Recent Tube

দ্যা চয়েস ইজ ইউরস- ৩৬; জিয়াউল হক।

   দ্যা চয়েস ইজ ইউরস;
                        পর্ব--৩৬;
                             

শাম, সিরিয়া,  ইরাক ও পারস্য’সহ নানা স্থান থেকে আসতো খাদ্যশষ্য, গম যব ও শষ্যদানা। উন্নত জাতের ঘোড়া, উট, গাধা খচ্চরও উঠতো পশুবাজারে। মেলা প্রাঙ্গণে কবিরাজ ও হাতুড়ে ডাক্তারদের চেম্বার থাকতো রুগী চিকিৎসার জন্য। ভাঙ্গা দাঁত তুলে ফেলা সোনা বা রুপা দিয়ে বাঁধানোর রেওয়াজ ছিল সেকালের বাস্তবতা বিবেচনায় নামকরা ডেন্টিস্টদের। তাদেরও আয় রোজগারের মওসুম ছিল এই সময়কালটা।

এগুলো হলো মেলার চিত্র। কি কি আয়োজন থাকতো সে সব মেলা প্রাঙ্গণে বা মেলা উপলক্ষে, তার বর্ণনা। এরকম মেলা বসতো মক্কায় ঢোর প্রতিটি পথে। এগুলোকে উপক্ষো করে বা এগুলোতে হাজিরা না দিয়ে খোদ বায়তুল্লাহতে আসা সম্ভব ছিল না। মক্কাবাসী ও বায়তুল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণের কাজে যে সব গোত্র নিয়োজিত ছিল, তাদের সুক্ষ পরিকল্পনার মাধ্যমেই শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে এ ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে।

কেবল এগুলোই নয়। এর সাথে জড়িয়ে ছিল আরও কিছু রসম রেওয়াজও। মেলার কাজ শেষে আগত প্রতিটি গোত্র ও বহরের আলাদা আলাদা শোভাযাত্রা বের হতো । দল বেঁধে তারা হাজির হতো বায়তুল্লাহ থেকে প্রায় সাড়ে ছয় মাইল দূরের মুজদালিফার খোলা মাঠে।

এইখানে কাবার মোতাওয়াল্লি থেকে শুরু করে কাবা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত সকল গোত্রনেতা’সহ অন্যান্য নেতারাও আসতেন। তাদের সাথে সৌজন্য স্বাক্ষ্যৎ হতো দুর দুরান্ত থেকে আগত বিভিন্ন আরব গোত্রনেতা ও প্রতিনিধি দলের। নিজ নিজ অঞ্চল ও গোত্রের সুনাম আর ঐতিহ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে এইসব গোত্রনেতাদের জন্য নিয়ে আসতেন উপঢৌকন সম্ভার। সে সবের বিনিময় হতো। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিচারে এটা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক মিলনমেলা।

মুজদালিফায় যখন গোত্রনেতা ও ভিআইপিদের দেখা স্বাক্ষাৎ চলছে, তখন অন্যান্য আরব বেদুঈন বা সাধারণ অভ্যাগত, ভিক্ষা করতে আগত ভিক্ষুক ও ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের সরিয়ে রাখা হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত মাইল দূরে আরাফাতের খোলা মাঠে।

মুজদালিফার বিভিন্ন তাঁবুতে মক্কার গোত্রনেতারা বহির্বিশ্ব থেকে আগত অন্যান্য নেতাদের দর্শন দান, বৈঠক অনুষ্ঠান, উপহার বিনিময়, আপ্যায়ন বিনোদন ও খাওয়া দাওয়ায় সারাদিন কাটিয়ে দেবেন। এরপরে সুর্যাস্তের সাথে সাথে এ পর্ব শেষ হতেই সেখানে বিরাট মশাল জ্বালিয়ে দেয়া হলে দূর থেকে তার আলো দেখেই সাধারণ ঐসব মানুষরা দলবদ্ধভাবে ছুটে আসতেন মুজদালিফায়। মক্কার গোত্রনেতারা’সহ অনেক ধনী ব্যক্তিরা তাদের জন্য সেখানে আয়োজন করতেন ভোজের। অনেকটা কাঙ্গালী ভোজের মতো।

