Recent Tube

রজম নিয়ে জৈনক ব্যাক্তির প্রশ্নের জবাবে উস্তাদ মওদুদী রহঃ কি বলেছেন? - রাইয়ান ইয়ামিন আইমান।

 ম‌ওদুদী মতবাদের মুখোশ উন্মোচন!! 

  আজকের বিষয় সাইয়েদ ম‌ওদুদী "রজম" অস্বীকার করে "জুলুম" বলেছেন!! 

এটি একেবারে ইসলাম বিরোধী বক্তব্য!!

রজম নিয়ে জৈনক ব্যাক্তির প্রশ্নের জবাবে তিনি কি বলেছেন আগে দেখে নিই।
---------
"আমাদের যুগে রজম(ধর্ষণ, ব্যভিচারে পাথর মেরে হত্যা) জায়েজ কিনা? বিশেষ অবস্থায় ব্যভিচারের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড জারি করা দোষের নয়,তবে সেটা হবে শুধুই মৃত্যুদণ্ড, রজম নয়। কেননা রজম তথা প্রস্তরাঘাতে মৃত্যু প্রদান করা বর্তমান সভ্যতার খেলাপ। কোন মানবীয় প্রকৃতি রজম বরদাস্ত করতে পারেনা"?!!

প্রশ্নকারীর এমন বক্তব্যে সাইয়েদ ম‌ওদুদী রহঃ জবাবে বলেন, ---"এটাকে অদ্ভুত ব্যাপার ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে। আপনি নিজেই স্বীকার করেন যে, খলিফা চতুষ্টয় এবং রাসূল সাঃ যিনার চরম অবস্থায় অপরাধীকে রজম করার শাস্তি দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও আপনি রজম আধুনিক সভ্যতা বিরোধী এবং কোন মানবিক চেতনা রজমকে বরদাস্ত করতে পারেনা, এসব কথা বলতে সংকোচ বোধ করছেননা। আমি মনেকরি, যদি আপনি কখনো আপনার কথিত বাক্যের ওপর নিজে চিন্তা করেন,তাহলে আপনি নিজেই লজ্জিত হবেন। কোন মানবিক প্রকৃতি রাসূল সাঃ থেকে বেশী পবিত্র, দয়াদ্র ও সহানুভূতিশীল হতে পারে কি?? আধুনিক সভ্যতা কি মুসলমানদের জন্যে কোন সত্যের মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত"?

(তরজমানুল কোরআন, রবিউল আউয়াল, রবিউসসানী, ১৩৭০, জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারি, ১৯৫১)
(( রাসায়েল ও মাসায়েল, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা,৭৮, ৮১, ৮২))

অনেকে ভাববে আরে তিনি এখানে নয় তাফহিমাতে রজম অস্বীকার করেছেন। আসুন তাফহিমাতে তিনি কি বলেছেন দেখি-----

"ইসলামের ফৌজদারী দণ্ডবিধি বুঝতে সচরাচর মানুষ যে জটিলতার সম্মুখীন হয় তার প্রকৃত কারণ এই যে, দুনিয়ার কথিত সভ্য দেশ গুলোতে যে ভ্রান্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রচলিত সেটাই তাদের সামনে থাকে, অতঃপর তাঁরা চুরি, ব্যভিচার, মদখোরি, ব্যভিচারের অপবাদ রটনা প্রভৃতি নিত্যনৈমত্তিক অপরাধগুলোকে হাত কাটা, পাথর মারা এবং বেত মারার মতো দন্ড গুলোর সাথে তুলনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। জানা কথা যে, এই ধরনের তুলনামূলক বিচারে তাদের কাছে ইসলামের দন্ড গুলো অত্যন্ত ভয়ংকর মনে হবে"। 

"ইসলামী দণ্ডবিধির ব্যাপারে সর্বপ্রথম এই মূলনীতিটা হৃদয়ঙ্গম করা প্রয়োজন যে, হাত কাটার শাস্তি এবং শরীয়ত প্রবর্তিত অন্যান্য দন্ডবিধি শুধুমাত্র সেই জায়গায় কার্যকর করার জন্য রচিত হয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রের প্রশাসন ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে ইসলামী আদর্শ ও মূলনীতি অনুযায়ী পরিচালিত হয় এবং ইসলাম নির্দেশিত পন্থায় সমাজ ব্যবস্থা ও নাগরিক জীবন সংগঠিত ও বিন্যস্ত থাকে"।

"ইসলামের নীতিমালা ও আইন কানুন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। কিছু নীতিমালা ও আইন কানুন কার্যকর করা হবে আর কিছু বাদ থাকবে এটা ঠিক নয়।

উদাহরণস্বরূপ ব্যভিচার ও ব্যভিচারের অপবাদ রটনা সংক্রান্ত দণ্ডবিধির কথাই ধরা যাক। ইসলামী আইন এবং নর-নারীর পারস্পরিক সম্পর্ক ও আচরণ ইসলামের নৈতিক শিক্ষার সাথে এই দণ্ডবিধির অত্যন্ত গভীর ও অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্র রয়েছে"। 

"আল্লাহ তাআলা ব্যভিচারকারীর ও ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ আরোপকারীর জন্য এমন কঠোর সাজা নির্ধারণ করেছেন একটা বিশেষ সমাজে প্রয়োগ করার উদ্দেশ্যে,--

