Recent Tube

দ্যা চয়েস ইজ ইউরস: পর্ব: ১৮-২০; ৷ জিয়াউল হক।


         দ্যা চয়েস ইজ ইউরস: 
                           পর্ব: ১৮-২০;
 
        একজন অবৈধ সেনাশাসক হলেও সানাআ’য় গির্জা নির্মাণ, খৃষ্টবাদের প্রসারে প্রচেষ্টা এবং ইয়েমেনজুড়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করায় বাইজান্টাইন সম্রাট জাষ্টিনিয়ান, পারস্যের খসরু, উত্তর আরবের প্রভাবশালী গোত্রপ্রধান তৃতিয় মুনজির, ঘাসানাইড সম্রাট হারিস এরা সবাই’ই আবরাহার প্রশংসায় পঞ্চমূখ হয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে। এখন তার এই গির্জা অবহেলায়, অনাদরে পড়ে থেকে আরবদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হলে আবরাহার ইজ্জত থাকছে না!

রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যের পরে ইয়েমেন ছিল বাইজান্টাইন সম্রাটজ্যের সমকক্ষ প্রায়, বিশ্বের তৃতীয় বা চতুর্থ সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি। অথচ ঐ ধুসর মরুভূমির বেদুঈন আরবদের কাছে ছাদবিহীন মাটির একটা ঘর, সেটাই সবচেয়ে আকর্ষণীয় হয়ে সারা আরববাসীকে পঙ্গপালের মতো টানে!

সে ত্বরিৎ প্রস্তুতিতে কাবা গুড়িয়ে দিতে সাতচল্লিশ হাজার পদাতিক ও তেরো হাজার অশ্ব ও উষ্ট্রারোহী’সহ ষাট হাজার সৈন্যের সমাবেশ ঘটায়। তা ছাড়ও তেরোটা হাতি ছিল। যুদ্ধে সেকালে হাতির ব্যবহার মোটেও আশ্চর্জজনক ছিল না, আবরাহা নিজেও একশত হাতিসহ প্রায় লাখখনেক সৈন্য নিয়ে বাদশাহ জু’নেওয়াজকে যুদ্ধে পরাজিত করেছে। 

কিন্তু মক্কার ক্ষেত্রে হাতির ব্যবহার আশ্চর্যজনক বিষয়, কারণ, মক্কায় কোনো দূর্ভেদ্য দূর্গ ছিল না, যার দেয়াল বা দরোজা ভাংতে হাতির প্রয়োজন পড়বে। তার চুড়ান্ত লক্ষ্যস্থল কাদাামটির তৈরি কাবা; ছাদবিহীন একটা ছোট্ট ঘর, ভেতরে কয়েকটা মূর্তি। আঙ্গিনাও সবার জন্য উন্মুক্ত। কোন প্রহরী বা সেনাবাহিনীর অস্তিত্ত ছিল না সেখানে। এটাই প্রমাণ করে, আবরাহার ক্ষোভ ও আক্রোশের তীব্রতা কতটা ব্যপক ছিল।

মক্কা ও তার আশপাশ এলাকার আবহাওয়াও হাতির জন্য মোটেও অনূকুল নয়। কারণ, হাতির জন্য প্রয়োজন প্রচুর পানি ও আদ্রতাপূর্ণ আবহাওয়া, যা মক্কায় ছিল না। এখানকার গরম অসহনীয় কেবলমাত্র এই কারণে যে, বাতাসে আদ্রতা নেই, বা খুবই কম। এরকম শুষ্ক আদ্রতাবিহীন আবহাওয়ায় হাতি অভ্যস্ত নয়।
 
আবরাহা কাবা ধ্বংস করতে যাবার কথা সারা আরবে ছড়িয়ে পড়ে। তায়েফবাসীরা টের পেয়ে যখন জানতে পারলো যে আবরাহার লক্ষ্য কেবলমাত্র মক্কার কাবা, তখন তারা স্বস্থির নি:শ্বাসই কেবল ফেললো না, বরং তাকে সহায়তা করলো পথচেনার লোক সরবরাহ করে। 

মক্কবাসীও খবরটা পেয়েছে। এতদ্বাঞ্চলে বিশাল বিশাল হাজার হাজার পাহাড়। পাহাড়ের অপরপ্রান্তে কি আছে? কে আছে? কারা আছে? তা জানা বা দেখার কোন উপায় নেই। তা হলে তারা খবর পেলেন কি করে?
উত্তর; আকাশে পাখির উপস্থিতি। মরুভূমিতে যে কোন কাফেলার উপর দিয়ে পাখি উড়াউড়ি করে। কাফেলার মানুষজন যাত্রাপথে বিরতি নেয়, রাত্রিযাপন করে। নিজেদের খাবার তৈরি করে, পশুগুলোকেও খাবার দেয়, পশুগুলো মলত্যাগ করে। এসবে পাখিদের জন্য উচ্ছিষ্ট খাবার থাকে। সেগুলো খেতেই কাফেলার উপর উড়াউড়ি করে, তাদের পিছু পিছু চলে।
 
