Recent Tube

ইমাম হোসাইন রাঃ কি রাজ্য ও সিংহাসনের দাবিদার ছিলেন? এবং এই জন্যই কি তিনি জান কোরবান করে গেছেন? শামীম আজাদ।

 মাদখালীদের দুটি ভ্রান্ত ধারণা হচ্ছে, তাঁরা বলে
১//হোসাইন রাঃ এর ইরাক গমন ছিল ইয়াজিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে নিছক শাসন ক্ষমতা লাভ করা। এবং মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হারাম!!

২// তাঁরা আরো বলে, হাদিসে আছে মুসলিম শাসকের ভুল ত্রুটি থাকলেও আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে! তাই হোসাইন রাঃ এর সিদ্ধান্ত ছিল ভুল!!
মাদখালী ফেরকার দাবী সঠিক, নাকি হোসাইন রাঃ এর উপর অপবাদ আসুন দেখি।
-------------------
"ইমাম হোসাইন রাঃ কি রাজ্য ও সিংহাসনের দাবিদার ছিলেন? এবং এই জন্যই কি তিনি জান কোরবান করে গেছেন?? 

ইমাম হোসাইন রাঃ এর বংশের উন্নত নৈতিক চরিত্র সম্পর্কে যে ব্যক্তি কিছুমাত্র অবগত আছেন, তিনি কখনও এই ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করতে পারেন না যে, তার মত লোক ব্যক্তিগত কর্তৃত্ব অর্জনের জন্য কখনো মুসলমানদের মধ্যে খুন-খারাবি করতে পারেন। যারা মনে করে তার বংশ মুসলমানদের উপর রাজত্ব ও কর্তৃত্বের দাবিদার ছিল, তারা হযরত আবু বকর রাঃ থেকে আমির মুয়াবিয়া রাঃ পর্যন্ত 50 বছরের ইতিহাস দেখতে পারে যে, কর্তৃত্ব লাভের জন্য যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং রক্তপাতের ঘটনা কখনো তাদের নীতি ছিল না।
 কাজেই একথা মেনে নিতেই হবে যে তৎকালে হযরত ইমাম হুসাইন রাঃ এর দৃষ্টি, ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রকৃত প্রাণশক্তি এবং ব্যবস্থার মধ্যে কোন বিরাট পরিবর্তনের পূর্বাভাস লক্ষ্য করেছিলেন এবং এর গতিরোধের জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া তার নিকট অত্যধিক প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিল। এমনকি এইজন্যে প্রয়োজনবোধে সশস্ত্র জিহাদে অবতীর্ণ হওয়াকেও তিনি শুধু বৈধ‌ই নয়, অবশ্য করণীয় বা ফরজ বলে মনে করেছেন"।

( মহররমের শিক্ষা, পৃষ্ঠা,৮)

"অনেকে ইয়াজিদের ব্যক্তিগত ভূমিকাকে খুব স্পষ্ট এবং জোরালো ভঙ্গিতে পেশ করে থাকেন, যার ফলে জনসাধারণের মধ্যে এ ভুল ধারণার প্রসার লাভ করেছে যে, ইমাম হোসাইন রাঃ যে পরিবর্তনের গতিরোধ করতে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তা শুধু এই ছিল যে, একজন দুশ্চরিত্র ব্যক্তি কর্তৃত্বের আসনে সমাসীন হয়েছিলেন। 
কিন্তু ইয়াজিদের চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের যে নিকৃষ্টতর ধারণা পেশ করা যেতে পারে, তার সবটুকু হুবহু মেনে নেবার পরও, একথা স্বীকার্য নয় যে রাষ্ট্রব্যবস্থা যদি নির্ভুল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তাহলে নিছক কোন দুশ্চরিত্র ব্যক্তির শাসন ক্ষমতা দখল এমন কোন ভীতিপ্রদ ব্যাপার ছিল না।
যার ফলে ইমাম হোসাইন রাঃ এর মত বিচক্ষণ এবং শরীয়তে গভীর অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি বে-সবর হয়ে পড়েছিলেন। 
কাজেই এই ব্যক্তিগত ব্যাপারকে সেই আসল কারণ বলা যেতে পারে না, যে জন্য ইমাম হোসাইন রাঃ অস্থির হয়ে পড়েছিলেন।

গভীরভাবে ইতিহাস বিশ্লেষণের পর যে কথা আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হয় তা হল এই যে,, ইয়াজিদের যুবরাজ্যে অধিষ্ঠা, তারপর সিংহাসনে আরোহণের ফলে আসলে যে ত্রুটির সূচনা হচ্ছিল তা ছিল "ইসলামী রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা" "তার প্রকৃতি" এবং "উদ্দেশ্যের পরিবর্তন"।

( মহররমের শিক্ষা, পৃষ্ঠা, ৯)

" রাজতন্ত্রের পথে পা রাখার সাথে সাথেই মুসলমানদের রাষ্ট্র এবং শাসক সমাজ রোমের কাইসার ও ইরানের কিসরার রীতিনীতি এবং চালচলন অনুকরণ করল। ইনসাফের পরিবর্তে জুলুম ও নিপীড়ন, আল্লাহ ভীতির পরিবর্তে উশৃংখলতা, চরিত্রহীনতা, গান-বাজনা এবং বিলাসিতার স্রোত প্রবাহিত হলো। শাসক সমাজের চরিত্র ও কার্যাবলীতে হারাম ও হালালের কোনো পার্থক্য থাকলোনা। রাজনীতির সাথে নৈতিকতার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেলো। আল্লাহকে ভয় করার পরিবর্তে এই শাসক সমাজ বান্দাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করতে লাগলো। মানুষের ঈমান ও বিবেককে জাগ্রত করার পরিবর্তে বকশিসের লোভ দেখিয়ে তার স‌ওদা শুরু হয়ে গেল। ইসলামী শাসনতন্ত্রের বুনিয়াদি নীতির মধ্যে এ পরিবর্তন সূচিত হলো"।

(মহররমের শিক্ষা, পৃষ্ঠা,১৩)

''বিচক্ষণ ব্যক্তি গাড়ির দিক পরিবর্তন দেখেই এ কথা অনুভব করতে পারেন যে, এবার তার পথ পরিবর্তন হচ্ছে এবং যে পথে এখন সে অগ্রসর হচ্ছে তা শেষ পর্যন্ত তাকে কোথায় নিয়ে যাবে। ইমাম হোসাইন রাঃ এই দিক পরিবর্তন লক্ষ্য করে গাড়িকে তার সঠিক লাইনে পরিচালিত করার জন্য নিজের জান কোরবান করে দেবার ফয়সালা করলেন"।।

(মহররমের শিক্ষা, পৃষ্ঠা,১০)

সূতরাং এটি প্রমাণিত হল, ইমাম হোসাইন রাঃ ইসলামী খেলাফতকে প্রতিষ্ঠিত রাখতে ইরাক আগমন করেছিলেন এবং তিনি ইয়াজিদের ব্যক্তিগত দোষ ত্রুটির জন্য তার বিরুদ্ধাচরণ করেননি বরং ইসলামী খেলাফত ধ্বংস করে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই তার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি ইসলামের জন্য মাথা দিয়েছেন কিন্তু ইয়াজিদের রাজতন্ত্রের হাতে বায়াত হননি।

---- রাইয়ান ইয়ামিন আইমান

Post a Comment

0 Comments