির হলো যে, খিলাফতের পদ কায়েম করা সর্বসম্মতভাবে ওয়াজিব তখন তা ফরযে কেফায়া পর্যায়ের কাজ এবং তা সম্পাদনের ভার আহলুল হল্লে ওয়াল আকদ-এর ওপর বর্তাবে। এ কাজ সম্পাদন করা তাদেরই দায়িত্ব এবং জনগণের উচিত তাঁদের নির্বাচনকে মেনে নেয়া।-মুকাদ্দমা ইবনে খালদুল, ১৯৩ পৃ.।

 ইমাম মারওয়ারদী এ সম্পর্কে লিখেছেনঃ

------------------------ আরবী------------------------ 

       ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন দুভাবে হতে পারেঃ হয় তা আহলুল হল্লে ওয়াল আকদ-এর ভোটে ও নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হবে, না হয় পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপ্রধানের মনোনয়নে।-আল মাওয়ারদী, ৪র্থ পৃষ্ঠা।

      কিন্তু ইসলামী ইতিহাসের এই ব্যাখ্যা-ই চূড়ান্ত, এর অন্য কোনো রূপ ব্যাখ্যা চলে না-এমন কথা বলা যায় না। আমরাও এর একটা ব্যাখ্যা পেশ করতে পারি এবং তা এভাবে যে, খোলাফায়ে রাশেদীনের সব কয়জনেরই নির্বাচন সাধারণ ও প্রত্যক্ষ নির্বাচন তখনকার সময়ে ও তদানীন্তন ভৌগলিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়ে সম্ভবপর ছিলো। প্রত্যেক খলীফার নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে এ ব্যাখ্যা কিছুমাত্র ভিত্তিহীন বিবেচিত হবে না। বিশেষত কুরআন মজীদ থেকে যখন প্রত্যক্ষ নির্বাচনেরই সমর্থন পাওয়া যায়, তখন তার বিপরীত ব্যাখ্যা দেয়ার কোনো প্রয়োজন থাকতে পারে না।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ প্রবন্ধ লেখক  ও কলামিস্ট।      

Post a Comment

0 Comments