এই যে যাওয়া আসা, তায়েফের সন্নিকটে ওকাজ মেলা, সেখান থেকে মুজদালিফা, মুজদালিফা থেকে আরাফাত, আবার আরাফাত থেকে মক্কা কিংবা মক্কা থেকে এইসব স্থানে যাওয়া আসার পথেও নানারকম ছোটবড়ো মুর্তি ও উপাসনার জন্য পাথর ও গাছ গাছালিও থাকতো উপাস্য হিসেবে। এইসব জায়গায় আগতরা যার যার সাধ্যমতো উপহার সামগ্রী দিতো। 

অনেকের মানত থাকতো, সেই মানত পুরো করতে তারা পশু কুরবানিও করতো। সেই সব পশুগুলো সরবরাহ, বিপণন, বিক্রয় ও পরিবহনের জন্য প্রয়োজন হতো বাজার এবং বিক্রেতা। পশুর দেখাশোনা, খাবার জোগাড় ও সরবরাহও ছিল অনেকের আয় রোজগারের মাধ্যম। জবেহকৃত পশুর মাংশ, চামড়া, হাড় ও বর্জ সরানো, কেনা বেচা, বিশেষ করে, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা, কেনা বেচাটাও ছিল এক বিরাট লাভজনক ব্যবসা। ঠিক যেমন আমাদের দেশে আমরা কুরবানির আগে পরে দেখে থাকি।

মুজদালিফা থেকে এইসব ব্যক্তিবর্গ রওয়ানা দেবে মক্কায় বায়তুল্লাহর উদ্দেশ্যে। তারা বায়তুল্লাহর যতো নিকটবর্তী হবে ততোই তারা উচ্চস্বরে কীর্তণ গাইবার মতো করে নিজেদের মতো করে নিজেদের ভাষায় তাদের উপাস্যদের বন্দনা গাইতে থাকবে।

অষ্টম শতাব্দির আরব ঐতিহাসিক হিশাম ইবনুল কালবির বর্ণনা থেকে ঠিক এরকমই এক বন্দনার উদ্ধৃতি পাকিস্থানী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক জিয়াউদ্দিন সরদার (Ziauddin Sardar) তার লেখা Mecca: The Sacred City নামক গ্রন্থে। সেখান থেকে ইংরেজি ও আমার করা বঙ্গানূবাদটাও তুলে ধরছি দেখুন;
By Allat and al- Uzza,
And Manah, the third idol besides.
Valrily they are the most exalted females
Whose intersection is be sought.
ভাবানূবাদ: 
‘শপথ তাদের, লাত ও উজ্জার শপথ-
মানাতও আছে পাশে ভাই!
আহা, কি মহান আমাদের দেবীসব-
পদে পদে তাদেরই তো দোওয়া চাই।’ (ভাবানূবাদ: গ্রন্থকার)।

এভাবে বন্দনা গাইতে গাইতে হেলে দুলে তারা কাবার দিকে এগুবে, কাছাকাছি আসতেই এক এক করে গা থেকে কাপড় চোপড় খুলে উলঙ্গ হয়ে পড়বে এবং কাবা প্রদক্ষিণ করতে থাকবে।

এই যে মরুভূমির মধ্যে অত্যন্ত বৈরি আবহাওয়ায় নানা প্রান্ত থেকে আগত দেশি বিদেশি অভ্যাগত, এদেরকে আপ্যায়ন এবং পানি ও খাদ্যের ব্যবস্থা করা বা করতে পারাটাকে অত্যন্ত সম্মানজক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এটা আরব সংস্কৃতির একটা অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছিল।

এই বিশাল কাজটা নি:সন্দেহে এক বড়ো রকমের ঝামেলাপূর্ণ ও ব্যায়বহুল, এবং একই সাথে অত্যন্ত সম্মানজনকও ছিল। এ কাজে যারা নিয়োজিত থাকতেন, সেই গোত্র পুরো আরবে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হিসেবে বিবেচিত হতেন আল্লাহর ঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে। মক্কা অঞ্চলের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তিও থাকতো তাদেরই হাতে।  যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই কঠিন কাজটাকেই একটা নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে সংগঠিত করেন আরবের এক নেতা, কুসাই। (ক্রমশ, সংক্ষেপকৃত)
--------------------------------- -------------------------
লেখকঃ  ইসলামি চিন্তাবিদ  গ্রন্থপ্রনেতা  গীতিকার  ও  বিশ্লেষক । 

Post a Comment

0 Comments