বহুদুর পাহাড়ের ওপারে কিংবা মরুভূমিতে দৃষ্টির বাইরে কোনো কাফেলা আছে কি না, তা আকাশে পাখির আনাগোনাতেই বুঝা যায়। আজও মধ্যপ্রাচ্য ও মরুভূমির দেশগুলোতে এটা দেখা যায়। হাফর আল বাতেনের প্রায় চারশত কিলোমিটারের বিশাল মরুভুমিতে এ নিবন্ধকারও বেদুঈন আরবদের সাথে এরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন।

আরবরা চিরদিনই অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ এ কাজে, বলা চলে, বিশ্বসেরা। তাই প্রাচিনকাল থেকেই পারসিক, রোমান, গ্রিক, মিশরীয় বা ভারতীয় বাণিজ্য কাফেলাগুলো সর্বদাই মরুভূমির মধ্যে পানির উৎস সন্ধান ও পথ প্রদর্শনের জন্য তাদেরই ভাড়া করতো। 

আবরাহাা ষাট হাজার সৈন্য, তেরো হাজার উট, ঘোড়া এবং তেরোটা হাতির বিশাল বাহিনীর রসদের পরিমানও ছিল বিশাল। মরুভুমিতে ভালো আবহাওয়ায় একটাা কফেলা দিনে সর্বোচ্চ তিরিশ মাইল পথ অতিক্রম করতে পারলেও। আবরাহার পক্ষে সেটা সম্ভবপর ছিল না, কারণ, বিশাল বাহিনীর পক্ষে গুছিয়ে পথচলা সময়সাধ্য। তদুপরি, মরুভূমির বালুতে হাতির পথচলা অসম্ভব ধীরগতির। তাই তারা সম্ভবত দিনে বিশ বাইশ মাইল পথ চলতে পেরেছে। 

ফলে ঘনঘন যাত্রাবিরতি করে সৈন্য ও পশুদের খাবার এবং বিশ্রাম দিতে হতো নিয়মিত। বিশাল বাহিনী  ছয়শত মাইল পথে যেখানেই যাত্রাবিরতী করেছে সেখানে এবং সেই পথের পুরোটাই মাথার উপরে অগণিত পাখি খাদ্যের সন্ধানে উড়ে উড়ে এসেছে। আল্লাহপাকও তাঁর কুদরতে অস্বাভাবিক সংখক পাখী পাঠিয়েছেন। ফলে ৫৭১ খৃষ্টাব্দের পুরো ফেব্রুয়ারি মাসেই মক্কার আকাশে আবাবিল’সহ নানা পাখির অস্বাভাবিক উপস্থিতি মক্কাবাসীকে অগ্রিম সতর্কবার্তা দিয়েছে।

তারা বুঝেছে, বিরাট এক বহর আসছে, নিজেদের বাণিজ্য বহর হলে তারা জানতো। খোঁজ নিয়ে দেখলো আবরাহা বাহিনী’সহ আসছে কাবা ধ্বংস করতে। তাকে মোকাবেলার উপায় উপকরণ মক্কাবাসীর ছিল না। পথে শাহরান গোত্রের জু'নাফার এবং নাহিস গোত্রের নুফাইল ইবনে হাবিবের নেতৃত্বে ইয়েমেনের ক্বাহতানি আরবরা ঠেকাবার চেষ্টা করলেও আবরাহার বিশাল বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে বন্দি হয়। আবরাহা তাদেরকেই সাথে নিয়ে আসে পথপ্রদর্শক হিসেবে। 

দিনকয়েকের মধ্যেই আবরাহা মক্কার উপকন্ঠে এসে তাঁবু গেড়ে লোকজনের উট ঘোড়াগুলো ধরে এনেছে, সম্ভবত, সম্ভাব্য প্রতিরোধ ঠেকাতে। এগুলোর মধ্যে আব্দুল মুত্তালিবেরও একশত উট ছিল। আবরাহা হুনাসাহ আল হুমাইরি নামের দূত পাঠালো কাবার ত্বত্তাবধায়ক আব্দুল মুত্তালিবকে জানাতে; সে মক্কাবাসীর সাথে যুদ্ধের জন্য নয়, কাবা ধ্বংস করতে এসেছে। প্রতিরোধ না গড়লে মক্কাবাসী নিরাপদ। 

চুয়াত্তর বছর বয়সী আব্দুল মুত্তালিব জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেন। পুরো মক্কা তার দিকে তাকিয়ে। কাবা রক্ষায় তিনি হুনাসাকে বিকল্প প্রস্তাব দিলেন, সে অপরাগতা জানিয়ে পরামর্শ দিলো আবরাহার কাছে প্রস্তাবটা উত্থাপন করতে। ফেব্রুয়ারির শেষগোড়ায় উপায়হীন আব্দুল মুত্তালিব চললেন বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আবরাহার দরবারে। (ক্রশম, প্রকাশিতব্য গ্রন্থ থেকে)
লেখাটিঃঃ- 
(সংক্ষিপ্তসার)
----------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ও বিশ্লেষক।            

Post a Comment

0 Comments