★"যে সমাজে মহিলারা সেজেগুজে অবাধে ও খোলাখুলিভাবে বিচরণ করেনা, 
★★নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি,
★★প্রেম ভালোবাসা সম্বলিত কিচ্ছা কাহিনী, 
★★যৌন আবেগে ক্রমাগত সুড়সুড়ি দেওয়া অনুষ্ঠান ও উৎসবাদির প্রচলন থাকেনা।
★★ যে সমাজে বিয়ে করা সহজসাধ্য এবং বিয়েবিচ্ছেদের ইসলামী বিধিসমূহ যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয়, কেবলমাত্র সেই সমাজেই এই দন্ডবিধি প্রযোজ্য স্বাভাবিক হতে পারে"। 

"এ ধরনের সমাজ স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এ দাবি জানাতে থাকে যে, সামাজিক আচরণের জন্য যে ভারসাম্যপূর্ণ নিয়ম-শৃঙ্খলা সে ধারণ করছে, তাঁর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কঠোর দন্ড (রজম)প্রবর্তন করা হোক"। 

"★বস্তুত যেখানে বৈধ উপায়ে যৌন লালসা চরিতার্থ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে, 
★এবং সামাজিক পরিবেশকে ব্যভিচারের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ও 
★অস্বাভাবিক উত্তেজনা সৃষ্টির উপকরণাদি থেকে পবিত্র ও মুক্ত করা হয়েছে, সেখানে এই ধরনের কঠোর সাজা(রজম) প্রবর্তন মোটেই অন্যায় নয়"।

"এধরনের নির্মল পরিবেশে যৌন অপরাধের লিপ্ত হওয়া কেবলমাত্র জঘন্যতম চরিত্রের লোকদের পক্ষেই সম্ভব, যাদের অনাচার থেকে আল্লাহর বান্দাদের রক্ষা করার জন্য ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি (রজম) ছাড়া আর কোন উপায় নেই"।

"কিন্তু যে সমাজে এই ধরনের পবিত্র পরিবেশ বিরাজ করেনা,--
★যেখানে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা রীতি সম্মত, 
★যেখানে বিদ্যালয়ে, 
★অফিস-আদালতে, 
★ক্লাবে ও প্রমোদ কেন্দ্রে, 
★গোপন ও প্রকাশ্যে সর্বত্র এসব উদ্দাম উচ্ছৃংখল স্বভাব স্বভাবের পুরুষ ও বিচিত্র সাজে সজ্জিত নারীদের লাগামহীন মেলামেশা ও একত্রে উঠা বসার সুযোগ রয়েছে,
★ যেখানে চারিদিকে অগণিত কামোদ্দীপক উপকরণ ছড়ানো রয়েছে,
➡ যেখানে️ বৈবাহিক বন্ধন ব্যতিরেকে কামবাসনা চরিতার্থ করার সব রকমের ব্যবস্থা রয়েছে এবং
★ যেখানে মানুষের নৈতিক মানের এত অধঃপতন ঘটেছে যে, অবৈধ সম্পর্ক মোটেও দূষণীয় মনে করা হয়না।

এধরনের সমাজে ব্যভিচার ও ব্যভিচারের অপবাদ রটানোর শাস্তি প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে জুলুমের শামিল হবে"।

"এই বেয়াড়া সমাজের বেলেল্লাপনা রীতিনীতিকে অবিকল বহাল রেখে ইসলামের অন্য সমস্ত আইন কানুন বাদ দিয়ে কেবলমাত্র ফৌজদারী আইনকে চালু করে দেওয়া কথিত আধুনিক সমাজ যেমন জুলুম মনে করে তেমনি আমরাও মনেকরি। ইসলামের সমাজব্যবস্থাকে সামগ্রিকভাবে গ্রহণ করে আমরা এই জুলুমের মূলোৎপাটন করতে পারি"।

((নির্বাচিত রচনাবলী, ২য় খন্ড পৃষ্ঠা, ৩৯৭ - ৪০০। "তাফহিমাত" কিতাবটি বাংলায় "নির্বাচিত রচনাবলী" নামে প্রকাশ হয়েছে।))

(পাপের পথ খুলে দিয়ে সাজা দেওয়া ইসলামের রীতি নয়, এভাবে পাপ বন্ধ হবেনা বরং এভাবে ইসলামী আইনকে ব্যর্থ, হাস্যকর প্রমাণ করা হবে। 
তাহলে,প্রশ্ন থাকলো সাইয়্যেদ মওদূদী ইসলামের সমাজ পরিবর্তনের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাকে তুলে ধরলেন নাকি ইসলামের আইনকে অস্বীকার করলেন?? উল্লেখ্য আমাদের দেশের হকের ডিলাররা ধর্ষণ, ব্যভিচারের সাজা দেশীয় আইনে মৃত্যুদন্ড কামনা করছেন, কিন্তু ভুলেও কেউ রজমের দাবীতে মাঠে নামেনি।)।
------------------------------------------------------------ 
লেখকঃ  ইসলামিক  আর্টিকেল  লেখক ও  অনলাইন  এক্টিভিস্ট । 

Post a Comment

0 Comments