Recent Tube

দ্যা চয়েস ইজ ইউরস-১৫, জিয়াউল হক।

 দ্যা চয়েস ইজ ইউরস,
                        পর্ব-১৫,
-----------------------------------------  
     বাস্তবিকই আব্দুল মুত্তালিবের বড় পুত্র হারিস যে ছোট ভাই আব্দুল্লাহকে ইয়াসরিব থেকে আনতে গিয়েছিলেন, তার ফেরার সময় হয়ে গিয়েছিল। আব্দুল মুত্তালিব’সহ পুরো পরিবার তাদের ফেরত আসার অপেক্ষায় থেকে অধির আগ্রহে দিন গুনছিলেন। প্রায় প্রতিদিনই উম্মে আইমান আব্দুল মুত্তালিবের কাছে খবর নিতে যেতেন। কান খাড়া করে রাখতেন। একদিন তিনি আব্দুল মুত্তালিবের কাছেই ছিলেন এমন সময় সত্যি সত্যিই হারিস ইয়াসরিব থেকে ফিরে আসলেন। তবে তিনি ফিরলেন একা।বৃদ্ধ আব্দুল মুত্তালিব, কিশোরী উম্মে আইমান’সহ সকলের জন্য হৃদয় বিদির্ণকারী সংবাদটাই এলো। হারিস জানালেন, তিনি মক্কা থেকে ইয়াসরিব গিয়ে পৌছুনোর আগেই আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করেছেন।
সংবাদটা শুনে বৃদ্ধ আব্দুল মুত্তালিবের ভেতরে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল এবং তিনি কিভাবে তা সামাল দিয়েছেন, সে ইতিহাস আমাদের সামনে নেই, সে ঘটনার কোন চিত্রও আমাদের জানা নেই। নিশ্চয়ই একজন বৃদ্ধ বাবার জন্য সেটা খুব কষ্টের একটা বিষয় ছিল, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
তবে কিশোরী উম্মে আইমান সংবাদটা শোনামাত্র চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিলেন। এই আব্দুল্লাহ ছিলেন তাঁর আসল মনিব। তিনিই তাকে মক্কার বাজার থেকে কিনে এনে নিজের বাড়িতে আপন কন্যা কিংবা ছোট বোনের মতো ঠাঁই দিয়েছেন।
কিন্তু তার চেয়েও বড়ো যে কারণে উম্মে আইমান চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিলেন, সেটা হলো, বাড়িতে সন্তানসম্ভবা স্ত্রী আমিনা যে তার প্রিয় স্বামীর জন্য ব্যকুল হয়ে অপেক্ষা করছেন! উম্মে আইমান বিগত প্রায় দশটি মাস গর্ভবতী আমিনাকে কাছ থেকে দেখছেন, স্বামীর অনুপস্থিতিতে আমিনা কি নিদারুণ নি:সঙ্গতা আর মানসিক যন্ত্রণায় ভেতর দিয়ে দিন রাত পার করছেন তার চাক্ষুস স্বাক্ষী তিনি নিজেই!
বাতাসের আগে আগে ইয়াসরিব থেকে হারিসের ফিরে আসা এবং সেখানে আব্দুল্লাহর ইন্তেকালের খবর ছড়িয়ে পড়তে থাকলো। উম্মে আইমানের খেয়াল হলো; ঘরে আমিনা একা রয়েছেন। এরকম দু:সহ খবরটা শোনার সময় যদি তিনি তাঁর পাশে না থাকেন, না জানি আবার কোন অঘটন ঘটে যায়। ভেবে উম্মে আঈমান ছুটলেন আমিনার ঘরের দিকে। নারীসূলভ মন ও মননে তিনি ছুটলেন উচ্চস্বরে বিলাপ করতে করতেই।
কয়েকটা কদম মাত্র। তাঁর বিলাপধ্বনী মা আমিনার কানে পৌছুতে দেরি হলো না। কি ঘটেছিল, তার বহুরকম চিত্র কল্পনা করা যায়। তবে আমরা বরং স্বয়ং উম্মে আইমানের নিজের ভাষায় সেটা দেখি, তিনি কি বলেন;
I screamed when I heard the news. I don't know ---- ----resplendent with the light of God.
ভাবানূবাদ: খবরটা শোনামাত্রই আমি চিৎকার করে উঠেছিলাম, এর পরে আর কোন কথা মনে নেই আমার, কেবল এটুকু মনে আছে যে, বিলাপ করতে করতে ছুটে গিয়েছিলাম আমিনার ঘর পানে, বিলাপ করছিলাম সেই লোকটার জন্য যে লোকটা আর কখনোই ফিরে আসবে না। আমি বিলাপ করছিলাম সেই মহান মানুষটির জন্য, যার জন্য আমরা এতোটা দিন অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে চলেছি! বিলাপ করছিলাম কুরাইশ বংশের গৌরব, মক্কার সবচেয়ে সুন্দর যুবক; আব্দুল্লাহর জন্য।
