মুরশিদ ও মুরিদ মানে কি?
♥মুরশিদ শব্দটি আরবী রুশদ ও এরশাদ শব্দ থেকে উদ্গত।এর আভিধানিক অর্থ হলো হেদায়াতকারী,পথপ্রদশক, সত্যের দিশারী। মুরশিদ হলেন যিনি মানুষকে পথের দিশা দেন। কুরআনুল কারীমে সুরা কাহাফের ১৭ নম্বর আয়াতে রয়েছে," ওয়া মাই ইউদ্বলিল্ ফালান্ তাজ্বিদা লাহু ওয়া লিয়্যাম মুরশিদা"- অর্থাৎ " তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি কখনই তার কোন পথ-প্রদর্শনকারী,অভিভাবক পাবেনা।" তাই ইসলামের ভাষায় আল্লাহ হলেন মুরশিদ।সুফীজমে মুরশিদ হলেন তরিকতের পথের দিশারী, যাকে মারেফাতের পথপ্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ফার্সী ভাষায় মুরশিদকে পির বলে। যারা পির/ মুরশিদের আনুগত্য করে তাদেরকে মুরিদ বলে। মুরিদগণ পিরের কাছে শরীয়ত,তরিকত, মারিফাত শিখে এবং তার আনুগত্য করে( তার নির্দেশনা মতে চলে)। ফাজাইল আমল কিতাবের ফাজায়েল তাবলীগে ৪৬ পৃষ্ঠায় পির মুরশিদ তালাশ করতে এবং তার আনুগত্য করার কথা বলা হয়েছে:"হজরত শায়েখে আকবর( রা:) লিখিয়াছেন, তুমি যদি নিজের নিজের আমিত্বকে অন্যের আদেশের সন্মুখে বিলীন করিতে নাপার তবে আজীবন সাধন করিয়াও নিজের নফসের গোলামী হইতে নিস্কৃতি পাইবেনা।অতএব যখনই তোমার সন্মুখে এমন ব্যক্তির আর্বিভাব হয় যাহার ইজ্জত তোমার অন্তরে রহিয়াছে তখনই তাহার খেজমতে লিপ্ত হও, তাহার সন্মুখে মূর্দার মত হইয়া থাক,তোমার সমস্ত খাহেশাতকে মিটাইয়া তাহার আদেশ পালনে ব্রতী হও। তাহার নিষেধ থেকে বিরত থাক।তিনি যেই ব্যবস্থা করিতে বলেন তাহাই কর। নিজের খাহেশে নয় বরং তার হুকুমে। তিনি বসিতে বলিলে বসিয়া পড়।অতএব কামেল মোর্শেদ তালাশ করিতে সচেষ্ট হও, তিনি তোমাকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌছাইয়া দিবেন।"
♥কুরআন ও হাদিসে কোথায়ও লিখা নেই," পিরের সন্মুখে মূর্দার মত হইয়া থাক, সমস্ত খাহেশাতকে মিটাইয়া তাহার আদেশ পালনে ব্রতী হও"- সম্পূর্ণ শির্কী কথা। আল্লাহ বলেন:"তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদের* রব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামপুত্র মাসীহকেও।"( সুরা তাওবা আয়াত ৩১) অর্থাৎ ধর্মীয় যাজক,পির,আলেম বা শাসক আল্লাহ তা'আলার বিপরীত কোন বিধান দিলে তা সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেওয়া তাদের রব হিসেবে মেনে নেওয়ার শামিল। আল্লাহ বলেন:"হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের( উলুল আমর)। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।"( সুরা নিসা আয়াত ৫৯) উলুল আমর হল: শাসক, আলেম ও দ্বীনদার ব্যাক্তিবর্গ।
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: একজন মুসলিম ব্যক্তির আবশ্যক হল নেতার আনুগত্য করবে এবং তার কথা শুনবে, সে ব্যক্তি নেতার নির্দেশ পছন্দ করুক আর অপছন্দ করুক। যদি নেতা আল্লাহ তা’আলার অবাধ্য কোন কাজের নির্দেশ না দেয়, যদি আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য কোন কাজের নির্দেশ দেয় তাহলে তার অনুসরণ করা যাবে না এবং আনুগত্যও করা যাবে না। (সহীহ বুখারী হা: ৭১৪৪, সহীহ বুখারী কিতাবুল ইমারাহ হা: ৩৮)
যদি কোন নেতা, শাসক, ইমাম, এবং আলেম-উলামাদের পথ নির্দেশনা ও তরিকা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের পথ নির্দেশনা ও তরিকা অনুযায়ী হয় তাহলে অবশ্যই মান্য করা আবশ্যক। অন্যথায় কখনো অনুসরণ করা যাবে না।
এরপরেও আলেম বা শাসকের আনুগত্য করতে গিয়ে যদি কোন বিষয়ে বিবাদ দেখা দেয় তাহলে ফায়সালার প্রত্যাবর্তনস্থল কী হবে তারও দিক-নির্দেশনা আল্লাহ তা‘আলা প্রদান করেছেন।
যারা কোন বিষয়ে বিবাদ দেখা দিলে কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে যাবে তারাই আল্লাহ তা'আলা ও আখিরাতে বিশ্বাসী।
♥আল্লাহ বলেন:"তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর।"( সুরা আরাফ আয়াত ৩)
♥আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম জাতিকে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন: “তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ কর” আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে কুরআন ও সুন্নাহ। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ ج وَمَا نَهٰكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا)
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক।” (সূরা হাশর ৫৯:৭) সেই সাথে আল্লাহ তা‘আলা নিষেধ করছেন কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ ব্যতীত অন্য কোন বন্ধু বা ওলী তথা দল, মত, তরীকা ইত্যাদি যারা প্রবৃত্তির অনুকরণ করে চলে তাদের অনুসরণ করো না। কেননা তাদের অনুসরণ করলে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوْكَ عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِ ط إِنْ يَّتَّبِعُوْنَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُوْنَ)
৷ “যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করবে। তারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে; আর তারা শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে।” (সূরা আনআম ৬:১১৬) সুতরাং সর্বদা কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মেনে চললে সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত থাকা সম্ভব, অন্যথায় পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হতে হবে।
(قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ)
‘তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর।’ অর্থাৎ সত্য বিষয় তোমরা খুব কমই অনুধাবন কর, যার কারণে তোমাদের অধিকাংশই কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ ছেড়ে দিয়ে এদিক সেদিক থেকে দীন গ্রহণ করতে দৌড়াচ্ছ।
---------------------------------
0 Comments