Recent Tube

মৃত ব্যাক্তির ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে খতম ও খতমে তারাবীহ্ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ; মাওলানা মনিরউদ্দীন।

মৃত ব্যাক্তির ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে খতম ও খতমে তারাবীহ্ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ-;

_______________________________
  আমাদের দেশে একটি প্রথা প্রচলিত রয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির প্রতি ছওয়াব পৌঁছানোর উদ্দ্যেশে নিধা'রিত বা অনিধা'রিত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে খতমে কুরআন পড়ানো হয় এবং পবিত্র রামাদান মাসে অধিক ছওয়াবের আশায় খতমে তারাবির ব্যবস্থা করা হয়। ২৭ শেষ রামাদান হাফিজ সাহেব খতম করার সাথে সাথে সাধ্যানুযায়ী তাকে টাকা-পয়সা, হাদিয়া-তুহফা পারিশ্রমিক হিসাবে প্রদান করা হয়। কোথাও কোথাও আবার হাফিজ সাহেবকে বড় অংকের টাকা প্রদানে মুসল্লিগণকে বাধ্য করা হয়। এ বিষয়ে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন এসে যায়ঃ--(১)পারিশ্রমিক বা টাকা-পয়সার বিনিময়ে খতমে কুরআন জায়েজ কি-না এবং মৃত ব্যক্তি এর ছওয়াব পাবেন কি না? (২)প্রচলিত খতমে তারাওয়ীহ্ সম্পর্কে শরিয়তের ফয়সালা কি? উপরোক্ত প্রশ্নের জবাবে কোরান-হাদিস ও ফিক্হ্ শাস্ত্রের দলিল উদৃিত করে আলোচনা হলো। ঃ- মহাগ্রন্থ আল-কোরানের সুরা বাকারার ৪১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেনঃ-"এবং তোমারা আমার আয়াত সমুহের বিনিময়ে কোন নগন্য বস্তু গ্রহণ করোনা "। উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ শফী (রাঃ) স্বীয় তাফসির গ্রন্থ মা'আরেফুল কোরআনের ১ম খণ্ডের ২৩৪ পৃষ্ঠায় ইছালে ছওয়াব উপলক্ষে খতমে কোরানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা সব'সম্মতভাবে না জায়েজ শিরোনামে লিখেছেন, " পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মৃতদের ইছালে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে কোরান খতম করানো বা  অন্য-দোয়া কালাম ও অজিফা পড়ানো হারাম। এখন যেহেতু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে পড়া হারাম সুতরাং যে পড়বে এবং যে পড়াবে উভয়ই গুনাহগার হবে। বস্তুতঃ যে পড়েছে সে-ই যখন কোন ছওয়াব পাচ্ছে না,--তখন মৃত আত্মার প্রতি সে কি পৌছাবে? মহানবী(সঃ) এরশাদ করেছেন "তোমারা কোরান মজিদ তেলাওয়াত করে এবং বিনিময়ে কিছু ভক্ষণ করোনা (অথা'ত পারিশ্রমিক গ্রহণ করোনা)। অপর হাদিসে মহানবী (সাঃ) এরশাদ করেছেন " বণি'ত আছে যে, উবাই ইবনে কাব (রাঃ) এক  ব্যক্তিকে কোরান তেলাওয়াত করে শুনালেন,বিনিময়ে সে ব্যক্তি তাকে একটি ধনুক দান করলো, উবাই ইবনে কা'ব(রাঃ) নবী করিম (সঃ) কে এবিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। নবী করিম( সঃ) বললেন --"তুমি কি পছন্দ কর যে আল্লাহ তোমার উপর জাহান্নামের একটি ধনুক নিক্ষেপ করবেন? কা'ব (রাঃ)বল্লেন না। নবী করিম সঃ বললেন তাহলে এটা ফেরত দাও। এপয'ন্ত কোরান তেলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ সম্পর্কে কোরান ও হাদিসের দলিল উদৃত করে তেলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা না জায়েজ প্রমাণিত করা হলো। নিম্নে সব'জন স্বীকৃত ফিকহ্ শাস্ত্রের বিভিন্ন কিতাব থেকে উপরোক্ত বিষয়ে দলিল উদৃত করা হলো। ঃ- খোলাসাতুল ফতোয়া কিতাবের ৩য় খণ্ডের ১১৫ পৃষ্ঠায় কিতাবে মুহিত কিতাব থেকে উদৃত করা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি একজন কারী সাহেবকে পারিশ্রমিক প্রদানের বিনিময়ে তাকে তেলাওয়াত করে শুনানোর জন্য নিয়োজিত করে তবে তা জায়েজ নয়। (কারণ এ প্রকার তেলাওয়াত করা ও শুনা গুনাহের কাজ)। ফতোয়ায়ে বাজ্জাজিয়ার ৫ম খণ্ডের ৩৯ পৃষ্ঠায়  স্পষ্ট ভাবেই বণি'ত আছে "পারিশ্রমিক প্রদানের বিনিময়ে তেলাওয়াত শুনানোর জন্য কোন ক্বারী ব্যক্তিকে নিয়োজিত করা জায়েজ নয়"। আল্লার অনুগ্রহে বান্দা এবাদতের সওয়াব লাভ করে থাকে, -দাবীর ভিত্তিতে নয়। কেননা বান্দা আল্লার নৈকট্ট লাভ ও এবাদতের জন্য যে আমল করে, তা সে নিজের জন্যই করে। মহান আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন" যে ব্যক্তি নেক আমল করে তা নিজের জন্যই করে "। যে ব্যক্তি নিজের জন্য নেক আমল করে  এর জন্য অপর কেহ পারিশ্রমিক প্রদান করা জায়েজ নয়। উক্ত নীতির ভিত্তিতে ফরজ, ওয়াজিব অথবা নফল এবাদতের জন্য কোন প্রকার বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ নয়। যেহেতু আনুগত্যশীল বান্দাকে এবাদত ও আনুগত্যের বিনিময়ে সওয়াব প্রদানের ওয়াদা শরিয়তে দেওয়া আছে। সুতরাং আনুগত্যশীল ব্যক্তি নিজের নেক আমলের জন্য সফলতা লাভ করবে। তার পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েজ নয় । (বাদায়ে সানায়ে-৪ থ' খণ্ড পৃষ্ঠা ৪৬ দ্রঃ)। হানাফি মাজহাবের সুবিখ্যাত কিতাব রদ্দুল মুহতার (শামী) গ্রন্থে উল্লেখ আছে " কোরআন তেলাওয়াতকারীকে কোনরুপ দান (টাকা-পয়সা ইত্যাদি) করা বাতিল ও অবৈধ। কারণ তা কোরান তেলাওয়াতের পারিশ্রমিক গ্রহণ করার মতো এবং খলিফাদের মধ্যে কেহ এরূপ পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন নাই। অনুরূপ তেলাওয়াতের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করে মৃতদের প্রতি ছওয়াব পৌঁছানো অবৈধ ও জায়েজ নয়। হানাফি মাজহাবের কোন ইমাম (ইমাম আবু হানিয়া(রাঃ) ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ) ও ইমাম মুহাম্মদ (রঃ) থেকে তেলাওয়াতের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করার অনুমতি দেওয়া হয় নাই। বরং ফিকাহ শাস্রবিধ ইমামরা বলেছেন "মাল-সম্পদ  টাকা-পয়সার বিনিময়ে কোরান তেলাওয়াতকারী কোন ছওয়াব পাবে না। সুতরাং তেলাওয়াতকারী যখন নিজেই সওয়াব পাবে না তখন সে মৃতদের প্রতি কি পৌছাবে? (শামী ৬যঠ খণ্ড পৃষ্ঠা ৫৭ দ্রঃ)। উক্ত কিতাবে আরও উল্লেখ আছে, দুনিয়ায় মাল-সম্পদের উদ্দেশ্যে কোরান তেলাওয়াত করা জায়েজ নয়। এরূপ তেলাওয়াতের জন্য মাল-সম্পদ গ্রহণকারী এবং দাতা উভয়ই গুনাহগার হবে (শামী ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা ৭৩)। বত'মান যূগের ফকিহ্ মুফতি মাওলানা রশিদ আহমদ সাহেব আহসানুল ফতোয়ার ৩য় খণ্ডের ৫১৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন " কোরান তেলাওয়াতকারী কিছু গ্রহণ করা হারাম এবং এরূপ তেলাওয়াতকারীর পিছনে তারাবির নামাজ না জায়েজ। হযরত মাওলানা  আশরাফ আলী থানবী(রঃ) এমদাদুল ফতুয়ার ১ম খণ্ডের ৪৭৫ পৃষ্ঠা থেকে ৪৮১পৃষ্ঠা পয'ন্ত তারাবির নামাজে বিনিময় প্রদান করে কোরান তেলাওয়াত এবং টাকা দিয়ে খতম পড়ানো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে অতঃপর তার রায় প্রদান করেছেন "এরূপ কাজ বাতিল ও অবৈধ এবং ইসলামী শরিয়ত বিরোধী। এরূপ খতমে কখনো সওয়াব হাছিল হয় না বরং গুনাহই হয়। মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ শফী (রঃ) জাওয়াহিরুল ফিকাহ কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৮২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন পারিশ্রমিক ব্যতীত তারাবির নামাজে কোরান শুনানোর যদি কোন হাফিজ না পাওয়া যায় তবে ছোট ছোট সুরা দিয়ে তারাবীহ্ এর নামাজ আদায় করবে। আল্লামা আইনী (রঃ) হেদায়া কিতাবে লিখেছেন, " কোরান তেলাওয়াতকারীকে হাদিয়া, টাকা-পয়সা দেওয়া যাবে না, তাতে দাতা ও গ্রহীতা উভয়ই গুনাহগার হবে। " উল্লিখিত দীর্ঘ  আলোচনার সারমর্ম হলো ঃ
-(১)টাকা-পয়সার বিনিময়ে খতম পড়ানো এবং পড়া কোনটাই জায়েজ নয়। এ প্রকার তেলাওয়াতে সওয়ার হয় না বরং দাতা ও গ্রহীতা উভয়ই গুনাহগার হয়।৷  তাই  ধম' -প্রাণ মুসলমান ভাইদেরে বিষয়টি গভীর ভাবে চিন্তা বিবেচনা করে শুনাহ্ থেকে বাঁচার জন্য আকুল আবেদন করছি।
---------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ  ও মাওলানা।  

Post a Comment

0 Comments