আমিনা খবরটা শুনেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলেন। সারা বড়িতে আর কেউ না, জীবন মৃত্যুর মাঝে তিনি যতোক্ষণ এরকমাবস্থায় ছিলেন, আমিই তাঁর পাশে ছিলাম সারাটাক্ষণ। বিশ্বকে আলোকিত করে এক রাতে তাঁর সন্তান মুহাম্মদ জন্ম না নেওয়া পর্যন্ত দিন রাতের সেই দু:সহ ও প্রলম্বিত সময়গুলো, আর কেউ না, আমিই তাকে দেখাশোনা করেছি।’
স্বামীকে নিয়ে মা আমিনার যতো স্বপ্ন ছিল, তিনি তাঁকে নিয়ে যতোরকম কল্পনা করতেন মনে মনে, তা শেষ হয়ে গেল চীরদিনের মতোই। বিয়ের পরে একটা বছরও পার হলো না, কয়েকটা মাস মাত্র, তাতেই তাঁর সংসার জীবনের যবনিকাপাত ঘটলো। স্বামীর সাহাচর্য পেয়েছেন সম্ভবত মাসখানেক বা তারও কিছু বেশি। এই স্মৃতি নিয়েই তাকে বাঁকি জীবনটা কাটাতে হবে।
মা আমিনার জীবনে স্বামীর স্থায়ী স্মৃতি হিসেবে আসছে তাঁর সন্তান। আফসোস, বাবা জানতে পারলেন না যে তিনি বাবা হতে চলেছেন। আর তাঁর যে সন্তান আগামি কিছুদিনের মধ্যেই এ পৃথিবীতে আসছে, সেও কোনদিন বাবার মুখখানা দেখবে না, কোনদিনও বাবার আদর, সোহাগ, স্নেহ ভালোবাসা ভোগ করতে পারবে না!
যে কোন নারীর জন্য স্বামীবিহীন জীবন যাপন এক দূর্বিষহ যন্ত্রণাময় জীবন। তার উপরে যদি মৃত স্বামীর ঔরসের সন্তান থাকে, তা হলে সেটা আরও বেশি স্মৃতিকাতর ও যন্ত্রণাদায়ক বিষয় হয়ে থাকে। বাবাহারা সন্তানকে প্রতিপালন একজন বিধবা নারীর একার পক্ষে এক বিরাট চ্যালেঞ্জিং কাজও। সেরকমই এক পরিস্থিতিতে পড়ে গেলেন মা আমিনা।
এ সময়টাতে মা আমিনার মানসিক চিত্রের সঠিক চিত্র আঁকা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। আমাদের সামনে কোন একক সুত্র থেকে তার কোন বর্ণনাও নেই। আমরা বিভিন্ন সুত্র থেকে যে বিচ্ছিন্ন এবং বিক্ষিপ্ত তথ্য পাই, সেগুলো যখন এক এক করে পরস্পরের সাথে গাঁথি, তখন মা আমিনার এমন একটা মানসিক চিত্রের দেখা পাই, যেটা এরকম অবস্থায় যে কোন নারীর ক্ষেত্রেই অতি স্বাভাবিক বিষয়।
একজন সন্তানসম্ভবা যুবতি নারী যিনি বিয়ের পর মাত্র সপ্তাহদু’য়েক বা তার সামান্য কিছু বেশি সময় স্বামীর সান্নিধ্য পেয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত অপ্রত্যাশিতভাবে তাঁর স্বামীকেই হারালেন এবং বিধবা হয়ে পড়লেন। এরকম অবস্থায় সেই নারীর মানসিক পরিস্থিতি কি হতে পারে? কেমন হতে পারে? সেটা উপলব্ধী করা কারো পক্ষেই অসম্ভব কোন বিষয় নয়।
তবে যে বিষয়টা অসম্ভব, সেটা হলো, এই করুণ ও বেদনাদায়ক পরিস্থিতির সঠিক চিত্র আঁকা। একজন দক্ষ সাহিত্যিকের পক্ষেও সম্ভব নয় সে করুণ পরিস্থিতির কোন সঠিক চিত্র ভাষায় বিবৃত করা বা ফুটিয়ে তোলা। এ পর্যায়ে এসেই আমরা দেখতে পাই মা আমিনার মানসিক চিত্রের সঠিক রুপ। আর সেটা আমরা দেখতে পাই বৃদ্ধ আব্দুল মুত্তালিবের সাথে মা আমিনার কথোপোকথন ও আচরণের মাধ্যমে। (ক্রমশ, প্রকাশিতব্য গ্রন্থ থেকে সংক্ষিপ্তকৃত)
-------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ও বিশ্লেষক।          

Post a Comment

0 Comments