Recent Tube

মরুভূমির হাতছানি -২৬ মুহিউল ইসলাম চৌধুরী মাহিম।

                  মরুভূমির হাতছানি 
                                    পর্ব-২৬,
   এশার নামাজ অাদায় করে পবিত্র কা'বার তাওয়াফে নামলাম ।  অাগে থেকে জানতাম বাইতুল্লাহর প্রথম দর্শণে যে দোয়া করা হয় সে দোয়াই অাল্লাহ কবুল করেন ।  মনে বড় অাশা নিয়ে কা'বাঘর দৃষ্টিসীমায় অাসার সাথে সাথে  প্রথমেই বিসমিল্লাহি অাল্লাহু অাকবার বলে মহান প্রভূর সামনে হামদ পেশ করলাম এবং হৃদয়ের  পুঞ্জিভুত কথাগুলোকে মহান মা'বুদের দরবারে অশ্রুসাক্ষী রেখে তুলে ধরলাম । পৃথিবীতে এমন কোন নবী রাসূল অাসেননি যারা এই ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুপাত করেননি । 
এখানে দাড়িয়ে চোখের পানি ঝরিয়েছেন প্রিয় নবী (স) ও তাঁর প্রিয় সাহাবীরা। 

   জমিনে ''বাইতুল্লাহ''অার তার ঠিক উপরে রয়েছে ৭ ম অাকাশে বাইতুল মা'মুর । প্রতিদিন সত্বর হাজার ফেরেশ্তা বাইতুল মা'মুর তাওয়াফ করেন। নবী (স) মে'রাজের রাতে বাইতুল মা'মুরে ঠেস দেওয়া অবস্থায় মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (অ) কে দেখছিলেন । 

   এই মুহুর্তে যেই ফেরেশতা বাইতুল মা'মুর তাওয়াফ করে গেলেন তিনি ক্বিয়ামাত পর্যন্ত অার কোনদিন অাল্লাহর এই ঘর তাওয়াফের সুযোগ পাবেননা । 

    একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের বললেন ”তোমরা কি জান, বায়তুল মামুর কী? তাঁরা বললেন, মহান আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালো জানেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
(বায়তুল মামুর) হল- ৭ম আসমানে একটি মসজিদ আছে কা’বা ঘরের সোজাসুজি (উপরে)
তা যদি পড়ে যায়, তাহলে তা কাবারই উপরে পড়বে।

   তাতে প্রত্যেক দিন সত্তর হাজার ফেরেশতা নামাজ পড়ে ও তাওয়াফ করে ।
তাঁরা যখন সেখান থেকে একবার বেরিয়ে যায়, তখন তারা আর সেখানে প্রবেশের সুযোগ পায় না। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)
কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় কোন মু'মিন ইচ্ছে করলে বাইতুল্লাহ প্রতিদিন তাওয়াফ করতে পারবেন। 

   তাওয়াফে নামার সাথে সাথে মনে পড়লো এই সেই মাতাফ বা তাওয়াফের স্থান যেখান দিয়ে তাওয়াফ করেছেন প্রিয়নবী (স) এবং তাঁর প্রিয় সাহাবীরা । 

   কা'বা ঘর চারকোন বিশিষ্ট একটি ঘর । কোরইশরা যখন কা'বা পুনঃনির্মাণ করেন তখন হুজুর (স) হাজরে অাসওয়াদ নামের জান্নাতি পাথর নিজ হাতে কা'বা ঘরের এক কোনায় স্থাপন করেন । হাজরে অাসওয়াদের এই কোন এবং হারাম শরীফের গাঁ ঘেষে লাগানে সবুজ বাতি বরাবর দাঁড়িয়ে তাওয়াফ শুরু করতে হয় ।
কাবা শরিফের গিলাফের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত আরবিতে ‘আল্লাহু আকবার’ শব্দের ক্যালিগ্রাফীখচিত লিখা রয়েছে। 
 তাওয়াফ শুরুর অাগে ''লাব্বাইকা অাল্লাহুম্মা লাব্বাইক '' পড়া বন্দ করে দিলাম। 

    নিয়ম হলো হাজরে অাসওয়াদে চুমু খেয়ে তাওয়াফ শুরু করা । যেহেতু অধিক সংখ্যক লোকের উপস্তিতির কারণে এই পাথরে চুমু দেওয়ার সুযোগ নেই সে হিসেবে হাত দিয়ে হাজরে অাসওয়াদের দিকে ইশারা করে হাতে চুমু খেয়ে তাওয়াফ শুরু করতে হয় । 
অামরা তাই করলাম, এবং বিসমিল্লাহি অাল্লাহু অাকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ বলে তাওয়াফ শুরু করলাম।
      হাজরে অাসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করে অাবারো কালো পাথর বা হাজরে অসওয়াদে অাসার সাথে সাথেই এক চক্কর পূর্ণ হয়ে যায় । এভাবে সাত চক্কর পূর্ণ করতে হয়। 
তাওয়াফের সময় রোকনে ইয়ামানীতে এসে পড়লাম ''রাব্বানা অা-তিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল অাখিরাতি হাসানতাও ওয়াক্বিনা অাজাবান্নার''। 

     রুকনে ইয়ামানী হলো কা'বার চতূর্থ কোন । তাওয়াফের সময়  রুকনে ইয়ামানীতে হাত রাখতে পারলে ভাল তবে রুকনে ইয়ামানীতে চুমু খাওয়ার বিধান নেই । (চলবে)
----------------------------------------
লেখকঃ প্রবন্ধ লেখক ও  কলামিস্ট।         

Post a Comment

0 Comments